somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বান্দরবনে একদিন : ৩য় এবং শেষ পর্ব

০৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এই ভ্রমণ কাহিনী মূলক সিরিজটা শুরু হয়েছিল দীর্ঘ আটমাস আগে । আজ এই যাত্রার শেষ পর্ব । গত পর্ব যেখানে শেষ করেছিলাম সেখান থেকে আসি ।

ঘুম ভাঙল ভোর ছটায় । বলা চলে ভাঙার চেয়ে ভাঙানো হল । কেননা এটাই ছিল আমাদের প্রথম ট্রাকিং । আমরা ঠিক জানতাম না বগা লেক থেকে হেটে রুমা বাজারে পৌছাতে আমাদের কত সময় লাগবে । তাই আমরা চাচ্ছিলাম যত দ্রুত উঠে খেয়ে নিয়ে রওনা হওয়া যায় ।

তো আমরা খেতে গেলাম সিয়াম বমের হোটেল এবং বাসায়, সেখানে খাওয়া দাওয়া সারলাম সাড়ে সাতটার ভিতরে । খাওয়া শেষে আমরা কিছুক্ষণ বসে এর পরে রওনা দিলাম ।পাহাড়ী জনগোষ্ঠী পানি রাখবার জন্য বিচিত্র এক ধরণের পাত্র ব্যবহার করে । এটা দেখতে এরকম ।



সুন্দর তাই না ?

আমরা রওনা দিলাম আটটার দিকে । প্রথমে একটু জোর কদমে হাটলাম কারণ যতক্ষণ দেহ পূর্ণ সতেজ থাকে ততক্ষণ একটু দ্রুত হওয়াই ভাল ।

সকাল আটটার সময়েও আমরা আসবার দিনের মতো ধোয়া ধোয়া মেঘের দেখা পাই । খুবই সুন্দর লাগে এটা দেখতে ।



আরো সময় গড়াল । পরিষ্কার হয়ে আসছিল সব, কেটে যাচ্ছিল মেঘ । কিছু দূর সামনে এগুতেই চোখে পড়ল অচল অটল সবুজ গিরিধার । সত্যি সুন্দর যেন এখানে গড়াগড়ি খায় নিজেরই মতন করে ।



এই বারে কিছু দূর এগোবার পরেই চোখে পড়ল ছোট একটা ঝর্ণার ধারা । একে ঠিক ঝর্ণা বলার চেয়ে ছরা বলাই ভাল । বন্দী করলাম ক্যামেরায় -



এরকম হাজারো ছরা গিয়ে মিশছে একটা বড় ঝরণায় তার থেকে উৎসরিত ঝর্ণাধারার ছবি এবারে দেখি -



এই ঝিরিপথ অনেকটা দূরে গিয়ে জন্ম দিয়েছে সাঙ্গু বা শঙ্খ নদের । কোথাও কোথাও জলের ধারা বেশ গভীর । সেখানে ঢেউও বেশ । তারই একটা নমুনা -



পুরো তিনটে পর্ব আপনাদেরকে সাথে নিয়ে ঘুরলাম অথচ আমাদের গাইড বাবাজী নামটাই বলা হল না আপনাদের । এর নাম রাহাত । বয়স আঠারো দেখে বোঝা যায় ?



জবর একটা হাসি দিয়েছে সে ? কি বলেন ?

যাত্রা পথে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা ছিল । কিন্তু আমরা সবাই ছিলাম ক্লান্ত আর মোটকথা সেদিনের শেষ নৌকো মিসের ভয় ছিল সবার মনে । তাই এক এক দফা ছবি তুলতে গিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম । শেষে অন্যের ধমকে অনেক ছবি তুলিইনি । আপনাদের সাথে সাথে আমারো আফসোস হচ্ছে সেসব ছবির জন্য ।

যা হোক পথ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে । ঝিরি এখানে অনেক চওগা একই সাথে গভীর । আমাদের প্রায় ত্রিশ বার ঝিরি পার হতে হয়েছিল ।



বেলা একটা বেজে যাবার সময় আমরা এই পাহাড়চূড়োটার দেখা পেলাম । এইটির পরে আরেকটু হেটে এগোলেই সর্বশেষ পাহাড়ে উঠতে হয় । এর পরেই রুমা বাজার ।



আমরা পৌছে গেলাম রুমা বাজার । আর একটু পরেই রুমা থেকে বান্দরবনের উদ্দেশ্যে নৌকা ছাড়বে । তা গিয়ে ধরবো । খেয়ে নিয়ে আমরা প্রস্তুত হলাম । ঘাট থেকে ছাড়ল নাও । আমাদের দিকে তাকিয়ে রইল ছোট্ট ছেলে গুলো ।



আমার খুব মায়া হচ্ছিল ওদের প্রতি । ইচ্ছে করছিল থেকে যাই না আর কটা দিন । কিন্তু সময়ের বাধনে বাধা আমাদের যে চলতে হবে সামনের পানে ।



আমার ভ্রমণ এখানেই শেষ । তবে ছবি কিন্তু আরো বাকি আছে । এখন আমরা এই সফরের বেশ কিছু ভিন্ন ধরণের ছবি দেখবো । এ সব ছবিতে পার্বত্য চট্রগ্রামের অধিবাসীদের যাপিত জীবনের চিত্র ফুটে উঠবে বলেই মনে করি ।

