ভালো হয়ে যাও মাসুদ.....
ভিন্নমত, দ্বিমত মানেই সরকার বিরোধীতা নয়, সমালোচনা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয়- এই সহজ সত্যটা কখনওই শেখ হাসিনা বোঝেনি! অথচ শুধুমাত্র ভিন্নমত, দ্বিমত পোষণ করার কারণেই অজস্র নিরাপরাধী মানুষকে হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। গুম করেছে, হত্যা করছে অবলীলায়।
আওয়ামী দুঃশাসনের ১৫/১৬ বছর শেখ হাসিনা চমৎকার একটা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে, সেই ন্যারেটিভটা হলো, "মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি"। যদিও এই ন্যারেটিভ এর সুস্পষ্ট মন্ত্র ছিলো- তুমি আওয়ামী লীগ হলেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি, আওয়ামী লীগ না হলেই মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি! যদিও এর শুরুটা আওয়ামী লীগই করেছিল স্বাধীনতার পর থেকেই। কিন্তু হাসিনা আমলে সেটা আরও বেগবান, আরও স্থায়িত্ব ও প্রতিষ্ঠা পায়। একটা দেশকে দুই ভাগ করার জন্যে এই একখান ন্যারেটিভই যথেষ্ট। এই একটা শব্দ (মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ অথবা স্বাধীনতার পক্ষ-বিরোধী শক্তি) বুঝিয়ে দেয়, এই দেশে আওয়ামী লীগই দেশের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে এবং অন্যরা সবাই দেশের বিপক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে। মনে হয়, once upon a time "মুক্তিযুদ্ধ" নামে এই দেশে বিশেষ একটা সম্পত্তি ছিল এবং সেই সম্পত্তির মালিকানা এবং ভোগ-দখলের অধিকার একমাত্র আওয়ামী লীগের। এই মালিকানার বলেই তারা গত ১৫/১৬ বছর ইচ্ছামতো লুটপাট করেছে, নির্যাতন নিপীড়ন, খুনখারাপি করেছে। আজ যখন এই আওয়ামী নামের অপশক্তিকে ছাত্র-জনতা মিলে বিতাড়িত করেছে, এখন তারা পুরানো মদ নতুন বোতলে ভরে নতুন বয়ান দিচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে শাসন ক্ষমতায় বসানো হয়েছে!
আফসোস, "মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ" নামের শব্দ বন্ধটি একদিকে যেমন অতি ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গেছে, অন্যদিকে তেমনি বৃটিশ আমলের divide and rule policy ও অতি চর্চার কারণে আধুনিক জনগণের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কাজেই পুরানো বয়ান নতুন বোতলে যতই ঢালা হোক না কেন, সেটাকে কিছুতেই নতুন বলে চালানো সম্ভব হবেনা। মুক্তিযুদ্ধ যে সকলের অংশগ্রহণের যুদ্ধ ছিল, এই দাবীকে আর মিথ্যা বলে প্রচার করা যাবেনা। কারোরই ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। দেয়াল লিখনের মতো বলতে হয়, "দেশটা কোন বিশেষ দলের না, দেশটা কারোর বাবার না, দেশটা কোনো পরিবারের না।"
পালিয়ে বাঁচা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা সোশ্যাল মিডিয়ায় ডক্টর ইউনুস সরকারের বিরুদ্ধে যতই আস্ফালন করুক, মোদি- ট্রাম্পের ভরসায় দিবাস্বপ্নে বিভোর হোন, তাদেরকে একটা কথা মনে করিয়ে দেই- আপনারা ভুলে যাচ্ছেন যে ভগ্নপ্রায় দেশের ত্রাণকর্তার দায়িত্ব নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। আপনাদের আচরণে স্পষ্ট যে, আপনারা কেউই তাকে চিনলেও জানেননা। জানলে পলাতক আপার দাঁড়োয়ান-বুয়া-আবদুলদের সাথে ফোনালাপ শুনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে সংঘবদ্ধ হয়ে পতিত পরাজিত পলাতকদের পক্ষে আওয়াজ তুলতেও কয়েক বার ভাবতেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনুস- স্মিত হাসির আড়ালে ধীর, স্থির, একজন কঠোর মানুষ। যথাসময়ে ক্ষিপ্র, নির্মম অপ্রতিরোধ্য প্রতিপক্ষ।
আপনাদের দুইনম্বর নেতা নসিহত করেছিল- "ভালো হয়ে যাও মাসুদ...."- না, মাসুদ ভালো হয়নি। ভালো হয়নি লীগের একজনও! আপনাদেরও পালাতে হবে- আপনাদের উৎসভূমিতে....
দেশের প্রশাসনে, বিভিন্ন বাহিনীতে, রাজনৈতিক দলে, সুশীল সমাজ নামের ছত্রছায়ায় স্বদেশ স্বজাতিদ্রোহী অপশক্তিবৃন্দ, রুদ্রাক্ষমালায় জপতে থাকুন, "মৃত্যু আসিছে মন্থর পায়ে নাহিরে পরিত্রাণ"।