somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নয় দরজার বাতাস

২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুনিরা চৌধুরী



উৎসর্গ

মহাশূন্যের দোলনায় নেই কোনো রক্তকরবী
তবুও দুলিয়ে যাচ্ছি...

নমিরুন্নেসা চৌধুরী
ঠাকুর মা আমার



কবিতানুক্রম

হেমন্তে রচিত হেমলক
নয় দরজার বাতাস
মেহেক ও মেহেকানন্দা
মুনিরাকথা





হেমন্তে রচিত হেমলক

১.
মহাকালের ছবি দেয়ালে টাঙিয়ে ছিলাম সেই কবেকার ঘোরগ্রস্থ ভোরে, সেলাই করে করে...
সেইসব ছায়া-চেহারাগুলো এখন ঝাপসা হয়ে গেছে...
ছাদের উপর বৃষ্টির আঙুলগুলো ফেটে পড়ছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে না কি কান্নায়- ঠিক বুঝতে পারি না...
কৈশোরে কাগজের নৌকা ভাসিয়েছিলাম পুকুরে...
ভেবেছিলাম- নৌকাগুলো বড় হবে একদিন, দেখা হবে মেহেকসমুদ্রে...

আমার পাখিরা আর উড়াল দিলো না...
দূর অতীতে পাখিদের ডানা কেটে দিয়েছিলাম
পাখিদের ডানা রেখে দিয়েছিলাম ছোটবেলার অ্যালবামে...


২.
এখন নৈঃশব্দের শব্দরা ঘুমিয়ে পড়েছে...
চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে...
মরুভূমিতে একা একা টেনে টেনে নিয়ে যাচ্ছি বালির নৌকো

দূরতম জানালার পাশে দেখি- চিরচেনা কারো ছায়া ভেসে ভেসে ডুবে যায়
আয়নাগুলো গলে গলে যায়...

চক্ষু খুলে দেখি- কোথাও চক্ষু নেই, ছায়া নেই, বিম্ব-প্রতিবিম্ব নেই
শূন্য কুঠরীতে পড়ে আছে
মৃত সব মুনিরামায়া আমার অগ্নিমায়া...




৩.
জোনাকীপাতার ঝন ঝন শব্দ শুনে মনে হচ্ছে
আমার মাটির ঘরের জানালার পাশে যমুনা নদী
বইছে
বইছে...

আর
যমুনার তলপেট থেকে তুলে আনছি পৃথিবীর অনন্ত ভোর
হে সূর্য, হে রক্তকরবী
হে অনন্তদৃশ্যান্তর...


৪.
ভেবে নাও তুমি- মঙ্গলরূপ কিছুটা পুড়ে গেছে পুড়ে-যাওয়া জলের ছোবলে
ভোর বেলার আলোয় কোনো কমলা-রঙ নেই, ছাই-রঙা বালিকার গুড়া গুড়া শরীর ব্যতিরেকে
ভাঙ্গা মন্দিরের পাশে আমাদের ভাঙ্গা-শঙ্খের আওয়াজ ভাঙছে তো ভাঙছে
সখা হে, মমি হয়ে শুয়ে আছি অগ্নিঝর্ণার নিচে

আর জাগবো না
আর জাগবো না

কেনো জাগাতে চাও তবে
কেনো জাগাতে চাও ঘুমিয়ে-পড়া মৌমাছির ঝর্ণা

এই মমি আবার কি মানবী হবে মথুরা বৃন্দাবনে



৫.
নরকের নীল আগুনের চারপাশে লেলিহান জিহ্বাগুলো উড়ছে
উড়ন্ত জিহ্বায় গেঁথে যাচ্ছে আর্তনাদের ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি
আমি যাই নি কোথাও
আমার পান্ডুলিপি থেকে সবগুলো লেখা চলে গেছে

হাতখানি যে রক্তে ডুবে আছে...
কী করে লিখি কথা ও মুনিরাকথা, নদী ও মেহেকানন্দার জল
তবু
স্ফটিকের পাখি প্রত্নকলম তুলে দিচ্ছে হাতে

আমায় ক্ষমা করো পাখি, পাখির পালক, আমায় ক্ষমা করো নদী, নদীর দুইপাড়
আমায় ক্ষমা করো
ক্ষমা করো
ক্ষমা করো
ক্ষমা করো
ক্ষমা করো রক্তকরবী
আমি যে পাথর কুচি...



৬.
কোনো এক সন্ধ্যায় বাবাকে নিয়ে সাগর পারে বসেছিলাম
বাবা, চশমাটা খুল তো
তোমার চশমায় কয়েকটা কুয়াশার পাখি আটকা পড়েছে
পাখিগুলো মুক্ত করে দাও, পাখিগুলো ডানাহীন, অনেকটা আমার মতো...
প্রিয় কবিতাটা পাঠ করো সমুদ্রের নামে
কতোদিন হয় তোমার কন্ঠ হতে উড়ে যায় না রঙের গজল...

বাবা চুপ হয়ে বসে আছে...

বললাম
ডেউয়ের ভয়ে সকল সম্পান জলরাশি পাড়ি দিতে পারে না
বাবা আমি কি তোমায় পাড়ি দিচ্ছি!

ছোট ছোট বাবুই পাখিরা মুখে দানা নিয়ে
উড়তে উড়তে বার বার দানাগুলো ফেলে দেয়
কেউ কি আমায় এরকম ফেলে দিয়েছে বাবা
আমি পা-ভাঙ্গা মানুষ, দৌড়াতে নেমেছি...

