//১//
একটু আগেভাগেই স্টেশনে এসে পড়লাম। আজকে বৃহস্পতিবার। মোটামোটি ভীড় আছে স্টেশনে। আমি আমার সিট খুঁজে ট্রেনে চেপে বসলাম। আমার গন্তব্য কুমিল্লা।
আমার বগিতে এখনো খুব বেশি মানুষ উঠেনি।অনেক সিটই ফাঁকা। আমার আশেপাশের সিটগুলো ভর্তি হয়ে গেলেও সামনের সিট দুটো এখনো খালি আছে। একজন পুরুষ যখন একাকী ভ্রমণে বের হয়, তখন তার মনে সব সময় একটা ক্ষীণ আশা থাকে যে তার সহযাত্রী একজন সুন্দরী রমণী হবে। কিন্তু আমি তা আশা করি না। এটার অবশ্য একটা ইতিহাস আছে।
হলে আমার রুমমেট বড়ভাই ছিলেন অনু ভাই। বেচারার চেহারা-সুরৎ দারুণ হলেও কেউ তাকে কখনই প্রেম নিবেদন করেনি। এই নিয়ে বেচারার দুঃখের সীমা ছিল না। ইঞ্জিনিয়ারিঙে পড়ার দরুণ ভার্সিটিতে ছেলে মেয়ের অনুপাত ছিল প্রায়১০:১। ভার্সিটির যাও দুএকটা মেয়েকে তার পছন্দ হয়েছিল, দেখা গেছে ঐ মেয়ে আগে থেকেই অন্য একজনের গলায় মালা পরিয়ে রেখেছে। মাঝে মাঝেই উনি এই নিয়ে হাহুতাস করতেন আমার কাছে। আমি ওনাকে তখন বৃথা সান্ত্বনা দিতাম।
একবার উনি নাইট কোচে বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসে চাপলেন। বাস ছাড়বে রাত ১২টায়। একটু পরেই ওনার পাশে এসে বসলেন পরমা সুন্দরী এক রূপসী। অনু ভাই ঘুম ঘুম চোখে বসে ছিলেন। এই মেয়ে পাশে এসে বসার পর ওনার চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে যায়। মেয়ের দেয়া দারুণ সুগন্ধী পারফিউম ওনার মাথা এলোমেলো করে দেয়। উনি কিভাবে এই মেয়ের সাথে কথা বলবেন তা নিয়ে ওনার তখন যত চিন্তা।
সুন্দরী রমণী নিজেই তার সাথে কথা বলা শুরু করে। আস্তে আস্তে তাদের কথাবার্তা জমে উঠে। সময় কোনদিক দিয়ে কেটে যায় তা অনু ভাই নিজেও বলতে পারেন না। এক সময় অনু ভাই ঘুমিয়ে পরেন। ঘুম ভাঙ্গার পর উনি নিজেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে আবিষ্কার করেন। ওনার মানিব্যাগ, মোবাইল,ব্যাগ-কিছুই আর সাথে নেই তার।
আমি আমার রুমমেট বড় ভাইয়ের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমি চাই না আমার সহযাত্রী কোনো সুন্দরী রমণী হোক।
কিন্তু আমার সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে এক পরমা সুন্দরী কন্যা আমার সামনের সিটটায় এসে বসল। বয়স বড়জোর ২১-২২ হবে। লাল রঙেরএকটা সেলোয়ার কামিজ তার পরনে। পায়ে লাল স্যান্ডেল, হাত ব্যাগটিও লাল। এমনকি যে চশমাটা তার চোখে, তার ফ্রেমটাও লাল রঙের। এইসবগুলো জিনিস ম্যাচিং করে কিনতে তাকে মার্কেটে কতটা সময় ব্যয় করতে হয়েছে আল্লাহ্ মালুম!
আশেপাশের অনেকেই মেয়েটার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। মেয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। কিছুটা ভয় ভয় করছে। অনু ভাইয়ের কথা মনে পরে যাচ্ছে। মেয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে তার টার্গেট ঠিক করছে কিনা কে জানে!
