somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলিশ ও বৈশাখ

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বৈশাখ বাঙালির আত্মপরিচয় । বৈশাখ এসে জানিয়ে দেয় বাঙালি সংস্কৃতি কত কত খদ্ধ। বৈশাখকে ঘিরে যে উৎসব, তার উদযাপনে যে সর্বজনীনতা, সে আমাদের জানায়, বাঙালি জাতিগতভাবে অসাম্প্রদায়িক, জানায়, এ ভূখন্ডের মানুষ ক্ষয়িষ্ণু নয়, সহিষ্ণু।

বৈশাখ মানে ঝড় ঝঞ্ঝা উত্তাল অশান্ত প্রকৃতি। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে প্রকৃতি সঙ্গে । তারপর হাতে হাত রেখে ঋজু ভঙ্গীতে দাঁড়ায় বুক চিতিয়ে। এ অনেকটা প্রার্থনার মতো। ঋজুতায় দাঁড়ানোর ওই সারিতে লোকেদের কোনো ভেদ নেই। আবার এই ঝড়ের আগমন উপলক্ষে এরাই করে উৎসব আয়োজন । প্রখর উত্তাপে আকাশপানে চায়, দৃষ্টিতে তার তাচ্ছিল্য । সূর্যকে বাঁকায় ঠোঁট। তারপর ভীষণ উচ্ছলে গান ধরে, 'তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে...' এই হলো বাঙালি। এই-ই তার সংস্কৃতি, তার আত্মপরিচয়ের বৈশাখ ।

বাঙালির এই আত্মপরিচয়টি সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করেছিলেন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর । তিনি জেনে গিয়েছিলেন বৈশাখই পারে মুমূর্ষুরে উড়িয়ে দিতে । জানতেন সকল গ্লানি মুছে দিতে পারে বৈশাখ, পারে ঘুচায়ে দিতে জরাজীর্ণকে, প্রখর উত্তাপে শুদ্ধ করতে পারে ধরণীকে।

পয়লা বৈশাখ বিভাজনের বিপক্ষে। সে অসাম্প্রদায়িক। তার আয়োজন বিশেষ কোনো সম্প্রদায়ের জন্যে নয় ৷ নয় বিশেষ কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসীদের জন্যেও । পয়লা বৈশাখ আর তার সকল আয়োজন সকল মানুষের, বাংলার সকল মানুষের ।

কিন্তু বাঙালির এই আয়োজন এখন আক্রান্ত হয়েছে। না, বাইরের কেউ করে নি এই আক্রমণ। ঐক্যবদ্ধ বাঙালি এখন নিজেরাই বিভাজিত। হরেক রকম বিভাজন। বিভাজিত হয়ে কেবল নিজেরা একলা হয় নি, পয়লা বৈশাখ আর তার উৎসবকেও ভাগ করেছে। নগরের লোকেদের বৈশাখ উদযাপন মেলে না গাঁয়ের লোকেদের সঙ্গে । মেলে না উচ্চবিত্তের সঙ্গে মধ্য কিংবা নিম্নবিত্তের পয়লা বৈশাখ । ভাগ হয়েছে, বিত্তে, ধর্মে, শ্রেণিতে।

এখন পয়লা বৈশাখ মানে পান্তা-ইলিশ ভক্ষণ । বাঙালি সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছেন, নববর্ষ উদযাপনে ইলিশ ভোজন হতো না। বৈশাখে ইলিশ খাওয়া বাঙালি সংস্কৃতির অংশ নয়। এ কেবলই শহুরে রেওয়াজ। নিকট অতীতেই এ রেওয়াজ চালু হয়েছে। পান্তা-ইলিশ এখন ধনী লোকেদের বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।

পান্তা গরিব মানুষের খাবার। এ খাবার এখন সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। পয়লা বৈশাখ এগিয়ে এলে রাজধানীর নব্য ধনীদের মাঝে ইলিশ কেনার ধুম পড়ে যায়। ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম পত্রিকার পাতায় জায়গা করে নেয়। অথচ যে কৃষকদের উপলক্ষ্য করে পয়লা বৈশাখ, তাঁদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতিতে পান্তা-ইলিশ কখনো অপরিহার্য ছিল না। গ্রামের সংস্কৃতি সম্পর্কে রাজধানীর নব্য ধনীদের আসলে সঠিক কোনো ধারণা নেই।

সংস্কৃতি হলো বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য এবং জ্ঞান। এর মধ্যে ভাষা, বিশ্বাস, নৈতিকতা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্প, সামাজিক আচার, সঙ্গীত এবং শিল্পকলা এই বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত। এসব মিলেই সংস্কৃতি । পান্তা-ইলিশের সংস্কৃতি বাঙালির সংস্কৃতিকে সম্মান করবার বদলে ব্যঙ্গ করছে যেন। ইলিশ বাঙালির ঐতিহ্য বটে, সংস্কৃতি নয়। ঐতিহ্যকে সংস্কৃতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার ফলে ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। ইলিশের উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। এভাবে বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশ ধরার উৎসব চললে নিকট অতীতে জাতীয় এ মাছটি হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

চাপিয়ে দেয়া এই অপসংস্কৃতি থাকে বেরিয়ে আসা এখন খুব জরুরি । ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি এক নয়। দুটাই দামি বটে। একের সঙ্গে অন্যর তুলনা চলে না। তেমনি অযাচিত একের ওপর অন্যকে চাপিয়ে দিলে আপন আকৃতিটা হারিয়ে ফেলে । আকৃতিটার পরিচয়টা তখন 'বিকৃতি' হয়ে যায়।❐
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:০৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×