somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফগান মাটিতে এক সপ্তাহ-তৃতীয় কিস্তি

০৭ ই আগস্ট, ২০০৮ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় কিস্তির পর (গত বছর আফগানিস্তানে যাবার সুযোগ হয়েছিল। অফিসিয়াল কারণে। অনেক দিন ধরে ভাবছি আফগান ভ্রমণের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতাগুলো ব্লগের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি। সে প্রয়াসে আজ তৃতীয় কিস্তি.....ব্লগার বন্ধুদের আন্তরিক ফিডব্যাক প্রত্যাশা করছি)

প্রস্তুতি পর্ব

কাবুলের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার দিন-ক্ষণ ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে। শেষ প্রস্তুতিগুলো সারছি। জামা-কাপড়, জরুরি ঔষধ-পত্র, লাগেজ ইত্যাদি প্রয়োজন মতো গুছিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। ক'দিন ধরে ঢাকায় প্রচন্ড গরম পড়ছে। তাপমাত্রা গড়ে ২৬-৩১ এ উঠানামা করছে। তবু যতসব মোটা আর গরম কাপড়ে আমার আফগানগামী লাগেজের দশা একেবারে বেসামাল। অতি সাবধানী ব্রুক ই-মেইলে কাবুলের তাপমাত্রার পূর্বাভাস দু'দিন আগে পাঠিয়েছে। সাথে বলেছে, মোটা গরম কাপড় নিতে একদন যেন ভুল না করি। শীতের ব্যাপারে আমি সব সময় আপোষহীন। জীবন সংগ্রামে বিভিন্ন ধাপে ধাপে আপোষ করতে বাধ্য হওয়া মানুষটিকে এ একটি জায়গায় ভীষণ আপোষহীন বলে জাতীয় একটি পুরস্কার নিমিষেই দেয়া যেতে পারে। সুতরাং মহাসমারোহে চলতে থাকলো আমার উষ্হতার আয়োজন.........................।
ব্রুক ইতোমধ্যে একটি গাইডলাইনও পাঠিয়েছে। আফগান সফরের সংক্ষিপ্ত এ নির্দেশিকাটি তৈরি করেছে ইউএসআইডি। মার্কিন নাগরিক এবং মার্কিন স্পন্সরে যারা আফগান ভিজিটে যান তাদের সবাইকে এটি দেয়া হয়। সতর্কতার অংশ হিসেবে। অনেকটা অনলাইন ওরিয়েন্টেশনের মতো। আর এ ওরিয়েন্টেশন বাধ্যতামূলক। ব্রুকের পাঠানো নির্দেশিকাটি হাতে পাওয়া মাত্রই আমি বনে গেলাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুগত শিক্ষার্থী। দাডি, কমা, সেমিকোলন কিছুই বাদ যায়নি। গভীর মনোযোগের সাথে সব কিছুই দ্রুত পড়ে শেষ করলাম। নিরাপত্তা সম্পর্কিত কয়েক অনুচ্ছেদ বাদ দিলে পুরো গাইডলাইনটি জুড়ে বর্ণনা রয়েছে আফগানিস্তানের চলমান সাংস্কৃতিক প্রত্যাশার সাথে মানানসই পোষাক-পরিচ্ছদের। নির্দেশিকাটি পড়ে পোষাক-পরিচ্ছদের দিক থেকে আমার শতভাগ 'সেইফ-সাইড' অবস্থানটি নিশ্চিত হওয়া গেল। যদিও আমার জামা-কাপড়রে কোনটিই 'ইসলামিক' নয়। ধর্মাশ্রিত সাংস্কৃতিক পুরুষতন্ত্রে পুরুষের অসুখের চেয়ে সুখের পরিমাণটাই বেশি। ব্যাপ্তী এবং গভীরতা-দু'দিক থেকে। প্রকৃতির দৈবচয়িত ব্যাকরণে প্রাণীকূলের 'পুরুষ মানুষ' হিসেবে একটি পশ্চাদপদ পিতৃতান্ত্রিক সমাজ-কাঠামোতে নিজের এক চেটিয়া সুবিধাগুলো আবারও টের পেলাম। কারণ পোষাকী রাখঢাকের যত আয়োজন কেবল নারীর জন্য। একজন নারীকে আফগান ভিজিটে যেতে হলে তার হাত, পা, মাথা, মুখ সহ শরীরের কোন অংশ কী মাত্রায় ঢেকে রাখা জরুরি তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে নির্দেশিকাটিতে। নির্দেশিকাটিকে যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে 'আফগানী পর্দা প্রথার' একটি গাণিতিক সমীকরণ বললে বেশি বলা হবে না। আর এ সমীকরণের কেন্দ্রীয় ভাবনায় নারী ইমেজের প্রকাশ বিষয় হিসেবে নয়, বস্তু হিসেবে। এখানে নারী কেবলই একটি যৌন বস্তু। সুতরাং তার সব কিছু ঢেকে রাখা 'ফরজ'। পিতৃতান্ত্রিক ভাবনায় উৎপাদিত এবং পূনরাৎপাদিত নারী ইমেজের প্রতিফলন এবং তাকে 'পবিত্র' করে রাখার যে সামাজিক-সাংস্কৃতি আয়োজনটি চলে তাতে আবশ্যিকভাবে শৃঙ্খলিত হয়ে পড়ে নারীর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক গতিশীলতা। সীমিত হড়ে পড়ে তার সৃজনশীল সম্ভাবনাগুলো। এ দিকে থেকে আমি নিজ ভুখন্ডের ঐতিহাসিক পুরুষতান্ত্রিক প্রত্যাশার সাথে আফগানী সাংস্কৃতিক প্রত্যাশার অমিলের চেয়ে মিলই বেশি খুজে পেলাম। হয়তো বা দু'দেশের প্রবল এবং প্রধান ধর্মটা এক বলে......।
বিমান যাত্রা নিয়ে সব সময় আমার মধ্যে একটি অদ্ভুত রকম ভয় কাজ করে। আমার শুধু মনে হয়, বিমানটি বোধহয় ক্রাশ করেবে। যতবারই আকাশ পথে আমার ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে, ততবারই সে একই রকম ভয় আমাকে পেয়ে বসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। একটি বক্সের ভেতর অনেকগুলো মানুষ। সে বক্সটি আকাশ পথে উড়ে যাচ্ছে। দরজা-জানালা সবই বন্ধ। বাতসের ছোয়াছুয়ি নেই। সবুজের হাতছানি নেই। নেই দিগন্ত প্রসারি ফসলের মাঠ-ধানক্ষেত। নেই সবুজে ঢাকা গ্রাম। বিমান ভ্রমণে এতসব 'নেই"গুলো কেন জানি আমাকে ক্লান্ত করে। ভীষণভাবে। হয়তো সে কারণেই এত ভয় আমাকে তাড়িত করে। 'গরীবের পেটে ঘি হজম হয় না' সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষ নিয়ে সংখ্যালঘু ধনীদের এ অভিজাত প্রবাদটিই হয়তো আমার ক্ষেত্রে সত্যি। যদিও দারিদ্র্যকে যদি শুধু আয় অথবা ক্যালোরী গ্রহণের নিরিখে বিচার করা হয়, তাহলে নিশ্চিত আমার অবস্থান দারিদ্র্য রেখার ওপরেই পড়বে। আসলে বিমান জার্নিতে আমি অনভ্যস্ত মানুষ। কালে ভদ্রে চড়া হয়। সক্ষমতা বিকাশের আওতায় উন্নয়ন কর্মী হিসেবে। আমি বলি উন্নয়ন পর্যটক। যারা উন্নয়ন কার্যক্রমের সুবাধে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ায়। ভাগ্যিস, বিদ্যাজাগতিক সৃজনশীলতায় এ সব শব্দ উন্নয়ন অভিধানে যুক্ত হয়েছিল। না হয় দেশের সীমান্ত রেখায় নিয়োজিত চাকুরে মধ্যবিত্তের আকাশ পথে ভ্রমণ হয়তো আমৃত্যু 'স্বপ্ন-বিলাস'ই থেকে যেতো।
