somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোসে সারামাগো

০১ লা নভেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হোসে সারামাগো
দ্বিতীয় অংশ

নোবেল পুরস্কার প্রদান উৎসবের শেষে প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক E.D.Mccullough তার প্রতিবেদনে লিখেছিলেন — .... সেই যে রোগা সরু শরীরের মানুষটা। যার চোখে সব সময় একটা প্রশ্ন লুকিয়ে থাকে। তার পক্ষে এত বঙ্কিম, এত জটিল কুটিল পথ অতিক্রম করে আজকের এই নোবেল পুরস্কার প্রদান উৎসবের পাদপ্রদীপের আলোয় উপস্থিত হওয়াটা সহ‍‌জ কাজ ছিলো না। বরং বলা যেতে পারে খুবই কঠিন ছিলো। মোটর মেকানিকের কাজের ট্রেনিং নিতে নিতে সেই কিশোর ছেলেটি স্কুলের ছোট্ট লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে রাত জেগে কাব্য পাঠের মধ্যে একান্তভাবেই মগ্ন থাকতো। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেটির পায়ে কোনও জুতো ওঠেনি। সকালে খড়ের বিছানা থেকে ওঠার পর ছেলেটির মাথায় খড়ের টুকরো লেগে থাকতো। সেই ছেলেটি আজ চমৎকার পোশাক পরে আলোয় ঝলমল সন্ধ্যায় সুইডিশ আকাদেমির নোবেল পুরস্কার বিতরণীর রাজকীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হ‍‌য়েছেন। তার সামনে বিশ্বের বহু দেশের অসংখ্য বিদগ্ধজনেরা সাগ্রহে তাকিয়ে রয়েছেন তার দিকে। শুনতে চাইছেন তিনি কি বলেন। আজীবন কমিউনিস্ট এই মানুষটিকে কি মুহুর্মুর্হু ক্যামেরার ফ্ল্যাসের মধ্যে। আলোয় আলোকিত সুস‍‌জ্জিত অনুষ্ঠানে সকলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার কলকল্লোলে কিছুটা ভেতরে ভেতরে বিহ্বল। বিজড়িত মনে হচ্ছিল। তিনি মাথা নিচু করে শান্তভাবে অবিশ্রান্তভাবে বর্ষিত সব প্রশংসা স্বীকার করে নি‍‌চ্ছিলেন। আর দর্শকাসনের প্রথম সারিতে উপবিষ্ট তার স্ত্রীকে মঞ্চে উঠে আসার জন্য ব্যর্থ অনুরোধ জানাচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানের কিছুটা আগে একটি সাক্ষাৎকারের সময় তিনি বলছিলেন, .... এই ৯,৫০,০০০ ডলার মূল্যের পুরস্কার নিঃসন্দেহে অতি মূল্যবান। কিন্তু জীবনকে বদলে দেওয়ার মতন কখনই নয়।’ .....
পুরস্কার বিতরণীর অনুষ্ঠানে সারামাগো আধ ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তার সেই বক্তৃতার মধ্য দিয়েই তিনি তার নিজস্ব ব্যক্তির আর সাহিত্যের দায়বদ্ধতার স্পষ্টিকরণ করলেন। সারামাগো বললেন, — .... আমার প্রথম উপন্যাসের (Man and Women of paper and ink), নায়ক আমার নিজের পছন্দ মতন তৈরি হয়েছিল। সে আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য দিতো। পুতুল নাচের মতোন সে আমার ইচ্ছেয়, নাচতো নড়তো চড়তো, কথা বলতো। কিন্তু যতই দিন গেল ততই যেন আমার অবাক হওয়ার পালাও বাড়তে থাকলো। একদিন দেখলাম, সেই হয়ে উঠেছে আমার মনিব। আর আমি তারই অঙ্গুলিহেলনে নেচে চলেছি। অক্ষরের পর অক্ষরে, শব্দের পর শব্দে পাতার পর পাতায়, বইয়ের পর বইয়ে সে আমার মধ্যে ক্রমশ প্রবেশ করতে থাকে। আমি যা ছিলাম, সেই আমাকে আমার মধ্যে তিল তিল করে নির্মাণ করে চলেছে। সেই সঙ্গে আবার সে ও ক্রমাগত নির্মিত হয়ে চলেছে। আমার বিশ্বাস আমার সব নায়ক নায়িকাদের বাদ দিয়ে আমি। এই আমি হয়ে উঠতে পারতাম না কোনদিনই সেই সব চরিত্রগুলির কথা, ভাবভঙ্গি, ভাষা বা দর্শনের অনুভবের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার বাইরে বেশি কিছু আমার ভাণ্ডারে নেই বলেই আমার মনে হয়। আমি বিশ্বাস করি না যে তাদের চাইতে, তাদের বাইরে আমার ভিন্ন কোনও অস্তিত্ব অবশিষ্ট রয়েছে। আমাকে ক্ষমা করবেন যদি আপনাদের মনে হয় যে ব্যাপারটা অতি তুচ্ছ। অতি নগন্য। আমি কিন্তু সবিনয়ে বলবো যে, আমাকে সেটাই আমার যথাসর্বস্ব। ....
নোবেল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সারামাগোর বক্তৃতার বেশিটাই জুড়ে ছিল তার বালক বয়সের। তার কিশোর বয়সের কথা, উঠোনে খোলা আকাশের নিচে, খড়ের বিছানায় শুয়ে শুয়ে দাদামশাইয়ের কাছে গল্প শোনার কথা পুরোপুরি কায়িক শ্রমে নিয়োজিত তার বৃদ্ধ দাদামশাই, বৃদ্ধা দিদিমার অনাহার অর্ধাহারের কথা, অথচ ঝলমলে নক্ষত্ররাজির নিচে দাঁড়িয়ে তারা যে এক মুহূর্তের জন্যও জীবন বিমুখ হয়ে পড়েননি সেই কথা। জীবনযাপনের মধ্যে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কখন যে তারা সুন্দর থেকে সুন্দরতর হয়ে উঠেছেন তার কাহিনী ইত্যাদি। নোবেল বক্তৃতার সূচনাই তিনি করলেন এই বলে যে, — আমার চেনা পরিচিতদের মধ্যে যাকে আমার সবচেয়ে জ্ঞানী, পণ্ডিত, বলে আমার মনে হয়েছে, তিনি আমার দাদামশাই। তিনি নিরক্ষর ছিলেন, লিখতে পড়তে শেখেননি।’ ....
পরবর্তীকালে নিজের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, একবার একটি সাক্ষাৎকারের সময়ে যে, — .... আমি বে‍‌শি কথা বলি না। বেশি কথা বলতে পারি না। হেসে হেসে সবাইকে খুশি করতেও পারি না। সেই চেষ্টাও করি না। আমি শুধুই লিখি।’ আপাতদৃষ্টিতে সারামা‍‌গোকে অত্যন্ত দাম্ভিক, অহঙ্কারী এবং সিনিক মনে হতো অনেকের। কারণ তিনি কম কথা বলেন, আবেগের প্রকাশ তার মধ্যে খুবই কম ছিল। বন্ধুত্ব করা। বন্ধুত্ব রক্ষা করার প্রয়াস নেওয়ার প্রয়োজন কদাচিত অনুভব করেছেন। অত্যন্ত ধর্মবিশ্বাসী পর্তুগিজদের কাছে তার নাস্তিকতার জন্য। তার ক্রমাগত প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার জন্য সারামাগো তেমনভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেননি ঠিকই, কিন্তু সেই ব্যাপারে কোনদিনই তার তেমন মাথাব্যথা ছিলো না। তার একটি কারণ হতে পারে যে তার রচিত সাহিত্যের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ছ‍‌ড়িয়ে গিয়েছিল। তার উপন্যাসগুলির বিক্রি আকাশ ছুঁয়ে ছিল। তার সেই জনপ্রিয়তা আর তার সাহিত্য রচনার স্বীকৃতি ঘটতে বেশি সময় লাগেনি। ১৯ বছর লোকচক্ষুর অন্তরালে (১৯৪৭-১৯৬৬) থাকার পর দু’একটি উপন্যাস প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বীকৃতি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তার জন্য তাকে কোনও মিডিয়ার দ্বারস্থ হ‍‌তে হয়নি। তার নির্বাসনকল্পের ১৯ বছরে পর্তুগালের প্রথম সারির পত্রপত্রিকা। প্রতিষ্ঠিত পর্তুগিজ লেখক-লেখিকা কেউই তাকে স্মরণ করেননি। সারামাগো নিজেই একবার মন্তব্য করেছিলেন, — এই সময়ে আমার অনুপস্থিতি‍‌ প্রায় সকলেরই চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল। এই ১৯ বছরে তিনি বেশ কয়েকটি উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছেন। পারেননি। তবু ক্রমাগত চেষ্টা করে গেছেন।
হয়তো এমন হতে পারে যে তার রচনার মধ্যে যে বিদ্রূপাত্মক ইঙ্গিত ছিল, যে দায়বদ্ধতার কথা ছিল সেগুলো মিডিয়া ব্যরনদের মনোমত হয়নি। কারণ হ‌য়তো যে ‘সোপ সিস্টেম’। যে পপ কালচার তার ঠিক বিপরীতে অবস্থান করছিলেন তিনি। স্বভাবতই সারামাগো পর্তুগালে যতো না, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি পছন্দের লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিলেন বিদেশে। তার সেই বৈদেশিক জনপ্রিয়তারও নানারকম কদর্থ করা হয়েছে।
পর্তুগালের প্রতিষ্ঠিত বেশির ভাগ লেখকই বিগত শতাব্দীর। আন্তোনিও লোবো, সারিও দা কারভা‍‌লো, অগান্তিনা বেলা, আলমাই তো ফারিয়া, কিংবা হোসে কারতো সকলেই রক্ষণশীল ভাবধারায় বিশ্বাস করেছেন, সেই ভাবধারার পুষ্টিকরণও করেছেন। এদের মধ্যে হোসে কারভালোর নাম নোবেল কমিটির বিবেচনায় ছিল বলেই শোনা গিয়েছিল। এরা ছাড়া কবি ফার্নান্দো পে‍নোয়াতের পর্তুগিজ সাহিত্যের অগ্রণী বলে বিবেচিত হয়ে থাকেন। হোসে সারামাগো-র যে উপন্যাসটির । (The year of the death of Ricardo Ruis), খ্যাতি বিশ্বজুড়ে ছ‍‌ড়িয়ে গেছে। সেই উপন্যাসটি কোলোয়াতের-এর The death of Recardo Ruis’-এর অবলম্বনেই রচিত। ঠিক অবলম্বন বলাটা বোধ হয় ঠিক হবে না। বলা যেতে পারে সেটির রেখাচিত্রকে অবলম্বন করেই রচিত হয়েছিল। পেনোয়াতের-এর রচনাটি ‍ছিল একটি বিবরণধর্মী রচনা। সারামাগো কলমে সেটি এক অকল্পনীয় জাদু ব্যস্তবতার রঙমশালের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছে। গ্রন্থটি ইতোমধ্যে ৩০টি ভাষায়, অনূদিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, স্মরণ করা যেতে পারে যে কবিতার ফর্মকে অবলম্বন করেই সারামাগোর সাহিত্য জীবনের সূচনা। আর সেই কাব্যিক মানসিকতাকে তিনি আমৃত্যু লালন করেছেন।
২০০৬ সালে যখন লেবাননে যুদ্ধ চলছে, তখন কিন্তু সারামাগো চুপ করে বসে থাকেননি। তারিক আলি, জন বার্জার, নোয়াম চম‍‌স্কি, এডুয়ার্ডো গালিয়ানেও, নাওমি ক্লিয়েন, হ্যারল্ড কেনিটার, অরুন্ধতি রায় এবং জন হাওয়ার্ড মিল ইত্যাদি অনেকের সঙ্গে সেই যুদ্ধের অবসানকল্পের একটি প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছিলেন।

সারামাগোর সাহিত্য সম্ভার