একটু পরে ঐ মেয়ে যখন আমার নাম ধরে ডাকল,তখন আমি ভীষণভাবে চমকে উঠলাম। আমাকেই কিনা শেষমেশ টার্গেট হিসেবে নির্ধারণ করেছে! কিন্তু আমার নাম জানল কি করে? ভাবগতিক খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। ভাবলাম বলি যে আমার নাম মুহিত না, আপনি ভুল করছেন। কিন্তু আমার মুখ আমার সাথে বেঈমানী করল। আমার মুখ দিয়ে অনেকটা মুখ ফস্কে বেড়িয়ে এলো-হ্যাঁ, আমি মুহিত। আপনি কে?
মেয়ে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল-আমাকে চিনতে পারছেন না মুহিত ভাইয়া? আমি তমা।
আমি মেয়ের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম-তমা?
-আরে আমাকে না আপনি পড়াতেন, মনে নেই? এই ৫ বছর আগের কথা।
আমি ভাল করে আমার সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকালাম। হ্যাঁ, তমাই। চশমা পড়েছে বলে চিনতে পারিনি। আমি যখন ওকে পড়াতাম তখন ওর চশমা ছিলো না।
//২//
আমি যখন থার্ড ইয়ারে পড়ি, তখন তমার টিউশনিটা পাই। আমার এক বন্ধু আমাকে টিউশনিটা দেয়। দেয়ার আগে তমার অনেক গুণগান গাইল। এটাকে ঠিক গুণগান না বলে “রূপগান” বলা ভাল। তমা সম্পর্কিত তারসব কথাই শেষ হয় তমার রূপের বর্ণনা দিয়ে। তমা দেখতে সুন্দর, উঁচা-লম্বা, খুব স্মার্ট-আরো অনেক কথাবার্তা। ওর “রূপগান” শেষ হলে আমি বললাম- এতই যখন সুন্দরী তখন তুই নিজেই পড়াস না কেন?
আমার বন্ধু হতাশায় মাথা নেড়ে বলে-আমার বাসা থেকে অনেক দূর হয়ে যায়। তোর হল থেকে তো খুব কাছে। তুইই পড়া।
আমি প্রথমদিন তমাকে দেখেই বুঝলাম যে আমার বন্ধু একটুও বাড়িয়ে বলেনি । তমা আসলেই মারাত্মক সুন্দরী। প্রথমদিন বেশিকিছু পড়ালাম না। তার কি কি সমস্যা, সিলেবাস কতটুকু বাকি, সেটুকু জেনেই বিদায় নিলাম।
পরদিন আমি তমাকে যখন বিন্যাস করানো শুরু করবো, তখন তমা বলল- ভাইয়া, আমাকে একটু ত্রিকোণোমিতি করান।
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম- কিন্তু তুমি তো বলেছিলে যে তোমার ত্রিকোণোমিতির কোনো সমস্যা নেই।
-আসলে ভাইয়া আমার কালকে কলেজে ত্রিকোণোমিতি চ্যাপ্টার সিক্সের উপর পরীক্ষা। আমি আমার নোট খাতাটা খুঁজে পাচ্ছিনা। আপনি একটু করিয়ে দেন।
আমার বুঝতে বাকি রইল না যে তমা আমাকে টেস্ট করছে। আমি প্রমাদ গুনলাম। ত্রিকোণোমিতির এই চ্যাপ্টার আমি শেষবার অনেক আগে করেছি। কিছুই মনে নেই। আজকে নিজের মান-সম্মান বাঁচানোই না কঠিন হয়ে যায়!