প্রথমে যে ছবিটা দেখছেন তাকে স্থানীয় অধিবাসীরা বলে থাকেন আলু । আমার কাছে জিনিসটা নতুন বৈকি-



আমরা জানি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস আমাদের মতন নয় । একটু বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় । সে রকম এই ছবিটা আমার কাছে ধরা দিয়েছে বিচিত্ররূপেই -



এই শুকর টিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিক্রির জন্যে বাজারে । শুকরের ঘোৎ ঘোৎ যে কত মারাত্নক সেটা আমি এখানেই প্রথম শুনি ।

এর পরের ছবিটি একজন লোকের যে কিনা একটি বাশের তৈজসপত্র তৈরি করছে ।



পরের ছবিটি শুধুমাত্র শিশুদের । শিশুরা সুন্দর এমন কি উদোম নগ্ন গায়েও-



পরের ছবিটি সত্যই মজার । অফ সিজনে পাহাড়ে ভুলেও কেউ যাবেন না । গেলে এ রকম পস্তাতে হবে । আমার দ্বিতীয়বার ভ্রমণের সব কষ্ট মাটি হয়েছে ।



পুরো ভ্রমনে আমাদের সাথে ছিল একটি দুই জনের ফরাসি দল তারা পিতা পুত্রে বেশ মজা করেছে আমাদের সাথে । প্যাট্রিক এবং অ্যালান তাদের নাম ।




এবারে বন্ধুদের জন্য ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য (যদিও আমি নিজেই একজন নবিশ ভ্রমণ কারী):

১) বান্দরবন বগা লেক যাবার উপযুক্ত সময় আমার মতে অক্টোবরের শেষ হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত । এটা অতি অবশ্যই তাদের কথা বিবেচনা করে বলা যারা কম কষ্টে ঘুরে বেড়িয়ে আনন্দ পেতে চান ।
২) ভরা বর্ষায় পথ ঘাট পিচ্ছিল থাকে । তাই অভিজ্ঞ না হলে না যাওয়াই মঙ্গল ।

৩) ঢাকা থেকে বাসে চড়ে আপনাকে আসতে হবে বান্দরবানে । সেখান থেকে রুমা যাবার জন্য আপনি পাবেন বাস । প্রতি ঘন্টায় ছাড়ে । এই বাস জার্নি খুব খারাপ । রাস্তা বেশ খারাপ ।

৪) একটা ব্রিজ করা হচ্ছে, সেটা যদি কমপ্লিট হয়ে গিয়ে থাকে তবে সরাসরি রুমায় গিয়ে নামবেন বাস থেকে । সেখানে থাকার মত বেশ কিছু হোটেল আছে । একটাতে টিভিও ছিল ।
৫) রুমা থেকে ট্রেকিং এর জন্য আপনাকে অনুমতি নিতে হবে আর্মিদের কাছ থেকে । সেখান থেকেই আপনাকে গাইড সরবরাহ করা হবে । তাকে নিয়ে চলে যান যেখানে খুশি ।
৬) গাইডের প্রতিদিনের বেতন চারশ টাকা । অর্থাৎ তাকে নিয়ে দুদিন ট্রেকিং এ গেলে আপনাকে দিতে হবে আটশ টাকা । আপনার দল দুজনের হলেও আটশ, পঞ্চাশ জনের হলেও আটশ ।
৭) যারা বগা লেক থেকে আরো বেশি দূরে যেতে চান, তারা অভিজ্ঞ গাইড নেবেন । আর অভিজ্ঞ গাইডরা আবার পেমেন্ট বেশি নেন
৮) মশা মাছি তেমন কিছু দেখিনি দুবারের একবারেও । দ্বিতীয়বার আমি অনেক দূরে গিয়েছিলাম । তাই অডোমাস খুব বেশি দরকার বোধ করি না । তবুও নিয়ে নেয়া ভাল
৯) সব থেকে দরকারী বিষয় রাবারের জুতো । ঢাকা থেকে নিন বা রুমা থেকে নিন নিতেই হবে । নইলে হাটতে গিয়ে ফোসকা পড়তে পারে কিন্তু ।

যেতে বা আসতে অনেকের হয়ত অনেক কষ্ট হবে । হয়ত অনেকেই ভাববেন দূর গিয়ে কি হবে ? কিন্তু যা দেখে আসবেন সে সত্যিই চমকপ্রদ । আরেকটি বগা লেকের ছবি দেখিনা কেন ?



শেষ হল ছবি ব্লগ ।

উৎসর্গ : প্রিয় সুমনকে । আর এইচ সুমন (সুমন্টোগ্রাফির সুমন) । বেচারা জ্বরে আক্রান্ত । আজ আমার সাথে তার ছবি তুলবার জন্যে যাবার কথা ছিল । কিন্তু পারেনি । আপনারা দোয়া রাখবেন তার জন্য

পূর্ববর্তী পর্বসমূহ :

১) বান্দরবানে একদিন, ১ম পর্ব

২) বান্দরবানে একদিন: ২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৩২
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×