লিচুর হঠাৎ করে খুব মাথা ব্যথা করতে থাকে। বুঝে না কি করবে, নাসিরকে বলতেই ওকে ওর ছোট ঘরে গিয়ে শুয়ে পরতে বলে। নোভালজিন ট্যাবলেট বের করে দেয়। লিচু ওষুধ খেয়ে ঝিম মেরে পরে থাকে বিছানায়।সারাদিনের উত্তেজনায় বাবা মায়ের কথা প্রায় ভুলেই গেছে। এখন শোয়ার পর সে চিন্তা করে ঘরে ফেরার পর তার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে কে জানে! মা তো নিশ্চয়ই এমন চিৎকার শুরু করবে। হয় তো তার আর এখানে আসা হবে না। না এটা সে কিছুতেই সহ্য করবে না। নাসিরের এখানে আসা বন্ধ করবে না।ধুর যা হয় হবে, এত চিন্তা করে কি হবে।
একটু ঘুম ঘুম লাগছে। কিন্তু বাড়ি যাওয়া উচিৎ, সন্ধ্যা প্রায় হয়ে যাচ্ছে। লিচু উঠে পরে। নাসিরকে বলে চলেন এবার আমাকে নামিয়ে দিয়ে আসেন। মনুরা এখনও আছে। ওরা কেউ বাড়ি যেতে চাচ্ছে না। যেন এখানে থাকলেই আরো কিছু শিখে ফেলবে! নাসির মনুদেরকেও চলে যেতে বলে, কাল সকালে আবার আসতে বলে সবাইকে। লিচুকে নিয়ে জিপে উঠে। খুব দ্রুতই লিচুরা বাড়ি পৌছে যায়। হয়ত মনুদের আগেই। লিচু একটু আনমোনা হয়ে যায়। আহা ছেলেগুলো সারাদিন ওখানে থাকল, বাড়িতে কোন সাহায্য করতে পারল না, ওদের বাবা মাও নিশ্চয়ই বিরক্ত হবে জাভেদ আর নূরীর মতন।
লিচুর মাথা এখন ঝিম ঝিম না, বেশ ভালই ব্যথা করছে। সে গাড়ি থেকে নেমে সোজা কুয়ার কাছে গেল।ঝপাৎ করে বালতি নামিয়ে দিল কুয়ায়। বালতি ভরে আবার টেনে উঠাল। কোন কষ্টই লাগল না। আশ্চর্য হয়ে গেল সে। অন্য সময় মতিন বা অন্য কাউকে বলে কুয়া থেকে পানি উঠানোর জন্য, তার ভীষন কষ্ট লাগে পানি উঠাতে,বালতির দড়িতে হাতে মনে হয় কড়া পরে যায়! আজ ব্যপারটা তাকে বেশ ভাবিয়ে তুলল। হতে পারে সারাদিন শারীরিক কসরৎ করাতে তার বোধহয় শক্তি বেড়ে গেল! ঠান্ডা পানিতে হাতমুখ ধোয়ার পর মাথা ব্যথাও সেরে গেল। পায়ের ঘসে যাওয়া জায়গাগুলোতে পানি ঢালল অনেক ক্ষন। খুব ভাল লাগছে। গোসল করে ফেলবে নাকি চিন্তা করল খানিক। না করা ঠিক হবে না। হঠাৎ করে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, তাহলে তো আবার কাল নাসিরের ওখানে যেতে পারবে না। উঁহু সেটা লিচু কিছুতেই ছাড়তে পারবে না। তার চেয়ে বরং মাথা ধুয়ে ফেলি। সেটাই করল। গামছা দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল। নূরীকে দেখে হেসে ফেলে। মা জানো আজ কি হয়েছে!
জানি নাসির সব বলল আমাদের। আমারতো ভীষন ভয় করছে। তুই এসবের মধ্যে যাস না।
নাসির মামা কি চলে গেছে?
না বৈঠকখানায় তোর বাবার সাথে কথা বলছে। শোন লিচু নাসির ভীষন বাজে লোক, ওর এ সমস্ত করা ঠিক না। আমাদেরকে না জানিয়ে তোকে নিয়ে এসব কি শুরু করেছে! ওরতো চাকরি যাবেই, সাথে জেলও হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে তোরও একটা ঝামেলা হয়ে যাবে। বাবা তুই ওর সাথে আর মিশিস না।
মা যেটা বুঝ না, সেটা নিয়ে কথা বল না সব সময়! লিচু চিৎকার করে উঠে।
নূরী চমকে যায়। এই প্রথম লিচু তার সাথে এভাবে কথা বলল। সে হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলবে কি করবে বুঝে না। তার চোখ দিয়ে দর দর করে পানি পরতে থাকে। লিচুর একটু খারাপই লাগে, মায়ের সাথে এভাবে কথা বলে। কিন্তু সে কি করবে। নাসির তাকে এক অজানা সুন্দর ভবিষ্যতের হাতছানি দেখিয়েছে। সবার সাথে কিভাবে মিলে যেতে হয়, কোন শ্রেণীবিন্যাস নয়, সাধারন মানুষের সাথে কিভাবে একাত্ন হতে হয় সেটা সে আস্তে আস্তে জানতে পারছে, সেটাকে সে অগ্রায্য করতে পারে না। অনেক অনেক লোভনীয় সেটা লিচুর জন্য।
লিচু ঘর থেকে বের হয়ে নাসিরের সাথে দেখা করতে যায়। বাবার সাথে কথা বলছে। জাভেদ খালি হা আর হু করছে। বোঝাই যাচ্ছে ঠিক মত কিছু শুনছে না। নাসির উঠে দাঁড়ায় আমি আজ যাই, লিচু কাল চলে এস, আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিব। আমি দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলেছি, উনার কোন আপত্তি নাই, তুমি ট্রেনিংএ আস, এটা সবার জন্যই ভাল হবে। আপা বোধহয় খুব মন খারাপ করেছে, আসলে আমি ভাবলাম সারপ্রাইজ দেব। দেশের পরিস্হিতি সবার বোঝা উচিৎ। যাইহোক আজ আসি।
লিচু কোনরকমে বলে উঠে নাসির মামা আপনি একটু বসুন। বাবা তুমি যাও মাকে বুঝিয়ে নিয়ে এস।