somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা করোনা

২৩ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



করোনার কাছে এক অসহায় আত্মসমর্পণের ছবি ২০২০ সাল জুড়ে দেখা গিয়েছে। মূলত ২০২০ সাল চিরকালই বিশ্বে করোনার বছর হিসাবে পরিগণিত হবে। এই অভিশপ্ত বছরে করোনার জেরে যেমন একের পর এক প্রাণহানী হয়েছে, তেমনই বহু মানুষের আর্থিক কষ্ট থেকে জীবনধারণ সংকটে পড়ে যায়।
আমরা মোটামোটি পড়ালেখা করে ও সামন্য কিছু বই পুস্তক পড়ে পড়ে জানতে ও বুঝতে শিখেছি মানুষের অন্যতম পাঁচটি মৌলিক চাহিদা ও অধিকার হচ্ছেঃ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। গত প্রায় এক বছর যাবত করোনা আক্রমণে আমাদের দেশে জন জীবন কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য তা চিন্তা চেতনারও বাইরে। সংসার পরিবার সমাজ দেশ সম্পর্কে আমরা আর কতোটুকই বা জানি আর কতোটুকই বা জানা সম্ভব?

যা বলছিলাম, লক ডাউনে যাদের খাবার সঙ্কট হয়েছে তারা কিন্তু দিন রাত খাটাখাটনি করেছে। যেমন, আপনি হয়তো অনলাইনে খাবার বা যে কোনো পণ্যদ্রব্য অর্ডার করেছেন; আপনি কি লক্ষ্য করেছেন এটি আপনার দোড়গোড়ায় কে বা কারা ডেলিভারি দিয়ে গেছে?
ডেলিভারী কর্মীদেরও করোনা আক্রান্ত হবার ভয় ছিলো, তাদেরও পরিবার পরিজন আছে - কিন্তু পেটের দায়ে ক্ষুধার তাড়নায় মানুষ কি কি কাজ করেছে করোনা লকডাউনে তা হয়তো আমরা খুব কম মানুষই লক্ষ্য করার সুযোগ পেয়েছি। দেখা গেছে বেশীর ভাগ মানুষ ও পরিবার করোনা লকডাউনে যার যার নিজের কথাই ভেবেছে। কিন্তু একদল মানুষ নিজের কথা না ভেবে সংসারের কথা না ভেবে দিন রাত সড়কে মহাসড়কে ডিওটি করে গেছেন আর তারা হচ্ছেন বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য। বাংলাদেশের আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের উপর আমাদের সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকবে সব সময়।

অন্ন - গার্মেন্টস শিল্প থেকে শুরু করে শপিং মল, হোটেল রেষ্টুরেন্টে কি পরিমাণ মানুষ কর্ম করছিলো তার হয়তো সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। আর কি পরিমান মানুষ কর্মহীন হয়েছে খাবারের কষ্ট করেছে তাও জানা সম্ভব না। পরিবারের অন্ন জোগান দিতে হয়তো ডেলিভারী ম্যানের চাকরিও বেছে নিয়েছে অথবা শাক সবজি মাছ, পেঁয়াজ রসুন বিক্রির কাজও বেছে নিয়েছে কতো কতো মানুষ যার হিসাব অগনিত। অনেকে বাড়ি ভাড়ার চাপ নিতে না পেরে গ্রামের বাড়িও চলে গেছেন। অন্ন সংস্থান মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় চাহিদা ও বড় সমস্যা। প্রায় অনেক বাসাবাড়িতে দুইবেলা ভাত খেতে পেরেছেন কিনা তা সন্দেহ। হতবিহ্বল হয়ে ভাবতে হয় মানুষের সবচেয়ে বড় কষ্ট কি হতে পারে - অবশ্যই খাবারের কষ্ট। খাবারের কষ্টের চেয়ে বড় কষ্ট পৃথিবীতে আর নেই। লজ্জায় অনেকে রাতে বাজার করেছে যাতে করে আশে পাশের পরিবারগুলো দেখতে না পায় কে কি বাজার করছে, আর কি তাদের জীবন যাপন।

