রাহান তাপস
এক-
ঈদের দিন প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাবো।তাই মানজা মেরে নতুন শার্ট প্যান্ট ও জুতো পড়লাম আর সাথে অনেক দামি এবং সখের সানগ্লাসটা পকেটে নিলাম।ভালো মতো পারফিউম দিয়ে বাহিরে বের হলাম।গলির মোর পার হয়ে বড় রাস্তায় উঠলাম।কোন রিক্রাসা পেলাম না।
রিক্রাসা ওয়ালাদের ও তো ঈদ আছে!তাদের ও তো জীবনে সাদ্ আহ্লাদ আছে।তারাও হয় তো তাদের প্রিয়তমার কাছে গেছে।নিরুপায় হয়ে বাস স্টানে দিকে রওনা হলাম।
আমার প্রেমিকার বাসা আমাদের বাসার থেকে এক কিলোমিটার হবে হয় তো।তবুও বাসেই উঠলাম।উঠার সময়ই ঘটলো এক অঘটন।ভিড়ের মধ্যে কন্টাকটার আমাকে টান দিয়ে তুলতে গেলে আমার বুকপকেট থেকে আমার সেই প্রিয় সানগ্লাসটা রাস্তায় পরে যায়।মানুষের পায়ে তলে পিছে চুরমার হয়ে যায়।আমি প্রচন্ড খেপে গিয়ে কন্টাকটারকে কষে কয়টা চড় দিলাম।
মধ্য বয়েসি সেই কন্টাকটার মুখ বুঝে তা সহ করলো।আর বললো,'ভাইজান ঐ চশমার দাম হইবো কতো?'
বললাম,তিন'শ নব্বই টাকা।
তাকে দেখলাম ড্রাইভারের পাশ এক চিপা থেকে একটা ছোট পোটলা বের করলো।তার ভিতর দিয়ে অনেকগুলো খুচরো টাকার নেট ও কয়েন বের করলো।পর আবার পোটলাতে রেখে পোটলাটা আমার হাতে তুলে দিলো আর বললো,'মুই গরিব মানু,নুন আইনতেই পান্তা ফুরায়,তবুও বহুত কস্টে কয়ড়া টাহা জমায়ে ছিলাম, তো এহানে কতো টাহা আছে মুই কইতে পারুম না।যদি কম থাহে তয় কাইলগা বাহীড়া দিয়া দিবু।
আমি বললাম ঠিক আছে তোমার বাসার ঠিকানা দেও।আমার গন্তব্যস্থল
চলে আসাতে আমি দ্রুত লেখে পোটলাটা নিয়ে আমার গন্তব্য নেমে পড়লাম।
দুই-
সন্ধ্যায় সেই কন্টাকটারের দেয়া সেই ছোট্ট পোটলাটা খুলে দেখলাম,একটা ভাজ করা পুরনো কাগজ আর তার সাথে কিছু টাকা পয়সা।টাকা পয়সা হিসাব করে দেখলাম চার'শ দশ টাকা পাচানব্বই পয়সা।পরে কাগজটা খুলে দেখলাম একটা প্রেসকৃপশন।এক বছর আগের এক সরকারী চোখের ডাক্তারের প্রেসকৃপশন।এতে লেখা রোগীর পাওয়ারি চশমা লাগবে।চশমা কেনার জন্যই সে এই টাকা গুলো জমিয়ে ছিলো।
নিজেকে খুব ছোট মনে হলো।তার জীবনের সমস্ত সয়ঞ্চ আমাকে তুলে দিল।সে কতো বড় মাপের মানুষ।আমার সামান্য সখের সানগ্লাস মাত্র,আবার ইচ্ছে করলেই কিনে নিতে পারবো।নিজেকে খুব ঘ্রনা হলো।সঙ্গে সঙ্গে সেই ঠিকানায় গেলাম।কান্টাকটারকে পেয়েও গেলাম।
আমাকে দেখেই সে বললো,'ভাইজান আইজ এক বেলা বাসে কন্টাকটারি করছি।আপনারে আইজ বিশ টাহা দিতে পারুম।কাইল বাহী টাহা দিয়াদিমু।'
এ কথা শুনে আমার চোখে পানি এসে গেলে।তাকে বললাম টাকা লাগবে না।আমার সাথে চলো।একজন ভালো চোখের ডাক্তার দেখিয়ে,সুন্দর একটা চশমা কিনে দিলাম এবং তার পোটলাটা ফিরিয়ে দিয়ে বললাম,'তুমি অনেক বড় মাপের মানুষ।তুমি কিছু মনে রেখো না, তোমার সাথে আমি খারাপ ব্যাবহার করেছি ।এই ঈদের দিনে তুমি আমাকে মা করে দিয়ে।'
সে বললো,আফনাকে মুই মা করার কে?আফনাকে সেই সখের চশমা খানা কিনে না দিতে পারলে মুই শান্তি পামুনা।
অনেক না করা সত্বও সে আমাকে সেই সখের সানগ্লাস খানা কিনে দিল, তার জমানো টাকা দিয়ে।আমি আজও তার সেই সানগ্লাস পড়ে ঘুরি আর তার কথা মনে করি।যানি না সে আজ কেমন আছে!আমাকে কি আজও সে মনে করে কি না ?তবে আমি তার কাছ থেকে শিা পেয়েছি।মানুষ শুধু দামি পোশাক-আশাক আর শি-দি হলেই বড় বা শ্রদ্ধার পাত্র হয় না।মানুষ যদি বড় মনের না হয় তবে তাকে ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা করা যায় না।
তিন-
ঈদের দিনই তাকে আমার বাসায় এনে পেট ভরে কোর্মরা পোলাও খাওয়ালাম।আর তার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা লেখে রাখলাম।পরে সেই ঠিকানায় আমার সানগ্লাসের টাকাটা মানি ওয়াড়ার করে পাঠিয়ে দিলাম।
* * * *
রাহান তাপস
0178575818
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




