somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসায় সিক্ত বন্ধু দিবস

০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধু! ছোট্ট একটা শব্দ তবে এর সংজ্ঞাটা মনে হয় কঠিন। সময়, পরিস্থিতি ভেদে এর সংজ্ঞা বদলায়। সময়ের পরিক্রমায় সহজ থেকে জটিল এবং একটি সময়ে প্রয়োজন তথা স্বার্থে গিয়ে ঠেকে এর পরিচিতি। যাইহোক বন্ধুত্বের পরিচিতি নয় এর একটি রূপ নিয়ে আজ কথা বলবো।

কিছু দিন আগে এক স্কুলে জয়েন করেছি। আমার সাবজেক্ট মূলত ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীতে হলেও ৩য় শ্রেণীর দুইটি শাখায় ক্লাস নিতে হয় যার একটিতে আবার আমি ক্লাস টিচার। বাচ্চাদের সাথে আমার বোঝাপড়া কেন যেন খুব একটা হয় না। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি কোন বাচ্চা আমার কোলে আসতে চাইত না তেমন, এমনকি ঘুমের বাচ্চা আমি কোলে নিলেও সেই বাচ্চা কেঁদে উঠতো! এসব কারনে ৩য় শ্রেণীতে ক্লাস দেওয়ার মনে মনে একটু ভয়ে ছিলাম। কিন্তু প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকতেই আমার ধারনা বদলে দিয়েছে এই ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলো। এত আন্তরিক ভাবে আমাকে গ্রহন করেছে যেটা আমার ভাবনার বাইরে ছিল। আমরা ভাবি বাচ্চারা আর কী বুঝে! তাই আমরা সাধারনত এদের কোন বিষয়ে এড়িয়ে চলি, ছোট করে দেখি। এটা যে খুব বড় একটা ভুল আমরা করি সেটা আমি এই স্কুলে জয়েন করে বুঝেছি। প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকতেই সবাই সালাম দিয়ে বসে বলছিল "মিস আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে" । চিন্তা করছিলাম প্রথম দিনেই এরা এই কথা বলছে ! মনে মনে হাসছিলাম এবং বলছিলাম টিচারকে কনভিন্স করার টেকনিক শিখে গেছে এই বাচ্চারা ! এটাকে কেবল-ই কমপ্লিমেন্ট ভেবেছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে দেখলাম যেদিন তাড়াহুড়ায় হিজাবটা বাঁধা একটু কম ভাল হয় বা আমাকে একটু কম ফ্রেশ লাগে সেইদিন তেমন কিছু বলছে না। পরের দিন ভাল, পরিপাটি হয়ে গেলে আবার সেই হাসিমুখে "মিস আপনাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে", এটা থেকে বুঝলাম ওরা আসলেই শিক্ষকদের খেয়াল করে। শিক্ষদের পরিপাটি, সুন্দর করে নিজেদের উপস্থাপনের জন্যে বলা হয় এই কারনেই, যাতে শিক্ষার্থীর মন ভাল হয়ে যায়, প্রফুল্ল থাকে শিক্ষদের দেখে।

গত বৃৃহস্পতিবার ক্লাসে এক বাচ্চা জিজ্ঞেস করছে মিস ফ্রেন্ডশিপ ডে কবে? আমি তো অবাক এই ভেবে যে এরা এখনি এসব ডে নিয়ে চিন্তা করছে ! আগস্টের দ্বিতীয় রবিবার কিনা এটা তখন নিশ্চিত ছিলাম না বা অন্য কাজে ছিলাম দেখে জানিনা বলেছিলাম। আমার থেকে সঠিক জবাব না পেয়ে বেশ দুঃখে সুরেই বলছিল "আমাদের তো গিফট কিনতে হবে, তাহলে কিভাবে কিনবো"! ওরা ভেবেছিল শনিবার। আমি শনিবার ক্লাসে ঢুকতেই সবাই সমস্বরে বলে ওঠে "হ্যাপি ফ্রেন্ডশিপ ডে মিস" । আমি তো টাশকি খেয়ে গেলাম এদের কান্ড দেখে। কিন্তু টাশকির আরো বাকী ছিল সেটা তখনো বুঝি নি! নাম ডাকার মাঝে দেখি বাচ্চাগুলো একগাদা চকলেট আর দুটো কলম রেখেছে আমার টেবিলে। এগুলো নাকি আমার গিফট! বিস্ময়ের চরমে পৌছে গেলাম যখন শুনলাম ওরা আমার ক্লাসে সোমবারে কেক কাটবে। সবাই মিলে নাকি চাঁদা তুলে কেক আনবে! পরে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে নিষেধ করলাম এবং বললাম ফ্রেন্ডশিপ ডে তো রবিবার।

