somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপাঙতেয় ২৪

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিচু টের পায় পাশের ঘরে মা বিলাপ করে কাঁদছে। বাবাকে খালি বলছে কেন আমি এখানে আসলাম। আমাদেরতো শহরে থাকলেই হত। এখন কি হবে? আমার ছেলেটাতো একদম বেয়াড়া হয়ে গেল। তুমি কিছু বলছ না কেন? নূরীর সব ক্ষোভ গিয়ে পরে জাভেদের উপর। এই তোমার জন্যই আজ এই অবস্হা! কি দরকার ছিল তোমার নাসিরের ওখানে যাওয়ার? এখন দেখ আমার ছেলেটাকে হারাতে বসেছি। আর্মিরা কি ছেড়ে দেবে এসব খবর পেলে! রাস্তায় উল্টা করে বেঁধে টাংগিয়ে দিবে। নূরীর মনে আছে ইস্কান্দর মির্জার মার্শাল ল জারির ঘটনা। কি অবস্হা ভয়ে সবাই তটস্হ। গ্রামে গন্জে লোকজনকে ভয় দেখানোর জন্য গ্রামের দুষ্ট লোককে রাস্তার মোড়ে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখা হত। নূরীর হঠাৎ এসব কথা কেন মনে পড়ছে।

নাসির চুপ করে বসে আছে। লিচু মাথা নীচু করে আছে। লজ্জায় মুখ তুলে চাইতে পারছে না। ছি ছি নাসির কি ভাবছে।

লিচু আমাকে একটু চা দিতে বলবে?

মতিনকে ডেকে চায়ের কথা বলে লিচু।
শোন লিচু তোমার লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। আপার জন্য মন খারাপ কর না। সব ঠিক হয়ে যাবে।এখানে শান্ত পরিবেশে বুঝতে পারছে না আসলে দেশের অবস্হা কতটা খারাপ। সবার চোখ কান খোলা রাখা উচিৎ। যে কোন পরিস্হিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
মতিন চা নিয়ে এলে নাসির এক চুমুকে খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। সে যাবার জন্য তৈরি।
আপনার কাল গাড়ি পাঠানোর দরকার নাই, আমি চলে আসব লিচু মরিয়া হয়ে বলে উঠে।
ঠিক আছে আমরা অপেক্ষা করব। চলি আজকে।

নাসির চলে গেলে লিচু চুপ করে বসে থাকে। তার সব কিছু স্বপ্নের মত লাগে। যেন এখনই সব শেষ হয়ে যাবে। গত কয়েক দিনের ঘটনা সে বিশ্লেষন করতে থাকে। এইতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ডালির সাথে পরিচয় হল, সেদিনই ওরা শহর ছেড়ে চলে এল। সব কিছু সিনেমার মত চোখের সামনে দেখতে পেল সে, বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। কবে ডালির সাথে দেখা হবে, আদৌ হবে কিনা। চোখ ফেটে কান্না আসছে, দাঁতে দাঁত চেপে লিচু বসে থাকে। গ্রামে এসে কি শান্তিতে সে ছিল। মা জোর করে এখানে নিয়ে এল। অনিশ্চিত ভবিষ্যত মনে হয় তাদের পিছু ছাড়ছে না। মা নিশ্চয়ই এখন এখান থেকে চলে যাবার তাল করবে। নানাবাড়ির ঘটনা গুলোও মনে পরে। আহা মামারা না জানি কি করছে। ওদের ওখানেতো প্রত্যেক দিন পত্রিকা আসে, ওরা সব জানতে পারছে কি হচ্ছে না হচ্ছে! লিচুর তো খালি ছো্ট্ট রেডিও ভরসা। তাও ভাগ্যিস নাসির কিছু একস্ট্রা ব্যটারি দিয়েছিল, সেজন্য সে রেডিও শুনতে পারবে। না হলে কিছুই করার নাই। কি যে জীবন, স্হবির শ্যাওলার মত হয়ে যাচ্ছে।

নূরীর কান্না থামছে। জাভেদ হয়ত হাত পা ধরে চুপ করিয়েছে। মা সব সময় বাবাকে দোষারোপ করে, এটা লিচুর একদম ভাল লাগে না। বেচারি খুব সাধারন ঘর থেকে এসেছে বলে তাকে হীনমন্য ভাবাটা মায়ের অন্যায়।জাভেদকে লিচু সেরা বাবা বলে মনে করে। সব সময় বউ ছেলের ভাল মন্দ খেয়াল রাখে। কখনও লিচুকে গালমন্দ করে নাই। চেষ্টা করেছে তার সাধ্যমত সংসার চালাতে। অথচ মা যেন সব সময় অখুশী ছিল, এটা যেন লিচু আজ হঠাৎ করে আবিষ্কার করল। সে তার বিশ্লেষনে খুশি হতে পারল না। লিচু তার রেডিও নিয়ে নব ঘোরাতে থাকে। বিবিসি শোনার সময় হয়ে এল। জাভেদ এসে ঘর ঢুকল। কি রে এখনও বিবিসি ধরিস নি? মতিন গিয়ে রাজাকে ডেকে নিয়ে আয়।

জাভেদের দুরসম্পর্কের ভাই যিনি ওদের অবর্তমানে বাড়ি দেখাশোনা করেন। ওরা সবাই একসাথে রেডিও শুনছে। পাকিস্হানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এসেছেন শেখ মুজিবের সাথে আলাপ আলোচনা করার জন্য। জুলফিকার আলি ভুট্টোও এসেছেন। ঢাকা খুব সরগরম, অনেক বিদেশি লোকজন এখন ওখানে। অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, কিছু শুনল, বেশিরভাগই বুঝল না। এত কঠিন কঠিন শব্দ বোঝা বড় শক্ত। রেডিওর শব্দ ভাল না।তবে একটা কথা বুঝতে কারোরই কোন অসুবিধা হল না সেটা হল, দেশের অবস্হা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। নূরী আবার বিলাপ করে কান্না শুরু করল। রাজা চাচী নূরীকে সান্ত্বনা দিয়েই যাচ্ছেন। নূরীর এক কথা লিচু বলুক আর নাসিরের ওখানে যাবে না।
লিচু মুখ শক্ত করে বসে আছে। জাভেদ লিচুর মাথায় হাত বোলায়। লিচু তোর মা মনে হয় অসুস্হ হয়ে যাচ্ছে, তুই গিয়ে কিছু একটা বল।

কিন্তু বাবা আমিতো মাকে মিথ্যা কথা বলতে পারব না।

বাবারে আপাততঃ তোর মা কে শান্ত করার জন্য বলে আয়, পরে না হয় রাখলি। আমি আর পারছি না, এত অশান্তি শুরু করছে। আমারতো প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে, মাথা ব্যথা করছে, ঘাড়ও টন টন করছে।

লিচুর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। বাবা কোনদিন নিজের জন্য কিছু বলে নি। আজ কতটা মরিয়া হয়ে লিচুকে মিথ্যা কথা বলতে বলছে। লিচুর চোখে পানি চলে এল।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:২১
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×