আমার প্রস্তুতি যত শেষ হতে থাকে ভয়ের মাত্রাও তত গভীর হতে থাকে। আমার স্বভাব-সূলভ গৃহকাতরতা ভয়ের আগুনে জলের বদলে তেল ঢালে। আমার ভয়-শংকা আর বিচ্ছেদের বেদনাগুলো মিলেমিশে একাকার হয়। তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। আমি একবার কন্যার চোখে চোখ রাখি। আরেকবার জীবনসঙ্গীর। যে একসময়ে আমার সহপাঠি-বন্ধু। বাংলাদেশের আইনী ব্যাকরণ অনুযায়ী নিজের 'বাল্যবিয়ে'টা সংঘটিত হওয়ার পর বন্ধুত্ব-ভালবাসার খুনসুটি আর ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের ভাগাভাগিতে যার সাথে প্রায় পনের বছরের দাম্পত্য জীবন কখনো উথাল-পাতাল আবার কখনে 'ধীরে বহে মেঘনা'র মতো চলছে। টিপটিপ জল পড়ে। আমার দু'চোখ বেয়ে। আমার চেষ্ট চলে, আমার কান্নর জল যেন সবার অলক্ষেই থাকে.......।
৩১ মার্চ-২০০৭: জিয়া বিমানবন্দরে যেন লাদেনের প্রেতাত্বর উপস্থিতি
৩১ মার্চ-২০০৭। সকাল সোয়া দশটায় এ্যমিরেটসের এয়ার বাসটি উড্ডয়ন করবে। দুবইয়ের উদ্দেশ্যে। আমি সে ফ্লাইটের যাত্রী। কমপক্ষে দু'ঘন্টা আগে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। আফগানগামী হিসেবে সে নির্দেশনা মেনে চলা আমার জন্য একটু বেশি জরুরি। সম্ভাব্য ট্রাফিজ জ্যামে নষ্টযোগ্য সময়সহ হিসেব কষে সকল সাতটারও আগে আমি বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম। বিমানবন্দরে আমাকে বিদায় জানাতে একমাত্র কন্যা অরিত্রী, স্ত্রী ফারহানা এবং তার ছোট ভাই এল। পাড়াত জামাই ( যে জামাই শশুর বাড়ির কাছাকাছি থাকে) হিসেবে স্ত্রী-কন্যার সাথে শ্যালকের সহচর্যটা একটি বাড়তি পাওনা। শিশু কন্যা অরিত্রীকে কোলে নিয়ে আদর করলাম। বললাম, ভাল থাকিস। আমাদের সংস্কৃতিতে প্রকাশ্যে পাবলিক প্লেসে নারী-পুরুষে করমর্দন-কোলাকুলি করাটা প্রত্যাশিত নয়। স্বামী-স্ত্রী হলেও না। অবদমনের এ সামাজিক ব্যাকরণটা আমার পছন্দ নয়। কিন্তু মানতে হয়। কারণ সমাজ কাঠামোর একটা নিজস্ব শক্তি থাকে। সে শক্তি দিয়ে বিদ্যমান কাঠামো মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং একটি অবদমনমূলক সমাজ কাঠামোর আলো-বাতাসে বেড়ে উঠা মানুষ হিসেবে নিজের এত কাছের মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে বলা যায়নি 'আসি, ভাল থেকে'। নিজের নির্ভেজাল আকাঙ্খা শুদ্ধ সামাজিক প্রত্যাশার কাছে অবদমিত থেকে গেল......। আমি সবাইকে বিদায় দিয়ে দ্রুত বিমান বন্দরের ভেতরে ঢুকে পড়ি। রিপোর্টিং, বোর্ডিং পাস সংগ্রহ সহ প্রাথমিক কাজগুলো দ্রুত সম্পাদন করে নিয়মমাপিক ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হবার পালা। দীর্ঘ লাইন। আমার সামনে-পেছনের যাত্রীদের বেশির ভাগই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাবেন। যাদের ঘামে ভেজা শ্রমে স্ফীত হয় আমাদের জাতীয় অর্থনীতি। বাড়ে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ। আমাদের কচ্ছব গতির অর্থনীতির গতি সঞ্চরিত করে বাঁচিয়ে রাখার একটা বড় কৃতিত্ব এসব শ্রমজীবী মানুষদের। বিদেশ বিভূইয়ে এরা পড়ে থাকে বছরের পর বছর। দেশে আসেন অল্প সময়ের জন্য। আবার ফিরে যান। বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে অসামান্য অবদমন রাখার পরও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এদের জন্য আলাদা খাতির-যত্নের তেমন ব্যবস্থা নেই। না দেশে, না বিদেশের মাটিতে। দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছি আর মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমজীবী মানুষগুলোর আনন্দ-বেদনার ককটেলে নানা প্রকাশভঙ্গি আর আলাপচারিতাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। একই সাথে খেয়াল করছি, কখন আমার ডাক পড়ে.....।