জীবনাবসানের আগে বেশ ক‍‌য়েক বছর ধরে যে বিষয়টি নিয়ে সারামাগো ভাবিত ছিলেন সেই বিষয়টি সম্ভাব্য নামও তিনি ঠিক করেছিলেন — Essays on Blindness। বেশ কিছুদিন ধরেই বলে যাচ্ছিলেন যে, লিখতে আর তিনি আনন্দ অনুভব করেন না। তিনি বলতেন লেখাটাও এক ধরনের কাজ। আর কেউ যদি বলেন যে, কাজ করতে তার আনন্দ হতো। সে কথায় আমার আস্থা কম’। সারামাগো নানান সাক্ষাৎকারের সময় বলেছেন যে, কোনও উচ্চাশা তিনি কখনও পোষণ করেননি। জীবনে যা, যতটুকু তিনি পেয়েছেন তাতেই তিনি তৃপ্ত। লিখতে তার একদমই ভালো লাগে না বলার পাশাপাশি এটাও তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন যে, যে সব বিষয় নিয়ে তিনি চিন্তা করেছেন সেগুলো একমাত্র লেখার মাধ্যমেই পরিস্ফূটিত করা সম্ভব। অন্য কোনওভাবেই নয়। পাঠক-পাঠিকাদের কাছে অন্য কোনও মিডিয়া বা ফর্মের আকর্ষণ তার কাছে একেবারেই অপরিচিত। সারামাগোর বান্ধবী এলিজাবেথ ফারসওয়ার্থ টনি মরিশনের সঙ্গে সারামাগো সম্প‍‌র্কিত এক আলোচনার সূত্র ধরে সারামাগোর একটি মন্তব্য সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন। সারামাগো তার দেশকে, পর্তুগিজ ভাষাকে কতটা ভালোবেসেছিলেন সেটা তার সেই মন্তব্য পাঠ করলেই বোঝা যায় : ‘Having been a writer in portugese language is a great honour and gives one a feeting of enormous responsibility and respect for all the writers before me!
বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় সাহিত্য রচনার জগতে পা রেখে অনায়াসে তিনি কথা সাহিত্য, লোক সাহিত্য, আর পুরাণের হাত ধরে জাদু বাস্তবতার মধ্যে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তার রচনায় তীক্ষ্ম শ্লেষ আর তীর্যক বিশ্লেষণধর্মীতার উপাদান যেমন পাতায় পাতায় বিধৃত হয়েছে তেমনিই তার পাশাপাশি তিনি বিচরণ করেছেন প্রাচীন বহমান ঐতিহ্যের স্বপ্নময় জগতে। আসলে সারামাগো যে বিষয়টি নিয়ে সচেতন এবং সোচ্চার। সেই বিষয়টি হলো লেখকের দায়বদ্ধতা। মানবজাতির মধ্যে বৈষম্য, দুঃখ দারিদ্র্য, অত্যাচার অনাচার উৎপীড়ন ইত্যাদির ছবি এঁকেই হাত ধুয়ে ফেলেননি। তীক্ষ্ণ শ্লেষ আর বিদ্রূপের কাষাঘাতে জর্জরিত করেছেন তথাকথিত সব ভালো মানুষদের যারা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের ভালো করার কথা বলেছেন। তার সেই আক্রমণের শানিত আঘাত থেকে পার পাননি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি। প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলি আর ভা‍‌‍‌লো মানুষ সাজার অভ্যাসগুলিও। এযাবৎ কৃত সব রকমের সমঝোতার প্রতি স্পষ্ট হয়েছে তার অভিযোগ। মানব সভ্যতার এই ব্যর্থতা তার সাহিত্যে চিত্রায়িত হয়েছে — যেন মানব সভ্যতার ইতিহাস কেবলই এক ব্যর্থতার ইতিহাস। তারই প্রেক্ষিতে সারামাগোকে নিরাশাবাদী মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এই অভিযোগ তাঁকে আজন্ম শুনতেও হয়েছে। কিন্তু তিনি সাহিত্যে ফটোগ্রাফির চর্চা করেননি। তার মধ্যে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গির অনুসন্ধান করেছেন। সেই অনুসন্ধানের পথেই বলেছেন — ‘আমি কমিউনিস্ট। আমার রচিত স্পষ্ট সব চরিত্রগুলির মতোন আমিও অত্যন্ত সাধারণ। সাদামাটা জীবন যাপন করতেই অভ্যস্ত। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোন সাহিত্যের জগতে স্বনিয়োজিত অঙ্গুলধারীরা যখন তৎপর হন অর্থ আর ক্ষমতার প্রতিপত্তির দম্ভে স্বার্থচিন্তার বাইরে অন্য কিছু ভাবার অবকাশ রাখেন না। তখন সবিনয়ে সারামাগো তার সাহিত্যের পরিবেশনার মাধ্যমে মানব ধর্মের তথা মানুষকে জিতিয়ে নিয়ে আসেন। ষড়যন্ত্রকারীরা পরাস্ত হয়।
নোবেল পুরস্কারের প্রেক্ষিতে নোবেল কমিটি তাঁদের অভিনন্দন পত্রে বলেছিলেন, — Who with parables, sustained by imagination. Compassion and irony continuously enables as once again to apprchend an illusory reality.’ নোবেল পুরস্কার ঘোষিত হওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সারামাগো বলেছিলেন, — .... নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কারণে আমি তোমার কমিউনিজমের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হতে পারি না। এই দুটির মধ্যে একটাকে যদি বেছে নিতে আমাকে বলা হয়। তাহলে আমি নির্দ্বিধায় নোবেল পুরস্কারটি সবিনয়ে ফেরত দিয়ে দিতেও রাজি। কারণ আমি একজন শ্রমজীবী মানুষ। সারামাগোর উপন্যাসের এক নায়িকা বলেন যে পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষেরা সব সময়েই কমিউনিস্ট। সে তিনি কমিউনিজমে দীক্ষিত হোন বা না হোন।’

