আজ ১৫ আগষ্ট। ১৯৬৯ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আব্দুল মালেক ইসলাম বিরোধী শক্তির হাতে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। মূলত ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়েই তিনি এই আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন পাকিস্থানী ইসলামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ। মালেক ভাই কেমন ছিলেন তা লেখার নুন্যতম যোগ্যতাও আমার নেই তাছাড়া তা লিখেও শেষ করা যাবে না। শুধু এতটুকু বলতে পারি বর্তমানে মালেক ভাইয়ের বড় অভাব। আজ ইসলামী আন্দোলন অনেক বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু মালেক ভাইয়ের মত যোগ্যতা সম্পন্ন এবং মানবীয় গুনাবলীর অধিকারী নেতৃত্বের দৈন্যতা প্রতিটি পদে পদে অনুভুত হচ্ছে।
১৯৪৭ সালে বগুড়া জেলার ধুনটের খোকসাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহনকারী শহীদ আব্দুল মালেক ছিলেন ঈর্ষনীয় মেধার অধিকারী। এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি তে তিনি রাজশাহী বোর্ডে যথাক্রমে একাদশ ও চতুর্থ স্থান অধিকার করে ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়নের ছাত্র আব্দুল মালেক এত মেধাবী হওয়া সত্বেও ক্যারিয়ার নিয়ে কখনও ভাবতেন না। সব সময় বিচলিত থাকতেন ইসলামী আন্দোলন নিয়ে। তিনি বলেতেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের চাইতে ইসলামী ছাত্র সংঘের অফিস আমার কাছে অধিক বেশী গুরত্বপূর্ণ”।
তিনি ছিলেন একজন উচু মাপের দ্বায়িত্বশীল। নবী রাসুল আর সাহাবায়ে কেরামের আর্দশ তার জীবনে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাইতো শিক্ষা শিবির কিংবা বিভিন্ন প্রোগ্রাম গুলোতে তাকে দেখা যেত বিভিন্ন সেবা মুলক কাজে। সারাদিন প্রোগ্রামে পরিচালকের ভুমিকা পালন করার পর তাকে দেখা যেত কখনও বা ডেলিগেটদের জন্য প্লেট পরিস্কার করছেন কখনও বা তাকে দেখা যেত বুক পরিমান পানিতে নেমে ডেলিগেটদের ব্যবহৃত টয়লেট মেরামত করছেন।
তার কর্মীদেরকে তিনি তার জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসতেন। কেউ যদি তার ফজলুল হক হলের ১১২ নং রুমে থাকতে যেতেন তবে তাকে তিনি তার বিছানা ছেড়ে দিতেন। আর তিনি রুমের মেঝেতে থাকতেন ইট কিংবা বই দিয়ে বালিশ বানিয়ে। অত্যন্ত সরল জীবন যাপন করতেন তিনি, বিলাসীতাকে কখনও প্রশ্রয় দিতেন না।
তার এক জোড়া পান্জাবী আর পায়জামা ছিল। তিনি রোজ তার রুমে ফিরে রাতের অন্ধকারে তার পড়নের জামা কাপড় ধুয়ে দিতেন, সারা রাত শুকাতো আবার ওটা পরদিন সকালে ব্যবহার করতেন।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত সরল প্রকৃতির। একবার ময়মনসিং গিয়ে বর্তমান জামায়াত নেতা কামারজ্জামানের কাছে উঠেছিলেন। ট্রেন তাকে যখন ময়মনসিং নামিয়ে দেয় তখন রাত তিনটা কি চারটা। কামারজ্জামান ভাইকে ডাকলে তার রুম মেটের ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে তাই তিনি বাকি রাতটুকু দরজায় দাড়িয়ে কাটিয়ে দেন। ভোরে যখন কামারজ্জামান ভাই দারজা খুলে বাহিরে আসেন তখন অবাক হয়েছিলেন আব্দুল মালেকের মহানুভবতা দেখে। এরকম হাজারো গুনের সমষ্টি ছিলেন আব্দুল মালেক।
তিনি ছিলেন ভারসাম্যপুর্ন জীবনের অধিকারী। একদিকে তিনি যেমন ছিলেন ভাল ছাত্র আবার পাশাপাশি একজন ভাল সংগঠক। সহসাই তিনি সংগঠনের সকলকে আপন করে নিতে পারতেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও ছোট বড়, বন্ধু বান্ধব সকলের সাথে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন। নবম শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় তিনি তার বাবাকে লিখেছিলেন, “বাড়ির কথা ভাবিনা, আমার শুধু এক উদ্দেশ্য, খোদা যেন আমার উদ্দেশ্য সফল করেন। কঠিন প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং কঠোর সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছি, দোয়া করবেন।“
মায়ের প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের প্রতি তার ভালবাসা ও আবেগ ছিল অপরিসীম। আপনজনদের প্রতি ভালবাসা কখনও তার আন্দোলনের পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। তিনি লিখেছিলেন, “ মায়ের বাধন ছাড়া আমার আর কিছু নেই। বৃহত্তর কল্যাণের ফলে সে বাধনকে ছিড়তে হবে। কঠিন শপথ নিয়ে আমি আমার পথ চলতে চাই।“
তিনি কিশোর ও তরুনদের খুব ভালবাসতেন। তাদের নিয়ে আগামী দিনের বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। তাইতো তিনি আহবান জানিয়েছিলেন, “ আমরা চাই দুনিয়ার বুকে একটা ইসলামী হুকমাত প্রতিষ্ঠা করতে। আমাদরন সেই স্বপ্নের কাফেলায় তোমরাই হবে নিশান বরদার, তোমরাই হবে তার সিপাহসালার।“
তিনি সবসময় শাহাদতের মুত্যু কামনা করতেন, আল্লাহ তার সেই আশাও পূরুণ করেছিলেন। তার কথা ও কাজে তার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। তার ছোট্র সাথী বিলালের কাছে তিনি লিখেছিলেন, “ দোয়া কর, আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জানমাল কোরবানীর যে শপথ নিয়েছি আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে, জীবনের বিনিময়ে হলেও যেন তার মর্যাদা রক্ষা করতে পারি।“ আর তাইতো ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ইসলাম বিরোধীদের নির্মম হামলার শিকার হয়েছিলেন ১৯৬৯ সালের ১২ আগষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যানে। তিন দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন ১৫ আগষ্ট।
আমাদের দেশে আর হয়ত আব্দুল মালেক ভাইয়ের জন্ম হবে না কিন্তু তার সমগ্র জীবনের প্রতিটি অধ্যায় পর্যালোচনা করে, তার অভিজ্ঞজ্তা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে আমরাও যেন ইসলামী আন্দোলনের এই ময়দানে নতুন নতুন নের্তত্ব সৃষ্টি করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে পারি, মহান আল্লাহর কাছে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
শহীদ আব্দুল মালেক : ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রথম শহীদ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।
১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।