বেশ অনেকদিন ধরেই অনেক পুরোনো একটা গান শুনছি।
সেই ছেলেটির সবগুলো গান হলো নাকো মোর শোনা
আমারও শোনা হয়না সেই ছেলেটির গল্প। যে ছেলেটির খুব ছোটবেলায় দারিদ্র্যের কারণে কিংবা বাবা-মা'র অজ্ঞতার কারণে পোলিও'র টীকা দেয়া হয়নি। যার ফলশ্রুতিতে ছেলেটি এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, হাতের মুঠি করতে পারে না, পাশাপাশি দু'টি পা এনে হাঁটতে পারে না। তবু, ছেলেটি হারে না। তবু, সে আর দশজনের মত সাহায্যের হাত পেতে মানুষের করুণার পাত্র চায় না। কিছু করে নিজের কষ্টে নিজের যাপিত জীবন এগুতে চায়। তাই, বাস থেকে বাসে প্রতি মুহূর্তে পর পর অবস্থার মুখোমুখি হয়েও কোমড়ে বাঁধা ব্যাগ নিয়ে হাতে কয়েকটি কলম নিয়ে কিছুটা জড়তামাখা কন্ঠে কেমন করে যেন বলে ওঠে, "পেন্সিল নেবেন, পেন্সিল। বাচ্চাদের জন্য।" সাথে "বাঁশিও আছে", বলে ফুঁ দিয়ে ওঠে পেন্সিলের ঢাকনির সাথে লাগানো বাঁশিটা। এফ.এম যুগের ছেলেমেয়েরা কেউ তখন ফোনে কথা বলছে, কেউ বা হেডফোন লাগিয়ে রেডিও শুনছে। তাদের কানে ছেলেটার অনুনয় কিংবা বাঁশির সুরে দৃষ্টি আকর্ষণের যে চেষ্টা সেটা পৌঁছে না। হঠাৎ এক তরুণী ডেকে ওঠে হাত তুলে। কিছুক্ষণ যাচাই-বাছাইয়ের পর একটি দশটাকার নোট যখন ছেলেটির হাত স্পর্শ করে তখন হয়ত ঐ কাগজের টুকরোর প্রয়োজন কিংবা নিজের কিছু একটা করার চেষ্টার সার্থক পরিণতি অথবা নিতান্তই কোন কারণ ছাড়া ছেলেটির মুখে যে হাসিটা ফোঁটে, সেটার মূল্য হয়ত ঐ কাগজটির আর্থিক মূল্যমানের চেয়ে শতগুণে বেশি। তবু ছোটবেলার ভুলটা যেন চাঁদের গায়ে কলঙ্কের মত তখনও দাগ রেখে যায়, ঠোঁটের অসামঞ্জস্যতার প্রকাশে।
এত কথা কেন লিখলাম? মাঝে মাঝে কিছু মানুষের স্পর্শ পেতে খুব করে ইচ্ছে করে। যারা হেরে যাওয়া মানুষ হতে পারতেন খুব সহজেই। বা, হাল ছেড়ে সময়ের কাছে আত্মসমর্পণ করে অসহায় হয়ে যেতেও পারতেন। কিন্তু, যা হয়ে গেছে, সেটা মেনে নিয়েই সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখতে পারেন। কারো প্রতি অনুযোগ নয়, কারো প্রতি বিদ্বেশ নয়, শুধু অসম্ভব রকমের বেশি ভালোবাসা বুকে নিয়ে কিছু মানুষ আছেন, যাদের সংখ্যা খুব কম। এমনই একজনের জন্মদিন আজ। শাওন ভাইয়া। যাকে আমি কখনো সামনাসামনি দেখিনি। ভবিষ্যতে হবে কিনা, তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। তিনি মানুষটা আগে কেমন ছিলেন, তাও জানি না। কিন্তু, কেন যেন মনে হয়, ভাইয়া আমার সেই স্পর্শ পেতে চাওয়া মানুষদের মাঝে একজন।
শুভ জন্মদিন শাওন৩৫০৪ ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:০৯