সারামাগোর উপন্যাস
সারামাগোর ‘The Stone Raft’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালে। বইটি ইংরাজীতে অনূদিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। লেখক উপন্যাসটিতে এক সর্বৈব কাল্পনিক কাহিনীর অবতারণা করেছেন। কাহিনীটি এই রকম : ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে হঠাৎই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে আইরেবিয়ান উপদ্বীপটি। তারপর সেটি হাল ছাড়া। নেভিগেশন ছাড়া। কোনও রকম যন্ত্র ছাড়াই সমুদ্রে ভেসে যেতে থাকে। ভাসতে ভাসতে উপদ্বীপটি ক্রমশ যেন এগিয়ে যেতে থাকে উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে। যেন সেটি খুঁজে চলেছে নতুন কোনও স্বপ্নের নির্মাণ করতে পারে এমন স্থান। পাথরের ভেলার সেই অনুসন্ধান শুধু সন্ধান করেই ক্ষান্ত হয় না। সে আশা করতে থাকে যে যদি গোটা ইউরোপটাই এই রকমভাবে সমুদ্রে ভেসে পড়তো। তাহলে হয়তো ঔপনিবেশিকতার পাপ তার পক্ষে কিছুটা অন্তত লাঘব হতো।
এই উপন্যাসটিতে চরিত্র রয়েছে ৬টি। দু’টি পুরুষ। তিনজন নারী। আর একটা কুকুর। সেই ভাসমান পাথরের ভেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চরে বেড়ায় এই ছ’টি চরিত্র। তরঙ্গক্ষুব্ধ উত্তাল সমুদ্রের মধ্যে ভাসতে ভাসতে। ক্রমাগত স্বপ্নের অনুসন্ধান করতে করতে তারা অগত্যা গন্তব্যহীনভাবে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ভেসে চলে। আর সেই রকমভাবে ভাসতে ভাসতে তাদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক শুদ্ধিকরণ ঘটতে থাকে। যেরকম চরিত্রের অভ্যাস তা‍দের ছিল সেই চরিত্রে পালাবদল ঘটতে থাকে। পুরুষ আর নারী চরিত্রগুলির পরিবর্তন হতে থাকে। যেন সব কিছু বাদ দিয়ে এক শুদ্ধ স্বপ্নের দেশ নির্মাণের কথাই তারা ভাবতে থাকে। কুকুরটিরও আচরণ বদলে যেতে থাকে। সে‍‌টিও যেন অন্য সব সারমেয়সুলভ স্বভাব থেকে আলাদা হয়ে যায়।
‘The stone Raft’-এর পর সারামাগো লিখলেন ঠিক বিপরীতধর্মী একটি উপন্যাস –The History of siege of lisbon। বইটি প্রকাশিত হলো ‘The stone Raft’ প্রকাশিত হওয়ার ৩ বছর পরে ১৯৮৯ সালে। ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হলো ১৯৯৬ সালে। ‘The stone Raft’ যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রচিত হয়ে থাকে। তাহলে এই বইটির প্রেক্ষিত অতীতকালের। লেখক এই গ্রন্থে অতীতের ইতিহাসপাঠকে কোনও স্বীকৃতি দিতে চান না। গ্রন্থের নায়ক একজন প্রুফরিডার। তিনি ইতিহাস বইয়ের প্রুফ দেখতে দেখতে অত্যন্ত একঘেয়েমির শিকার হয়ে যান। ক্লান্ত অবসাদগ্রস্ত নায়কটির মনে হতে থাকে যে ইতিহাসের বইতে সব কাহিনীগুলিই ঘটে গেছে বলে লেখা থাকছে। তার সন্দেহ হতে থাকে। তারপর একটা সময়ে সে যেখানে যেখানে ‘হ্যাঁ’ লেখা আছে সেখানে সেখানে ‘না’ লিখে দিতে থাকেন। তার মনে হয় যে এখন ইতিহাস হলেও একটা সময় তো ছিল যখন সেটা জীবন্ত ছিল। লেখক মজা করে মন্তব্য করতে হয়তো চান যে ‘ডিলিট’ সাইনটা না থাকলে কী ভয়ঙ্কর অসুবিধাই না হতো। আছে বলে কত কথা সুবিধাই না হয়েছে।
এরপর ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হলো তার ‘The Gospel according to Jesus Christ’। এই উপন্যাসে সারামাগোর ব্যক্তিত্ব অনমনীয় দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্ভাসিত হয়েছে। তিনি জানালেন যে ইতিহাস যে কথা বলতে অক্ষম, সাহিত্যে সেই কথা অনায়াসেই প্রস্তাবিত হতে পারে। এই উপন্যাসটির ইংরাজী অনুবাদ আমরা পেলাম ১৯৯৩ সালে। উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষণশীল মৌলবাদীদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটলো। পর্তুগালের রক্ষণশীল সরকার। ভাটিকান সিটি, উগ্রপন্থীদের পাশাপাশি এমনকি ধর্মভীরু পর্তুগিজদের একাংশ সারামাগোকে ধর্মদ্রোহী অভিযোগে অভিযুক্ত করতে লাগলো। সেই সময়ে দেশের বুদ্ধিজীবীরা, চিন্তাশীল শিক্ষিত লোকেরা যারা ড্রংইরুমে পলিটিক্স করতেই অভ্যস্ত। যারা সর্ব ঘটনায় তাদের বিচারের রায় জানাতে এবং সেই রায় সবাই মেনে নেবে এরকম প্রত্যাশাতেই অভ্যস্ত তারা তারস্বরে গেল গেল রব তুলে সারামাগোকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেও দ্বিধা করলো না। অবশ্য ‘হ্যাঙ’ গ্রুপস-এর প্রতিনিধিদের একাংশই এই সোরগোল তুলেছিল, সকলে নয়। তাদের গাত্রদাহের একটা কারণ এমন হতে পারে যে, মিডিয়ার কল্যাণে মৌরশিপাট্টা জমিয়ে ম্যাটনি আইডল হয়ে থাকা এইসব তথাকথিত সফল মানুষজন যেন মেনেই নিতে পারছিল না যে ১৯ বছর নীরব এবং সাহিত্যের জগৎ থেকে নির্বাসিত একজন রাতারাতি তাদের বসার আসন ধরে টান দিতে চাইছে।
