somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপাঙতেয় ১৩

৩১ শে জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওরা নির্দিষ্ট বগিতে উঠে পরে। বেশি লোক নাই। যদি ঠিক সময় মত যায় তবে হয়ত ভোর রাতে গ্রামের বাড়িতে পৌছাবে।জাভেদ নূরীকে শোয়ার জন্য বলে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌছে যাব, তুমি অস্হির হয়ো না। আমি বসেই ভাল আছি। তাছাড়া বিছানার কোন কিছু সাথে নাই, যে ভাবে বের হয়েছি, বলেই নূরী চুপ করে যায়। কেউ যদি শুনে ফেলে!

রাতে কারো খাওয়া হয়নি। এতক্ষণ খাওয়ার কথা মনেও হয়নি, এখন ট্রেনে উঠার পর সবার ক্ষিধে পেয়েছে, কিন্তু সাথে কোন খাবার নাই। মতিনের পোটলার মধ্যে একটা বিস্কিটের প্যাকেট আছে, সে বের করে দিল। এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। ওদের মনে হল কখন বাড়িতে যাবে আর পেট ভরে খাবে!ট্রেনটা এখনও চলছে না কেন! খাওয়ার চিন্তা আপাততঃ অন্যদিকে মোড় নিল। আবার ওদের টেনশন শুরু হল ট্রেন নিয়ে। টিটি এসে সবার টিকেট চেক করল। দেখে মনে হল বিহারি। নূরী সিঁটিয়ে গেল। খোদা আবার কোন ঝামেলা হল নাকি! নাহ্‌, যাক বাবা বাঁচা গেল।টিটি চলে গেলে ওরা হাঁপ ছাড়ে। টিটি যাবার কিছুক্ষণ পরে ট্রেনটা চলা শুরু করল!

মতিন এক কোনায় শুয়ে ঘুমিয়ে পরে। ওরা তিনজন জেগে থাকে। ওদের বগিতে আরো কয়েকজন লোক ছিল। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলা শেষ করে শুয়ে পরে। জাভেদও ঢুলতে থাকে। লিচু মায়ের কাঁধে মাথা রাখে। তার খুব ক্লান্ত লাগে। কি যে ঝামেলা হল, কবে যে সব শান্তি হবে, আবার নিজেদের শহরে, নিজের বাড়িতে ফিরবে! নূরী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তার চোখ দিয়ে দর দর করে পানি পরতে থাকে। লিচু চোখ মুছে দেয়। কেন মন খারাপ করছ মা! এই দেখ ভোরেই আমরা পৌছে যাব নানার বাড়ি। তারপর তো আর অসুবিধা নাই। আর বাবার ওষুধ নিয়ে চিন্তা করোনা, এক বেলা ওষুধ না খেলে কিছু হবে না।

লিচুর কথায় নূরী ভরসা খুজে পায়।ছেলেটা মনে হয় এক বেলাতেই বড় হয়ে গেছে। কি বড় বড় ভাব। যেন কত দায়িত্ব ওর মাথার উপর। নূরীর দীর্ঘশ্বাস পরে। আমার এত ভাল ছেলেটার কোন বন্ধু নাই, সব সময় বাবা মাকে ঘিরে বেচারির তার জগৎ। কত চিন্তা তার বাবার জন্য, মার জন্য। আল্লাহ আমার ছেলেটাকে আপনি সব বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করুন। নূরী মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে। গ্রামের বাড়ি গিয়ে আগে নফল নামাজ পড়তে হবে, তারপর অন্যকিছু কাজ করবে। ট্রেনটা এত আস্তে যাচ্ছে এক যুগ লেগে যাবে বাড়ি যেতে।