বাবা বললো-
এইবার চলো মেহেকানন্দার তীরে যাই, নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে
আমি পাখির শরীরে কুয়াশার ডানা জুড়ে দিয়েছি।



৭.
এ যেনো এক অন্য জীবন
ঝড়ের দাপটে নুয়ে-পড়া সুপারির বাগান...
ছুটি ফুরিয়ে যাবার পর ঠাকুর মায়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে
প্রথম রেলগাড়ি চড়ে কলিকাতা যাওয়া...
পাহাড় ঘেষা মেঘে মেঘে
আকাশগঙ্গা নিয়ে শালবনের সঙ্গীতে সঙ্গীতে হঠাৎ ঘুমিয়ে-পড়া...

কোনো এক অচেনা ষ্টেশনে শাদা-কালো ঠাকুরমা বলেছিলো-
জগতের আনন্দধারাকে জীবন দিবি, জীবনের কাছ থেকে কখনো আনন্দ নিবি না...

হায় আনন্দধারা!
আজ আটকা পড়েছে বালুচরে

আমি দিন রাত নদী খনন করছি
টেনে হিচড়ে জীবনের কাছে নিয়ে যাচ্ছি এক মেহেকানন্দা নদী।



৮.
কেন তুমি শঙ্খ কেটে কেন শাখা বানিয়েছো
হাতের মুঠো তো খুলবো না
হাতের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছি নদীনালা
মরে-যাওয়া ময়ুরাক্ষীর দাগ

কেন শাখা নিয়ে এসেছো?

যদি পারো
চাকু দিয়ে হস্তরেখা কেটে যেয়ো
বদলে যেয়ো জন্মের দাগ।







৯.
হায়! চাঁদের যে আলো নেই ভুলেই গিয়াছিলাম
কীভাবে লিখি কবিতা ও অন্ধকার
বলতো আমায়...

আর কি লিখবো
ভাঙ্গা ইট না কি পুড়ে যাওয়া মন্দিরের ছাই

জোনাকিরা আর উড়ছে না
ঝরে পড়া একটা নীল জোনাকীর ভেতর
আমি ঘুমিয়ে পড়েছি, ঘুমিয়ে পড়েছি।



১০.

ভালোবাসায় কোনো পার্থক্য নেই জন্মবরণের কিংবা মৃত্যুবরণের
এইতো জীবন, নিয়ে নাও
যাকে দেখে বেঁচে আছি তাকে দেখে মরণ হয় বার বার

হায় শ্যাম,
নাম ধরে ডাকো
মেঘমন্দ্র স্বরে নাম ধরে ডাকো
আমি যে ভাঙ্গা প্রদীপ জ্বলিয়ে তোমার ডাকের অপেক্ষা করছি...

আত্নহারা আমি- বেঁচে থাকবো না কি মরে যাবো
কে ডাকছে আমায়! তুমি না সয়ং ঈশ্বর!



১১.
ঘুমের ভেতরে গত জনমের কষ্টরা ধীরে ধীরে পুড়ছিলো
ঘুম ভেঙ্গে দেখি আগামী জনমের সুখগুলো পিপাশার্ত ভীষণ

হায়!
বৃষ্টির জলে তৃষ্ণা মেটে না, সমুদ্রের নোনা জলেও না

দ্বিপদী ঘোড়ায় চড়ে আরো দূর যেতে যেতে
নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে যাই
মন্দিরের চূড়ায় অন্ধকার ঘন হয়ে এলে বিষ পান করি
চাতকিনীর মতো আমিও তৃষ্ণা নিবারণ করি।



১২.

তোমায় খোঁজে খোঁজে দু'চোখের পাথর প্রজাপতি হয়ে উড়ে গেছে
...অতঃপর পুড়ে গেছে ডানা...
আর কী দৃশ্যের মুখোমুখি হবো বলো
কোথায় সেই জলের মন্দির!

কোথাও তো আনন্দ নেই
তোমার চোখের কুঠুরীতে অন্ধ হওয়ার অধিক! হায়! জন্মান্ধ রাধিকা!!



১৩.
চন্দ্রপৃষ্টে
নীল জোনাকীরা ফেটে যাচ্ছে একে একে
আমায় আরো দূর নিয়ে যা আজন্ম শবযাত্রী আমার...

সারাদিন কবরের অন্ধকারে শুয়ে থাকি
সারারাত চিতার আগুনে উড়ি ছাইয়ের কীর্তন...
পুজো করি
আরাধনা করি...
তবু ঈশ্বর
তোমার নামের সাথে জোড়া লাগলো না
আমার আর আমার রক্তকরবীর হাত-পা,
শিশিরের শরীর...



১৪.

হারিয়ে যাওয়া মহাশূন্য থেকে
চাঁদ আর মেঘের খেলা দেখে আমার রক্তকরবী।
হারিয়ে-যাওয়া মহাশূন্য হতে একজোড়া চোখ, একজোড়া হাত আর
নরম নরম প্রজাপতি ভেসে আসে
শূন্যস্থান হতে আসে কুচি কুচি আগুনের ফুল

ভাবনার দীপ জ্বলে তো জ্বলে...
শুধু পুড়ে-যাওয়া এই আমি নতুন করে আর পুড়তে পারি না।




১৫.


দূরের আসমান ঝাপসা হয়ে আছে
অসীম আসমানে উড়ে যাচ্ছে মেহেকান্দানদী
নদীর নাভী হতে বের হচ্ছে মেঘ ও কুয়াশা
তবু কি তুমি বলবে- যা পাওয়ার ছিলো তা হারিয়ে ফেলছো!

