অনুভূতিগুলো আজ শুকিয়ে গেছে । তারা ঝরে গেছে কালের অতল গহ্বরে । তাদের হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে শুকনো পাতার স্তূপে ঢাকা পড়া কোন দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকা পাতার মত । হয়ত এমনও হতে পারে যে সে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতি নিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছে আমার এই অকেজো মনের সাথে । কিন্তু সেই দিনটির মত, যেদিন তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল, আজও আমার অকেজো মনের সাথে যুদ্ধে তার হার সুনিশ্চিত ।
আজও মনে পড়ে সেইদিনটির কথা , যেদিন প্রথম তোমায় দেখেছিলাম আজকের মতই কোন বৃষ্টিস্নাত দিনে । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে হয়ত ভালই লাগে । তাই হয়ত তুমিও তাকিয়ে ছিলে তোমার বাসার জানালা দিয়ে । আর আমার ও কি কপাল , আমিও যাচ্ছিলাম ঐ পথ দিয়েই । বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে নিজেকে স্পর্শ করতে দিতে কেন যেন সেদিন বেশি ভাল লাগছিল । এর মধ্যেই তোমার জানালার দিকে চোখ পড়ল। নিজেকে কেন যেন তোমাকে দেখা থেকেও আটকে রাখতে পারিনি নিজের চোখ দুটোকে । কেমন যেন নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল নিজের । নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম অন্য এক জগতে ।
কেন এমন হয়েছিল বলতে পার ?? কেন ঐদিন আমি চলতে চলতে থেমে গিয়েছিলাম ?? এরপর যা হয়েছিল তা তো তোমার আজানা নয় । তোমার সাথে ঐ যে দিনটিতে রাস্তায় চলার পথে ধাক্কা খেয়েছিলাম । সবই নাটক ছিল । আজ সত্যটা বলেই দিলাম । জানি এটা শুনে অবাক হচ্ছ । কারণ জীবনে যে মুহূর্ত গুলো তোমার স্বান্নিধ্যে কাটিয়েছি তখন অসংখ্য বারের মত তোমার এই প্রশ্নটার সম্মুখীন হয়েছি যে ওইদিন পুরা ব্যাপারটাই কাকতালীয় ছিল , নাকি সবই আমার ইচ্ছা । জানিনা প্রত্যেক মিথ্যা উত্তরের সাথেই তোমার মুখের হাসিগুলো কেমন করে উড়ে যেত , জানিনা কেমন করে তুমি সত্যটা বুঝতে । হয়ত সত্যটা শোনার পর তোমার মুখের হাসিটা আজ অটুট থাকবে । হয়ত আজ আর তোমার মুখের ঐ কৃত্রিম শুকনো হাসিটার মাধ্যমে নিজেকে খুশি দেখানোর অভিনয় করতে হবে নাহ তোমার ।
এরপর তোমার সাথে ২য় বারের মত পার্ক এ দেখা হওয়া আর তোমার সেই বন্ধুর মাধ্যমে আমাদের পরিচয় । ওর প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ আমি । যদিও সেটার জন্য ওকে একটা ভাল খাওয়া উপহার দিতে হয়েছিল আমার । আজও মনে পড়ে যেদিন অনেক কষ্টে তোমার ফোন নাম্বারটা জোগাড় করে তোমাকে প্রথম বারের মত ফোন দিয়েছিলাম । নিজের পরিচয়টা গোপন করে তোমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম । তারপর তোমার মেজাজের সামনে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারিনি । নিজের পরিচয়টা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম । মুভির ডায়লগ এর মত বলতে হয় যে " আমি তো আকাশে উড়ছিলাম "
