চিড়িয়াখানা এবং বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে বিপদে পড়তে না চাইলে জেনে রাখুন:
আজ পহেলা বৈশাখ। সবাই মেলাতে যাবেন বা যাবেন অন্যকোথাও। হয়তো অন্যকোন বন্ধের দিনে আপনি যেতে পারেন মিরপুর চিড়িয়াখানায়। তাই আপনার জন্যই লেখাটি শেয়ার করলাম।
বরাবর ই চেষ্টা করি সকলকে সতর্ক করার জন্য নানা যায়গা থেকে ভাল কিছু সংগ্রহ করতে, তার ই ধারাবাহিকতায় আজকের পোষ্ট...
রাজধানীতে নির্মল বিনোদনের ব্যাপক অভাব, আছে কিছু হাতে গোনা কয়েকটা।
তারপরও সপ্তাহে একদিন কোথা হতে বেড়িয়ে আসলে মন/ব্রেন সজীব থাকার কথা জানিয়েছেন ডাক্তাররা।
কিন্তু...
ঘটনা ০১:
আমি গতকাল আমার ওয়াইফ, মেয়ে এবং আমার শালীকে নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা যাই। যেতে যেতে দুপুর হয়ে যায়। তাই ভাবলাম ভিতরে ঢোকার আগে দুপুরের খাবারটা সেরে নেই। তাই আমরা ঠিক করলাম চিড়িয়াখানার গেটের বাহিরে রাস্তার দুপাশে কিছু হোটেলের মত আছে । সেখানে দুপুরের খাবারটা সেরে নেই। তো সেই দোকান গুলোর সামনে যেতেই কিছু ছেলে ভিতরে গিয়ে খাবার খেতে অনুরোধ করলো। তা আমরা একটি দোকানে ঢুকলাম।
কিছুক্ষন পর ওয়েটার এর মত একটি ছেলে এসে বলল: কি খাবেন?
মুরগী-১২০, গরু-১৪০, কাচ্চি বিরিয়ানী-১৬০
তা আমি যেহেতু জানি কাচ্ছি বিরিয়ানী খেতে খুব ভালো, তাই কাচ্ছি বিরিয়ানীই অর্ডার দিলাম।
অর্ডার মত কাচ্চি বিরিয়ানী আসলো। কিন্তু তা কাচ্চি বিরিয়ানী না বলে অন্য কিছুই বলা উচিৎ। কারন একটি প্লেটে কিছু পোলাও দিয়ে তার মাঝখানে এক পিস খাসীর গোসত দিয়ে ঢেকে পরিবেশন করাই হল কাচ্চি বিরিয়ানী !!!!!!!
যাই হোক আমি ম্যানেজারকে ডেকে বললাম এটি কি দিলেন? এটি কি কাচ্চি বিরিয়ানী হল????
তো ম্যানেজার বলল: আমাদের এখানে কাচ্চি বিরিয়ানীর এটাই সিস্টেম?
খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু দুই এক লোকমা খেয়েই বুঝতে পারলাম যে গোসত টি একদিন আগে রান্না করা। কেমন যেন গন্ধ লাগছে। খেতে পারলাম না। এরই মাঝে ওয়েটার দুইটা ক্লেমন ও একটি এনার্জি ড্রিংক নিয়ে এখন। ঐ তিনটি ড্রিংকসের মধ্যে একটি ক্লেমন ও এনার্জি ড্রিংকটা আগে থেকেই খোলা ছিল। আর একটি ক্লেমন আমাদের সামনেই খুলে দিল। তার মানে হল যে দুটি খোলা ছিল তা সবসময়ই খোলা থাকে। এবং ঐ অবস্থায়ই পরিবেশন করে তারা।
আমি বললাম এগুলো নিয়ে যাও। এই ড্রিংকস খাবো না। কিন্তু ঐ ওয়েটার বলল যে এটা তাদের খাবারের মধ্যের একটা মেনু। তাই খেতে হবে।
যাই হোক এখন আমার বুঝতে বাকি নেই। খাওয়া তখনই শেষ করলাম। আমি আমার ওয়াইফ এবং শালীকে টেবিলে রেখেই দাম পরিশোধ করতে কাউন্টারে গেলাম। কারন আমি ততক্ষনে বুঝে গেছি যে টাকা দেয়ার সময় তারা ঝামেলা করতে পারে।
কাউন্টারে গিয়ে দেখি আরও দুটি কাস্টমারের সাথে তারা ঝগড়া করছে ঐ কোন্ড ড্রিংকস নিয়ে। তারা কোল্ড ড্রিংকস খেতে চায় না। কিন্তু তাদের সেই দাম দিতে হবে।
যাই হোক আমি দাম দিতে গেলাম। বললাম কত হল আমার?
