১। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ কোন্ কাজটি আল্লাহর কাছে সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেনঃ যথাসময়ে নামায আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ মা-বাবার সাথে সদাচরণ করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ এরপর কোন্ কাজটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। (বুখারী ও মুসলিম)
২। হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ কোন সন্তানই তার পিতার অবদান পরিশোধ করতে সক্ষম নয়। কিন্তু সে (সন্তান) যদি তাকে (পিতাকে) দাস অবস্থায় দেখে এবং খরিদ করে মুক্ত করে দেয় (তবে কিছুটা প্রতিদান আদায় হতে পারে)। (মুসলিম)
৩। হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদাচরণ ও সৎসঙ্গী পাওয়ার সবচেয় বেশি হকদার কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা, সে বলল তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা। সে বললঃ অতপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার বাবা। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদাচরণ ও সৎসঙ্গ পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বললেনঃ তোমার মা, অতপর তোমার মা, অতপর তোমার মা, অতপর তোমার বাবা, অতপর তোমার নিকটাত্মীয়, অতপর তোমার নিকটাত্মীয়।
৪। হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ঐ ব্যক্তির নাক ধূলি-মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধূলি-মলিন হোক, ঐ ব্যক্তির নাক ধূলি-মলিন হোক, যে তার পিতা-মাতার উভয়কে অথবা একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও (তাদের সেবা করে) বেহেশতে যেতে পারল না।
৫। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর বিন আস (রা) বলেন এক ব্যক্তি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো, আমি আপনার কাছে জিহাদ ও হিজরত করার বাইয়াত গ্রহণ করতে চাই; এবং (এজন্য) আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে প্রতিদানের আশা রাখি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার বাপ-মায়ের কেউ কি বেঁচে আছে? সে বললঃ হ্যাঁ, তারা উভয়েই বেঁচে আছে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এরপরও তুমি আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদান আশা করো? লোকটি বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ ‘তাহলে তুমি বাপ-মায়ের কাছে ফিরে যাও; তাদের সাথে সদাচরণ করো এবং তাদের খেদমত করো। (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদীসের শব্দগুলো সহীহ মুসলিমের। বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে। এক লোক তাঁর নিকটে এসে জিহাদের অনুমতি চাইলে, তিনি বলেনঃ তোমার পিতা-মাতা বেঁচে আছে কি? সে বললো, হ্যাঁ! তিনি বললেনঃ তাহলে তাদের খেদমত করাকেই জিহাদ মনে করো।
৬। হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় আমার মা আমার কাছে কিছু চাওয়ার জন্য মক্কা থেকে মদীনায় এলেন। তখনও পর্যন্ত তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলামঃ ‘আমার মা আমার কাছে কিছু চাওয়ার জন্য এসেছেন। আমি কি আমার মায়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবো? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘হ্যাঁ, তার সাথে ভালো ব্যবহার কর। (বুখারী ও মুসলিম)
৭। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ‘আমর (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ বড় গুনাহসমূহের মধ্যে একটি হলো (নিজের) বাপ-মাকে গাল দেয়া। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কোন লোক কি তার বাপ-মাকে গাল দিতে পারে? তিনি বললেনঃ হাঁ’। লোকেরা একজন অন্যজনের বাবাকে গাল দেয় আর সে তার জবাবে তার বাবাকে গাল দেয়। একজন অন্যজনের মাকে গাল দেয় আর (এর জবাবে) দ্বিতীয়জন প্রথম জনের মাকে গাল দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ সবচাইতে বড় গুনাহর মধ্যে একটি হলো, কোন ব্যক্তির তার মা-বাপকে লানত করা। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি কি তার মা-বাপকে লানত করে? (তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির বাপকে লানত আর সে আবার তার বাপকে লানত করে। এ ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মাকে লানত করে জবাবে এ ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির মাকে লানত করে।