আমি ত্রিকোণোমিতি করানো শুরু করলাম। এবং আল্লাহ্র অশেষ রহমতে ভালমতই সব অংক করলাম। সমস্যা হল না খুব একটা।
আমার টিউশনি এগিয়ে চলল। তমাকে আমি শুধু অংকই করাতাম। এক-দেড় ঘন্টা অংক করিয়ে আমি চলে আসতাম। এই এক দেড় ঘন্টায় ওর সাথে পড়াশুনার বাইরে আর কোনো কথাই হতো না। আমার মার একটা কথা আমি মেনে চলতাম। আম্মা বলেছিলো- শোন মুহিত, এই টিনএজ মেয়েদের আবেগ-টাবেগ একটু বেশি। এদের সাথে খুব একটা গল্প-টল্প করবি না। হাসি তামাশা করবি না। একটু রুক্ষ হয়ে পড়াবি।
আমিও মার কথামত তমাকে রুক্ষ হয়ে পড়াই। বিশ্বকাপ ফুটবলে তুমি কাকে সাপোর্ট করো এটা জিজ্ঞেস করি না, আমির খানের থ্রী ইডিয়েটস দেখেছো কিনা তাও জিজ্ঞেস করি না, মারিও পুজোর গডফাদার বইটা পড়েছো কিনা তাও জিজ্ঞেস করি না। তমাকে আমি জিজ্ঞেস করি পরীক্ষায় কত নাম্বার পেয়েছে, জ্যামিতির সরলরেখা চ্যাপ্টারে কোনো সমস্যা আছে কিনা, তার কলেজে ক্লাস টেস্ট এরপর কবে হবে।
একদিন আমি একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ পাই। মেসেজটা বেশ বড়। মেসেজের সারমর্ম হচ্ছে মেসেজ যেই মেয়ে পাঠিয়েছে সে আমাকে পছন্দ করে। আমি ব্যাপারটায় খুব একটা গুরুত্ব দিলাম না। এমনকি মেসেজও ব্যাক করলাম না।
পরদিন আবারো মেসেজ আসল। আবারো বিশাল মেসেজ। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই একই কথা। আমাকে তার ভাল লাগে। নিজের পরিচয় অবশ্য সে দেয়নি কোনো মেসেজেই। শুধু জানায় যে আমাকে তার ভাল লাগে।
আমি পাত্তা দেই না। মেসেজ আসুক। কোনো সমস্যা নেই। তিন চারদিন পর আবার মেসেজ আসে। একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলে। নিজের পরিচয় দেয় না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ব্যাপারটা তমার কাজ। আমি পড়াতে গেলে তমাকে লক্ষ করি ভালমত। তার ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন আছে কিনা তা ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু আমার চোখে বিশেষ কিছু ধরা পরে না। তাই ব্যাপারটা নিয়ে আমি ঠিক নিশ্চিত হতে পারি না।
বেশ কিছুদিন পর আমার কাছে চতুর্থ মেসেজ আসে। এই মেসেজে অপরিচিতা তার পরিচয় প্রকাশ করে। অপরিচিতার নাম হচ্ছে তমা,আমার ছাত্রী।
পরদিন আমি তমাকে পড়াতে যাই। তমা খুব ভয় ভয় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। আমার খুবই অস্বস্তি লাগে। আমি চুপচাপ ওকে অংক করাই।মেসেজের ব্যাপারটা নিয়ে কোনো কথা বলি না।
এরপর তমাকে পড়াতে গেলেই আমার অস্বস্তি লাগত। তমারও যে অস্বস্তি লাগে ব্যাপারটা বেশ বুঝতে পারি। এভাবে পড়ানো কঠিন। আপনাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়া একজনের সাথে আপনি প্রায়ই সময় কাটাবেন কিন্তু প্রেমের ব্যাপারটা নিয়ে কোনো কথাই বলবেন না, ব্যাপারটা খুব একটা সহজ নয়।
আমি তমাকে পড়ানো ছেড়ে দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। তমার সাথে প্রেম করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। শেষ যেদিন ওকে পড়িয়ে আমি চলে আসব, ভাবলাম একবার ওকে কিছু উপদেশ দিয়ে যাই। জীবন অনেক বড়, এখনই জীবন গড়ার সময়,এসময় অন্য কোনো কাজে সময় নষ্ট করা ঠিক নয়, ভালমত পড়াশুনা করে ভাল কোনো জায়গায় ভর্তি হও- এই ধরণের কিছু কথা বলব ভাবলাম। কিন্তু শেষমেশ আর কিছু বললাম। চুপচাপ চলে এলাম।
//৩//
-তা আপনার লেখালেখি কেমন চলছে? তমা রিং চিপস খেতে জিজ্ঞেস করল।
ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে। আমি দুটা রিং চিপস কিনে একটা তমাকে দিয়ে আরেকটা আমি খাচ্ছি। তমার প্রশ্নে আমি কিছুটা অবাক হলাম। আমি লেখালেখি করি ব্যাপারটা ও জানল কিভাবে?
