somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরে দেখা

০১ লা জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনুভূতিগুলো আজ শুকিয়ে গেছে । তারা ঝরে গেছে কালের অতল গহ্বরে । তাদের হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে শুকনো পাতার স্তূপে ঢাকা পড়া কোন দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকা পাতার মত । হয়ত এমনও হতে পারে যে সে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতি নিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে আমার এই অকেজো মনের সাথে । কিন্তু সেই দিনটির মত, যেদিন তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল, আজও আমার অকেজো মনের সাথে যুদ্ধে তার হার সুনিশ্চিত ।

আজও মনে পড়ে সেইদিনটির কথা , যেদিন প্রথম তোমায় দেখেছিলাম আজকের মতই কোন বৃষ্টিস্নাত দিনে । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে হয়ত ভালই লাগে । তাই হয়ত তুমিও তাকিয়ে ছিলে তোমার বাসার জানালা দিয়ে । আর আমার ও কি কপাল , আমিও যাচ্ছিলাম ঐ পথ দিয়েই । বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে নিজেকে স্পর্শ করতে দিতে কেন যেন সেদিন বেশি ভাল লাগছিল । এর মধ্যেই তোমার জানালার দিকে চোখ পড়ল। নিজেকে কেন যেন তোমাকে দেখা থেকেও আটকে রাখতে পারিনি নিজের চোখ দুটোকে । কেমন যেন নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল নিজের । নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম অন্য এক জগতে ।

কেন এমন হয়েছিল বলতে পার ?? কেন ঐদিন আমি চলতে চলতে থেমে গিয়েছিলাম ?? এরপর যা হয়েছিল তা তো তোমার আজানা নয় । তোমার সাথে ঐ যে দিনটিতে রাস্তায় চলার পথে ধাক্কা খেয়েছিলাম । সবই নাটক ছিল । আজ সত্যটা বলেই দিলাম । জানি এটা শুনে অবাক হচ্ছ । কারণ জীবনে যে মুহূর্ত গুলো তোমার স্বান্নিধ্যে কাটিয়েছি তখন অসংখ্য বারের মত তোমার এই প্রশ্নটার সম্মুখীন হয়েছি যে ওইদিন পুরা ব্যাপারটাই কাকতালীয় ছিল , নাকি সবই আমার ইচ্ছা । জানিনা প্রত্যেক মিথ্যা উত্তরের সাথেই তোমার মুখের হাসিগুলো কেমন করে উড়ে যেত , জানিনা কেমন করে তুমি সত্যটা বুঝতে । হয়ত সত্যটা শোনার পর তোমার মুখের হাসিটা আজ অটুট থাকবে । হয়ত আজ আর তোমার মুখের ঐ কৃত্রিম শুকনো হাসিটার মাধ্যমে নিজেকে খুশি দেখানোর অভিনয় করতে হবে নাহ তোমার ।

এরপর তোমার সাথে ২য় বারের মত পার্ক এ দেখা হওয়া আর তোমার সেই বন্ধুর মাধ্যমে আমাদের পরিচয় । ওর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ আমি । যদিও সেটার জন্য ওকে একটা ভাল খাওয়া উপহার দিতে হয়েছিল আমার । আজও মনে পড়ে যেদিন অনেক কষ্টে তোমার ফোন নাম্বারটা জোগাড় করে তোমাকে প্রথম বারের মত ফোন দিয়েছিলাম । নিজের পরিচয়টা গোপন করে তোমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম । তারপর তোমার মেজাজের সামনে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারিনি । নিজের পরিচয়টা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম । মুভির ডায়লগ এর মত বলতে হয় যে " আমি তো আকাশে উড়ছিলাম "

