শেষ পর্যন্ত সিনেমা হলে আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে ভারতীয় সিনেমা জোর। ভারতীয় সিনেমা প্রতিরোধে আন্দোলনের প্রস'তি নেয়া হলেও হাইকোর্টের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করেছেন সিনেমাশিল্পী, নির্মাতা ও কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র একতা পরিষদ।
পরিষদের আহ্বায়ক ও শিল্পী সোহেল রানা বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমার বাজার সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা মানা যায় না। তিনি জানান, এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র একতা পরিষদ গঠন করা হলেও হাইকোর্টের নির্দেশনার কারণে তারা আন্দোলনে যাচ্ছেন না। এখন বিষয়টি দর্শকের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন, আশা করছেন মহান বিজয়ের মাসে দর্শক ভারতীয় সিনেমা প্রত্যাখ্যান করবেন।
জানা গেছে, কলকাতার স্বপন সাহা পরিচালিত এবং টালিগঞ্জের নায়ক জিৎ, বর্ষা ও দিপঙ্কর দে অভিনীত জোর সিনেমাটি শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে। ওই দিন থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক ও শিল্পী সমিতির সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র ঐক্য পরিষদ আন্দোলনের ডাক দেয়। ভারতীয় ছবি মুক্তির দিন থেকে তারা এফডিসিতে সব ধরনের শুটিং-ডাবিং বন্ধের ঘোষণা দেয় । পাশাপাশি যেসব সিনেমা হলে জার সিনেমাটি দেখানো হবে সেসব হলে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কোনো সিনেমা সরবরাহ না করার ঘোষণা দেয়া হয়।
ঢালিউডের নির্মাতা শিল্পী ও কলাকুশলীদের এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র প্রদর্শকেরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। জার সিনেমার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইনউইন এন্টারপ্রাইজ ও মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের পক্ষে হাইকোর্টে এই আবেদন করেন অ্যাডভোকেট এম আমিন উদ্দিন।
রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট ভারতীয় সিনেমা দেখানোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি বা আন্দোলন না করতে চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে নির্দেশ দেন।
হাইকোর্ট তথ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, পুলিশ কমিশনার ও বিএফডিসির ব্যবস'াপনা পরিচালকের উদ্দেশে এ বিষয়ে রুল জারি করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতি মেনেই আমদানিকারকেরা হলে ভারতীয় সিনেমা হলে দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে অবস'ান গ্রহণ আইনসম্মত নয়। আমদানিকরা সিনেমা দেখানোর বিষয়ে প্রদর্শক ও সিনেমা হলগুলোর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত করারও নির্দেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে আমদানিকারক ও প্রদর্শক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী নিয়মনীতির মধ্যে থেকেই বৈধভাবে ছবি আমদানি করেছি। এ জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ট্যাক্সও পরিশোধ করা হয়েছে। আমদানি করা ছবি নিয়ে নিশ্চয়ই আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই পর্যায়ক্রমে এসব ছবি প্রদর্শনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অথচ এর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে আন্দোলনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। তাই আমরা প্রয়োজনীর নিরাপত্তা চেয়ে আবারো আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি। আদালত আমাদের আবেদন আমলে নিয়ে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আমদানি করা ছবির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হলে তা হবে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করা। এরই মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়ায় স্বসি- বোধ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘নতুন ছবির সঙ্কটের কারণে একের পর এক সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা সিনেমা হলে ছবির সঙ্কট দূর করে চলচ্চিত্র ব্যবসাকে চাঙ্গা করতে সমর্থ হবো। জার-এর পর পর্যায়ক্রমে বদলা ও সংগ্রাম ছবি দু’টি মুক্তি দেয়া হবে। তবে আমরা মাসে একটার বেশি উপমহাদেশীয় ভাষার ছবি মুক্তি দেবো না। বছরে ১২টি ছবির বেশি আমাদের দাবি নেই।’
চলচ্চিত্র একতা পরিষদের আহ্বায়ক ও প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘প্রদর্শকদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা আমরা হাতে পেয়েছি। আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিতে হয়েছে। তবে চলচ্চিত্র শিল্প ধ্বংস করার একটা ষড়যন্ত্র চলছে। ভারতীয় ছবির বাজার সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ অবস'ায় চলচ্চিত্রের সব নির্মাতা-কলাকুশলী ও শিল্পীর পক্ষ থেকে দর্শকদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, বিজয়ের মাসে ভারতীয় ছবি না দেখার জন্য। ভারতীয় ছবি প্রদর্শনীকে উৎসাহিত না করার জন্য।’
লিংক:

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