প্রতিদিন আমার কবরের একটা দুইটা পাথর ঝরে পড়ছে
সময় পেলে কোনো এক মাঘী পূর্ণিমার রাতে চলে এসো
পাথরগুলো ঠিক করে যেয়ো।







নয় দরজার বাতাস


১.

আমি জেগে থাকি
কাটা-হাতখানা অন্য-হাতে নিয়ে সারারাত জাগি
অনন্ত ভোরের দিকে হাতের গহীনে জ্বলে ওঠে হাতের চিতা

হাড়-গলা গরম ঘন হয়ে এলে কেবল শীত শীত লাগে... ঘুম লাগে

এইসব মুনিরা ঘুমের ঘোরে কোথাও কোনো জানালা নেই; সই সই নয় দরজার বাতাস...



২.

পাথরের দিকে তাকাতে তাকাতে
দু'চোখের পাথর ক্ষয় হয়ে গেছে
কোথায় পাবো তোমায়
পাথর কুঠরীতে বাস করো তুমি পাথরের পিতা।

কোথাও বাতাস নেই
দেহের ডালপালা বহুযুগ হলো স্থির হয়ে আছে
কোথাও শুনছি না বাতাসের গান

স্ফটিক-পাখিরা, আমার প্রাণবন্ধু তারা
আমায় জাগ্রত রেখে চলে গেছে ঘুমের জঙ্গলে

ভেসে উঠতে পারছি না
কিছুতেই না

চাঁদ-সূর্য্যের গলা একত্র করেছি
ডুবিয়ে দিয়েছি মেহেকসমুদ্রে



৩.
পুকুর-পারে বসে পাথর ছুঁড়ছি
তৈরী করছি ঢেউ ও জলের হৃত্পিণ্ড

ঢেউয়ের সাথে রক্তের শিরায় শিরায় একা এক নিমাই সন্ন্যাসী
কেউ পাশে নেই...

আমার পাশে আমি
একা
একা

জলের দূরত্বে ছুঁড়ে দেই ছায়ার মুনিরা...


৪.

মায়ের কথা কিছু লিখতে গেলে ঝড়ের বেগে বাবার কথা চলে আসে...
তারা আমায় জীবন দিয়েছে এই ভেবে যে- হয়তো একদিন আমিও গোলাপ ফোটাতে পারবো মরুভূমে
আমার বুক ফেটে জন্ম নেবে আগরের গাছ

মুখে সোনার চামচ দিয়ে কথা তুলে
তারা বলেছিলো- হা কন্যাকুমারী তুমি, এই আগুনের দেশে একদিন মুনিরানগরী হয়ো, প্রতিদিন সববুজ হয়ো

হাত ধরে ধরে হাঁটতে শিখিয়ে বাবা বলেছিলো- সাবধানে চলো, সামনেই আছে লেলিহান নদী। পাড়ী দিতে হবে।

কিছুই পেরুতে পারি নি আমি। পা ভেঙ্গে পড়ে আছে শৈশবের ঘোড়া।

নদীতীরে জন্ম-জন্ম খেলা হলো না আমার।

দিন যায় মাগো রাত যায়।

কোনো এক মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে মনে হয়-
জন্মজননী আমি, মুনিরাজননী আমি মথুরা বৃন্দাবনে
ঈশ্বর জন্ম দিয়েছি, ঈশ্বর জন্ম দিয়েছি।


৫.
ঘরের উপরের কুঠরীতে কেউ আর থাকে না । ওই কুঠুরী অনেক দিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে ।
যে সিঁড়িগুলো উপরের দিকে যেতো তারা উপরের দিকে যেতে যেতে
আর মহাশূন্যের দিকে যায় না; মৃত হরিণীর পায়ের পাশে আটকা পড়ে আছে।

ওই কুঠরীতে আটকা পড়ে আছে কতগুলো ভাঙ্গা মুখ, ভাঙ্গা হাত-পা, ভাঙ্গা পুতুল ও প্রজাপতি ।
ওই কুঠরীর পাশে একটা অলিন্দ ছিলো, যেখানে আমার প্রাণবন্ধু আসতো; আমার শ্যাম আসতো পাখি হয়ে, রোজ আসতো। অমৃত ফলের রূয়া হাতে আমার প্রতীক্ষা ছিলো পাগলিনীর মতো,
শূন্যতার পাহারাদার, কেবল তারাকাগুলো গুনে রাখাই একমাত্র কর্ম ছিলো আমার।

নক্ষত্রপতনের দিন বাড়ছে, সিঁড়িগুলো মুছে মুছে ক্রমশঃ নিচের দিকে যাচ্ছে...
আমায় সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে মেহেকসমুদ্রে জনম জনমের মতো...



৬.
শব্দগুলো হারিয়ে যাচ্ছে হা-করা শব্দের ভীড়ে
হাজার চেহারার মাঝে চেহারাগুলো গলে পড়ছে অ্যাবুসিনিয়ার মরূপথে
পান করছি পরমায়ু, সাপের নিঃশ্বাস... এমন নীলভোরে
জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে কার্ডিফ শহর, মেহেক বৃক্ষ...

দূর অতীতের নীলভ্রমরা মাথায় অঙ্কন করছে আগুনের রেখা...
গাছের গর্তে ঘুমিয়ে পড়েছে হরিনী... আমি জেগে আছি...

হায় শ্যাম!
তুমি কি একবার এসে খুলে দিয়ে যাবে জল ও ঘুমের কপাট!



৭.

