শুরুতে 'মীমাংসার' গুঞ্জন নিয়ে ছাত্রলীগের ২৭তম জাতীয় সম্মেলনে যে ভোট হলো- তাতে দেশের সবচে পুরনো এই ছাত্র সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হলেন এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। দুই বছর মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি সঙ্গে পাচ্ছেন সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে।
সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সারাদেশের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের পর রাত দেড়টায় নির্বাচন কমিশনার আওলাদ হোসেন তিতু ও আবুল কালাম আজাদ নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র সোহাগ আগের কমিটিতে শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব্ পালন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ছাত্র নাজমুল বিগত কমিটিতে ছিলেন সহ সম্পাদকের দায়িত্বে।
নির্বাচনে সভাপতি পদে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও সোহাগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ। আর সাধারণ সম্পাদক পদের ১৬ প্রার্থীর মধ্যে নাজমুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ঢাবি জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত।
বাগেরহাটের ছেলে সোহাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষে। তিনি স্নাতোকোত্তর পরীক্ষা দিয়েছেন। আর ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নাজমুলের বাড়ি জামালপুর জেলায়।
দুই বছর পরপর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও এবার কাউন্সিল হলো পাঁচ বছর পর। এর আগে ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল সর্বশেষ সম্মেলনে মাহমুদ হাসান রিপনকে সভাপতি এবং মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়। এবার তাদের হাত থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন সোহাগ-নাজমুল।
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি 'শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি' এ তিন মূলমন্ত্র নিয়ে পথচলা শুরু ছাত্রলীগের। স্বাধীনতার আগে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের কাতারে ছিলো সংগঠনটি। স্বাধীনতার পর '৯০ এর দশক পর্যন্ত এ ছাত্র সংগঠন ছাত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এরপর ধীরে ধীরে ম্রিয়মান হয়ে পড়ে।
রোববার সকালে ১২টি দলের ডাকা হরতালের মধ্যেই ছাত্রলীগের ২৭তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন জেলা থেকে বাসভর্তি হয়ে সম্মেলনস্থলে আসেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। এই সম্মেলন আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের।
সোমবার সকাল ১১টার দিকে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনের শুরুতে বাছাই করা প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার আওলাদ হোসেন তিতু। পরে তার নির্দেশ অনুযায়ী প্রার্থীরা তাদের মনোয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
এক পর্যায়ে গুঞ্জন শোনা যায়, ভোট হবে না, নতুন কমিটির বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমেই মীমাংসা করে ফেলা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত দুপুর ২টার দিকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সম্মেলন স্থলে সারাদিনই শ্লোগান শোনা যায়- 'শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত, চূড়ান্ত, চূড়ান্ত'; 'সোহাগ-নাজমুল পরিষদ, শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ'।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভোট গণনা শুরুর পর রাত দেড়টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনাররা।
নির্বাচন কমিশনার মিজানুর রহমান শাহীন জানান, এবারের সম্মেলনে মোট ২ হাজার ৩৩৫ জন কাউন্সিলর ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি
কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে সোমবার ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নামও ঘোষণা করা হয়েছে সম্মেলন থেকে। এই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র মেহেদী হোসেন মোল্লা। আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন উর্দু বিভাগের ওমর শরীফ। তারা দুজনেই øাতোকোত্তর শ্রেণীর ছাত্র।
View this link