Click This Link
২ দিন দার্জিলিং ঘুরার পর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরবর্তী গন্তব্যের। আপনার সময় থাকলে আপনি দার্জিলিং এই থাকতে পারেন। তবে দেশের বাইরে যখন গিয়েছেন তখন যত বেশী সম্ভব নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন।
আমাদের টীমের সুজন ভাই আর ভাবী প্ল্যান করল কলিমপং যাওয়ার। জিয়া আর হিরন ভাইয়ের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় শিলিগুড়ি ফিরে যাওয়া ঠিক করল। আমার সময় থাকলেও জার্নীর ভয়ে কলিমপং না গিয়ে শিলিগুড়ি যাওয়াই ঠিক করলাম। সিদ্ধান্তটা যে ভুল হয়েছে তা পরে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।
দার্জিলিং থেকে ফেরার দিন সকালে বের হলাম শেষবারের মত শহড় ঘুরতে। বিখ্যাত চৌরাস্তায় কিছটা সময় কাটিয়ে একটু এগোলাম। ডানের রাস্তায় মহাকাল মন্দির, রবিবার হওয়াতে ভালই ভীড় পেলাম। রামায়ন পাঠরত ভিক্ষুকও আছে। নেপালীদের দেখলাম নেপালী ভিক্ষুকের জন্য একটু বেশী দরদ দেখাতে। মন্দির পেরিয়ে একটু সামনে গিয়ে তো পুরা টাশকি খেলাম। এ কি দেখছি চোখের সামনে? এই তো খাদের ধারের রেলিং! এখান থেকেই তো দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্গার পুরো ক্লিয়ার ভিউ। লোকজন বলছিল এখান থেকেই কলিমপং আর সিকিম দেখা যায়। নিচে দেখলাম তিব্বতিদের স্কুল। আমরা নয়ন ভরে পাহাড়ের চূড়া দেখলাম। তারপর পাহাড়টা ঘুরে দার্জিলিং এর গভর্নর হাউস আর গীর্জা পেরিয়ে আবার চৌরাস্তায়।
শিলিগুড়ি একটু ঘুরে গেলেই পথে পড়ে মিরিক। মিরিকে চা বাগান আর লেক আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পাহাড়ের উপরে লেক এই তো এক বিষ্ময়। লেকে আপনি কিছুক্ষন বোটিং করতে পারেন। ঘুরেফিরে দেখতে পারেন। এমনকি পুরো এলাকাই ঘুরতে পারেন। আর মিরিক যাওয়ার পথে নেপাল বর্ডার পাবেন।
আমরা মিরিকে ২ ঘন্টার মত ঘুরে ফ্রেশ হয়ে গেলাম। লেকের মাছকে খাবার খাওয়ালাম। পানিতে বনের টুকরো দিরে তার উপর অনেক মাছের ঝাপিয়ে পড়া দেখার মত এক ব্যাপার।
শিলিগুড়ির মসৃন পথে আপনি কমলা আর ওক গাছের সারি দেখবেন। পাহাড়ী জীবন দেখবেন। আর চা বাগান তো আকছার। ভারত আর নেপালের এক সমন্বয় এই দার্জিলিং। যেখানেই যাই নেপালীদের আধিক্যই বেশী দেখি।
মিরিক চমৎকার একটি জায়গা। এর আবহাওয়া আপনাকে অন্যরকম একটি ফ্রেশনেস দিবে। তবে সুযোগ থাকলে গ্যাংটক, অন্তত কলিমপং গেলেই ভাল। আর শিলিগুড়ি ফিরে ১ রাত কাটিয়ে পরের দিন দুপুর ২টার বাসে ঢাকায় ফিরতে পারেন। শিলিগুড়িতে শপিংএর জন্য বিধান মার্কেট, হংকং মার্কেট, শংকর মার্কেট আছে। এছাড়া কসমস সেন্টারে বিগ বাজার বা অন্য যে কোন দোকান থেকে ফিক্সড প্রাইজে শপিং করতে পারেন। বিগ বাজারে শপিং এর সময় হঠাৎ শুনতে পাবেন ১ ঘন্টার জন্য সেল! আর পুরো শিলিগুড়ি ঘুরে দেখার তো সুযোগ থাকছেই। দেখবেন পথে পথে ইতিহাসের বিশিস্ট মনীষীরা দাড়িয়ে আছে। শিলিগুড়িতে যেখানেই যান মহানন্দা ব্রীজ প্রায়ই আপনাকে পার হতে হবে।
আর সব শেষে দার্জিলিং এর কিছু মধুর স্মৃতি নিয়ে ফেরার বাসে রওয়ানা হলাম। সাথে থাকল সুজন মেহেদী পরিবার। বাসে আরও দেখলাম উত্তম গুহ আর চিত্রলেখা গুহকে। বুড়িমারী থেকে ফেরার সময় বাসের সংকটে যাত্রীরা কিছু অধৈর্য হয়ে পড়ে। এতে রাতের বাসে ৩ বাসের যাত্রীদের ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সুজন ভাইয়ের প্রফেশনালিজম এখানে জেগে উঠে। তিনি উকি ঝুকি মারতে থাকেন তথ্যের জন্য। তবে উত্তম গুহ দায়িত্ব নিয়ে এর সমাধান না করলে আমরা বিপদেই পড়তাম। সংকোচের কারনে তাকে ধন্যবাদ দেয়া হয় নি।
পুরো ট্যুর আলহামদুলিল্লাহ ভাল কেটেছে। একটি স্বার্থক ট্যুর বলা যায়। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে সুজন-জিয়া-হিরন ভাই পরিবারের সাহচার্যে। তারা না থাকরে আমি কিছুতেই ঘুরে আসতে পারতাম না। একটি বোরিং সময় পার করে আসতাম। হিরন ভাই সব ইনফরমেশন আগে আগে নিয়ে রাখতেন যেন পরে আমাদের কোন কষ্ট না হয়। খুব কেয়ারিং একটি পরিবার হিরন ভাইদের। জিয়া ভাই বেশ কয়বার আমাদের কারনে বিরক্ত হলেও তিনি বা ভাবী মুখে বা ভাবে তা প্রকাশ করেন নি। আর সুজন ভাই তো চমৎকার একজন মানুষ। সবকিছুতেই সবসময় তার হাসিমুখ। পারিবারিক আনন্দ তাদের সবার মাঝেই আছে। তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।
*ঘুরাঘুরির কথা এখানেই শেষ। পরের পর্বে দার্জিলিং এর কিছু রাজনৈতিক অবস্থা লেখার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০০৯ বিকাল ৩:০২