somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরো একবার কক্স সাহেবের বাজারে-১

২৫ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৩০ জুন ২০১০
সন্ধ্যা ৬টা
স্থাপত্য বিভাগের দোতলার ডিজাইন রুম

মনোনিবেশ করে কাজ করছে কয়েকজন প্রভাষক আর কয়েকজন গবেষণা সহকারী। মি তার ল্যাপটপে ড্রয়িংটা আপগ্রেড করার সাথে সাথে সপ্তাহান্তের দুই দিনের প্ল্যানিং করছিল, এত্তগুলো কাজ, কীভাবে শেষ করা সম্ভব! ওর খুব দম-বন্ধ লাগছে হঠাৎ করেই, কী ছাতার চাকরি করে- ছাত্রাবস্থায় যেমন সপ্তাহশেষে এক গাদা কাজ থাকত, এখনো তাই। হঠাৎই ওর এসব কাজকর্ম থেকে ছুটে পালাতে ইচ্ছে হলো, মনে হলো ও যদি এখান থেকে না পালায় তাহলে পাগল হয়ে যাবে। মাথায় আসার সাথে সাথে ও ফ্লোরে একটা প্রস্তাব পেশ করল- 'আমি দুদিনের জন্যে সমুদ্রের ধারে মুন্ডু ঠান্ডা করতে যাবো, কে কে আমার সাথে যাবে হাত তোল'। যদিও ও জানত কেউ যাবে না, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে ম হাত তুলল।লি আর শি ব্যক্তিগত কাজে আজই কক্সবাজার পৌঁছার কথা, তাই ঠিক হলো ওরা কক্স সাহেবের বাজারে ওদের সাথে মোলাকাত করবে। সাথে সাথে ফোনে টিকেট বুক করা হলো- রাত দশটায় বাস, তড়িঘড়ি করে ওরা যখন বাসায় যাচ্ছে যাত্রার প্রস্তুতি নিতে তখন বাজে সাড়ে সাত!

রাত ৯টা ২০ মিনিট
পলাশীর মোড়

মি অস্থির হয়ে পায়চারি করছে, রাস্তায় অনেক জ্যাম। ম ২০ মিনিট ধরে স্থির বসে আছে জ্যাম এ নিউমার্কেটের কাছে, কী করবে বুঝতে পারছে না! সি এন জি ছেড়ে দিয়ে হেঁটে চলে আসবে কী না ভাবছে, কিন্তু আবার ফকিরাপুলের জন্য সি এন জি পেতেও সমস্যা। অবশেষে অনেক কাহিনী করে এস আলমের কাউন্টারে পৌঁছাল ওরা। দু'টো চিপসের প্যাকেট নিয়ে বাসে বসে প্রথম ঠান্ডা মাথায় একটু ভাবার সুযোগ পেল- ঘটনা আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে! স্টেশন লীভও নেওয়া যায় নি, আর মি তো অনেকগুলো কাজ পেন্ডিং রেখে ছুটেছে!

রাত ১টা ৩০ মিনিট
দাউদকান্দি, কুমিল্লা

হঠাৎ করেই বাস থেমে গেল, ম আর মি বাস থেকে নেমে জানতে পারল, বাসের গীয়ার নষ্ট হয়ে গেছে, ড্রাইভারকে দেখতে পেল হন্তদন্ত হয়ে একটা স্কুটার নিয়ে চলে গেল মিস্ত্রী আনতে। বাসের সব যাত্রী নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে, বাস যে থেমে গেল হুশই নেই; দু’একজন হাঁটছে এদিক সেদিক। বাসটা যেখানে থামল তা একটা স্কুটার স্ট্যান্ড; চায়ের দোকান কয়েকটা। চা খেল দুজন, হাঁটাহাঁটি করে আরো কিছুটা সময় পার করল; বাসড্রাইভারের দেখা নেই। মি ভেবেছিল একটা শান্ত শিষ্ট লেজবিশিষ্ট আরামদায়ক ট্যুর করবে; কিন্তু অবস্থাগতিকে মনে হচ্ছে এডভেঞ্চারের শুরু এখানেই। ও এডভেঞ্চার ছাড়তে চাইলেও; ওই বিশেষ বস্তুটা ওকে মনে হয় কখনো ছাড়বে না। এর মাঝে লি আর শি এর সাথে ফোনে কথা হলো কয়েকবার- ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের অবস্থা নাকি খুব খারাপ, সন্ধ্যায় কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা থাকলেও ওরা রাত বারটার দিকে পৌঁছাল কারণ গ্রীনলাইনের যে বাস ওদের চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার নিয়ে গেল, তা নির্ধারিত সময়ের দ্বিগুন সময় লাগিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছায়। অবস্থাগতিকে মি এর মনে হচ্ছে সিনেমা স্টাইলে আবার ট্রাকে লিফট নিতে হয় কী না! কারণ ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সর্বশেষ যাত্রীবাহী বাস কুমিল্লা ছেড়ে গেছে।