কোনো এক পুরনো বাঁশরী থেকে আধভাঙ্গা সুর ভেসে ভেসে
গাছের গায়ে লাগছে এই নদীতীরে, যমুনা কিনারে
মেহেক্ধুয়া উড়ে যাচ্ছে দূরের পর্বতে - আমি তাকিয়ে দেখি

হে কমলা পাখি, নয়শত ডানার পাখি
তোমরা কি ফেরত দেবে না আমার বিগত জন্মের সবগুলো ডানা ও পালক
আমি যে আরও একবার জন্মান্তরে উড়াল দিতে চাই I



৮.

হাঁটতে হাঁটতে ডায়রীর কাগজ ফুরিয়ে গেছে
জ্বলতে জ্বলতে মোমবাতির ভেতর ডুবে গেছে অগ্নিশলাকা
আর হাড়ের অন্ধকারের বীজকথা মুনিরামর্মে ...
পৃথিবীর পুরনো রাতগুলো, যারা হাজার হাজার বছর থেমে ছিলো
তাহাদের জন্ম হলো জন্মান্তরে... তবু রাতগুলো আর ভোরের মুখ দেখলো না...

টেবিলে পড়ে আছে কাটারক্ত...
তুমি নড়ে ওঠো
গলিত কুসুম, কুসুমের কবর
মা আমার চিরদিনের রক্তকরবী...


৯.

ফুল পাখি নদীর কাছে নয়
প্রতিদিন আমার কষ্ট আমার কাছে বিক্রি করে দেই
না-লেখা কবিতাগুলো টেনে টেনে শ্মশানঘাটে নিয়ে যাই
অগ্নিমাখা ফেসবুকে প্রকাশ করি
সয়ং ইশ্বর এসে লাইক দিয়ে যান।

অতপর স্নান করতে সমুদ্রে যাই
দেখি, সমুদ্র ডুবে আছে আমার ভেতর
ওহে রক্তকরবী, সমুদ্র ডুবে আছে তোমার ভেতরI



১০.
ঘুমের ভেতরে গত জনমের কষ্টরা ধীরে ধীরে পুড়ছিলো
ঘুম ভেঙ্গে দেখি আগামী জনমের সুখগুলো পিপাশার্ত ভীষণ

হায়!
বৃষ্টির জলে তৃষ্ণা মেটে না, সমুদ্রের নোনা জলেও না

দ্বিপদী ঘোড়ায় চড়ে আরো দূর যেতে যেতে
নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রামে যাই
মন্দিরের চূড়ায় অন্ধকার ঘন হয়ে এলে বিষ পান করি
চাতকিনীর মতো আমিও তৃষ্ণা নিবারণ করি।



১১.

মাকড়সার মতো ঘর সেলাই করি
কীট-পতঙ্গরা এসে কুটি কুটি করে গুঁড়া কল বানিয়ে দেয়
আবার সেলাই করি
সূচিমুখে যে রক্তের জমাট বেঁধে গেছে...

ইশ্বর তুমি শংকিত হয়ো না
দু'চোখ ছিদ্র করে
লাল-নীল-কমলা রঙের সুতো দিয়ে সেলাই করছি...



১২.

তুমি কি আমার হৃৎপিণ্ডে পা দিয়ে পিষে যাবে

আমৃত্যু স্পর্শ আগুনে
পুড়ছে চিতা...

পুড়ে যাচ্ছে প্রাণাঙ্গ এক

চক্ষু দিয়ে বদল করি গোল গর্ত আমার...



১৩.
চোখের জানালা বন্ধ করলে চোখের দরজা খুলে যায়
দরজার ভেতর দরজা আর অজস্র পাথরের খাচা...

গর্তগুলো ভরাট করছি এক'শ বছর ধরে...
এই ভাঙ্গা ভাঙ্গা কুয়াশার সড়ক
কার্ডিফ নগর হতে চলে গেছে মথুরা বৃন্দাবনের দিকে
প্রতিপথে কাঠফুল, কাঁটার কঙ্কাল...

ঘুমহীন মাকরশা এক
ঘর বুনছি, কাঁটা কুড়াচ্ছি...
জন্মের আগ থেকেই জেগে আছি...

ইশ্বর, তুমি কি তোমার নিঃশ্বাসে এক মিনিট ঘুমোতে দেবে না!


১৪.
রক্তডালিমের কুসুম পুড়িয়ে আমিও গান করি
মহাশূন্যের এই মহা-অডিটোরিয়ামে আমিও গান করি
এ-কার উদ্দেশে!

মরুখণ্ডে আমি একা এবং একাই

কেন তুমি সমুদ্রে গেলে

তুমি কি এই যুগিনীর কন্ঠ হতে আর কোনোদিন ঝিনুক কুড়াবে না...





মেহেক ও মেহেকানন্দা


১.
মানুষের ভেতর পশুদের শহর ...
শহর তুমি মরে যাও তবু
মৌমাছির মধু তুলে রেখো না ষিষের বোতলে।

জানি
মানুষের বিশেষ কোনো ধর্ম নেই তাই
পড়ুক আযান, পাশাপাশি রামমন্ত্র শুনি দূর আকাশে

হিন্দু ও মুসলিমের সঙ্গী নই আমি
মানুষ তুমি কোথায় এ-ভব মেহেকানন্দা নদী তীরে!


২.

অন্ধকারে ডুবে আছে এক আহত হরিণ...
মোমবাতি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ভাঙ্গা আলো...

এই তো অন্ধকার

এইখানে আমি থাকি
একা এবং একাই

গলা টিপে আলোর ঝর্ণা হত্যা করেছি
হে মৃত সূর্য- জ্বলে ওঠো জ্বলে ওঠো...