আমি বললাম- আমি লেখালেখি করি এটা তুমি জানলে কি করে?
তমা মুচকি হেসে বলল- আপনার মত বিখ্যাত রাইটারের কথা কে না জানে!
আমি খুবই বিব্রত হলাম। গত বইমেলায় আমার প্রথম দুটা উপন্যাস বের হয়। মাঝে মাঝে ব্লগে কিছু লিখি। এই হচ্ছে আমার লেখালেখি। আমি এমন কোনো কেউকেটা হয়ে যাইনি যে আমাকে সবাই চিনবে, রাস্তায় বেরোলেই অটোগ্রাফ নেয়ার জন্য নোটপ্যাড এগিয়ে দেবে।
আমার বিব্রতভাব দেখে তমা মজা পেল মনে হয়। বলল-আপনার দুটা বইই আমি পড়েছি। দারুণ লিখেছেন। আপনার নেক্সট বই কবে বের হচ্ছে?
-তুমি আগে বল আমার লেখালেখির কথা কোত্থেকে জানলে?
-জানলাম আর কি! বলেন না নেক্সট বই কবে বের হবে?
-নেক্সট বইমেলায়।
-আপনার ওয়াইফ কেমন আছে?
-আমি বিয়ে করেছি এটা তুমি জানলে কিভাবে? তুমি কি ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছো?
তমা মাথা নাড়ল। -না।
-তাহলে কি ফলোয়ার?
তমা এবারো মাথা নাড়ল। -না।
-তাহলে?
-উফ, আপনি এত জেরা করেন! বাদ দেন তো।বলেন না কেমন আছে আপনার ওয়াইফ?
-আলহামদুলিল্লাহ্, ভালই আছে। নোয়াখালীতে কি তোমার মামা মামি ছাড়া আরো আত্মীয়স্বজন থাকে?
-না, আর কেউ থাকে না। আমার পরীক্ষা শেষবলে একটু আগেভাগেই মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে যাচ্ছি। তাই একা একাই যাচ্ছি। আরো এক সাপ্তাহ পরে বিয়ে।
-হুম, আগেই তো বলেছ।
-আপনি কি প্রতি সাপ্তহেই কুমিল্লা আসেন?
-হুম,কি করব এই দুই দিন ঢাকায় একা একা। মিলির আরো এক বছর লাগবে পড়া শেষ হতে। ততদিন আমাকে এভাবেই ঢাকা-কুমিল্লা দৌড়াতে হবে।
ট্রেন এগিয়ে যায়। আমরাও কথা বলতে বলতে সময় কাটাই।
ট্রেন কুমিল্লা পৌছালে আমি ট্রেন থেকে নেমে যাই। তমা জানলা দিয়ে মুখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে। গত কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই প্রথম তার মুখ কিছুটা মলিন দেখায়। আমিও প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে থাকি। ট্রেন দূরবিন্দুতে মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তমা জানলা দিয়ে মুখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে। আমিও হাত নাড়তে থাকি।
//৪//
বাসায় পৌঁছে ফ্রেস হয়ে রাতের খাবার খেয়ে আমি বারোটার দিকে অবসর হলাম। মিলি খাবার দাবার গুছিয়ে রাখছে। আমি আমার রুমে এসে ল্যাপটপ খুলে বসলাম। একটা গল্প মাথায় এসেছে। লেখাটা শুরু করে ফেলা দরকার।
আমি টাইপ করতে থাকি। তরতর করে গল্প সামনে এগিয়ে যায়। মাথা আজকে খুব ভাল কাজ করছে। আমি একমনে টাইপ করতে থাকি। একসময় মিলি এসে আমার পাশে বসে।
-কি, আবার উপন্যাস লেখা শুরু করে দিয়েছ?
আমি টাইপ করতে করতে জবাব দিলাম-এই শুরু করলাম আর কি!