রাত তিনটার দিকে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে মিস্ত্রী এসে বাস ঠিক করায় মনোনিবেশ করল, ম আর মি বাসে উঠে বসল। হঠাৎ শুনতে পেল, বাস না কি ঠেলতে হবে! গীয়ার বাবাজী ঠিক হওয়ার পর এখন নাকি বাসের ব্যাটারী ডাউন! লোকজন বাসটাকে ঠেলে নিয়ে গেল প্রায় দেড় কিলোমিটার, ওরা বাসের পেছন পেছন হাঁটল। এতক্ষণে যাত্রীদের হুশ হলো- ড্রাইভার আর কন্ডাক্টরকে অনেক হুমকি-ধামকি দেওয়া হলো। মাঝে আবার দুটা ট্রাককে দিয়েও বাসকে ঠেলা দেওয়া হল। এসব কান্ডে ম আর মি হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছিল না। এত কিছুর পরও ওদের হাসিই পাচ্ছিল সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত ঘটন-অঘটনগুলোর কথা চিন্তা করে। তবে ম আর মি বাদে অন্য কেউ হলে মনে হয় এতক্ষণে প্যানিকড হয়ে যেত! কারণ বাস যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, তার একপাশে খাল আর অনেকদূর লোকালয় দেখা যাচ্ছে না। খারাপ না লাগার একটাই কারণ হতে পারে- আকাশে ছিল মস্ত একটা চাঁদ, খালের পাশে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখার সাথে সাথে বেশ গভীর রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাচ্ছিল।

ভোর ৪টা
সিনেমা স্টাইলে ওরা লিফট নিল চট্টগ্রামগামী এক জরুরী সংবাদপত্রের বাসে, একটা মুড়ির টিন মার্কা লক্কড় ঝক্কড় বাস। বাসে উঠে সংবাদপত্রের গাট্টি-বোঁচকার মধ্যে জায়গা করে বসে গেল, সে এক দেখার মতো দৃশ্য! ওরা ওঠার পর আরো কিছু লোক একই বাসে স্থান পেয়ে গেল। বাকীরা তখন উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছে এস আলমের ড্রাইভারের সাথে। মি এর পায়ের নীচে পত্রিকার বান্ডিল, ডান দিকে সীটের উপর জানালা ঢেকে আরেক বান্ডিল। বেচারী গরমে সেই বান্ডিলের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তখন তো প্রায় ভোর হয়েই গিয়েছে। নেহায়েত জরুরী সংবাদপত্রের বাস ছিল বলেই সেটা একে ওকে পাস কাটিয়ে সীতাকুন্ডের ভয়াবহ জ্যামের ভিতর দিয়ে বের হয়ে সকাল আটটায় পৌঁছে দিল অলঙ্কারে। আর সাথে সাথেই কক্সবাজারে যাওয়ার জন্যে সৌদিয়ার বাস ধরল তারা। ম এর আনা এক প্যাকেট এনার্জি বিস্কিট ছিল ওদের রাতের খাবার আর সকালের নাশতা।




(ম এর পচা মোবাইল ক্যামেরায় সকাল বেলা তোলা)

দুপুর ১টা ৫০ মিনিট
অনতিদূরে কক্সবাজার, সৌদিয়া থামল কয়েক মিনিটের জন্য একটা হল্টেজ পয়েন্টে। কাল সন্ধ্যার পর এই প্রথম তারা চোখে-মুখে একটু পানি দিতে পারল। একটা ফাস্টফুডের দোকান থেকে কিছু খাবার নিয়ে ফিরে গেল বাসে। এর মাঝে লি আর শি অনেকবার ফোন করে তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কক্সবাজারে কাঠ-ফাটা রোদের পর এখন একটু মেঘের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। এখানে আসার আগে লি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে এসেছিল- কক্সবাজারে কয়েকদিন ঝুম বৃষ্টি হবে, সমুদ্রে বৃষ্টি দেখবে বলে এই সময় তাদের কক্সবাজারে আসা। তাড়াহুড়ায় তো হোটেলও বুক করা হয় নি, মি তার ভাইকে ফোন করে তার মাধ্যমে কক্সবাজারে হোটেল বুক করাল হোটেল সী-গালের পাশে, ওরা তো আর সী-গালে থাকতে পারবে না! তবে ঘুণাক্ষরেও বলে নি ও যাচ্ছে- বলল ওর বন্ধুদের জন্য।

দুপুর ২টা ৩০ মিনিট
কক্সবাজার

অবশেষে তারা কক্সবাজার পৌঁছাল, অফ-সীজনের ৫০ শতাংশ ছাড়ের হোটেল কল্লোলে দুটো আলিসান রুম পেয়ে গেল অল্প পয়সায়। এখন শুধু অপেক্ষা কখন এসব রাস্তার ধূলাবালি আর লাগেজের জঞ্জালমুক্ত হয়ে সাগরপাড়ে যাওয়া যায়। মি এই প্রথম ওর জীবনে বাস থেকে নেমে সরাসরি বীচে না গিয়ে হোটেলে গেল! এতটা কষ্ট করে এতটা সময় পার করে তারা অবশেষে আসতে পারল সমুদ্রের কাছে......আর তো মাত্র কয়েক মুহূর্ত!!

চলবে...............
(নিরাপত্তাজনিত কারণে রাতে তারা ক্যামেরা বের করে ছবি তোলার সাহস করে নি, কারণ কিছু দিন আগেই মি এর ক্যামেরা চুরির ঘটনা তাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিল।)

পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১:১৪
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×