৩.
তুমি কি ইশ্বরের মতো ব্যস্ত এখন
তুমি কি নতুন কোনো গ্রহ তৈরী করছো...

আকাশ থেকে নেমে আসছে শাদা শাড়ি
এই উপত্যকা পেচিয়ে ধরো হে ভূমিপুত্র।



৪.

কি দেখছো তুমি?
মনের এক কোনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছো বাকহীন, পলকহীন

কী পাও তুমি?
আমিতো আগের আমি নই হরিহর...

তবু পথ চেয়ে থাকি

মাঝে মাঝে মনে হয়
আমার লাশ ঘাড়ের এক কোনে পড়ে আছে
এই লাশটিকে কেঁটে আর কি হবে...


৫.

বিষের পেয়ালায় চুমুক দিয়েছি সূর্যের সাথে যুদ্ধ করবো বলে
রক্তলাল পাথর হতে গিয়ে বিগলিত মোম হয়ে গেছি
মোমের মানবী।

এমন নরোম রাত্রিতে চাঁদকে ডাকলাম ছাদের উপরে
তারাগুলো সাজিয়ে রাখলাম পাহাড়ে পাহাড়ে।

চাঁদ-সূর্যের পাহারাদার আমি শেষরাতে নদীর নিচে ঘুমোতে যাই।

তুমি শংকিত হয়ো না ঈশ্বর
আমি শুধু জল বিন্দুকে ভ্রমরা বানিয়ে দিয়েছি ।


৬.

তুমি কি হঠাৎবৃষ্টিতে পোড়া মাটির গন্ধ শুঁকতে পাও...
তুমি কী আমার মৃত দেহের গন্ধ পাও?
ভোরের শিশিরবিন্দুগুলো তোমার খালি পায়ে লাগলে
অনুভব কি করতে পারো আমার স্পর্শ ...
তুমি কী ছুঁতে পারো আমায়?

ঘু ঘু পাখির গুঞ্জণ গাঢ় হয়ে আসে চারিদিকে...
আমার ডাক একটুও কি শুনছো না?

তুমি কি তবে কি চিরদিন থেকে যাবে
স্টোনহেঞ্জের সেই একখন্ড বধির পাথর


৭.

ঐ ভোরে দু'চোখ কান্না ভুলে গিয়েছিলো তাই
আমার হৃৎপিন্ড রক্ত ঝরিয়েছে নিরন্তর
চাকা
চাকা
বিন্দু
বিন্দু

অন্য ভোরে রক্তগুলো পাখি হয়ে উড়ে গেছে

মাঝে মাঝে আসে, আমার হাড়ের ডালে বসে, কোলাহল করে

হায় পাখি! অনন্ত রক্তের মায়া তুমি
পাখি তুমি কলিজার চাঁদ!



৮.

গাছের বাকলের নিচে ফেটে যাচ্ছে
গোপন চোখগুলো
আজ আমার নীল কুঠরী হতে চিরে দিচ্ছি বিষের অশ্রু, এ-ভব বৃন্দাবনে

পাথর গলে যাচ্ছে পাথরের ঘামে
পাথরগুলো মুক্ত করে আনো

হায়
আমার কান্নার জলে
হে অগ্নিমানুষ তুমিও কি ভিজে যাবে...


৯.
এই নবমীর রাতে
কোথা থেকে যেনো ভাঙ্গা ভাঙ্গা কীর্তনের সুর ভেসে আসছে
শ্যাম, তুমি কি আমায় ডাকছো নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রাম থেকে...

ঘরের জানালায় দেখো অভিমানী কুয়াশা রাত জেগে আছে

দূর নক্ষত্রে এক একটি কুয়াশাবিন্দু উড়িয়ে দিচ্ছি
তৈরী হচ্ছে ঝিনুক
মুক্তোর মতো জ্বল জ্বলে আমাদের মিলন ও মৃত্যু...


১০.
হায় শ্যাম
ডাকতে এতোই দেরী করো না
যখন আর আসতেই না পারি
পালক হারিয়ে ফেলি যমুনার তীরে

নিঃশ্বাস নিচ্ছি তো নিচ্ছি এমনি ভাবে
যেনো মনে হয় কারো করুণা আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে...

পুরনো আয়নায় তাকিয়ে থাকি
অপরিচিত এই আমায় দেখে উঠে আসে আয়নার আব

কষ্টের কষ্টিপাথর যতনে পরে আছি
আমি গহনা পরে আছি...


১১.
অনেক সুরের ভিড়ে আমি বিভোর
আছো আজ হৃদয়...

অনুভবের সুরে
দূরের তুমি আমার কাছে এলে
ভাসিয়ে দিতে অথৈ নীলে

পান করছি না
তবুও যে নেশায় নীলপরী

জাদুকর
আমাতেই মৃত্যু হোক তোমার।


১২.
প্রখর সূর্য যেমন জল শোষে নিয়ে যায় তেমনি নিয়ে গেছো আমায় অতলান্তে, গভীরে...
আমি আর মেঘের অপেক্ষায় থাকি না
হে সূর্য, তুমি ফেটে যায়ো।


১৩.
খোলসহীন কী ভাবে বিষ কিভাবে ধরে রাখি
তুমি কি বিষের নদীতে ডুবে যেতে চেয়েছিলে

আর পাথরে আঘাত করো না
কষ্ট পাবে পাথরের শিশু।


১৪.
সূর্য বরাবরই দূরে থাকে
দূরে থাকলেই না কি শ্যামকে কাছ থেকে দেখা হয়
কথা না বললেই না কি অনেক বেশি কথা হয়ে যায়
কথার মাঝখানে তৈরী হয় অদৃশ্য সেতু।

সিঁদুর পরিয়ে দাও শ্যাম সিঁদুর পরিয়ে দাও

বললো সে- কোনোদিন তুমি সংসারসঙ্গিনী হয়ো না
হয়ো সিঁদুরের অধিক সাধন সঙ্গিনী



১৫.
হায় শ্যাম!!
তুমি কি জানো- ভালোবেসে গোলাপ চাই না আমি
শুধু তোমায় খুন করতে চাই, সবগুলো নিঃশ্বাস চাই...


