somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থ্যাংকসগিভিং উইকএন্ডের চান্নি পসর রাইতে ড্রাকুলা দর্শন

০১ লা জুন, ২০২১ রাত ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

থ্যাংকসগিভিং উইকএন্ডের চান্নি পসর রাইতে ড্রাকুলা দর্শন
---------------------------------------------------------------
তখন সদ্য পড়তে এসেছি আমেরিকার উত্তর পূর্বদিকের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যাম্পাস টাউন, শহরের জনসংখ্যা মূলত: ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক। আগষ্টে এসেছি, ফল (fall) সেমিস্টারে। আগষ্টের শেষ সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হলো। সেপ্টেম্বর থেকে দেখছি পাতার রং বদলে যাওয়া এবং পাতা ঝরার খেলা। দেখতে দেখতে অক্টোবর পেরিয়ে নভেম্বরে শুরু হলো তুষারপাত। সেই শ্বেত ক্যাম্পাসে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আসলো টানা কয়েকদিনের ছুটি, বাৎসরিক থ্যাংকসগিভিং ডে'র (Thanksgiving Day)। এই ছুটিটা নিয়ে এখানে বিস্তারিত লিখবো না, সেটা আপনারা একটু গুগুল করলেই জানতে পারবেন। সংক্ষেপে বলতে গেলে সেই ১৮৬৩ সাল থেকেই আব্রাহাম লিংকন নাকি এই ছুটিটা নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবারে উদযাপন করে আসছেন, যেটা এখন একটা বৃহৎ জাতীয় উৎসবে রুপ নিয়েছে। যেহেতু নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারে এই দিনটি উদযাপিত হয় তাই এর সাথে শুক্রবারটি বেশীরভাগ মানুষই ছুটি নিয়ে নেয়। ফলে কমপক্ষে চারদিনের একটা ছুটির আমেজ তৈরী হয় সারা আমেরিকায় এই উপলক্ষে। যেহেতু সেটা ছিলো আমার প্রথম দেখা প্রথম থ্যান্কসগিভিং উদযাপন, তাই এ ছুটির ব্যাপকতা এ্ববং বিদেশী ছাত্র হিসেবে এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমি তখনো কিছুই জানতাম না। যখন জানলাম, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।

থ্যাংকসগিভিং এর ছুটি শুরু হবার আগের দিন, অর্থাৎ বুধবার বিকেলে একটা ভাত ঘুম দিয়েছিলাম, ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এপার্টমেন্টের রুমমেটরা কেউ নেই। বাইরে বেরিয়ে দেখি পুরো ক্যাম্পাস খাঁ খাঁ করছে। অন্যান্য উইকএন্ডে দেখছি ক্যাম্পাসে অনেক মানুষের চলাচল। আজ দেখি ক্যাম্পাস একদম ফাঁকা, একটা মাণুষ নেই। আকাশে ভরা পূর্ণিমা। ঘরে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে, টিভি চ্যানেলগুলো দেখতে ভালো লাগলো না। গতকাল লাইব্রেরী থেকে আনা 'ড্রাককুলা' ম্যুভিটির ভিডিও ক্যাসেট চালিয়ে দিলাম। বিভিন্ন সময়ে কাউন্ট ড্রাকুলার জীবনী ভিত্তিক 'ড্রাকুলা' ছায়াছবির রিমেক ভার্সণ নির্মিত হয়েছে , কপাল গুনে হলিউড নির্মিত সবচেয়ে খতরনাক ভার্সনটাই আমি বুধবারে লাইব্রেরী থেকে এনেছিলাম। বাইরে আবারো হাল্কা তুষারপাত হচ্ছে, বিশাল ক্যাম্পাসে কোথাও কেউ নেই, আমি ছাড়া। আর ভিসিআর-এ চলছে কাউন্ট ড্রাকুলার সব রক্ত হীম করা , রক্তচোষা কাজ-কারবার! আমি একটু পর পর রিমোটের 'পজ' (pause) বাটনে চাপ দিয়ে লেপের ভিতর সেঁধিয়ে যাচ্ছি। আবার একটু পরে প্রচন্ড কৌতুহলের রোমান্চে একটু পর কাছিমের মতো মাথাটা লেপের বাইরে বের করে আবার রিমোটের 'প্লে' বাটনে চাপদিয়ে পরবর্তী দৃশ্যদেখছি। এভাবে দু'দশক আগের এক চান্নিপসর রাতে কাউন্ট ড্রাকুলার সাথে আমেরিকার এক ক্যাম্পাসে আমার প্রথম থ্যাংকসগিভিং ডে উদযাপন হয়। সেই দোলাচলের কথা আজো মনে পড়ে, কখনো ভয় জয়ী হয়, লেপের ভেতরে সেঁধিয়ে যাই, কখনো রোমান্চ জয়ী হয়, কল্লাটা কাছিমের মতো বের করে আবার ম্যুভিটা দেখতে থাকি।

ভাগ্যিস দেশে থাকতে কিশোর বেলায় সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ড্রাকুলা বইটি পড়া ছিলো, এবং সে কারনে কিছুটা সাহস ছিলো মনে, নয়তো সে রাতে পুরো ম্যুভিটা দেখার হয়তো সাহস হতো না! ধন্যবাদ, সেবা প্রকাশনী!

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২১ সকাল ৯:১৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×