বস্ত্র - করোনা সংকটে হয়তো মানুষের বস্ত্র সমস্যা হয়নি তবে বস্ত্র বিক্রেতা ও বস্ত্র তৈরিখাত যে একেবারে ধ্বসে যায়নি তার নিশ্চয়তা কোথায়? মার্কেটগুলোতে গেলে দেখতে পাচ্ছি অনেক অনেক বস্ত্রের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ব্স্ত্রখাতে যারা চাকরি করছে চাকরি হারা হয়েছে অসংখ্য নরনারী ও বেতন পাচ্ছে না আরো কতো হাজার লক্ষ তাও আমরা কোনোদিন জানবো না। কারণ এই মধ্যবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কখনো কাউকে কিছু বলে না। এরা নিজে নিজে সব হজম করে, সেই হজম করা হোক অম্ল অথবা মধু।

বাসস্থান - করোনা প্রকোপে ভাড়া বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে অনেক পরিবার যারা আর ঢাকা ফিরবে কিনা চিন্তার বিষয়। অনেকে ২০,০০০ টাকা ভাড়ার বাসা ছেড়ে ১০,০০০ টাকা ভাড়ায় বাসায় উঠেছে। নাগরিক জীবনে যারা ভাড়া বাসায় থাকে তাদের আয়ের অর্ধেক চলে যায় বাসা ভাড়ার খাতে। আমাদের দেশে ভাড়ার কোনো নীতি নেই। বাড়িওয়ালারও নীতি নেই। ভাড়াটিয়ারও নীতি নেই। সবাই যার যার মতো অত্যাচার করছে। বাড়িওয়ালা ফি বছরে ভাড়া বাড়াচ্ছে আর ভাড়াটিয়া গ্যাস পানির অপচয় সহ বাথরুমের বেসিন ভাঙ্গা থেকে শুরু করে ফার্নিচার টানাটানি করে ফ্লোরের টাইলস ভেঙ্গে রেখে যান। আর দেয়ালের রংয়ের কথা বলতে গেলেতো বাসা আর ভাড়া দেওয়া চলবে না।

শিক্ষা - আমাদের দেশে এমনিতে পড়ালেখার নামে যে কি হচ্ছে তা দেখার কেউ নেই বলারও কেউ নেই আর এখন করোনার কারণে পড়ালেখার মান এতোই নিম্নগামী হয়েছে যা ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক হিসেবে কষ্ট লাগে, বর্তমান ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত কি? ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা ভুলে গেছে। প্রায় সারা বছর স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ, শিশুদের নতুন স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন তুলে রেখেছে তাদের অভিভাবকরা। আগে তো জীবন, তারপর সব কিছু....দৌড়ে ক্লাসে যাওয়া বা বন্ধুর সঙ্গে টিফিন ভাগ করে খাওয়ার পরিবর্তে এবছর অনলাইনে ক্লাস করেছে ছোট ছোট বাবুরাও।

চিকিৎসা - করোনায় লকডাউনে যাদের কোনো না কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে তারা জানেন চিকিৎসা আর ডাক্তার কোথায় ছিলেন , কারণ পুরো দেশ অচল হয়ে যাওয়ায় কষ্ট ও ভোগান্তি পেতে হয়েছে সবাইকে । তবে অস্বীকার করার উপায় নেই ,করোনা মহামারির শুরু থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসক, নার্স, তথা স্বাস্থ্যকর্মীরা। সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে সেবা দিতে গিয়ে তাঁদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন, মারাও গেছেন।

মার্চে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ধীরে ধীরে অবরুদ্ধ পরিস্থিতে চলে যায় পুরো দেশ।
করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রাথমিক স্তরে প্রচুর ভুয়ো খবর ছড়িয়েছিল। তথ্য কার্যত কিছু ছিল না। এক বছর পর সে দিকে তাকালে অবাকই লাগে। কী ভাবে প্যানডেমিক নিয়ে কেটে গিয়েছে এক বছর। কী ভাবে একটু একটু করে জানা গিয়েছে নতুন ভাইরাস সম্পর্কে।
বর্তমানে আমাদের দেশে আবারো করোনা সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছে । ইনশাআল্লাহ আশারাখি সকলে আমরা সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতা বজায় রেখে এই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবো ।

ছবি : নিজের তোলা

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×