somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মা

০৭ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের রানী আপা। মধ্যম মানের স্বাভাবিক একজন মহিলা। শেষ সন্তান হওয়ার ১৬ বছর পরে গর্ভবতী হওয়ার অপরাধে এলাকায় ভয়ানক আলোচিত হয়ে উঠলেন। শেষটায় উনি বাড়ীর বাহিরে আসাই বন্ধ করে দিলেন। প্রথম দিকে পেট ফুলে ওঠাটাকে উনি তেমন গায়ে লাগাননি। অন্য কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেওয়ায় উনি এ ব্যপারটাতে আর সন্দেহ করেননি। কিছু দিন পরে যখন ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেল, পরীক্ষা নিরীক্ষান্তে সমীকরনের উত্তর যখন হ্যাঁ বোধক, তখন উনার স্বামীও ভারী বিরক্ত। বেচারী কি করবে বুঝতে না পেরে দিশেহারা বোধ করলেন। উনারই বা কি দোষ। অনেক দিন মাসিক না হওয়াতে উনি খুব বেশী সতর্ক থাকার প্রয়োজন মনে করেননি। যা হোক রাগে দুঃখে রানী আপা ঘরের ভিতর পালিয়ে পালিয়ে থাকেন। এভাবে দিন যায় মাস যায়, একদিন এল সেই আনন্দ ক্ষন যখন ৪০ সপ্তাহ জমিয়ে রাখা তিল তিল করে গড়া সন্তান ভুমিষ্ট হবে। প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে তার রুপ দেখিয়ে মাকে খুশী করবে। ব্যাথা ওঠার ঘন্টা ২-এর মধ্যে ১ম সন্তান ভুমিষ্ট হল, কিন্তু আঁতকে উঠলেন অত্যন্ত অনভিজ্ঞ দায়িত্বপ্রাপ্ত দাই। বাচ্চাটা খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির। সন্তান ভুমিষ্ট হলেও সমস্যা হল ব্যাথা এখনো কমেনি। কারন বোঝার মত যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নাই দাইয়ের। অনেক অসহায়ের মত অপেক্ষা করে কিছুক্ষনের মধ্য ২য় বাচ্চার মাথা দেখতে পেয়ে উপস্থিত সবাই বুঝতে পারলো কি হতে যাচ্ছে। ২য় বাচ্চাটিও আগেরটার মত ছোট সাইজ নিয়ে ভুমিষ্ট হল। সমস্যা দেখা দিল এবার, আমি ভাল বুঝি না যা শুনলাম তা হল গর্ভফুল বের হচ্ছে না। এ অবস্থাটা নাকি মায়েদের জন্য খুবই বিপদজনক। যে করেই হোক ফুল বের করতেই হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত দাই কোন মতে নাড়ীর এক মাথা ধরে বসে আছেন্ অন্যরা নানান কায়দায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অসময়ে সন্তান আসার বিবৃত দৃশ্যায়নের ভয়ে রানী আপার স্বামী বেচারা আগেই পগারপার। রানী আপাকে নিয়ে প্রচন্ড আতঙ্কের সাথে অপেক্ষা করছে একজন অভিজ্ঞ দাই বা ডাক্তারের। কেউ কি করবে বুঝতে পারছে না। শেষতক সিদ্ধান্ত হল দ্রুত উনাকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবে এবং সে মতে জিনিষ পত্র গুছানো শুরু হল। এদিকে হল কি এই আতঙ্কিক মানুষগুলো বেমালুম ভুলেই গেছে পাশে সুপারির খোসার উপর পড়ে থাকা ছোট বাচ্চাদুটির কথা। সব গুছিয়ে যখন রানী আপাকে নিয়ে সবাই রওনা দিবে, ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন বলে উঠল, 'বাচ্চা দুটারে নিয়া যাও ওগোরে খাওয়ান লাগবোতো।' আশ্চর্য্য সবার মাথায় ব্যাপারটা ঢুকতেই আঁতেক উঠে নজর দিল বাচ্চা দুটির দিকে। দুঃখের সাথে সবাই দেখলো বাচ্চদুটি মারা গেছে।

ঘটনাটা সংক্ষেপে আনাড়ীভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। কাকে কতটুকু নাড়াবে আমি জানিনা। আমি ভীষন নড়েছি। আরো বেশী অবাক হয়েছি জ্ঞান ফেরার পরে রানী আপা জানতে চাইলেন, 'বাচ্চাটা কই?' উল্লেখ্য হাসপাতালে গিয়ে রানী আপার আরো একটা বাচ্চা হয়েছিল, মৃত। ১ম বাচ্চা হওয়ার পরে রানী আপা অজ্ঞান হয়ে যায়। বিধায় বাকী ২টার কথা উনি জানতেন না। রানী আপা জানেনওনা যে উনার বাচ্চা ২টা শুধু মাত্র আমাদের বেখেয়ালের কারনে মারা গেছে। জানলে হয়তো আমাদের কখনোই ক্ষমা করবেন না। (যদিও আমি ওখানে উপস্থিত ছিলাম না, ঘটনার প্রায় ৬ ঘন্টা পরে অফিস থেকে ফিরে আমি জানতে পারি।) তবে নিজেদের এখনো খুব অপরাধী মনে হয়। জানিনা এই মা আমাদের ক্ষমা করবেন কি না?
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×