গতবছর এপ্রিল-মে মাস থেকে শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলাম । শারীরিক অসূস্থ্যতা ছিল রেনডম । একেকসময় একেকটা উপসর্গ দেখা দিত । কখনও পেটব্যাথা, মাথা ব্যাথা, পায়ে ব্যাথা, কোমরের দু পাশে ব্যাথা, বুকের বা পাশে ব্যাথা, সবসময় বমিবমি ভাব, কিছু খেতে গেলেই বমি আসা , প্রচন্ড মাথা ঘোরা, শারীরিক দূর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, অনিয়মিত ও ঘনঘন প্রসাব পায়খানা হওয়া, প্রসাব হলুদ হওয়া, অল্পতেই আমাশা পাতলা পায়খানা হওয়া, শ্বাসকষ্ট , হঠাত্ করেই দম আটকে যাওয়া, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি আরো অনেক রোগ শোক এ কাহিল হয়ে পড়েছিলাম । একের পর এক ডাক্তার দেখানো, হাজারো টেষ্ট মেষ্ট করেও রিপোর্ট বরাবরের মতো সব নরমাল আসতো । ডাক্তাররা কোন রোগ ধরতে পারতোনা । এন্টিবায়োটিক, গ্যাসের ট্যাবলেট, ঘুম ও টেনশন ফ্রি থাকার ঔষধ দিত । এগুলো খেয়ে কোন উন্নতি হয়না বরং শরীরের অবস্থা দিনকে দিন খারাপের দিকে যেতে লাগলো । টানা ৪ মাস অসূস্থ্য থাকায় আমি মৃত্যুর খুব কাছাকাছি পৌছে গেলাম । দূরের কাছের আত্বীয়স্বজনরা একে একে আমাকে শেষ দেখা দেখে যেতে লাগলো । অনেকে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে আমার সামনেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে । এভাবে আরো কিছুদিন কেটে যায় । অসুখ নির্নয়ে ব্যার্থ ডাক্তার রা শুধু মানুসিক রোগ বলে ট্রিটমেন্ট চালাতে লাগলো । এদিকে আমার অবস্থা এতটাই খারাপের দিকে গেল যে আমি প্রতিটা মূহুর্ত অপেক্ষা করতে থাকি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের । পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলোঃ আমার নামে ইউনুস খতম দেওয়ার । উদ্দেশ্য আমার হায়াত থাকলে সূস্থ্যতা লাভ করা অথবা হায়াত না থাকলে বেশি কষ্ট না পেয়ে দ্রূত যেন আমার মৃত্যু হওয়া ।
ইউনুস খতম করার ৪০ দিনের মধ্যেই রূগীর যেকোন একটা ফয়সালা হয়ে যায় । কিন্তু আমার বেলায় ৪০ দিন কেটে যায় কিন্তু শারীরিকভাবে পূর্ন সূস্থ্য ও হইনা আবার অবস্থার আর বেশি অবনতিও হয়না । এভাবে চলে গেল আরো কিছুটা সময় । একের পর এক ডাক্তার কবিরাজ হার মেনে যাচ্ছে অসুখের কাছে । আমি মানুসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লাম । এভাবে আর কতদিন ? যিনি যেভাবে পারেন পরামর্শ দিতে থাকেন । আমার ফ্যামিলিও সেভাবেই কাজ করতে থাকে । সব শেষের ফলাফলই জিরো । তাহলে কি আমি বাঁচবোনা ?
কিন্তু মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবনে ! আমি বাঁচতে চাই । আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহ মাফ চেয়ে চেয়ে সূস্থ্যতা কামনা করি । আল্লাহর রহমতে
এত অসূস্থ্যতার মাঝেও কখনই নামাজ কাযা হতে দেইনি । অবশ্য শরীর ভীষন দূর্বল হওয়াতে মসজিদে যেতে পারতাম না । ঘরেই নামাজ পড়তাম বসে বসে । একদিন একটি আমলিয়াতের বই থেকে একটি দোয়া সম্পর্কে জানতে পারলাম । যেটা প্রত্যেক ফরয নামাজের পর ৭ বার করে পাঠ করতে হবে টানা ৭ দিন । এর ফযিলত হলোঃ একজন মূমুর্ষ ব্যাক্তি এটা আমল করলে ৭ দিনের মধ্যে তার মৃত্যু হবে অথবা তার সূস্থ্যতার একটা না একটা উছিলা বের হবে । নিরুপায় হয়ে মৃত্যুর ফুল প্রস্তুতি নিয়ে আমি কাউকে কিছু না বলে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই আমলটি শুরু করলাম ।
এক দুই করে ৬ দিন চলে যায় কোন কিছুই ঘটেনা । ৭ দিনের দিন এশার নামাজ পর আমল শুরু করে মোনাজাত করতেই আকস্মিক যে ঘটনা ঘটে গেল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৩৮