somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক দিন পর তিন স্টুজী একসাথে (ভ্রমণ ব্লগ লেখার অপচেষ্টা)......

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই স্টুজী, আরেকজন ক্যামেরার পিছনে

ফেব্রুয়ারীতে সেমিনার, রেজিষ্ট্রেশন কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী আমার মাথায় চব্বিশ ঘন্টা রেজিষ্ট্রেশন কীভাবে বাড়ানো যায় সেই চিন্তা আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের সুবাদে সারাক্ষণ কানে মোবাইল, সেমিনারে অংশগ্রহণে আগ্রহী স্থপতিদের নানান জিজ্ঞাসার জবাব দিচ্ছি হাসি-হাসি সুরে, নরম গলায়! এহেন অবস্থায়, নিঃস্বপ্নের ঘুম ঘুমানো মানুষ আমি স্বপ্নেও যখন রেজিষ্ট্রশনের জটিল অঙ্ক মেলাচ্ছি, সুবহে সাদিকে অনিন্দিতার ফোন- আমি তোর বাসার দরজায়, মূর্তিমান চট্টগ্রাম থেকে এসে হাজির! যাক বাবা, তবে ওই প্যাঁচটা স্বপ্নে ছিল এই প্রশান্তি নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুললাম! ও ঢুকেই বলল- বেজায় ঘুম পাচ্ছে! খুশী হয়ে ওকে আমার বিছানাটা দেখিয়ে দিয়ে বলতে যাচ্ছিলাম- চল ঘুমিয়ে পড়ি!তুই এখানে ঘুমো, আমি পাশের রুমেই আছি! কিন্তু দুজনের মনে জমা অনেক কথা আর ঘুমুতে দিলো না আমাদের! আরেক স্টুজীকে ফোন করে আটটার মধ্যে আসতে বলে আমরা গল্পে মাতলাম অনেক অনে-ক দিন পর……

প্রথমে ঠিক ছিল আমরা নাফাখুম যাবো, শেষ মুহূর্তেও আমাদের অস্থির মন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সেই সুবাদে পরে ঠিক হলো পূবাইল, এমনকি গাবতলী গিয়ে যখন আমরা বগুড়ার টিকেট কাটলাম; তারপরও অনিন্দিতা বলছে- বাস স্ট্যান্ডে ঘুরে ঘুরে যে নামটা পছন্দ হয় সেই জায়গার টিকেট কেটে ফেলি চল! এই হলো আমরা, আমাদের তিন নম্বর স্টুজীর সাথে আপনাদের পরিচয়টা বোধ হয় ঠিকঠাক হয় নি- শারমীন আটটায় এসে জানালো- সে ঘুমুতে গিয়েছে ভোর ৬টায়, তাকে কেন ৭টায় ডেকে ঘুম ভাঙ্গানো হলো! আমার বাসায় চা-পর্ব সেরে নাশতা করতে গেলাম বকশীবাজারে পেনাং এ! রেস্তোরা থেকে বেরিয়ে সিএনজি ঠিক করলাম গাবতলীর উদ্দেশ্যে, দেড়শ টাকা বলার পরেও সিএনজিটা ছেড়ে দিয়ে যখন আফসোস করছিলাম তখনই রেস্তোরা থেকে এক পিচ্চি এল দৌড়ে- আপা, আপনাদের ব্যাগ! আমার ব্যাকপ্যাক তো আমার পিঠে, অনিন্দিতারটাও তাই! আমাদের তিন নম্বর স্টুজী দৌড়ে গেল- এই হলো শারমীন, সব সময়ই এমন আলা-ভোলা!আগের সিএনজিটা পাকড়ালেই ওর ব্যাগটা খোয়া যেত সারাজীবনের মতো, হোটেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ও টের পেত বলে মনে হয় না!

ভেবেছিলাম, এবারে এডভেঞ্চার নয়- কোন একটা শান্তিপূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত জায়গায় তিনজনে এক রাত থেকে আসব সমস্ত জমে থাকা গল্পকে একে একে ভান্ডার থেকে বের করব! কিন্তু কাউন্টারে যখন টিকেট বিক্রেতা বলল- বগুড়া যেতে লাগবে কেবল সাড়ে তিন ঘন্টা; মহাস্থানগড় দেখে রাতে শুধু হোটেলে থেকেই ভোরে ফিরব এটা আর মানতে মন চাইল না! বাসে উঠি শুনি, সাড়ে পাঁচ ঘন্টা লাগবে পৌঁছুতে!তখন বাজে পৌনে বারো, তার মানে যেতে যেতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে- তাহলে আমরা কখন পৌঁছুবো, ঘুরব কখন আর ফিরবই বা কখন! শারমীনকে না কি কাল সকালে ফিরতেই হবে! আর আমাকে রাতেই, কারণ খুব কাছের বন্ধু জুবায়ের এর বিয়েতে বরযাত্রী হয়ে যেতে হবে চট্টগ্রামে রাত ১০টায়!