সারামাগো এই উপন্যাসটিতে ভীমরুলের চাকে ঢিল ছুঁড়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তুললেন কেন এবং কীভাবে দু’বছর বয়সের শিশুদের নির্বিচার হত্যালীলা (massacrae of innocents) দেখার পরেও মানুষজন, এমনকি ঈশ্বরও হাত গুটিয়ে, মন গুটিয়ে বসে থাকতে পারছেন। তবে লেখক এই নিরুত্তাপ চুপ করে থাকা মানুষজনদের থেকে জোসেফকে আলাদাভাবেই চিত্রিত করতে চেয়েছেন। তাকে সংশয়াচ্ছন্ন, অনুতপ্ত হিসেবেই দেখছেন লেখক। জোসেফ তার নিজের প্রাণ রক্ষার কারণে অসংখ্য শিশুকে হত্যালীলায় প্রতিক্রিয়ায় তাকে একজন মানবিক চেতনাসম্পন্ন মানুষের মতনই অসহায় করে তোলে। যীশুকে মানুষ হিসেবে চিত্রিত করার জন্যই রক্ষণশীলরা তার উপরে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
অন্য একটি সাক্ষাৎকারে সারামাগো জানিয়েছেন যে, তার শৈশবে গ্রাম গঞ্জের মানুষজনদের অমানুষিক দারিদ্র্যই তার শিক্ষাগুরু। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করেও তারা দুবেলা দু’মুঠো খাবার জোগার করতে সক্ষম হয় না। সেই ছবিটিকে সামনে তুলে ধরে লেখক তাঁর তির্যক বাচনভঙ্গিতে কটাক্ষ করে জানতে চান যে এইসব সরল, সৎ মানুষজনদের জন্য ভাবিত হওয়ার ভান করে সুপ্রতিষ্ঠিত সমাজ আত্মপ্রসাদ লাভ করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা কীভাবে ক্রমাগত প্রতারিত হতে থাকে। এমনকি উপাশনা কেন্দ্রগুলির দ্বারাও, কীভাবে দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র, জমির মালিকেরা তাদের পদে পদে ঠকিয়ে নিজেদের বিলাস এবং বিত্তবাসনা চরিতার্থ করে তাদের ধনসম্পদের স্তূপ নির্মাণ করে চলে। এবং এই প্রক্রিয়া আজকের কালকের নয়। এই প্রক্রিয়ার ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। সারামাগোর হিসেবে এই ব্যর্থতার ইতিহাসও হাজার হাজার বছরের। কয়েক শতাব্দী পি‍‌ছিয়ে গিয়ে সারামাগো যে সামাজিক লক্ষণগুলি চিহ্নিত করেছেন সেই সব চিহ্নগুলি কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে অদ্যাবধি অবিকৃত অবস্থায় অবিকল একই রকমের রয়েছে। সেই সব শতাব্দী কালে নরপতিরা ছিলেন, মন্ত্রী, আমির ওমরাহ নায়েবরা ছিলেন, রাজসভায় কিংবা জমিদারদের দরবারে গর্বিত সদস্যবৃন্দও ছিল। ইনকুইজিসনের বিচারকরা। যারা চরিত্রগতভাবে আজকের দিনেও অতিমাত্রায় উপস্থিত রয়েছে। হয়তো বা প্রেক্ষিত বদলেছে। পোশাক পরিচ্ছদ ফ্যাশন বদলেছে। কিন্তু বাস্তবচিত্রের দৃশ্যময়তায় এরা হাজার হাজার বছর ধরে সেই একই ট্রাডিশন বহন করে‍‌ আসছে। আর তার পাশাপাশি অনুভূতিগুলি কতটা মানবিক হতে পেরেছে। মানুষের অপমান, দুঃখ বেদনা, সেই বুড়িয়ে যাওয়া, সেই অপসৃয়মান ভালোবাসার জগৎ। সেই প্রকৃতিকে নাকে লাগাম পরাবার চেষ্টা। সেই সম্পদ ধংসের কাহিনী আর যাবতীয় বিষদের উৎস ওই ওদের নিপীড়ন আর অত্যাচার আর শোষণের কাহিনী।
সারামাগো একটি গল্প –All the Names । সঙ্কলনটি ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে। ২ বছর পর ইংরাজী অনুবাদটি প্রকাশিত হয়। এই গল্পে একজন মানুষ, অথবা একজন মানুষী একে অন্য আর এক জনা খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেই অনন্ত অন্বেষণের আকাঙ্ক্ষাই যেন সত্য, অন্য কিছু নয়। সেটি তার, অর্থাৎ ওই মানব-মানবীর অপার্থিব স্বপ্নের অন্বেষণ।

সারামাগোর সাহিত্য : উপসংহার
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল (ইংরেজী অনুবাদ ১৯৯১ সালে) — The year of the death Ricardo Reeiss উপন্যাসটি। সারামাগো পর্তুগালের কবি ফার্নান্দো পেসোয়ার-এর The death of Ricardo Reeiss উপন্যাসটির ছায়ায় এই উপন্যাসটি লিখেছিলেন। উপন্যাসটি সারামাগো লিখতে শুরু করেন যখন তার বয়স ১৭। তখনও তিনি ‍‌মোটর ট্রেনিং স্কুলের ট্রেনিং সমাপ্ত করেননি। রাত জেগে কবিতা পাঠের অভ্যাসে তিনি পর্তুগালের একটি পত্রিকা ‘Atena’-তে প্রকাশিত এক গুচ্ছ কবিতা পাঠ করে তীব্র আলোড়ন অনুভব করেন। রিকার্ডো রেইইস ছিল কবি পেসোয়ার-এর ছদ্মনাম।