নূরীরও চোখ লেগে এল। সে জাভেদের গলা শুনতে পেল, এই ওঠো, আমরা এসে গেছি,সকাল হয়ে গেছে। নূরী চোখ মেলে দেখে পরিচিত স্টেশন, সব কিছুই তার পরিচিত। এমনকি কুলি পর্যন্ত! বুবু আইসা পরছেন, আমরা কাল রাইত থিকা বইসা আছি আপনাগোর জন্য! সবাই ওদের জিনিস নিতে চায়। কি জিনিস, ছোট দুটা ব্যাগ আর একটা সুটকেস! কুলিরা বলে উঠে বুবু কি আজই চইলা যাবেন, কিছুই আনেন নাই!
না না, কয়েক দিন থাকব, তারপর যাব। সবাই তোমরা ভাল আছ?
নূরীকে সবাই ভাল চোখে দেখে। ওকে দেখে সবাই খুশি, ঘরের মানুষ ঘরে ফিরেছে। লোকগুলোর কত মায়া তার জন্য! নূরীর আবার চোখ পানিতে ভরে উঠে। মানুষজন সবাই এত ভাল কেন! এই নিঃস্বার্থ ভালবাসার প্রতিদান কি! সে জানে না। তিনটা কুলি ওদের তিনটা জিনিস হাতে নেয়।জাভেদ জানে ওদের কে মানা করে কোন লাভ নাই। নূরী ওদেরকে দশটাকা ভাগ করে নিতে বললো। ওরা মনে হল আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। আরে মামা আমাদের জন্য কি আনছ? এটা লিচুর উদ্দশ্যে বলা। সে লজ্জা পেয়ে বলে, এই যে আমরা এসেছি তোমাদের এখানে বেড়াতে। কুলিরা খুব খুশি হয়ে যায় বুবু ভাইগ্‌নার তো অনেক বুদ্ধি হইছে। আল্লাহ বাঁচায় রাখুক।
হ্যাঁ তোমরা দোয়া কর। এখন যাই, তোমরা পরে বাড়িতে আইস। নূরী ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিকসায় উঠে পরে। তার বাবা রাতভর রিকসা স্টেশনে রেখে দিয়েছেন।কোথাও কোন উত্তেজনা নাই, ওরা যে ভয় ভীতি নিয়ে শহর ছেড়ে এসেছে তার কোন চিন্হ এখানে পাচ্ছে না।স্বাভাবিক, সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত! সব কেমন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। আসলেই কি গতকাল থেকে অঘটন গুলো ছিল, না এটা একটা দুঃস্বপ্ন! নূরীর কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। সারা রাস্তা সে দেখতে দেখতে যায়। যেন আর কোনদিন দেখা হবে না! বাজারের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় জাভেদ নেমে ওষুধ কেনে। একটু অপেক্ষা করে প্রেসারটাও মাপাবে কিনা চিন্তা করে। থাক, আগে বাড়ি যাই, পরে আসব। লিচু আর মতিনের রিকসা ওদের আগে যায়। নদীর ধার দিয়ে যাওয়ার সময় নূরীদের বাড়ি দূর থেকে দেখা যায়। কি শান্তি! ওরা গ্রামের নিরাপদ আশ্রয়ে পৌছে গেছে।শহরের রাজনৈতিক অস্হিরতা এখনো গ্রামে আসেনি। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজে বাধা পরেনি।

রিকসা থেকে নেমে ওরা বাড়ির ভিতরে যায়। নূরীর আব্বা আম্মাকে সালাম করে। নূরীর আব্বা, তালুকদার সাহেব রাশভারি মানুষ। চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ভীষণ উদ্বিগ্ন। শোন তোমরা বোধহয় ভীষণ ক্লান্ত, হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নাও, পরে কথা শুনি। বাথরুমে পানি তোলা আছে।
ওরা হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে। গোগ্রাসে খায়। আটার রুটি, আলু ভাজি, ডিম, আর মিষ্টি। লিচু পর্যন্ত সব খেয়ে উঠল, এমন কি ডিমের ওমলেট শুদ্ধ! নূরী তাকিয়ে দেখে। যে ছেলে অল্প সেদ্ধ ডিম ছাড়া খাবেনা, তার এত পরিবর্তন, এক দিনেই! তাহলে কি সর্বগ্রাসী ক্ষুধা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতই মানুষকে পরিবর্তন করে ফেলে! নূরীর আম্মা রোকেয়া বেগম কতকিছু বলছেন, কিছুই ওর কানে ঢুকছে না। খাওয়া শেষ করে নূরী বলে আম্মা ভীষণ ঘুম পাচ্ছে, আমি একটু ঘুমাই।
আচ্ছা বড় ঘরে তুমি আর জামাই থাক, লিচু মাঝের ঘরে থাকুক। নাকি লিচু মামাদের সাথে পিছনের ঘরে থাকবে?
না থাক মাঝের ঘরেই।
বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে নূরীর চোখ বন্ধ হয়ে যায় গভীর ঘুমে। তার মনে হচ্ছে জীবনে এত শান্তি আর কখনো সে পায়নি। রোকেয়া বেগম চা পাঠিয়েছেন, কাজের মেয়েটা নূরীকে জাগায় না। জাভেদ আর লিচু চা খায়।
জাভেদ সব ঘটনা তালুকদার সাহেব আর রোকেয়া বেগমকে খুলে বলে। দেশের পরিস্হিতি ভাল না, সেটা উনারা আঁচ করতে পারছিলেন। তালুকদার সাহেব যথেষ্ট রাজনীতি সচেতন মানুষ। আগে উনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন, ইদানিং অবসর নিয়েছেন। তাহলেও দেশের হালচাল ভালই বুঝতে পারেন। নির্বাচনের পর থেকেই ক্ষমতা হস্তান্তরের টালবাহানা যে ভাল হবে না, তা তিনি আশংকা করছিলেন। সুযোগ সন্ধানীরা দেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতাকে উল্টা খাতে চালানোর চেষ্টা করবে, সেটা জানা কথা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:১৬
১৭টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×