somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবারো কোনো এক সন্ধ্যায় বাজবে তার সরোদের সুর

১৩ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবারো কোনো এক সন্ধ্যায় বাজবে তার সরোদের সুর
এম এস রানা
৬ নভেম্বর ২০০৮, বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে এই শহরে। সারাদিনের ব্যস্ততা ঝেড়ে ফেলে প্রায় হাজার তিনেক মানুষ এসে জড়ো হয়েছে ঢাকা ক্লাব প্রাঙ্গণে। আগাম খবর ছড়িয়েছিল ঢাকার আকাশে-বাতাসে। আজ রাতে এই শহরে সরোদ বাজাবেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ আমজাদ আলী খান। ক’দিন আগে থেকেই চলছিল তার প্রস্তুতি। বাংলাদেশে ওস্তাদ আমজাদ আলী খানের এটা তৃতীয় সফর। এর আগে প্রায় বিশ বছর আগে রাজীব গান্ধীর সফরসঙ্গী হয়ে তিনি এ দেশে এসেছিলেন। মাঝে একবার এসেছিলেন ইউনিলিভারের আমন্ত্রণে। তবে দর্শনীর বিনিময়ে এদেশে সরোদ বাদন এবারই প্রথম। পরিকল্পনামাফিক বুধবার বিকেলেই ঢাকায় নামেন ওস্তাদ আমজাদ আলী খান। এ দিনটা তিনি কাটান বিশ্রাম আর কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। পরদিন রাতে অনুষ্ঠান। পড়ন্ত বিকেলে ওস্তাদ গিয়ে উঠলেন মঞ্চে। শব্দ পরীক্ষার পাশাপাশি নতুন মঞ্চে নিজেদের বোঝাপড়াটা সেরে নিতে রিহার্সেল করলেন কয়েক ঘণ্টা।
রাত ৯টা। শামিয়ানা টাঙানো ঢাকা ক্লাব প্রাঙ্গণ গমগম করছে শ্রোতাদের পদচারণায়। মিনিট দশেক পরেই ঢাকা ক্লাব সভাপতি সাদত হোসেন সেলিম মঞ্চে এলেন। জানালেন ঢাকা ক্লাবের ৯৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ আয়োজন। তবে ঢাকা ক্লাবের উদ্যোগে এ ধরনের আয়োজন এটাই প্রথম নয়, এর আগেও এ ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ওস্তাদ গোলাম আলী, মেহেদী হাসান প্রমুখ। সাদত সেলিমের ঘোষিত আমন্ত্রণে মঞ্চে এলেন ওস্তাদ আমজাদ আলী খান। তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে মঞ্চে উঠলেন এদেশের খ্যাতিমান শিল্পী নাশিদ কামাল। তিনি দর্শকদের সামনে ওস্তাদ আমজাদ আলী খানের সঙক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরে বললেন, ‘আমরা সবাই, পুরো ঢাকা, আপনার অপেক্ষাতেই ছিলাম। আজ আপনি আমাদের মাঝে এসেছেন, আজকের এই রাত, এই শহর, আকাশ-বাতাস আপনার সুরধ্বনির প্রতীক্ষায়।’
রাত তখন আনুমানিক সাড়ে ৯টা। ওস্তাদ আমজাদ আলী খান বললেন, ‘চাইলে সারারাত একটি রাগের ওপরই বাজিয়ে যাওয়া যায়, এই মুগ্ধতার শেষ নেই।‌’ তবে আজ একটি রাগ নয়, তিনি শোনাবেন বেশ কয়েকটি রাগ। ওস্তাদ এবার আঙুল ছোঁয়ালেন তার সরোদটাতে। মুহূর্তে নেমে এলো সুরের মুর্চ্ছনা। প্রথমেই তিনি শোনালেন একেবারেই নতুন একটি কম্পোজিশন। মহারাষ্ট্রের গণেশ উৎসবের জন্য বিশেষ অনুরোধে তিনি এটা তৈরি করেছিলেন। বাংলাদেশেই প্রথম তিনি এটা পরিবেশন করলেন। প্রথম পরিবেশনা শেষে ওস্তাদ হাতে তুলে নিলেন মাউক্রোফোন। বললেন, একটি ঘটনা। আমজাদ আলী খান বাবা হয়েছেন দুই সন্তানের। একজনের নাম রেখেছেন আমান, অন্যজনের নাম আয়ান। জীবনের এমন পরম প্রাপ্তির বিনিময়ে স্ত্রীকে তিনি কী উপহার দেবেন? হাতে তুলে নিলেন সরোদখানা। চলল সাধনা। স্ত্রীর পরবর্তী জন্মদি উপলক্ষে চেন্নাইতে তিনি উপহার দিলেন নতুন এক কম্পোজিশন। স্ত্রীর নামেই এর নাম দিলেন ‘রাগ শুভলক্ষ্মী’। এবার ঢাকার বাতাসে ছড়িয়ে দিলেন সেই ‘রাগ শুভলক্ষ্মী’। পরবর্তী পরিবেশনার তিনি নাম দিয়েছেন সাউন্ড অব মিউজিক।
এখন সরোদ বাদন দু’ভাবে হয়। একটি ‘ফিঙ্গারটিপস’ অন্যটি ‘ফিঙ্গার নেইলস’। প্রথমটির বেলায় কর্ড ধরতে হয় আঙুল দিয়ে চেপে ধরে। দ্বিতীয়টির বেলায় নখ দিয়ে। এই পদ্ধতিটা ওস্তাদ আমজাদ আলী খানের নিজস্ব উদ্ভাবন। এতে সরোদের সুর আরো সুক্ষ্ম হয়। তিনি বাজিয়েও শোনালেন তার ‘ফিঙ্গার নেইলস’-এ সরোদ। এভাবেই নানা ঘটনা আর কথামালা নিয়ে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলল ওস্তাদ আমজাদ আলী খানের পরিবেশনা। ঢাকা ক্লাবের পক্ষ থেকে ওস্তাদকে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হলো একটি রিকশার মডেল, শিল্পী রফিকুল্পুবীর আঁকা একটি পেইন্টিং, তার স্ত্রী শুভলক্ষ্মীর জন্য একটি নকশিকাঁথার নকশায় গড়া শাড়ি, এমনি আরো অনেক কিছু। ওস্তাদ আমজাদ আলী খান ধন্যবাদ জানালেন, ভালোবাসা জানালেন, জানালেন সবার ভালোবাসায় তিনি মুগ্ধ। আরো কোনো এক সন্ধ্যায় তিনি এ দেশের শ্রোতাকে শোনাতে চান তার সরোদের সুর। অনুষ্ঠানে আমজাদ আলী খানকে তবলায় সহযোগিতা করেছেন তন্ময় বোশ ও ফতেহ সিং।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×