আমার লাইনের জন্য নির্ধারিত ইমিগ্রেশন কাউন্টারের কর্মকর্তা একজন নারী। কোন নারী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার মুখোমুখি হওয়া আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। আমাদের সমাজ কাঠামোয় লিঙ্গভিত্তিক প্রান্তিকতা এখনও প্রবল হলেও নারীর দৃশ্যমান সামাজিক গতিশীলতা যে বেড়েছে এটি তার প্রমাণ। এবং ইতিবাচক। পুরুষের উপস্থিতিতে ঘোমটা মাথায় বিনম্র অবনত থাকার চিরচারিত দৃশ্যের বদলে কয়েকশ পুরুষ সমীহচিত্তে দাড়িয়ে আছে এবং একজন নারী পুলিশ অফিসারের অনুসন্ধানী জিজ্ঞাসার জবাব দিচ্ছে। লিঙ্গভিত্তিক ক্ষমতা কাঠামোয় এটি স্রোতের বিপ্রতিপ যাত্রা এবং একটি গুণগত উত্তরণ। আমার কেন জানি মনে হলো ঢাকা এয়ারপোর্টে আমার আজকের 'পুলসিরাত'টা সহজ হবে। মনে মনে বলি, আমার ভাবনাই যেন সত্য হয়।
একই লাইনে আমরা ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি এ মাত্র লাইনচ্যুত হলেন। ইমিগ্রেশন পুলিশের 'পুলসিরাত' পারহতে পারার সাফল্য গাঁথা তার চোখে-মুখে নিশি অন্ধকারে আলোছড়ানো জোনাকী হয়ে জ্বলছে। সে আলোর ঝিলিমিলি দেখতে দেখতে আমি এগিয়ে গেলাম। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কাছে আমার ভিসাসমতে পার্সপোর্ট এগিয়ে দিতেই তার চোখে মুখের ভৗগলিক সীমারেখা দ্রুত পরিবর্তন হয়ে গেল। 'আফগানিস্তানে যাচ্ছেন?'-ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার একটি মিনি অনুচ্ছেদ আকারের প্রশ্নের এটুকু শেষ না হতেই রাজ্যির নথিপত্র সবিনিময়ে মেলে ধরলাম। ব্রুকের সাথে বিগত দু'মাস ধরে ই-মেইল চালাচালির সমস্ত কপি, আমন্ত্রণপত্র, সাইপ-আফগানিস্তানের সাথে যোগাযোগের পত্রাবলী, চাকরি সনদ, প্রজেক্ট ডকুমেন্ট, সবই সাথে করে নিয়ে এসেছি। এমনকি একই ব্যক্তির পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ভ্রমণের মধ্যে 'অনুকল্পমূলক যোগসূত্র' খুজে পেরে পারে এ শংকায় পাকিস্তানে কেন গিয়েছিলাম তারও প্রমাণপত্র সাথে নিয়ে এসেছি। আমার এতসব শ্রমসাধ্য কর্মযজ্ঞ ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে আশ্বস্ত করতে ব্যর্থ হলো। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে দুতিন জন পুলিশকে ডেকে পাঠালেন। আমাকে দেখিয়ে বললেন, উনি আফগানিস্তান যাচ্ছেন। 