এরপর তোমার সাথে বার বার দেখা করার নানান বাহানা বানানো , যদিও আমার ধারণা তুমি সেগুলা সবই বুঝতে , তাই হয়ত আমার অনেক যুক্তিহীন বাহানা সত্ত্যেও দেখা করতে না করতে নাহ কখনও । মেয়েরা ব্যাপার গুলা যেন সহজেই বুঝে যায় । ছেলেরা কেন জানি এই বিষয়টিতে অজ্ঞ । অতঃপর তোমাকে যেদিন বললাম যে আমি তোমাকে পছন্দ করি । অনেক স্বরনীয় দিনটি । মনে করে দেখো , সেদিনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল । আমি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার ২২ তম জন্মদিন এ । এইটা অস্বীকার করতে পারবে নাহ যে ওইদিন তুমি বুঝতে পারনি যে আমি তোমাকে কি বলতে যাচ্ছি । এই বিষয়ের যত তর্ক আমাদের মধ্যে যখনইহয়েছে কখনই তুমি হার মাননি যদিও তোমার মুখের লাজুক হাসি দেখে আমি ব্যাপারটার সত্যতা জেনে যেতাম । মনে আছে কি ?? ওইদিন কিন্তু আমি ২৩ টা গোলাপ এনেছিলাম । ২২ টা তোমার ২২ তম জন্মদিন উপলক্ষে আর একটা ঐ বিশেষ কারণে । তোমাকে ঐ কথাটা যা আমি হয়ত ভাল করে বলতে পারিনি , ভয় পাচ্ছিলাম বলে , যখনই বলেছিলাম , তোমার উত্তরটা অনেক আজব ছিল । আমি তো কোন ঢং করার কথা বলিনি ঐদিন । তারপরও তুমি বলেছিলে আমি নাকি ঢং করছিলাম !! যদিও পরে বুঝেছিলাম যে ওটা নাকি হ্যাঁ বোধক উত্তরের একটা ধরণ ছিল । নিজেই হেসেছিলাম যেদিন জেনেছিলাম । সোজাসুজি কথা বলা মানুষ আমি । প্যাঁচ বুঝতে কষ্ট হয় আর কি ।

এরপরের তোমার সাথে কাটানো সেই রঙ্গিন দিনগুলি কখনও ভুলতে পারিনি । জানিনা কেন ছেড়ে এসেছিলাম ঐদিন , যেদিন তোমার বাসা থেকে মানা করে দিয়েছিল আমাদের বিয়ের ব্যাপারে । কেন ২/৩/৪ অথবা ৫ বারের মত বলতে যাইনি যে আমি তোমাকেই বিয়ে করব । তুমিও সেদিন নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলে । তোমার নিরবতা আমার কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল সত্যই বলছি ।

তারপর যেদিন তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল সেদিনটি ছিল আমার কানাডা চলে আসার দিন । বিমানবন্দরে দেখা করতে এসেছিলে । কি বলব তোমাকে বুঝিনি । বুঝিনি তোমার মনে কি ছিল । শুধু বলে দিয়েছিলাম " কেন এসেছ ? চলে যাও ! " ... তারপরও নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলে , কিছু বলনি । আমার বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম তুমি নাকি ফ্লাইট ছেড়ে দেওয়ার পর অনেক কেঁদেছিলে । আমার সামনেই কাঁদতে , আমি তোমায় কাঁদতে দেখে কখনও যেতাম নাকি !!

তোমার মৃত্যুর খবরটা আমার ঐ বন্ধুই দিয়েছিল । আমি কিছু সময়ের জন্য সেদিনও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম । তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে তোমার পরিবার কেন আমার সাথে তোমার বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। আর কেন সেদিন তুমি নিজেকে চুপ রেখেছিলে । তোমার কি এইটুকু আমাকে বলার সাহস ছিল নাহ ?? তুমি দেখতে নাহয় আমি কি করতাম ! সেটা দেখার আগেই নিজের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলে আমাকে । এর জন্য কখনও মাফ করব নাহ তোমাকে আমি । তোমার অসুখের ব্যাপারটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে গিয়েছিলে । নিজেকেও দোষারোপ করি আমি কারণ আমি সব না জেনেই দেশ ছেড়েছিলাম ।

আজও তোমার সেই চেহারা মনে আছে । নিজের ডায়েরিতে তোমাকে কখনই লিপিবদ্ধ করিনি আমি । তবে আজ হয়ত আমার জীবনের শেষ দিন । বৃষ্টির গুড়ি গুড়ি ফোঁটা দেখে জানালার পাশে বসে তোমার কথা লিখলাম আমার এই ডায়েরিতে । তবুও জীবনের শেষ দিনটির খুব নিকটে এসে ফিরে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে নিজের অতিতের সেই ভুল গুলোর দিকে যা কারণে-অকারণে করে এসেছি নিজের সাথেই। তোমার প্রতি আমার মনের কোনে থাকা একটা প্রগাঢ় দুর্বলতাও যে ভুলগুলোকে শুধরে দিতে পারেনি । জীবন হয়ত শেষ হয়েই এল । আর সময় নে...

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×