অচিরেই ‍‌কিশোর সারামাগো পেসোয়ার-এর কবিতা মুখস্থ করে আবৃত্তির নেশায় মেতে উঠলেন। তখনও তিনি জানতেন না যে রিকার্ডো রেইইস কবি ফার্নান্দো পেসোয়ার-এর অনেকগুলি ছদ্মনামের মধ্যে একটি। রেইইস কবিতা তাকে এতটাই প্রভাবিত করে যে তিনি ওই ১৭ বছর বয়সেই একটি উপন্যাস রচনা করতে শুরু করেন। উপন্যাসটি অবশ্য শেষ করেন ১৯৮৬ সালে। এই দীর্ঘ ৪৫/৪৭ বছর ধরে। অন্যান্য অনেক রচনার মধ্যেও তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবিত থেকেছেন। তার অবশ্য ২টি কারণ সম্ভবত ছিল। একটি — কবি সেখানে একটা জায়গায় লিখছেন যে — সেই মানুষটাই প্রকৃত জ্ঞানী। যিনি এই পৃথিবীকে ভালোবাসতে পেরেছেন। আর দ্বিতীয়টি হলো — সারামাগো তার দাদামশাই, দিদিমাকে দেখেছেন পৃথিবীর প্রতি। প্রকৃতির প্রতি কি অকুণ্ঠ ভালোবাসা তাদের। মনে করা অস‌ঙ্গত হবে না যে, সারামাগো আবাল্য পৃথিবী, পৃথিবীর মানুষজনকে। ভালোবাসতে চেয়েছেন।
মহৎ কবিতার মতন পেসোয়ার-এর এই কবিতাটিও বিষাদে আচ্ছন্ন। এক কাল্পনিক কাহিনীর মধ্যে কবি পাঠককে টেনে নিয়ে যান। সমুদ্রযাত্রার অবসান হয়েছে। জাহাজগুলি এখন কর্মহীন পড়ে রয়েছে। মরচে ধরে যাচ্ছে জাহাজগুলির শরীরে। এখন সে স্থলদেশে অপেক্ষমাণ। অর্থাৎ সমুদ্রযাত্রায় নতুন নতুন দেশ আর আবিষ্কার করার সুযোগ নেই। এই উপন্যাসে সারামাগোর তীর্যক বিশ্লেষণ — তাহলে কি স্থলভাগকেই সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে হবে? পেসোয়ার-এর কবিতা তাকে ব্যক্তিগতভাবে মুগ্ধ করলেও, সারামাগো তার ঋণ স্বীকার করেছেন পর্তুগীজ কবি লুই ভাদ দা কামায়েসের কাছে। সারামাগোর ধারণায় কামায়েসাই পর্তুগালের শ্রেষ্ঠ কবি। কামায়েসের কাব্য থেকে সারামাগো শিক্ষা নিয়েছিলেন কীভাবে একজন কবি দুঃস্থ হয়েও ভিক্ষুকের মতন প্রার্থী হয়েও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। সমস্ত সমাজ সংসার কবিকে যতই হেনস্তা করুক, অপমানে দগ্ধ করুক কবি তার ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিচ্ছেন না। এই উপন্যাসের নায়ক যোদ্ধা যিনি দেশে দেশে যুদ্ধ করে বেড়ান। নানান বেশে ঘুরতে ঘুরতে তিনি পৌঁছন ভারতবর্ষে। ইতিপূর্বে যুদ্ধ কেড়ে নিয়েছে‍‌ তার চোখ, তার মন, তার হৃদয় এবং যৌবন তাকে ত্যাগ করেছে।
১৯৮২ সালে সারামাগো লিখলেন Balthasar and Blimunda। ১৯৮৭ সালে ইংরেজী অনুবাদ পাঠক পাঠিকারা হাতে পেলেন। পৌরাণিক উপকথার কাঠামোতে উপন্যাসটি রচিত। খুব সাবলীলভাবে তিনি উপকথার জগতে প্রবেশ করেছেন। এই উপন্যাসের নায়ক বালথাজার মাতয়েন। তার অন্য একটি নাম সপ্তসূর্য। যুদ্ধ করার সময়ে তার একটা হাত কাটা গেছে। দ্বিতীয় আর একটি চরিত্র যার নাম ব্লিমুণ্ডা। তারও আর একটি নাম আছে সপ্তশশী। ব্লিমুন্ডার একটি অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। সে দেখতে পেত মানুষের শরীরের ভেতরে কি আছে। প্রাচীন উপকথায় সূর্যের পাশাপাশি চাঁদও থাকে। আর তাদের দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক থাকাটাই স্বাভাবিক। উপন্যাসে তৃতীয় আর একটি চরিত্র রয়েছে। তার নাম বার্থলিমিউ। তিনি পুরোহিত। এই পুরোহিতটি একটি আকাশযান আবিষ্কার করেছে। এই আকাশযানটিকে চালনা করার জন্য পেট্রোল ডিজেলের দরকার হয় না। মানুষের ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করেই সেটাকে চালানো যায়। সূর্যের যেমন সর্বত্র গতি। চাঁদের যেমন বিনয়, নম্রতা, সম্মানীয়কে সম্মান জানানোর আগ্রহ রয়েছে। ওই ইচ্ছাশক্তির সেসব কিছু গুণ নেই। এখানেই লেখক বর্তমানের সঙ্গে সূর্য, চাঁদ আর ইচ্ছাশক্তিকে কোনো আবেগ, অনুভূতি সংবেদনশীলতা নেই। চারপাশের ধর্মান্ধরা নিত্যদিন নতুন নতুন শাস্তির পদ্ধতি নির্ণয়। তাদের সংগঠিত বিচার সভাগুলিতে সেই নিত্য নতুন উদ্ভাবিত শাস্তি প্রয়োগ করা হতে থাকে। সেই বিচারের ফলে আর্ত বেদনার্তদের জন্যরাজা তৈরি করেন সুশৃঙ্খল ধর্মগৃহ। সেই ধর্মগৃহ ক্রমশ বাড়তে বাড়তে গোটা পৃথিবীকেই গ্রাস করে ফেলে। সেইসব ধর্মগৃহে লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষদের মিছিল দেখা যায়। রাজা নিজেও তার কীর্তি দেখে অবাক হয়ে যান। রাজার অট্টালিকার নির্মাণকার্য শেষ হয় না। আবহমানকাল ধরে চলতেই থাকে। মিছিলের শ্রমজীবী মানুষেরা রাজার এই নির্মাণকার্যে স্বভাবতই ক্লান্ত হয়, অবসন্ন হয়, তাদের শরীর মন ভেঙে যায়।
