পৃথিবীতে এখন দিবসের ছড়াছড়ি। বছরের এমন কোন দিন খুঁজে পাওয়া যাবে না যা কোন না কোন দিবস হিসেবে কোথাও না কোথাও পালিত হয় না। তাই ফাঁকা স্থান খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর। পদার্থবিজ্ঞানীরা একটি নতুন দিবসের জন্য তাই উপযুক্ত ফাঁকা স্থান খুঁজে পায়নি। অবশ্য শুধু ফাঁকা হলেই তো হবে না, দিনটির বিশেষ কোন তাৎপর্য তো থাকতে হবে। অভিজিৎ রায়ের বইয়ের ফ্ল্যাপে একটি কথা পড়েছিলাম, তিনি মনে করেন বিজ্ঞান বা প্রযুক্তি বিষয়ে বড় বড় ডিগ্রি নেয়া আর সমাজকে বিজ্ঞানমনষ্ক হিসেবে গড়ে তোলা একেবারে ভিন্ন দুটি বিষয়। বিজ্ঞান জনপ্রিয় করতে হলে বড় বড় ডিগ্রির কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন কেবল সহজবোধ্য ভাষায় তা উপস্থাপন করার। তাই কিছু পদার্থবিজ্ঞানী এমন একটা দিবস পালনের কথা ভাবছেন যে দিবসে সবাইকে পদার্থবিজ্ঞানী হতে উৎসাহিত করা হবে। বিষয়টা একটু খোলাসা করে বলা যাক,
সম্প্রতি “র্যাটাটুই” নামে একটি এনিমেশন চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের যৌথ প্রযোজনায়। কাহিনীর মূলমন্ত্র হচ্ছে, “এনিওয়ান ক্যান কুক”। অর্থাৎ যে কেউ রাঁধতে পারে। ফ্রান্সের এক প্রখ্যাত রাঁধুনির জবানিতে এমনটি বলা হয়েছে সেই মুভিতে। আসলেই তাই, আমরা শুধু শুধু মনে করি, না জানি বিষয়টা কি কঠিন। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম মহাকর্ষ, স্থান-কাল শুনলেই দৌড়ে পালাই। মনে করি, আইনস্টাইনের সময়কার বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরাই যা বোঝেনি, আমরা তা বুঝবো কি করে। কিন্তু কথা সেখানেই। চাইলে যে কেউ বিজ্ঞানের যে কোন বিষয় বুঝে নিতে পারে। গাণিতিক জটিল সমীকরণগুলো বোঝার কিন্তু কোন দরকার নেই, প্রয়োজন কেবল বিজ্ঞানের জটিল কোন সমস্যার সাধারণ জ্ঞানটি লাভ করা যার থেকে পরবর্তীতে সে বিষয়ক সাধারণ সেন্স জাগ্রত হতে পারে। এই বার্তাটি পৌঁছে দেয়ার জন্যই নতুন এই দিবস যার নাম “টক লাইক আ ফিজিসিস্ট ডে”।
কসমিক ভ্যারিয়েন্স ব্লগে সিয়ান ক্যারল লিখেছেন, “পাইরেট্সদের পর্যন্ত নিজস্ব ভাষায় মানুষকে কথা বলানোর দিবস আছে। আর পদার্থবিজ্ঞানীদের থাকবে না কেন?” আসলেই “টক লাইক আ পাইরেট” নামে একটি দিবস আছে যা পালিত হয় প্রতি বছর ১৯শে সেপ্টেম্বর। “ককটেল পার্টি ফিজিক্স” নামের একটি পদার্থবিজ্ঞানী জোটের সদস্যরা তাই এই নতুন দিবসের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আশাবাদী। দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ই মার্চ। গণিতবিদ বা গণিত অনুরাগীদের অজানা নয়, এই দিনটি গণিত ভুবনে “পাই দিবস” হিসেবে পালিত হয়। আরেকটি তাৎপর্য হল, এটি আইনস্টাইনের জন্ম দিবস। আর যায় কোথায়, বিশ্বভাবনার আমূল পরিবর্তন করেছেন যে বিজ্ঞানী তার জন্মদিনকেই তো সাধারণ পর্যায়ে সে ভাবনা ছড়ানোর উপলক্ষ্য হিসেবে নেয়া উচিত। এই বিজ্ঞানী গ্রুপ তাই এক পায়ে খাড়া। এ বিষয়ে তারা নিজেদের একটি বুনটলিপিও খুলে বসে আছে। উল্লেখ্য ২০০৮ সালে অর্থাৎ এবারই প্রথম দিবসটি উদ্যাপিত হবে। তারা অনুরোধ করেছেন, সবাই যেন নিজ নিজ প্রতিবেশে এই বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
দিবস না হয় বানানো গেল। কিন্তু দিবস এলেই একটু ছুটি ছুটি ভাব এসে যায়। সেই সাথে সবাই মিলে তা উদ্যাপনের জন্য চাই উপহার সামগ্রী। উপহার নিয়ে সব চিন্তার সমাধান করে দিয়েছে পার্টিকেল জু। এই চিড়িয়াখানায় আছে জগতের তাবৎ সব অতিপারমানবিক কণার আদলে তৈরী পুতুল। চিড়িয়াখানার প্রাণীদের দেখা আপনি জঙ্গলে গেলে পেতেও পারেন। কিন্তু এই অদ্ভুত চিড়িয়াদের পার্টিকেল জু ছাড়া অন্য কোথাও দেখতে পারবেন না। সেই পার্টিকেল জু থেকে কোন একটি পছন্দের কণার নকশায় তৈরী করা পুতুল কিনে নিতে পারেন। বন্ধু বা আত্মীয়ের রকম ভেদে তা উপহার হিসেবে দিতে পারেন। আর কি কি করবেন তা আপনার পছন্দের ব্যাপার। তবে সময় ঘনিয়ে আসছেন, অচিরেই আরও সব ফন্দি-ফিকিরের সন্ধান পাবেন আশা করি।
এই দিবসের উদ্যোক্তাদের একটু কৃতজ্ঞতা জানিয়েই শেষ করছি। ককটেল পার্টি ফিজিক্স গ্রুপের মূলে আছেন জেনিফার উইলেট নামক একজন মার্কিন বিজ্ঞান লেখিকা। গ্রুপের মূলনীতিই হল, “ফিজিক্স উইথ আ টুইস্ট”। অর্থাৎ একটু সুড়সুঁড়ি দিয়ে আম জনতাকে পদার্থবিজ্ঞান শিখিয়ে ফেলতে চাচ্ছেন তারা। সবাইকে আন্তর্জাতিক “টক লাইক আ ফিজিসিস্ট” দিবসের আগাম শুভেচ্ছা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