কেন যে বার বার মৃত্যুর কথা বলো?
হঠাৎ মরে গিয়ে আমায় দুঃখ দিয়ো না..
ঈশ্বর দুঃখ পাবেন

হঠাৎ মরে গিয়ে আমায় দুঃখ দিয়ো না..
আমরা তো একসঙ্গেই মারা যাবো
১৬.
আমায় জাগ্রত রেখে চলে গেছে ঘুমের জঙ্গলে

ভেসে উঠতে পারছি না
কিছুতেই না

চাঁদ-সূর্য্যের গলা একত্র করেছি
ডুবিয়ে দিয়েছি মেহেকসমুদ্রে।


১৭.

সারারাত ঘুমের মধ্যে বার বার কেঁপে উঠেছি
দেখি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই পারছিনা
বার বার হোচট খেয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছি
হাত বাড়িয়ে দেই কেউ আর হাতে হাত রাখে না!

চোখের জানালা খুলে সত্যিই দেখলাম
কাছাকাছি কেউই নেই!!
তেজপাতার জাহাজে করে মেহেকসমুদ্রে ভাসছি...

১৭.

পাথরের দিকে তাকাতে তাকাতে
দু'চোখের পাথর ক্ষয় হয়ে গেছে
কোথায় পাবো তোমায়
পাথর কুঠরীতে বাস করো তুমি পাথরের পিতা।

কোথাও বাতাস নেই
দেহের ডালপালা বহুযুগ হলো স্থির হয়ে আছে
কোথাও শুনছি না বাতাসের গান

স্ফটিক-পাখিরা, আমার প্রাণবন্ধু তারা
আমায় জাগ্রত রেখে চলে গেছে ঘুমের জঙ্গলে

ভেসে উঠতে পারছি না
কিছুতেই না

চাঁদ-সূর্য্যের গলা একত্র করেছি
ডুবিয়ে দিয়েছি মেহেকানন্দায়









মুনিরাকথা






১.
শ্যাম
তোমার সবচয়ে নরম মাটি আর সবচয়ে পবিত্র রং দিয়ে
তৈরী করেছিলে এক ক্ষণভঙ্গুর মনি
সেই রহস্যমনি আমার ভেতরেই শোভা পেলো...

নিদ্রামগ্ন হলাম...
জেগে-ওঠা রাবন ছায়া ও রক্তে পেরেক বসিয়ে দিলো
দাউ দাউ-করা জ্বলন্ত পেরেক।


আমি তো ঐ পেরেক দিয়ে তৈরী করেছি ঈশ্বরের পাতিহাড়।
২.

অন্ধকারে ডুবে আছে এক আহত হরিণ...
মোমবাতি বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ভাঙ্গা আলো...

এই তো অন্ধকার

এইখানে আমি থাকি
একা এবং একাই

গলা টিপে আলোর ঝর্ণা হত্যা করেছি
হে মৃত সূর্য- জ্বলে ওঠো জ্বলে ওঠো...


৩.
তুমি কি ইশ্বরের মতো ব্যস্ত এখন
তুমি কি নতুন কোনো গ্রহ তৈরী করছো...

আকাশ থেকে নেমে আসছে শাদা শাড়ি
এই উপত্যকা পেচিয়ে ধরো হে ভূমিপুত্র।


৪.

কি দেখছো তুমি?
মনের এক কোনে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছো বাকহীন, পলকহীন

কী পাও তুমি?
আমিতো আগের আমি নই হরিহর...

তবু পথ চেয়ে থাকি

মাঝে মাঝে মনে হয়
আমার লাশ ঘাড়ের এক কোনে পড়ে আছে
এই লাশটিকে কেঁটে আর কি হবে...


৫.

বিষের পেয়ালায় চুমুক দিয়েছি সূর্যের সাথে যুদ্ধ করবো বলে
রক্তলাল পাথর হতে গিয়ে বিগলিত মোম হয়ে গেছি
মোমের মানবী।

এমন নরোম রাত্রিতে চাঁদকে ডাকলাম ছাদের উপরে
তারাগুলো সাজিয়ে রাখলাম পাহাড়ে পাহাড়ে।

চাঁদ-সূর্যের পাহারাদার আমি শেষরাতে নদীর নিচে ঘুমোতে যাই।

তুমি শংকিত হয়ো না ঈশ্বর
আমি শুধু জল বিন্দুকে ভ্রমরা বানিয়ে দিয়েছি ।


৬.

তুমি কি হঠাৎবৃষ্টিতে পোড়া মাটির গন্ধ শুঁকতে পাও...
তুমি কী আমার মৃত দেহের গন্ধ পাও?
ভোরের শিশিরবিন্দুগুলো তোমার খালি পায়ে লাগলে
অনুভব কি করতে পারো আমার স্পর্শ ...
তুমি কী ছুঁতে পারো আমায়?

ঘু ঘু পাখির গুঞ্জণ গাঢ় হয়ে আসে চারিদিকে...
আমার ডাক একটুও কি শুনছো না?

