সেমিস্টার শেষ । ছুটি সুরু । বহুদিন পর বাসায় আসার পালা এবার । অনেকদিন পর বাসায় যাচ্ছি । মনে এক অজানা আনন্দ । টিকেট কাটলাম ৫ দোস্ত একসাথে । নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্টার এ এসে হাযির হলাম ৫ জন। ঢূকেই দেখি এক সুন্দরি আপু বসে আছেন । ভাবলাম ইনিও বসে আছেন তার গন্তব্যে যাওয়ার ই অপেক্ষায় । তার সৌন্দর্য অতুলনীয় । আমরা সবাই তাকে ২/১ বার দেখলাম । মনে মনে সবাই হয়ত বললাম যে যদি উনি আমাদের বাস এ যান তাহলে ভালই হত , কেউ কেউ হয়ত ভাবল যে আমার যদি এরকম একটা girlfriend থাকত তাহলে কতই নাহ ভাল হত ইত্যাদি ।
নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট পর বাস আসল । সবাই বাস এ উটলাম । ৫ জন এর ৪ জন ৪ টা পাসাপাসি সীট নিয়ে বসে পড়ল । আমি একাই রয়ে গেলাম পিছনের একটি সীট এ বসার জন্য । নিজের ব্যাগ রাখতেই দেখি ঐ সুন্দরী আপু ও আমাদের সাথে আমাদের বাস এই যাবে । দেখে তো সবাই মনে মনে একটু খুশি হয়ে গেল । কেন যে খুশি হল তা আমার জানা নেই ।
বাস এর সব গুলো সীট এই লোক বসে আছে । সুধু বাকি আছে আমার পাশের সীট টা । এটা দেখার পর মনে যে না জানা আনন্দ টুকু ছিল তা যেন গায়েব হয়ে গেল । হায় হায় উনি আমার পাশে বসবে !! দোস্ত তোরা কেউ সীট বদলাবি আমার সাথে !! কেউ তখন আর রাজি হয় নাহ । সুধু আমার দিক এ তাকায় আর মিট মিট করে হাসে । হাসে কেন তা তো বুঝতেই পারতেসি । তাদের বাস এ কথা বলার মত একটা বিষয় জোগাড় হয়ে গেছে । আপু এসে ভিতরের সীট এ বসল । আমি বসলাম মাঝখানে ১ বিঘাত জায়গা ফাকা রেখে । বুঝলাম নাহ যাকে দেখে এত কিছুই মনে হল তার পাশে বসতে এত সমস্যা হচ্ছে কেন এখন !!
বাস ছেড়ে দিল । আমি আপুর দিক এ তাকাচ্ছি ও নাহ । নিজের মোবাইল এর হেডফোন কানে দিয়ে গান শুনতেছি আপন মনে । একবার আপুর দিক এ তাকালাম , দেখি উনি জানালার বাইরে অপলক দৃষ্টি তে কি যেন দেখছেন । মনে হল একবার বলি যে আপু কোন সমস্যা হচ্ছে নাহ তো । r u fine !! কিন্তু কেন যেন বলতে পারলাম নাহ । ভাবলাম আপু হয়ত কিছু ভাবছেন , তাকে বিরক্ত করাটা ঠিক হবে নাহ । এর মধ্যে বন্ধুদের ডাক আসল , কিরে কেমন যাচ্ছে তোর দিনকাল , ভালই তো আছিস । একটু লজ্জা পেলুম । আপু আবার ওদের কথা শুনে ফেলল নাকি , শুনলে কি মনে করবে !!
আমি ওদের বললাম ঐ চুপ থাক ।
দেখতে দেখতে ২ ঘন্টা কেটে গেছে । একটি কথাও হইনি আপুর সাথে । শুধু মাঝে মাঝে দেখছি যে আপুর কল আসছে , হয়ত বাসা থেকে তার বাবা ফোন দিচ্ছে যে তার মেয়ে ঠিক মত বাসায় পউছে যাবে কিনা তার ই খোঁজ নিতে । এর মধ্যে বাস এর চাকা পাঞ্চারহয়ে গেল । প্রায় আধা ঘন্টা ওখানেই দাড়ানো বাস । আমরা তো নিচে নেমে কার্ড খেলা সুরু করছি । এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করল যে আপুর সাথে কথা হল কোন ?? কই থাকে ?? কোথায় পড়াশুনা করে ?? আমি বললাম , নাহ এখনও একটি শব্দ ও আলাপ হইনি । আমার বন্ধু বলল যে তুই একটা গাধা । আমি মেনে নিলাম । আরও বলল যে সে হলে তো এতক্ষণ জমায়ে আড্ডা দিতো আপুর সাথে । আমি বললাম ওহ আচ্ছা , আমি পারি নাহ রে ।
আবার ও বাস এ উঠলাম , আপু দেখি একাই বসে আছে বাইরের দিক এ তাকায়ে , তার অপলক দৃষ্টির যেন কোন শেষ ই নেই । আবার ও আমি গান শোনা সুরু করলাম । আর আপু একবার আমার দিক এ দেখলেন আর কিছু না বলেই বাইরে দেখতে লাগলেন আবার । হয়ত মনে মনে ভাবলেন আই ছেলে কেমন । পাসের সীট এ বসে যাচ্ছে , কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করল নাহ একবার । অথবা কিছু হয়ত ভাবেন ই নাই ।
দেখতে দেখতে বাস যশোর এর কাছে যখন আসল তখন আপু সুপারভাইসার কে ডেকে বলল যে উনি যশোর এ নেমে যাবেন । আমি হঠাত করে শুনেই ভাবলাম যে হায় আপু দেখি নেমে ও যাবে , টানা ৬ ঘন্টা পার করে দিলাম পাশাপাশি বসে কিন্তু কেউ কারো নাম টাও জিজ্ঞাসা করলাম নাহ এখনও ।
এটা ভাবতে ভাবতেই যশোর পউছে গেছি । দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘন্টা পর আপু আমার দিক এ তাকিয়ে বলল একটু সরুন , আমি এখানে নেমে যাব । কিছু না বলেই উঠে দাড়ালাম । আপু নেমে চলে গেলেন । হঠাত করে ভাবলাম যে যাকে এতক্ষন মনের অজান্তেই আপু বলে সম্বোধন করে আসছি , উনি কি আসলে আপু নাকি আমাদের বয়সী কেউ ।
কেমন যেন জিজ্ঞাসা করে আসি এখন ই গিয়ে যে আপু আপনার নাম টা কি ??
............কি আজব আমি । এত সুন্দরী একটা মেয়ের পাশে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা journey করার পর ও তার নাম টা ও জানিনা । হয়ত ৬ ঘন্টায় কারো জীবনের সব কিছুই জেনে নেওয়া যায় ।
আমার বন্ধু রা বাস থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করল যে কি গল্প করলি আপুর সাথে ? আমি চুপ করে দাড়িয়ে থেকে বললাম , কিছুই নাহ রে । নাম টাও জিজ্ঞাসা করা হল না । দুঃখ রয়ে গেল মনের এক কোণে কেন জানিনা । হয়ত সব কিছুর কারণ জানা ও যায় নাহ । না জানার মধ্যে দিয়ে ই এক অতুলনীয় সুন্দরীর পরিচয় আর তার সাথে কাটানো কিছু মুহুর্ত হারিয়ে গেল ..................

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