যাহোক ক্লাস শেষ করে অফ পিরিয়ডে টিচার্স রুমে ঢুকবো এমন সময় নোটিশ আসলো আমার এখন নার্সারিতে ক্লাস নিতে হবে কারন নার্সারির ম্যাডাম সহ বেশ কয়েকজন ম্যাডাম ছুটিতে গেছেন। সুতরাং অ্যাবসেন্ট ক্লাস করাতে হচ্ছে অফ পিরিয়ডে। সেখানে ঢোকার আগে ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করিনি আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্যে ! নার্সারির গুটলু গুটলু বাচ্চা, যাদের ক্লাস আমি এর আগে নেইনি এবং হয়ত ওরাও আমাকে দেখেনি, তারাই আমি ক্লাসে ঢুকতেই সালাম দিয়ে বলছে "মিস আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে"। আমি মনে মনে বললাম "কিরে বাবা এদের কী ট্রেইনিং দেওয়া হয় নতুন টিচার আসলেই তাকে এই কথা বলার জন্যে!" মনের কথা মনে রেখেই এদের বাড়ীর কাজ দেখে কিছু লিখতে দিলাম। এর মাঝে এক পিচ্চি বলছে আমি কি রোজ-ই ওদের এই ক্লাস নিবো কিনা। ওদের এই ক্লাসের টিচার নাকি ওদের ধমক দেয় এবং মারে তাই আমি যাতে ক্লাসটা নিই সেটা বলছিলো! কিছু একটা বলে বুঝিয়ে শুনিয়ে দিলাম। লেখা শেষ হলে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দেওয়া চকলেট থেকে কিছু দিলাম ওদের। ছোট্ট একটা চকলেট কিন্তু সেটাই এই বাচ্চাদের যে কী খুশি করে দিল সেটা টাকা দিয়ে কেনা যাবে না।
এদের দেখে মনে হয় আমি তো এই জীবনটাই চেয়ে এসেছি, এই কারনেই এই প্রফেশনটাকে ভালবাসি।

শনিবারের কাহিনী শেষ, সোমবার নিয়ে একটু ভয়ে আছি যে ওরা ক্লাসে কেক নিয়ে চলে আসে কিনা। কিন্তু রবিবার কিছু হবে না এটা ধরেই রেখেছিলাম। কিন্তু ভাবনা আর বাস্তবতা যে একটা হয়না সব সময় সেটার আরো একবার প্রমান পেলাম ক্লাসে গিয়ে। আজও একগাদা চকলেট, চুইংগাম আর একটা কলম দিয়েছে। কখনো ভাবি আমি কী আসলেই এত ভালবাসার যোগ্য? আবারো শুকরিয়া করি যে আমি তো এটাই চেয়ে আসছি, এটাই চাই এবং জীবনের প্রথম কর্মক্ষেত্রে ঢুকেই পেয়ে গেছি সেটা।


আমি ঘটাও করে সব দিবস পালন করার পক্ষপাতী না বরং কিছু কিছু আমার অতিরন্জিত লাগে। তবে বন্ধু দিবস নিয়ে বাচ্চাদের এই হৈ হৈ আমার বেশ ভাল লেগেছে । আমার মনে হয় সব সময়-ই আমরা ক্লাসে বলি বা শেখাই যে ঝগড়া-মারামারি করবে না বন্ধুদের সাথে, তবে পাশাপাশি বছরে একটা দিন যদি কেক কেটে বা অন্য ভাবে আনন্দ করে উদযাপন করা হয় এবং এই দিনে তাদের মাঝে মিলেমিশে থাকার মেসেজটা দেওয়া হয় তবে আরো বেশি কার্যকরী হবে।

বাচ্চাদের দেওয়া ভালবাসা (অনেক গুলো খেয়ে ফেলেছি, তার পরেও এত গুলো আছে এখনো!)



ভালবাসায় সিক্ত বন্ধু দিবস আমার খুব ভাল কেটেছে। সবাইকে বন্ধু দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×