-কি লিখছ দেখি।
আমি ল্যাপটপটা মিলির দিকে ঘুরিয়ে দিলাম। মিলি জোরে জোরে পড়া শুরু করল।
“একটু আগেভাগেই স্টেশনে এসে পড়লাম। আজকে বৃহস্পতিবার। মোটামোটি ভীড় আছে স্টেশনে। আমি আমার সিট খুঁজে ট্রেনে চেপে বসলাম। আমার গন্তব্য কুমিল্লা।
আমার বগিতে এখনো খুব বেশি মানুষ উঠেনি।অনেক সিটই ফাঁকা। আমার আশেপাশের সিটগুলো ভর্তি হয়ে গেলেও সামনের সিট দুটো এখনো খালি আছে। একজন পুরুষ যখন একাকী ভ্রমণে বের হয়, তখন তার মনে সবসময় একটা ক্ষীণ আশা থাকে যে তার সহযাত্রী একজন সুন্দরী রমণী হবে। কিন্তু আমি তা আশা করি না। এটার অবশ্য একটা ইতিহাস আছে।
হলে আমার রুমমেট বড়ভাই ছিলেন অনু ভাই। বেচারার চেহারাসুরৎ দারুণ হলেও কেউ তাকে কখনই প্রেম নিবেদন করেনি। এই নিয়ে বেচারার দুঃখের সীমা ছিল না। ইঞ্জিনিয়ারিঙে পড়ার দরুণ ভার্সিটিতে ছেলে মেয়ের অনুপাত ছিল প্রায় ১০:১।…………………………………………………………………………………………………………………
…………………………………………………………………………………………………………………ট্রেন কুমিল্লা পৌছালে আমি ট্রেন থেকে নেমে যাই। তমা জানলা দিয়ে মুখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে। গত কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই প্রথম তার মুখ কিছুটা মলিন দেখায়। আমিও প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে থাকি। ট্রেন দূরবিন্দুতে মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তমা জানলা দিয়ে মুখ বের করে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ে। আমিও হাত নাড়তে থাকি”।
পড়া শেষ করে মিলি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল- ব্যাপার কি, আজকে দেখি প্রেমের গল্প লেখা শুরলে! তুমি তো প্রেমের গল্প লেখো না, খালি থ্রীলার লেখো। আজকে হঠাৎ প্রেমের গল্প! কাহিনী কি, হ্যাঁ? ট্রেনে কি কারো সাথে দেখা হয়েছে নাকি? পুরান প্রেম কি জেগে উঠেছে?
আমি হাসতে হাসতে বললাম- তোমার কি মনে হয়?
-পুরুষ মানুষদের কোনো বিশ্বাস নাই। সব সময় দেখেশুনে রাখতে হয়।
আমি মিলির হাত ধরে বললাম- তাইলে এখন একটু কফি খাইয়ে দেখেশুনে রাখো।
-খাওয়াতে পারি, কিন্তু এক শর্তে।
-কি শর্ত?
-তুমি এই ল্যাপটপটা বন্ধ করো এক্ষুনি। তারপর ছাদে যাও। আমি কফি নিয়ে আসছি।
-জো হুকুম। আমি মিলির হাত ছেড়ে দিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্যাগে ভরলাম। মিলি হাসিমুখে কফি বানাতে চলে গেল। আমি আমাদের ছাদের দিকে রওয়ানা দিলাম।
আমি ছাদে বসে আছি। মিলি একটু পর দুকাপ কফি নিয়ে ছাদে আসল। আমরা দুজন কফি খাচ্ছি আর কথা বলছি। আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। আজ কি কৃষ্ণপক্ষের রাত? নাকি শ্রাবণ মাসের আকাশে মেঘের আড়ালে চাঁদ ঢেকে আছে? আমি জানি না। তবে আমার পাশে বসা এই সদা হাস্যময়ী নারী আমার জীবনকে চাঁদের আলোয় ভাসিয়ে দিয়েছে। ও যদি আমার পাশে সারা জীবন থাকে তবে চাঁদের আলোর অভাব আমি কখনই অনুভব করবো না।
উৎসর্গঃ আপাতত উৎসর্গ করার মত কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না।
©Muhit Alam

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