তুমি কি তবে কি চিরদিন থেকে যাবে
স্টোনহেঞ্জের সেই একখন্ড বধির পাথর


৭.

ঐ ভোরে দু'চোখ কান্না ভুলে গিয়েছিলো তাই
আমার হৃৎপিন্ড রক্ত ঝরিয়েছে নিরন্তর
চাকা
চাকা
বিন্দু
বিন্দু

অন্য ভোরে রক্তগুলো পাখি হয়ে উড়ে গেছে

মাঝে মাঝে আসে, আমার হাড়ের ডালে বসে, কোলাহল করে

হায় পাখি! অনন্ত রক্তের মায়া তুমি
পাখি তুমি কলিজার চাঁদ!



৮.

গাছের বাকলের নিচে ফেটে যাচ্ছে
গোপন চোখগুলো
আজ আমার নীল কুঠরী হতে চিরে দিচ্ছি বিষের অশ্রু, এ-ভব বৃন্দাবনে

পাথর গলে যাচ্ছে পাথরের ঘামে
পাথরগুলো মুক্ত করে আনো

হায়
আমার কান্নার জলে
হে অগ্নিমানুষ তুমিও কি ভিজে যাবে...


৯.
এই নবমীর রাতে
কোথা থেকে যেনো ভাঙ্গা ভাঙ্গা কীর্তনের সুর ভেসে আসছে
শ্যাম, তুমি কি আমায় ডাকছো নিমাই সন্ন্যাসীর গ্রাম থেকে...

ঘরের জানালায় দেখো অভিমানী কুয়াশা রাত জেগে আছে

দূর নক্ষত্রে এক একটি কুয়াশাবিন্দু উড়িয়ে দিচ্ছি
তৈরী হচ্ছে ঝিনুক
মুক্তোর মতো জ্বল জ্বলে আমাদের মিলন ও মৃত্যু...


১০.
হায় শ্যাম
ডাকতে এতোই দেরী করো না
যখন আর আসতেই না পারি
পালক হারিয়ে ফেলি যমুনার তীরে

নিঃশ্বাস নিচ্ছি তো নিচ্ছি এমনি ভাবে
যেনো মনে হয় কারো করুণা আমায় বাঁচিয়ে রেখেছে...

পুরনো আয়নায় তাকিয়ে থাকি
অপরিচিত এই আমায় দেখে উঠে আসে আয়নার আব

কষ্টের কষ্টিপাথর যতনে পরে আছি
আমি গহনা পরে আছি...


১১.
অনেক সুরের ভিড়ে আমি বিভোর
আছো আজ হৃদয়...

অনুভবের সুরে
দূরের তুমি আমার কাছে এলে
ভাসিয়ে দিতে অথৈ নীলে

পান করছি না
তবুও যে নেশায় নীলপরী

জাদুকর
আমাতেই মৃত্যু হোক তোমার।


১২.
প্রখর সূর্য যেমন জল শোষে নিয়ে যায় তেমনি নিয়ে গেছো আমায় অতলান্তে, গভীরে...
আমি আর মেঘের অপেক্ষায় থাকি না
হে সূর্য, তুমি ফেটে যায়ো।


১৩.
খোলসহীন কী ভাবে বিষ কিভাবে ধরে রাখি
তুমি কি বিষের নদীতে ডুবে যেতে চেয়েছিলে

আর পাথরে আঘাত করো না
কষ্ট পাবে পাথরের শিশু।


১৪.
সূর্য বরাবরই দূরে থাকে
দূরে থাকলেই না কি শ্যামকে কাছ থেকে দেখা হয়
কথা না বললেই না কি অনেক বেশি কথা হয়ে যায়
কথার মাঝখানে তৈরী হয় অদৃশ্য সেতু।

সিঁদুর পরিয়ে দাও শ্যাম সিঁদুর পরিয়ে দাও

বললো সে- কোনোদিন তুমি সংসারসঙ্গিনী হয়ো না
হয়ো সিঁদুরের অধিক সাধন সঙ্গিনী



১৫.
হায় শ্যাম!!
তুমি কি জানো- ভালোবেসে গোলাপ চাই না আমি
শুধু তোমায় খুন করতে চাই, সবগুলো নিঃশ্বাস চাই...


কেন যে বার বার মৃত্যুর কথা বলো?
হঠাৎ মরে গিয়ে আমায় দুঃখ দিয়ো না..
ঈশ্বর দুঃখ পাবেন

হঠাৎ মরে গিয়ে আমায় দুঃখ দিয়ো না..
আমরা তো একসঙ্গেই মারা যাবো


১৬.
অনেকক্ষণ ধরে ক্লান্ত চাঁদ কিনারা নেওয়ার জন্য ত্বরা করছে...
আর সমুদ্র পাহাড়ে হেলান দিয়ে তার কুপকে স্পর্শ করে দেখছে
কী ভাবে নিঃশ্বাস নিতে হয়...

প্রজাপতির ডানা এমনভাবে ঝকমক করছে কেন
যেন অনন্ত ভোর গর্ভে নিয়েছে...

তৃষ্ণা বেড়ে যায় সমতল ভূমির
তুমুল তৃষ্ণায়
তোমার অধরে আমার শব্দগুলো রেখে
সূর্যের আলোই পান করেছি... কে তবে সূর্যদেবী!


১৭.


আকাশে ভেঙ্গে বৃষ্টি নামছে...
বৃষ্টির মধ্যে একটা ঘুড়ি উড়ছে
তুমি বিষের পেয়ালায় চুমুক দিচ্ছো
পৃথিবীর সব চায়ের পেয়ালা ভেঙ্গে যাচ্ছে, ভেঙ্গে যাচ্ছে।


১৮.

