somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টানাপোড়ন

০৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুপুর সকাল থেকেই মনটা ভাল লাগছে না। কাল রাতে বাসায় ফিরে মায়ের চিঠিটা খুলে দেখা হয়নি। অনেক রাত হয়ে গেছিল, তাছাড়া খুব ক্লান্ত লাগছিল যার জন্য চিঠিটা আর পড়া হয়নি। এখন ঘুম থেকে উঠে চিঠি পড়ে আবার নিত্যদিনের হতাশায় ভর করল। না মানে হতাশা এবার বেশ তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে গেল। সাধারনতঃ দুপুরের পরে রুপুর হতাশা আসতে শুরু করে। আজ সাত সকালেই! নাহ বুঝতে পারছে আজকের দিনটা কেমন যাবে। অফিসে এসেও কাজে মন দিতে পারছে না। ঘুরে ফিরে মায়ের চিঠির কথাগুলো চোখের সামনে নাচতে থাকে।


রুপু যে কি চায় নিজেই জানে না। একবার মনে হয় বিদেশ চলে যাই পরক্ষণেই ভাবে না সেটা ঠিক হবে না, সবাইকে দেশে রেখে সে ভাল থাকবে না। সারাক্ষন মন খারাপ থাকবে। অত মনখারাপ থাকলে পড়া শোনা কি ভাবে করবে? তার উপর কেবল রুচির সাথে পরিচয় গাঢ় হচ্ছে, এই অবস্হায় চলে গেলে হয়ত সব ভাঁটা পরে যাবে।বিদেশ যাব বললেই কি আর যাওয়া হবে! কত ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হবে, তার চাইতেও বড় কথা টাকা পয়সার ব্যাপার আছে। রুপুর দীর্ঘশ্বাস পরে।

বড় ভাইয়েরা বিয়ের পর হুট করে আলাদা হয়ে গেল। ভাইয়াদের কত বড় চাকুরি! অথচ তারা কেউ বাবা মায়ের সংসারে কোন সাহায্য করে না।সে কি তবে ভাইয়াদের মত অমানুষ হবে! বাবা কত দুঃখ করে বড় ছেলেদের নিয়ে। বাবার আশংকা রুপুও ওমন হবে! ছি! সে বাবা মাকে ছোট করতে পারবে না। বোনদের কত আশা রুপুকে নিয়ে। ছোট বোনদের নিয়ে মা বাবা জেলা শহরে থাকেন। বোনদুটো বায়না করে ছোটভাই আমাদের ঢাকায় নিয়ে যাও। ওদের খুব শখ ঢাকা শহরে পড়বে। রুপুর আবার নিজের অক্ষমতায় মাথা নুয়ে আসে। সে কেবল পড়া শেষ করে চাকরিতে ঢুকল। রুচির অবশ্য আরো এক বছর লাগবে পড়া শেষ করতে, কিন্তু তাতে কি! ওকে যদি এখনই রুপুর সব দায়িত্বের কথা জানানো হয়, মেয়েটা কি ভয় পেয়ে যাবে না! রুপু কি যে করে।

মা সামনের ছুটিতে পই পই করে যেতে বলেছে। বোনদের বিয়ে দেয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। অমি আর সুমি, রুপুর ছোট দুই বোন। বোনদের নিয়ে রুপুর অহংকারের শেষ নাই। এত লক্ষী ওর বোনদুটো। নিজেদের অবস্হান সম্পর্কে খুব সচেতন। ওরা জানে ওদের ভবিষ্যত কি হবে। কোন ছোট চাকুরি করে বা কোনরকম ভাবে ব্যবসা করে এরকম লোকের সাথে বিয়ে হবে। এ নিয়ে ওদের কোন মাথা ব্যথা নেই। খালি মাঝে মাঝে ছোট ভাইয়ের কাছে আব্দার করে যদি জেলা শহর থেকে বেরুতে পারত। যেন কত দিগ্বিজয় করে ফেলত ওরা! ওদের দুজনেরই পড়া লেখার প্রতি খুব আগ্রহ। টাকা পেলেই বই কেনে। এই যুগেও ছেলেমেয়েরা বই কেনে এটা খালি অমি সুমিকে দেখলে বিশ্বাস হয়।

রুপু অফিস থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকে। মেজাজ খিঁচরে আছে। কি কতগুলো গন্ডমূর্খের সাথে কাজ করতে হয়।এত লেখা পড়া শিখে কি লাভ হল? অশিক্ষিত মালিকের হাতে পায়ে ধরে চাকরি করতে হচ্ছে। মালিকের মনে হয় নাক টিপলে দুধ বেরুবে এই বয়স, কি টাকার জোর। নাহ এই চাকরি সে বেশি দিন করতে পারবে না। কিন্তু মালিক তাকে কথা দিয়েছে আগামি কয়েকটা ডিল যদি ঠিক মত করতে পারে তাহলে রুপুকে বিদেশে যাবার সুযোগ করে দিবে। বিদেশ গেলে হয়ত সাময়িক অর্থনৈতিক সংকটের হাত থেকে সংসারকে বাঁচাতে পারবে, সবচেয়ে বড় কথা বোনদুটোকে হয়ত এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে হবে না। ওদের কে আরো একটু পড়ার সুযোগ করে দিতে পারবে। কিন্তু তাহলে রুচির সাথে ওর সম্পর্ক কি হবে! ব্যাপক দুঃশ্চিন্তায় পরে যায় রুপু। উহ্‌ কানে তালা গেল। সাৎ করে গাড়িটা জোরে হর্ণ দিয়ে ওকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।পলকের জন্য রুপু ভাবে ভালই হত সব চিন্তার অবসান হয়ে যেত।
২৪টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×