এই বালথাজার উপন্যাসটির একটা সংলাপ পাঠক পাঠিকাদের ভয়ঙ্করভাবে নাড়া দেয়। সংলাপটিতে বলা হচ্ছে,—নারীরাই পৃথিবী শাসন করে বলে স্বপ্নের বিলাসে চালিত হয়। সেই স্বপ্নের যাদুতেই পৃথিবীর মাথায় ওঠে চাঁদের মুকুট। আর সেই স্বপ্নের মানবকে মহিমান্বিত করে। মানব মনই বস্তুত দিগন্তবিস্তৃত আকাশের মতনই বসুমতীকে জড়িয়ে থাকে, ছড়িয়ে থাকে।
এই উপন্যাসটি পাঠ করার সময়ে রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’-র কথা মনে প‍‌ড়ে যেতে পারে। জালের পিছনে রাজার অসহায় অভিশপ্ত জীবন, পৌষের ধান, আর সর্বোপরি নন্দিনীর কণ্ঠে মুক্তির আবাহন। রঞ্জন আসবেই সেই ব্যাপারে তার দৃঢ় বিশ্বাস।
সারামাগোর ‘The Cave’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে। পরের বছরই তার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। রূপকথার মতন হলেও ঠিক রূপকথা নয়, কিংবা নতুন সময়ের, নতুন মানুষদের জন্য নতুন কোনো রূপকথা।
উপন্যাসটি কাহিনী এইরকম : একজন প্রবীণ কুম্ভকার, তার নাম সিপ্রেয়ানো আলগর। তার কন্যা মার্তা আর জামাতা মার্সেল। তারা সকলে মিলে বাস করে একটি মহানগরের কেন্দ্রস্থলে। নীহারিকা কুঞ্জের মতনই এই মহানগরটি অসংখ্য বস্তুর প্রচণ্ড ঘূর্ণনের মধ্য দিয়ে দ্রুতগতিতে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আর সেই চলন্ত ঘূর্ণায়মান পিণ্ডের যে দিকটাতে ছায়া রয়েছে। সেই ছায়ার দিক থেকেই আলগররা তাদের আহার্য সংগ্রহ করে থাকে।
এভাবেই দিন যায়। অনেকদিন যায়। একটা সময়ে আলগরদের আর নীহারিকা সুলভ ক্রমবর্ধমান মহানগরের অনুগৃহীত হয়ে থাকতে মন চায় না তাদের। তারা সবাই একসঙ্গে এক নতুন স্বাধীন জীবনের স্বপ্ন দেখে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য মন প্রাণ দিয়ে নতুনভাবে কাজ করতে চেষ্টা করে। মার্তা একজন অতি কুশলী শিল্পী। সেরামিকের ওপরে চিত্রাঙ্কন করতে ওস্তাদ। ওরা তখন সুন্দর সুন্দর সেরামিকের চিত্রিত মূর্তি তৈরি করে। কেন্দ্রের নীতি নির্ধারকরা জানতে পেরে তাদের বিশাল অর্ডার দেয়। বলাবাহুল্য ওরা বিস্মিত হয়। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে ওরা অর্ডার অনুযায়ী মূর্তিগুলি নির্মাণ করে। কিন্তু তারপরই নাটকীয়ভাবে কেন্দ্রের অফিস থেকে জানানো হয় যে, তারা ভবিষ্যতে এরকম পুতুল আর কিনবে না। কারণ মার্কেট সার্ভে করে তারা দেখেছে যে এই পুতুলগুলোর বাজারে কোনো ডিম্যান্ড নেই। ফলে অকারণে কর্মহীন হয়ে রোজগারবিহীন হয়ে ওরা বাধ্য হলো কোনো একটা প্রান্তিক শহরে মাইগ্রেট করতে। তাদের ধারণা হলো যে হৃদয়হীন মেগাপোলিসের চাইতে প্রান্তিক শহরে ওরা হয়তো সমবেদনা আর সহানুভূতির সন্ধান পাবে। ওরাই প্রান্তিক শহরে আলগরের জামাতা মার্সেল একটি নৈশপ্রহরীর চাকরি পেল।
একদিন রাত্তিরবেলা আলগর হঠাৎই এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য আবিষ্কার করে হতচকিত হয়ে গেল। কৃত্রিম শহরটির পেটের ভিতরে সে দেখতে পায় ৬টি মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখা আছে। আলগর আর তার পরিবারের লোকজনেরা এরকম একটা অসহনীয় পরিস্থিতি আর সহ্য করতে পারছিল না। মার্সেল তার সহকর্মীদের সঙ্গে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দিল। তারপর আবার তারা তাদের দেশের পথে পা বাড়াল। কিন্তু যে কারণে তারা দেশত্যাগ করেছিল সেই কারণগুলো তো আর শেষ হয়ে যায়নি। ফলে এবার তারা এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। এবারে তাদের আর একজন সঙ্গী বাড়ল। তাদের এক প্রতিবেশিনী ইসার্ডরা তাদের সঙ্গে সেই অচেনা অজানা গন্তব্যের দিকে চলতে থাকে। এই চলার পথেই ইসার্ডরার সঙ্গে আলসরের এক প্রেসের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই উপন্যাসটি সমাপ্ত হয়ে যায়।
অকল্পনীয় রহস্যময়তা, ভয়ঙ্কর এবং অমোঘ চুম্বকের আকর্ষণ উপন্যাসটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। সারামাগোর অন্যান্য উপন্যাসের কিছু কিছু তির্যক মন্তব্যের সঙ্গে এই উপন্যাসের উপজীব্য বিষয়গুলির কোনো আলাদা গুরুত্ব আছে কিনা সেটাও সম্ভবত সারামাগো এই উপন্যাসটিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে চেয়েছেন।