দোকানদার: ৯১০ টাকা।
আমি বললাম: কিভাবে
দোকানদার:
তিনটা কাচ্চি বিরিয়ানী ১৬০ x ৩ = ৪৮০টাকা
একটা টিস্যু = ১৫ (যদিও টিস্যুর দাম ৫ টাকা)
তিনটা ওয়ান টাইম গ্লাস ৩ x ৫ = ১৫ টাকা
কোল্ড ড্রিংকস তিনটা ৩ x ৮০ = ২৪০ টাকা ( কিন্তু প্রতিটি কোল্ড ড্রিংকসের দাম ২৫ টাকার বেশি হবে না)
পানি ১ লিটার ৪০ টাকা (যদিও এর দাম ২৫ টাকা)
সর্বোমোট ৪৮০+১৫+১৫+২৪০+৪০= ৭৯০
৭৯০ টাকার ভ্যাট = ১১৮ টাকা
তাহলে সর্বমোট দাম = ৭৯০+১১৮= ৯০৮ টাকা
দোকানদার বলল ৯০০ টাকা দিলেই হবে।
আমি পারিপার্শিক অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম যে এদের সাথে তর্ক করে লাভ হবে না। আবার সাথে আছে ওয়াইফ ও শালী। তাই তাদের টাকা পরিশোধ করে দোকান থেকে বের হলাম। নিকটস্ত একজন নিরাপত্তা কর্মীকে বিষয়টা বললাম। সে Ignore করল। তাই বিষয়টা আমি সবার সাথে শেয়ার করলাম। যাতে আর কেহ আমার মত বিপদে না পড়ে।
এখানে একটু উল্লেখ করি চিড়িয়াখানা সকল সরকারী ছুটির দিন সহ রোববার বন্ধ থাকে।
এভাবেই ব্যক্ত করলেন এক ভাই, অতি ক্ষোভ ও ব্যাথার সাথে।
ঘটনা ০২:
ভাই-ভাবী, ভাই-জীকে নিয়ে টিকিট কাটলাম, বাহির থেকে একটা টিস্যু কিনলাম দ্বিগুন দামে।
ভেতরে গিয়ে নানা পশু পাখি দেখতে দেখতে একটু সাইডে গেলাম।
ভাবী তার ৩ বছরের মেয়েকে কিছু খাওয়ানোর উদ্দেশে বসলাম।
এক ভদ্রলোক তার স্ত্রী বা হবু স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন।
হকার আসল, কেনার জন্য পিড়াপিরি করতে লাগল। না কেনায় সে থ্রেট করে গেল "আমাগো এহানে থাকলে না নিয়া থাকতে পারবেন না। ভালমত ঘুরতেও দিবনা, মজা ও করতে পারবেন না !!!
আমরা পাশে শুনছি তাই হয়ত হকার চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে ঘুরতে ঘুরতে আবার ঐ লোকের সাথে দেখা। তার বৌ কিছু দূরে দাড়ানো, সে হকারের সাথে কথা বলছে, খুব গরম হয়ে।
আমি ও আমার ভাই গেলাম > কি ব্যাপার ভাই?
