অনেক অনেক দিন আগে সত্যযুগে পৃথিবীতে এক মহান রাজা বসবাস করতেন।তার নাম ছিল ধনার্জুন।তিনি ছিলেন এই সমগ্র পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিপতি।তার রাজকোষ মহামুল্যবান ধনরত্ন,সোনাদানায় পরিপূর্ণ ছিল।হাতিশালে হাতি,ঘোড়াশালে ঘোড়া,আর গবাদি পশু যে কত ছিল তার কোন লেখা-জোখা নেই।
বড়োলোকের খেয়াল বলে একটি কথা প্রচলিত আছে।তো আমাদের এই রাজারও একদিন এমন এক অদ্ভুত খেয়াল মাথায় চাপল।রাজা প্রতিজ্ঞা করলেন তিনি এই পৃথিবীর অন্তত একজন মানুষকে পরিপূর্ণ ভাবে সুখি তথা সন্তুষ্ট করবেন।তো আর কি?রাজার ইচ্ছে বলে কথা,রাজ্য জুড়ে হই-হই,রই-রই পরে গেল।কে হবে এই সৌভাগ্যবান ব্যাক্তি,যাকে স্বয়ং রাজা ধনার্জুন সব দিক থেকে সন্তুষ্ট করবেন,কে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যাক্তি যার জীবনে আর কোন চাহিদা থাকবে না।রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর,উপদপ্তর নানা গবেষনা করে এক ভিখারিকে নির্বাচিত করল।
রাজা সেই ভিখারি কে উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ,সুরম্য অট্টালিকা,সুন্দরী-পবিত্র স্ত্রী,উপযুক্ত দাসদাসী এবং অগণিত ধনসম্পদ দান করলেন।এভাবে পথের ভিখারি নিমেষে গন্যমান্য ব্যাক্তিতে পরিণত হল।ভিখারির আর কোন চাহিদা ছিল না,সে তার সব কিছু নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল।রাজা নিজের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পেরে গর্বিত হলেন।
(আমি এর পরের কাহিনী অতি সংক্ষেপে বলে যাব।আশা করি বিবেচক পাঠকেরা নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।)
কিন্তু এর কিছুদিন পরেই ভূতপূর্ব ভিখারি আর বর্তমানে সর্বসুখী মানুষটি নানা চাহিদায় আক্রান্ত হলেন।রাজা তার চাহিদা মেটাতে তার সম্পূর্ণ রাজ্যটাই দিয়ে দিলেও ভিখারি কিছুতেই সন্তুষ্ট হলো না বরং তার চাহিদা দিন দিন বাড়তেই লাগল।
রাজত্ব হারিয়ে রাজা পথে,পথে ঘুরতে লাগলেন।পৃথিবীর শুধু মাত্র একজন মানুষকে সন্তুষ্ট না করতে পারায় রাজার আত্বগরিমায় অনেক আঘাত লাগল।তিনি দুঃখিত এবং রাগান্বিত হলেন।তিনি ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,"হে ঈশ্বর,শুধু আমি কেন?তোমার নিজেরও ক্ষমতা নেই যে একজন মানুষ কে চাহিদাশুন্য করতে পার।"রাজার এই কথা ইশ্বরকে অনেক বিচলিত করল।
ঈশ্বর রাজাকে বললেন একজন মানুষকে খুজে দিতে,ঈশ্বর নিজেই যাকে চাহিদাশুন্য সুখীমানুষে পরিণত করবেন।তবে এখানে শর্ত নির্ধারণ করা হল যে ইস্বর কোন অলৌকিক পন্থায় মানুষের মানসিক অবস্থার কোন পরিবর্তন করতে পারবেন না।
এরপর রাজা একজন বিত্তবান মানুষ কে নির্বাচিত করলেন এবং তার ধন-সম্পদ,সুখ-সমৃদ্ধি অনেক গুন বাড়িয়ে দিলেন।তবুও লোকটির চাহিদা শেষ হোল না বরং বাড়তে লাগল।
তখন ইশ্বর সেই নির্বাচিত লোকটিকে ডেকে বললেন,"কি পেলে তুমি আর কিছুই চাইবে না,তোমার চাহিদা সম্পূর্ণ নিবারিত হবে।"অনেক ভাবনাচিন্তার লোকটি বলল,"হে মহামান্য ইশ্বর আমি নিশ্চিত নই তবে আমার মনে হয় আপনার সমস্থ ঐশ্বরিক শক্তি একান্ত নিজের করে পেলে হয়ত আমার আর কোন চাহিদা থাকবে না।"
কিন্তু নিজের সমস্ত ঐশ্বরিক ক্ষমতা কোন একজন মানুষকে দিয়ে দেওয়া একটি অসম্ভব ব্যপার হওয়াই কোন একজন মানুষকে চাহিদাশুন্য করা স্বয়ং ইস্বররের পক্ষেও সম্ভব হয় নি।