মহাস্থানগড়


মহাস্থান গড়ের ইটনির্মিত প্রাচীর


গোবিন্দ ভিটা (গুগল মামা দিয়েছে)

যমুনা ব্রীজে এসে কেন যেন চিনতে পারলাম না! কিন্তু দুপাশে নদী আর শীতে জেগে ওঠা চর, তার পাশেই নয়নাভিরাম জঙ্গল- একবার ভেবেছিলাম নেমেই যাই এখানে, সময়টা সুন্দর কাটবে এ জায়গায়! বগুড়ায় পৌঁছে তো মনে হয় দেখা যাবে না আর তাই ছেড়ে দিলাম সব সৃষ্টিকর্তার হাতে! বগুড়া পৌঁছুলাম যখন দিনের আলো মাত্র একটু বাকী!সুপারভাইজারকে বলা ছিল, মহাস্থানগড়ে নামব!মহাস্থানগড় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত বগুড়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদ। স্থাপত্য পড়ার সুবাদে আগে থেকে এর সাথে যতসামান্য যা পরিচয় তা এই দুর্গনগরীর প্ল্যান থেকে।করতোয়া নদীঘেরা পূর্বে পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর নামে খ্যাত এই দুর্গনগরীর প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া যায় ইটনির্মিত প্রাচীর, গোবিন্দ ভিটা, গোকুল মেধ আর আরো কিছু ধ্বংসাবশেষ! কিন্তু বাস থেকে আমাদের মহাস্থান বলে যে জায়গায় নামিয়ে দিল আর লোকে যেদিক দেখিয়ে দিল গিয়ে দেখি এক মাজার! আমরা তখন চরম অস্থির, কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে আমরা ইচ্ছে করেই কোন হোম-ওয়ার্ক করি না, নিজেরাই এক্সপ্লোর করব এই আশায়! আজ হাতে সময় একদমই নেই, সূর্য প্রায় ডুবেই গেছে, মাজার সম্পর্কে আমাদের কারো কোন আগ্রহ নেই, জানতে পারলাম কাছেই মিউজিয়াম; সে সম্পর্কেও আগ্রহ কম!স্থানীয় লোকজন বেহুলার বাসর ঘর এর কথা বলল, গোকুল মেধ নামটা জানে না তারা! পড়িমরি করে কীভাবে যেতে হয় জেনে দিলাম দৌড়! আর তাই কাছেই থাকা গোবিন্দ ভিটা-র খোঁজ পেলাম না, দেখাও হলো না!


গল্পের পেছনের গল্প


বছর দুয়েক আগের গোকুল মেধ


৩১।১২।২০১১ ইং তারিখে তোলা, কোন ঐতিহ্যপূর্ণ জায়গার সংরক্ষণ এবং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সেই বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি হতে হয় অনেক সংবেদনশীল এবং অভিজ্ঞতাপূর্ণ!

তবে গোকুল মেধ দেখে সত্যিই মনটা ভালো হয়ে গেল! একটা পিচ্চি সারাক্ষণ বিনামূল্যে জোর করে আমাদের গাইডের কাজ করছিল- কোথায় বেহুলার বাসর-কক্ষ ছিল আর সাথে আরো নানান জায়গার বিবরণ।১৭২ টি প্রকোষ্ঠ মনে হয় এলাকাবাসীর মনে এ ধারণা জন্ম দিয়েছে যে সাপের গতিপথকে রোধ করার জন্যেই এই আয়োজন! তবে এই মিথ এর পেছনের কাহিনী হলো প্রথম যুগে এটি নির্মিত হয়েছিল বৌদ্ধ উপাসনালয় হিসেবে, এর পরে সেন রাজার আমলে এর উপরে তৈরী করা হয় শিবমন্দির!তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে! গোকুল মেধ এর উপরে বসে আমরা অস্তমিত সূর্যের দিকে তাকিয়ে বসেছিলাম খানিক!
আঁধার ঘনিয়ে এলে সাইটের রক্ষণাবেক্ষণকারী আসল আমাদের বের করে নিয়ে যেতে, তবুও কিছু দেখতে তো পেলাম এই শান্তি নিয়েই আমরা বের হয়ে দৌড় বাস-স্ট্যান্ডের দিকে!বাসের টিকেট কেটে ওখান থেকে বাবার জন্যে বগুড়ার দই নিতে ভুললাম না!আমার বাসায় তো জানাই নি, ভেবেছিলাম ফোন আসলে ধরব না! টেনশন করবে এই ভয়ে ফোন ধরে মিথ্যে বলতে পারলাম না! রাত সাড়ে ন’টায় আমি যমুনা ব্রীজের কাছে শুনে বাবা বললেন- ঢাকায় পৌঁছুতে তাহলে বারোটা বাজবে!আমি দুশ্চিন্তা না করতে বলায় বাবা বললেন- তা কেন করবো! বুঝলাম, আমার এহেন অত্যাচার- দুদ্দাড় কিছু না বলে যেখানে সেখানে চলে যাওয়া এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বাবা-মা অথবা আর আমার সামনে প্রকাশ করছেন না তাদের দুশ্চিন্তা!

একটু চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করলাম!ঢাকায় ফিরেই জুবায়ের এর বিয়ের বরযাত্রী হয়ে যাবো চট্টগ্রামে, ওরা অপেক্ষা করবে আমার জন্যে……


চূড়ায় মানুষের অবাধ যাতায়াত


বেহুলার বাসর ঘরে বসে গোধূলীর আলোয় চোখ


তিন স্টুজী সম্পর্কে আরো পড়ুন...

তিন 'স্টুজি'র গপ্পো_শুরু

তিন স্টুজীর ছোট্ট একটা ট্যুরঃ মাওয়ার চরে

তিন স্টুজী এবার কুয়াকাটায়...
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৪
৪৮টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×