somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ-আফগান মাটিতে এক সপ্তাহ-

০৩ রা মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিমান থেকে নেমেই আরেকবার হোচট খাওয়া। নতুন করে। বিমানবন্দরের পুরো মাঠজুড়েই কড়া নিরাপত্তার চাদর। জলপাই রঙে শরীর ঢাকা বহুজাতিক সৈন্যরা সুসজ্জিত অস্ত্রে প্রস্তুুত রয়েছে। দলে দলে। কাতারে কাতারে। এ বুঝি আক্রমনে নেমে পড়তে হবে। তার জন্য সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। নামে বহুজাতিক হলেও এসব সৈন্যদের বড় অংশই আমেরিকান। দাঁড়িয়ে থাকা আমেরিকার নেতৃত্ত্বাধীন বহুজাতিক সেনাসদস্যদের দৃশ্যমান পোষাকী চাকচিক্য বাদ দিলে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর গায়ে কোথাও বিমানবন্দরের স্বাভাবিক লেবাসটুকুও নেই। চারিদিকে ক্ষতের চিহ্ন। ভাঙা, জোড়া লাগানো। যুদ্ধের হিংস্রতার জলন্ত স্বাক্ষী হয়ে যেন তথাকথিত সভ্যতাকে উপহাস করছে। এখানে ওখানে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনার স্তুুপের কাছে আমাদের গুলিস্তান-সদরঘাটও পরাজিত।
এবার নিজের ব্যাগ-লাগেজ খুঁজে নেয়ার পালা, বুঝে নেয়ার পালা। এগিয়ে দেখি বেল্ট সিস্টেমও কাজ করছে না। সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত চরিত্র আব্দুর রহমানের মতো লম্ব-চওড়া কয়েকজন আফগানী বিমান থেকে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে আসছে। আর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছে পুকুরের মতো একটি জায়গায়। বিষয়টি দেখেই আমার চক্ষু ছানাবড়া। নিজের লাগেজের শরীর-স্বাস্থ্যের কথা, আসন্ন পতনের কথা ভেবে মনটা কেমন যেন হয়ে উঠলো। যা হোক শেষ পর্যন্ত আসন্ন পতন ঠেকানো গেল। লাগেজ ছুঁড়ে মারার আগেই দৌড়ে গিয়ে বলি, এগুলো আমাদের লাগেজ। মানে আমার ও বসের। টিকেটের সাথে থাকা ট্যাগ নম্বর মিলিয়ে নিশ্চিত হন। এবং আমাদের হাতে তুলে দেন একটু আগে নিশ্চিত পতনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া নির্জীব লাগেজগুলো।
আগের দিন রাতে সম্ভবত বৃষ্টি হয়েছিল। এয়ারপোর্টে থেকে বাইরে এসে যেটুকু পথ ট্রলি টেনে নিয়ে তারপর গাড়িতে উঠতে হয় তার পুরোটাই ভেজা। এদিকে ওদিকে পানি জমে আছে। তার মধ্যে রাস্তাটা আবার উচু-নিচু। খানাখন্দকে ভরা। তবে ট্রলি টানার লোকের অভাব নেই। অনেকটা আমাদের সদরঘাটের মতো। একজন বেরুলে দশজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে তার ওপর। চাহিদাও বেশি নয়, দু –এক ডলার। ৫০-১০০ আফগানি। তবে সদর ঘাটের মতো ঝাকেঝাকে শিশু-কিশোররা নেই। অন্তত এ মুহূর্তে আমার চোখে পড়ছে না। অনেক বয়স্ক পুরুষ আছেন। তাদের সারা শরীর জুড়ে বার্ধক্যের ছাপ। দেখলেই আঁচ করা যায়, এরা যুদ্ধপরবর্তী সময়ে নতুন লড়াইয়ে নেমেছেন। সামান্য বেঁচে থাকার তাগিদে। জানি না, তাদের ব্যক্তিগত জীবনে হারাবার ক্ষত কতখানি গভীর। প্রিয়জন, বাড়ি-ঘর, সম্পদ, আবেগ-অনুভূতি সহ আর কী কী হারিয়ে আজ জীবন চক্রের শেষ ধাপে এসে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রলি টানছেন। জীবন ও জীবিকার ট্রলি। অনেকটা জীবন-মৃত হয়ে জীবন প্রদীপটাকে নিবু নিবু করে আরও কয়েক দিন জ্বালিয়ে রাখার চেষ্টা। পথের শত ক্লান্তির পরও আমার ইচ্ছে হয়, খুব ইচ্ছে হয়, এ মানুষগুলোর সাথে দু’চারটে কথা বলি। জিজ্ঞেস করি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আপাত: পরাক্রমশালী আমেরিকা এ সাধারণ মানুষগুলোর জীবনে যে দারিদ্র, যন্ত্রণা ও কষ্ট কে চাপিয়ে দিয়েছে, দারিদ্রের একটা টেকসই ব্যবস্থা করেছে, তার অভিঘাতের টুকরো টুকরো গল্পগুলো। জিজ্ঞেস করা হয় না। সময়ের কাছে ইচ্ছেরা বন্দী থাকে। আমরাও এগিয়ে যাই। আরেকটু সামনে। যেখানে আমাদের জন্য আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন আফগান তরুন রেজা হাবীব। তার দলবল নিয়ে। আমাদের শুভেচ্ছা জানাবেন বলে।
(এ সিরিজ শুরু করেছিলাম অনেক আগে। অলসতা, অলসতা আর অলসতা.....আপদমস্তক জুড়ে। ফলে শম্ভুক গতিতেই চলছে......)

আগ্রহীরা আগের কিস্তির জন্য ক্লিক করুন
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:৫১
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×