উপন্যাসটির নায়ক আলগরের আদি বাস যে স্থানটিতে, সেই সতত ঘূর্ণায়মান নীহারিকাসুলভ কেন্দ্রীয় নগরী, সেই নগরীতে অসংখ্য বস্তুকে যেন ছাঁচে ঢালা হচ্ছে, তারপর কুমোরের চাকায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নতুন চেহারা দেওয়া হচ্ছে। তবে কি সেখানে ব্যক্তিসত্তার মৃত্যু ঘটছে; তবে কি সেখানে যাবতীয় আবেগ, সংবেদনশীলতা, নম্রতা, সম্মাননা সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে অলক্ষ্যে থাকা বর্তমান সময়ের সার্চ এঞ্জিনের মতনই সৃষ্টি করছে সহস্র চক্ষুর এক দৈত্যাকৃতি ওয়াচ টাওয়ার। অরওয়েলের মতনই — Look, big brother is watching you — বলে ভয় দেখাচ্ছে। তবে কি সেই রক্তকরবীর রাজার মতন অতি শক্তিশালী কোনো বাণিজ্যসৌধ নির্মাণকারীদের দলেপিষে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো। সূক্ষ্ম নির্মাণের উৎসমুখগুলোর অস্তিত্বই যদি ওই ঘূর্ণায়মান নীহারিকাপুঞ্জের মতন কেন্দ্রীয় কংক্রিট মিক্সাচারের মধ্যে নিক্ষেপিত হতে থাকে তাহলে আলগর, মার্সেল, মার্কা এবং উপন্যাসের শেষভাগে উপস্থিত হওয়া ইসাউরা — তাদের সামনে অপসৃত হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো বোধহয় আর থাকেই না। একটা বিশাল মেগাপোলিসের পেটের মধ্যে অন্যসব ছোট ছোট নগরের অবস্থান সূচিত করে যে সেখানেও নীতিকথা, মূল্যবোধ আর ক্রিয়েটিভ ফ্যাকালটির মধ্যেও ফাটল ধরে। মার্সেল যেন বিষয়টি পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারে না। সে মাঝে মাঝে (হয়ত এই কারণে যে সেই একমাত্র যে চাকরি করে, রোজগার করে) আলগরের কাছে ওই পিণ্ডতে পরিণত হতে থাকা ঘূর্ণায়মান পরিবর্তনের সাফাই গাইতে থাকে। মার্সেলের মনে হয় আলগর ঠিক সামরিক নয় অসামরিকও নয়, এমন এক প্রান্তসীমার মানুষ, যার পক্ষে এ দুটোর কোনো একটিতেও ফিট ইন করা আর সম্ভব নয়।
এবং এরপর ক্রিয়েটিভ আর্টিস্টদের সঞ্চয়ে আগুন লাগে। সেলফ জুড়ে অতি যত্নে চিত্রিত করা এবং ঢালাই করা সেরামিকের পুতুলগুলোকে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রক্রিয়ার পেছনেও সন্দেহ থেকেই যায়। অদৃশ্য সার্চ এঞ্জিনের মতন, মেগা কম্পিউটারের মতন কারা এইসব নিয়ন্ত্রণ করে সেটা জানা যায় না। শুধু আড়ালে অবস্থানকারী নীতি নির্ধারকদের আদেশ শোনা যায় দূরভাষে।
উপন্যাসটির বিচরণ ক্ষেত্রে কল্পনা আর বাস্তবতা বারবার স্থানবদল করে তাই চরিত্রগুলিকে অপরিচিত মনে হয় না। তারা যেন আমাদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকা রক্তমাংসের মানুষই সবাই। তাদের হাবভাবে, কাজে কর্মে। এমনকি চিন্তা ভাবনাতেও। তারা যে অতিমাত্রায় বাস্তব জগতেরই বাসিন্দা, কোনো কল্পনার জগতের মানুষ নন। সেটা বুঝতে পাঠক পাঠিকার একটুও অসুবিধা হয় না। তার কারণ তারা সবাই তো আমাদেরই পরিচিত মানুষজন।
এই উপন্যাসটিতে সারামাগো নারীচরিত্রকে একটা বিশিষ্ট মাত্রায় অবলোকন করেছেন। অধিক বয়স হলেও, ইসুয়ারা ভালোবাসতে চায়, ভালোবাসে; রোমান্স আর প্রেমজ সব লক্ষণগুলি তার মধ্যে পরিস্ফুটিত হতে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে সেটা অস্বাভাবিক মনে হলেও, সেটা যে অতি মাত্রায় স্বাভাবিক সেটা আলগর আর ইসুয়ারা যেন এক পার্থিব পরিণামের দিকেই পা বাড়ায়, এবং সেই ক্রিয়ায় খুশি হয়, সুখী হয়। আলগরের কন্যা, এক অঙ্গে বহু রূপ ধারণ করে — সে কখনও পত্নী, কখনও জননী, কখনও কন্যা, কখনও আবার সৃষ্টিশীল শিল্পী। এমনকি তাদের গৃহপালিত সারমেয়টিও যে কোনো অন্য সারমেয়র মতনই ব্যবহার করে।
তবে সারামাগো একটি রহস্যকে রহস্য হিসেবেই রেখে দিতে চেয়েছেন। ওই যে ৬টি সংরক্ষিত করে রাখা শবদেহ, সেগুলোকে কেন সংরক্ষণ করে রাখা হলো, তাদের পরিচয়ই বা কি, কোথায় ছিল তাদের বসবাস কিছুই সারামাগোর রচনায় স্পষ্ট জানা যায় না। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মতই — জলে ভেসে যায় কার শব, কোথা ছিল বাড়ি — তাদের কথা যেন অনুচ্চারিতই থেকে যায়। কে জানে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য তাদের সংরক্ষণ করা হচ্ছে কিনা, কে জানে তারা ওই জ্বলন্ত ঘূর্ণায়মান বস্তুপিণ্ড-র মধ্যে নিজেদের সঁপে দিতে অসম্মত হয়েছিল কিনা; নাকি ওই মৃতদেহগুলিই আলগরের, মাতার, মার্সেলের, ইসর্ডয়ার, ওদের কুকুরটার
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×