'কী সাংঘাতিক কথা" উপস্থিত তিন পুলিশের চাহনির অব্যক্ত বাণীটি এমনই মনে হলো। আমার ভিসা-পার্সপোর্ট নিয়ে শুরু হলো ছোটাছুটি। হারিক্যান লাগিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খোজা হচ্ছে। কয়েকজন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কম্পিউটারে। পুরণো ডাটা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আমার ব্যাপারে কোন ক্লু খুজে পাওয়া যায় কিনা তা অনুসন্ধানই যেন ইমিগ্রেশন পুলিশের একমাত্র কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। সামগ্রিক দৃশ্য দেখে আমার মনে হলো ঢাকা বিমান বন্দরে ওসামা বিন লাদেনের প্রেতাত্মা ধরা পড়েছে। একটু পরেই পেন্টগন-এ জানানো হবে। ঢাকার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সাফল্যে সারা পৃথিবীতে হৈ চৈ পড়ে যাবে।
ইমগ্রেশন কর্মকর্তার নির্দেশমতো আমি একপাশে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু সময় আমার জন্য দাঁড়িয়ে নেই। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমার পেছনের যাত্রীরাও একে একে পার হয়ে যাচ্ছে। যাবার সময় প্রত্যেকে আমাকে একবার দেখে নিচ্ছে যেন ঢাকা চিড়িয়াখানার সব চেয়ে বিরল প্রাণীটিই আজ ভুল করে ঢাকা এয়ারপোর্টে ঢুকে পড়েছে। সে সুযোগে সবাই চোখ জুড়িয়ে দেখে নিচ্ছে। আমি আবার ইমেগ্রেশন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। দৃঢ়তার সাথে জিজ্ঞেস করলাম-ম্যাডাম, আমি যেতে পারছি কি পারছি না দয়া করে আমাকে শুধু এটুকু জানান। আমার জিজ্ঞাস শেষ হতে না হতেই একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে জানালো, উনি সর্বশেষ যে বিদেশ থেকে ফিরেছেন তার কোন ডাটা কম্পিউটারে নেই। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বুঝলাম আরেকটি দুঃসংবাদ এসে যুক্ত হলো। তুবু সাহস করে বললাম, তথ্য আপনার এন্ট্রি দেন। আমরা যাত্রীরা নই। সুতরাং এটিতো আমার সমস্য নয়। আমার কথায় মনে হলো ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কিছুটা বিচলিত হয়েছেন। বললেন, একটু দাঁড়ান, আমি দেখি কী করা যায়। এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে যখন আবারও দাঁড়ানোর অনুরোধ তখনতো তার দৌড়ে পালাবার কথা। আমার সে সুযোগ নেই। তাতে সোজা জেলখানায় যাবারই সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং ঠায় দাড়িয়ে থেকে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবার ভাবনায় নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই আপাতত। হঠাৎ সে কাঙ্খিত উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলেন। বৃত্তান্ত শুনে আমার কাগজ-পত্র দেখলেন এক নজর। শুধু জানতে চাইলেন, আমার ফিরতি টিকিট আছে কিনা। আমার 'জ্বী' উচ্চারণের সাথে সাথে বলেলে, ছেড়ে দেন। আমারও ঘন্টাব্যাপী দন্ডায়মান জীবনের মুক্তি হলো। পার্সপোর্টে সিল মারার শব্দটি যেন নূপুরের রিনিঝিনি হয়ে কানে বেজে উঠল। আমিও এতক্ষণে নিশ্চিত হলাম, তাহলে সত্যি সত্যি আফগানিস্তান যাচ্ছি। সৈয়দ মুজতবা আলীর 'ইনহাস্ত ওয়াতানাম' এর নায়ক আব্দুর রহমানের দেশে......(চলবে)
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×