শুধু অঞ্জলিতে জল চাই না
চোখের মধ্যে জল চাই

হে খোদা
শুধু মরূভূমি নয়, মহাসমুদ্রও আমার কাছে জল চায়
আমার শত্রু আমার কাছ থেকে জল চায়

আমি দু'চোখ ছিদ্র করে
লাল-নীল-কমলা রঙের সমূহ রক্ত বের করে দিয়েছি

শহরের সব আলিফ লায়লা বুড়ি হয়ে গেছে আজ
শাহজাদা নতুন কাহিনী চায়...


১৯.

মজবুত চাকার রথ সমুদ্রের উপর চলছেই চলছে আর
উদভ্রান্ত ডানায় ভাসতে ভাসতে জল ও যন্ত্র উভয়ই পুড়ে গেছে
হায় শ্যাম
তুমি কি এই ভাঙ্গা যন্ত্রের সওয়ারী হবে!

আমি যে আত্মার নয়নই হারিয়ে ফেলেছি...



২০.

পাহাড়টা একলা ঘুমিয়ে আছে
তাকে জাগিয়ো না সময় অসময়
ভাঙ্গা ফাগুন জোড়া লেগে গেলে
তৈরী হয়ে হয়ে যেতে পারে মুনিরাআগুন...


২১.

একদা জানতাম
কার্ডিফের ঐ একটা মাত্র ডানা-ভাঙ্গা কালো কবুতরই আত্নীয় আমার
আত্নীয়টি উড়ে গেছে দূরে, তারপর পুড়ে গেছে

তারপর থেকে
একা বসে আছি
এক শত বছর ধরে
এক শত কষ্টের কুসুম ফুটিয়ে

চিরদিনের কুসুমকুমারী
ভরা পূর্ণিমায় ঠাকুর মা'র কাছে যাই শ্মশানঘাটে...
আর কৃষ্ণরাতে জেনে যাই_ জগতে কষ্ট বলে বিশেষ কিছু নেই

কষ্ট
একজন মৃত মুনিরা চৌধুরীর গোপন নাম!


২২.

পাহাড়টা একলা ঘুমিয়ে আছে
তাকে জাগিয়ো না সময় অসময়
ভাঙ্গা ফাগুন জোড়া লেগে গেলে
তৈরী হয়ে হয়ে যেতে পারে মুনিরাআগুন...


২৩.

কোনো এক পুরনো বাঁশরী থেকে আধভাঙ্গা সুর ভেসে ভেসে
গাছের গায়ে লাগছে এই নদীতীরে, যমুনা কিনারে
নিধুয়া ধুয়া উড়ে যাচ্ছে দূরের পর্বতে - আমি তাকিয়ে দেখি

হে কমলা পাখি, নয়শত ডানার পাখি
তোমরা কি ফেরত দেবে না আমার বিগত জন্মের সবগুলো ডানা ও পালক
আমি যে আরও একবার জন্মান্তরে উড়াল দিতে চাই !


২৪.

গোলাপ-কাঁটায় দু'চোখ বিদ্ধ করে দেখতে চেয়েছিলাম- কী ভাবে রক্ত ঝরে...
খসে পড়লো নীলবর্ণ শিশির ও গ্লিসারিন...
মৃত মানুষের চোখের ভাষা

নয়টি চোখ এনে দাও...
নয়শত নৌকা ভাসাবো...
গোলাপ থেকে রঙ চুরি করে করে ডুবিয়ে দেবো সমূহ রঙের জাহাজ...

আমার চোখ/ তোমার চোখ/ ফেস বুকের বন্ধুদের চোখ
আসলে সব মৃত মানুষের চোখ...


২৫.


না-বলা শব্দগুলো ধীরে ধীরে কচ্ছপ হয়ে গেছে
কচ্ছপের মাথা ভেঙ্গে গেছে...
নিঃশ্বাস আটকে আছে খোলসের ভেতর... সমুদ্রে বৃষ্টি দিচ্ছে, আগুনের...

অদৃশ্যের পাখিগুলো হাতের উপর এসে আর বসে না
অনেকদিন স্বপ্নের মঝে ঠাকুর মায়ের গল্প শুনি না
পুরনো কবিতা থেকে রঙ উড়ে গেছে অক্ষরের
বোবা কথাগুলো ঠাকুর মা হয়ে গেছে...

গাছের আঙ্গুল ধরে চলছি...

শীতার্ত গাছ
আমিও শীতার্ত মন্ময় আগুনে।



২৬.

চাঁদের চরকি থেকে সুতো এনে দাও
জলন্ত জোনাকি দিয়ে নূপুর বানাবো
আজ বৃষ্টির তালে নৃত্য করবে দুই পা

হায়
তুমি কি আমায় কিরণ-রশ্মি দিয়ে আলতা পরিয়ে দেবে না...




মুনিরা চৌধুরী এর জন্ম ৬ জনুয়ারী ১৯৭৬ সালে, যুক্তরাজ্যের গ্লষ্টারশায়ারে। ডায়াস্পোরা কবিদের অত্যুজ্জ্বল প্রতিনিধি তিনি। বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় কবিতা লেখার পাশাপাশি গদ্য রচনা করেন। সম্পাদনা করছেন সাহিত্যের কাগজ রক্তকরবী। সম্পাদিত গ্রন্থ- দিলওয়ারমঙ্গল, পিতা ও কবিতা। দ্বায়িত্বরত রয়েছেন বাংলা একাডেমী ইউকে-এর মহাপরিচালক পদে।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৫:২৫
২১টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×