somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপাঙতেয় ২২

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাসিরের ক্যাম্পে কয়েকজন ছেলেকে দেখল লিচু। সবার সাথেই পরিচয় হল। ওরা আশে পাশের গ্রামের। সবই লিচুর বয়সী এবং রাজনীতি সচেতন। এই দুইদিনে নাসির ঘুরে ঘুরে ওদের যোগাড় করেছে। ওরা খালি লিচুর অপেক্ষায় ছিল। এখন লিচু এসে গেছে।
লিচুর মাথায় আবার হাজার চিন্তা দৌড়াদৌড়ি করছে। কিসের অপেক্ষা লিচুর জন্য? নাসির একটু ব্যস্ত ছিল। চলে এল। শোন যে জন্য তোমাদের সবাইকে আসতে বলেছি। জানোইতো শেখ মুজিব আমাদের কি করতে বলেছেন। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে, যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হতে হবে সামনের দিনের জন্য। আমি মনে করি আমাদের এখনই সময় এসেছে প্রস্তুত হওয়ার। আমি তোমাদের ট্রেনিং দিব। মিলিটারি ট্রেনিং। হাতে সময় খুব কম। কি সবাই রাজি?আর এ হল লিচু, এ হবে তোমাদের লীডার।

সব হৈ হৈ করে রাজি। যেন এখনই যুদ্ধ শুরু করে দিবে। লিচু কিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না। কিসের লীডার, সে তো জীবনে কখনও কোন কিছুতে যোগ দেয় নি। অনেকে বয়স্কাউট করত, সে করতে পারে নাই। লজ্জায় তার মাথা কাটা যায়, সবাই বোধহয় এখনই তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দিবে। উত্তেজনায় কারো আর এক মুহূর্ত দেরি সহ্য হচ্ছে না। নাসির সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল কি করতে হবে। প্রথম দিন হিসাবে আজ খালি লেফ্‌ট রাইট আর মার্চ করা শেখান হল। সবারই খালি ভুল হচ্ছে তারপরও সবাই হাসি খুশি। খালি বলে হয়ে যাবে স্যার আপনি খালি শিখান কেমনে বন্দুক চালাইতে হয়, বাকিটা আমরা পারুম! কি দৃঢ় প্রত্যয় লিচুর কি যে ভাল লাগে। কতই বয়স হবে, খুব বেশি হলে সতের কি আঠার, প্রায় ওরই বয়সী। অথচ লিচু কি পারবে কোনদিন এত প্রত্যয়ী হতে! মনটা আবার ছোট হতে শুরু করে। মনু আবার বলে উঠে স্যার কুনদিন বন্দুক ধরুম?

খুব শীগগিরই, নাও এখন আবার লেফ্‌ট রাইট কর সবাই। আমাকে স্যার বলার কোন দরকার নাই, ভাই বললেই হবে। ঠিক আছে! খুব সহজেই নাসির ওদের সবার শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে উঠে। ব্যপারটা লিচুর চোখ এড়ায় না। সবাই নাসিরকে ভীষন পছন্দ করছে। এদিকে নাসিরের মন দুঃশ্চিন্তায় ছেয়ে যায়। সীমান্তে থাকলেও ওয়ারলেসে সে সব খবরই পায়। ঢাকা থেকে সবই সে শোনে। দিনে দিনে হতাশায় ভেংগে পড়ছে। হঠাৎ করেই মনে হয় গ্রামের ছেলেদের সংগঠিত করে কিছু একটা করা দরকার, যাতে প্রয়োজনের সময় তারা রুখে দাঁড়াতে পারে। ওদের সামনে সে মনের ভাব প্রকাশ করে না। সে স্বপ্ন দেখে এই দামাল ছেলেরাই তাদের স্বাধীকার এনে দেবে! ইশ বড় দেরি হয়ে গেল, এ কাজটা সে আরো আগেই শুরু করতে পারত। নাসির তাড়া দেয় কি হল তোমাদের, হচ্ছে না, আবার প্রথম থেকে শুরু কর। বেলা প্রায় পরে এল। ওদের জন্য খাবার ব্যবস্হা করেছে ক্যাম্পে।বিরাট বড় পাতিলের মধ্যে খিচুড়ি রান্নার ব্যবস্হা করেছে, সাথে ডিম ভাজি। নাসির জানে দুমুঠো খাবারের জন্য ওদের বাড়ি পাঠিয়ে দিলে আর ওদের টিকিও দেখা যাবে না, তার চেয়ে বরং এই ভাল, এখানেই খেয়ে দেয় কিছু শিখুক। সবাই খুব মজা করে খেল। অনেক নতুন ছেলেদের সাথে লিচুর পরিচয় হল এবং সাথে এরকম খাওয়া দাওয়া মনে হচ্ছে সে পিকনিকে এসেছে! সে কখনও সমবয়সীদের সাথে পিকনিকে যায়নি।খুবই সাধারন ব্যপার কিন্তু লিচুর জন্য অত্যন্ত অসাধারন। সে কি সুন্দর এখানে সবার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে! কোন অসুবিধা হচ্ছে না।

কি লিচু কেমন মনে হচ্ছে সবাইকে? লিচু খালি বলে ওরা কি আমার কথা শুনবে? কেন শুনবে না, ওরাও শুনবে আবার ওদের কথা তুমিও শুনবে। নাও একটু পরে তোমরা ক্রলিং করবে। তোমাদের শেখান হবে কি করে তা করতে হবে। এখন তোমরা রেস্ট নাও। ইচ্ছা করলে তোমরা বিড়ি সিগারেট খেতে পার। মনু আর তার বন্ধুরা বিড়ি ধরাল। নাসির সিগারেট ধরিয়ে একটা লিচুকেও দিল। লিচুর নিজেকে বেশ ভারিক্কি মনে হচ্ছে। যেন এক দিনেই তার কয়েক বছর বয়স বেড়ে গেছে।

ঘন্টাখানেক পরে ওদের ক্রলিং করে দেখান হল। ক্রলিং করতে গিয়ে লিচুর দুহাত ঘাস আর মাটিতে ঘসা খেয়ে ছিলে গেল। উহ্‌ কি যে জ্বলছে। প্যান্টে ঘাসের দাগ লেগে গেল। মা দেখলে যে কি বলবে! বেচারি কি করে তাও ক্রলিং শেষ করল। সবাই করছে, অনেকেরই হাত জ্বলছে। লিচুর হাঁপ ধরে গেল। একদিনেই যদি এই অবস্হা হয়, বাকি দিনে কি হবে, চিন্তা করেই মাথা ঝিম ঝিম করছে। সে হচ্ছে লীডার তার তো মুষড়ে পড়লে চলবে না। তাকে তো সব চাইতে সাহসী হতে হবে। এটা চিন্তা করেই সে মনে জোর পেল। অবশ্যই পারতে হবে। তার সংগীরা কেউ শহরেই যায় নি, গ্রামেই থেকেছে সারাজীবন, ওরা যদি দেশের জন্য এমন নিবেদিত হতে পারে সে কেন পারবে না! বুকের মধ্যে শির শির করছে। একেই কি বলে দেশের জন্য টান, সে সব করতে পারবে। নাসিরের প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার মাথাটা নুয়ে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৭
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×