এরপর তোমার সাথে বার বার দেখা করার নানান বাহানা বানানো , যদিও আমার ধারণা তুমি সেগুলা সবই বুঝতে , তাই হয়ত আমার অনেক যুক্তিহীন বাহানা সত্ত্যেও দেখা করতে না করতে নাহ কখনও । মেয়েরা ব্যাপার গুলা যেন সহজেই বুঝে যায় । ছেলেরা কেন জানি এই বিষয়টিতে অজ্ঞ । অতঃপর তোমাকে যেদিন বললাম যে আমি তোমাকে পছন্দ করি । অনেক স্বরনীয় দিনটি । মনে করে দেখো , সেদিনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল । আমি ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম তোমার ২২ তম জন্মদিন এ । এইটা অস্বীকার করতে পারবে নাহ যে ওইদিন তুমি বুঝতে পারনি যে আমি তোমাকে কি বলতে যাচ্ছি । এই বিষয়ের যত তর্ক আমাদের মধ্যে যখনইহয়েছে কখনই তুমি হার মাননি যদিও তোমার মুখের লাজুক হাসি দেখে আমি ব্যাপারটার সত্যতা জেনে যেতাম । মনে আছে কি ?? ওইদিন কিন্তু আমি ২৩ টা গোলাপ এনেছিলাম । ২২ টা তোমার ২২ তম জন্মদিন উপলক্ষে আর একটা ঐ বিশেষ কারণে । তোমাকে ঐ কথাটা যা আমি হয়ত ভাল করে বলতে পারিনি , ভয় পাচ্ছিলাম বলে , যখনই বলেছিলাম , তোমার উত্তরটা অনেক আজব ছিল । আমি তো কোন ঢং করার কথা বলিনি ঐদিন । তারপরও তুমি বলেছিলে আমি নাকি ঢং করছিলাম !! যদিও পরে বুঝেছিলাম যে ওটা নাকি হ্যাঁ বোধক উত্তরের একটা ধরণ ছিল । নিজেই হেসেছিলাম যেদিন জেনেছিলাম । সোজাসুজি কথা বলা মানুষ আমি । প্যাঁচ বুঝতে কষ্ট হয় আর কি ।
এরপরের তোমার সাথে কাটানো সেই রঙ্গিন দিনগুলি কখনও ভুলতে পারিনি । জানিনা কেন ছেড়ে এসেছিলাম ঐদিন , যেদিন তোমার বাসা থেকে মানা করে দিয়েছিল আমাদের বিয়ের ব্যাপারে । কেন ২/৩/৪ অথবা ৫ বারের মত বলতে যাইনি যে আমি তোমাকেই বিয়ে করব । তুমিও সেদিন নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলে । তোমার নিরবতা আমার কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছিল সত্যই বলছি ।
তারপর যেদিন তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল সেদিনটি ছিল আমার কানাডা চলে আসার দিন । বিমানবন্দরে দেখা করতে এসেছিলে । কি বলব তোমাকে বুঝিনি । বুঝিনি তোমার মনে কি ছিল । শুধু বলে দিয়েছিলাম " কেন এসেছ ? চলে যাও ! " ... তারপরও নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলে , কিছু বলনি । আমার বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম তুমি নাকি ফ্লাইট ছেড়ে দেওয়ার পর অনেক কেঁদেছিলে । আমার সামনেই কাঁদতে , আমি তোমায় কাঁদতে দেখে কখনও যেতাম নাকি !!
তোমার মৃত্যুর খবরটা আমার ঐ বন্ধুই দিয়েছিল । আমি কিছু সময়ের জন্য সেদিনও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম । তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে তোমার পরিবার কেন আমার সাথে তোমার বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। আর কেন সেদিন তুমি নিজেকে চুপ রেখেছিলে । তোমার কি এইটুকু আমাকে বলার সাহস ছিল নাহ ?? তুমি দেখতে নাহয় আমি কি করতাম ! সেটা দেখার আগেই নিজের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলে আমাকে । এর জন্য কখনও মাফ করব নাহ তোমাকে আমি । তোমার অসুখের ব্যাপারটা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে গিয়েছিলে । নিজেকেও দোষারোপ করি আমি কারণ আমি সব না জেনেই দেশ ছেড়েছিলাম ।
আজও তোমার সেই চেহারা মনে আছে । নিজের ডায়েরিতে তোমাকে কখনই লিপিবদ্ধ করিনি আমি । তবে আজ হয়ত আমার জীবনের শেষ দিন । বৃষ্টির গুড়ি গুড়ি ফোঁটা দেখে জানালার পাশে বসে তোমার কথা লিখলাম আমার এই ডায়েরিতে । তবুও জীবনের শেষ দিনটির খুব নিকটে এসে ফিরে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে নিজের অতিতের সেই ভুল গুলোর দিকে যা কারণে-অকারণে করে এসেছি নিজের সাথেই। তোমার প্রতি আমার মনের কোনে থাকা একটা প্রগাঢ় দুর্বলতাও যে ভুলগুলোকে শুধরে দিতে পারেনি । জীবন হয়ত শেষ হয়েই এল । আর সময় নে...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