হকার > আপনাদের ইজ্জত মতে আপনারা চলে যান। গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে দিল। ভাবী আমাদের নিয়ে চলে এলেন।
তারপরও দুর থেকে দেখছিলাম।
পরে বের হবার আগে গেটের কাছে, অভিযোগ করতে গেলাম।
নিজ হাতে লিখলাম বিস্তারিত। সে নিয়ে গেল ওখানকার হেড কর্মকর্তার বাসভবনে। তার সাথে দু ভাই মিলে ব্যক্ত করলাম।
শুনলেন এবং সাথে সাথেই ফোন এ একস্যান নেওয়ার কথা বললেন।
জানি না কতটা করতে পেরেছিলাম, তবে উদ্দেশ্য ছিল নাড়া দেওয়াই।
ঘটনাঃ ০৩
এবার চলুন রমনায়.।.।
জানি অনেকের কমন পড়ে যাবে...
ক)
ক-তে কফি বিক্রেতা,
ভাই কফি খাবেন?, হ্যা না কিছু বলতেই ওয়ান-টাইম গ্লাসে দু কাপ দিয়ে হাওয়া !!!
অনেকক্ষণ পর, দ্বিগুন দাম চেয়ে বসল।
>আরে এত দাম নাকি?
ভাই এখানে রেট এমন ই আপনি হয়ত যানেন না।.....
খ)
খ-তে খলনায়ক চকলেট বিক্রেতা,
ভাই চকলেট লাগবে?
> কয় বার না বললাম লাগবে না
ভাই, নেন না গরিব মানুষ !
> আচ্ছা একটা দাও, এটা কত?
১৬টাকা, ভাই।
>১০০ টাকার নোট দিলাম, ৪০ টাকা রাখলা কেন?
ভাই সামনে রোযার মাস আসতাছে, বেচা-বিক্রি হবে না, তাই বকশিশ রাখলাম ভাই...
বলতে বলতে কেটে পড়ল।
এমন অনেক ঘটনা আমরা শুনতে পাই, রাজধানীর নানা পর্যটন এলাকায়। জানি অনেক ভুক্তভুগীও এই লেখাটি পরবেন। কিন্তু যা হবার হয়েই গেছে... যাদের হয় নি বা পরে আর যাতে না হয় সে কামনা থাকল।
কথা হলো আমরা কি করব?
কিছু টিপসঃ
১* বাহিরে বের হবেন প্লান মাফিক।
২* খাবার, প্রয়োজনীয় সব কিছু যথা সম্ভব ঘর বা নিজ এলাকা থেকে নিয়ে যাবেন।
৩* দুর্বল হয়ে পরতে হয় এমন কোন সংগীকে যতটা কম নেওয়া যায়। কারণ ওরা দু এক জন কে খারাপ কাজ করতে দেখে সবার সাথেই এমন ভেবেই ট্রিট করে।
৪* ওখানকার কেউ মানে পুলিশ বা অন্য সাহায্য করতে না পারলেও যথা সম্ভব অবগত করবেন। যাতে তারা বুযতে পারে তাদের ফাকি-বাজী আমরা ধরতে পারি।
৫* খারাপ কিছু করতে গিয়ে ভাল কিছু আশা করা টা বোকামী।
৬* ট্র্যাপে না পড়লেও ভেবে রাখবেন পড়লে কি করা যায়।
৭* পারতে কোন ঝগড়া বা কিছু কিনতে যাবেন না, একেবারে না ছাড়লে না কিনে বা না নিয়ে ৫/ ১০ টাকা বকশিশ স্বরুপ হাতে ধড়িয়ে দিন। (আপনার ব্যবহারে খুশি হয়ে দিলাম !!!)
৮* কিছু কেনার থাকলে যে কোন ভার্সিটি এলাকা থেকে কিনুন। ফুল/গিফট/ড্রিংস ইত্যাদি।
৯* সর্বপরী মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা যাকে হেফাজত করবেন তাকে কেউ বেজ্জতি করতে পারবে না, আর তিনি যাকে...। তাই তাহার মহত্ব ও বড়ত্ব কাজে ও মনে প্রকাশ রাখবেন।
সবার জন্য শুভ কামনা ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে
শেষ করলাম। ভাল থাকবেন সবাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৯