somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নানা ভাই

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব ছোটবেলায় বেশ রোগা ছিলাম।আমার পেট না কি ফুটবলের মতো হয়ে থাকতো সবসময়য়,শুধু নাকি পেটের ব্যাথায় চীৎকার করতাম ,রাতের বেলায় না কি প্রায়ই চীৎকারে সবার ঘুম ভেঙে যেত। বয়স হবার পর দাদীর কাছে শুনেছি,এমন কোন ডাক্তার কবিরাজ বাকী ছিলোনা আমাদের মফস্বল শহরে যার কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি।আমার জন্মের কিছুদিন আগেই বাবা বিদেশে(দালালের মাধ্যমে) গিয়েছিলেন, সেখানে খুব ঝামেলায় পড়েছিলেন তাঁর উপর সংসারে খুব অভাব ছিল। আমার দাদি বলতেন-"তোর পিছে অনেক কষ্ট গেছে আমাদের, আজকে এই কবিরাজতো কাল আরেক কবিরাজের কাছে নিয়ে যেতে হত।তারপরও তোর অবস্থার যখন কোন উন্নতি হচ্ছিল না তখন তোর নানা এগিয়ে আসলেন,তিনি একের পর এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে লাগলেন।তোর পিছে তোর নানা যেই পরিমাণ টাকা খরচ করেছে তা মানুষ নিজের ছেলের জন্যও করেনা।" এছাড়া বয়স হবার পর থেকেই দেখেছি ,সংসারে যখনেই খুব অভাব অনটন দেখা দিয়েছে তখনই নানা ভাই বেরাতে এসে চুপিচুপি আম্মার কাছে কিছু টাকা দিয়ে যেতেন যদিও তখন তাঁর নিজের সংসারেও খুব অভাব ছিল।এই মানুষটা বৃদ্ধ হবার পরেও গ্রাম থেকে যখন আমাদের বাসায় আসতেন তখন দুই হাতে করে পিঠা,গুর,আম নিয়ে আসতেন গ্রাম।আম্মা গামছা দিয়ে ঘাম মুছে দিতেদিতে কড়া গলায় বলতেন-"বাবা, আপনে নিজেই আসতে পারেননা অসুস্থ শরীর নিয়ে,এগুলো আনার কি দরকার?" কিন্তু নানা ভাই কথা শুনতেন না, উনি এই অভ্যেসটা অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগ পর্যন্ত কণ্টিনিউ করেছিলেন।এরপর একদিন হঠাৎ করেই বাসায় খবর আসলো, নানা ভাই ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। এরপর আর নানা ভাই সুস্থ হলেন না। আমরা নানা ভাইকে খুব ভয় করতাম,খুব মিশুক ছিলেন না কিন্তু নিজের কর্তব্যটা সবসময়য় পালন করে যেতেন। ভালোবাসতেন সবাইকে কিন্তু প্রকাশ করতেন না। আমরা বেড়াতে গেলেই উনি খাবার সময় ইংলিশ জিজ্ঞেস করতেন বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যের কিন্তু আমি পারতাম না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাই ভয় পেতাম। একবার আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায় অভাবের কারনে তখন তিনি ঢাকা গিয়ে আমাকে নিয়ে এসে গ্রামে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন,মোট কথা আমার জীবনে নানা ভাইয়ের অবদান খুব বেশী।নানভাই যখন পুরোপুরি শয্যাশায়ী হলেন,তখন তিনি হয়ে উঠলেন সবার কাছে বোঝা। কথা বলার কাউকে পেতেন না ,কেউ তাঁর কাছে যেতনা ,সারদিন বারন্দার বিছানায় শুয়ে থাকতেন।একদিন বাড়িতে গেলে নানা ভাই আমার হাতদুটো ধরে কেঁদে বলেছিলেন"ভাই কেউ আমার কাছে আসে না ,একটা কথা বলার কাউকে পাই না,তুই একটু আমার পাশে বস।" খুব কষ্ট হয়েছিলো শুনে। কিন্তু এরপর আমারও খুব একটা বসা হতোনা ওনার কাছে যেই কয়দিন ছিলাম,তখন বয়স কম ছিল,গ্রামের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে যেতাম।আমি ঢাকা ফিরে আসার ১বছর পর নানা ভাই মারা যান, আমি তখন সিলেটে আমার ভার্সিটির পরীক্ষা চলে। জানাজাতেও যেতে পারি নাই,কেন জানি খুব কষ্টও হয় নি তখন নানা ভাইয়ের জন্য,দুইদিন পর পিকনিকেও গিয়েছিলাম।আজ ৩ বছর হয়ে গেছে উনি চলে গেছেন।এখন মাঝে মধ্যেই ওনার কথা ভাবনায় আসে ,উনি যেন ফিসফিস করে বলছেন "কেউ আমার সাথে কথা বলে না, ভাই তুই আমার পাশে একটু বস খুব একা লাগে"। খুব অপরাধ বোধ হয় ......... নানা ভাই বলে ডেকে হাতটা ধরে খুব কাঁদতে ইচ্ছে হয়। মাফ করে দিয়ো নানা ভাই,আমি খুব অকৃতজ্ঞ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৫
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×