somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরকীয়া,পাগলা পানি,বহুগামীতা এবং জাহাজীদের অন্ধকার জীবন...

১৭ ই নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“সবকনামা-৩”
জাহাজকে কেন শি(she) বলা হয়?;)

১-তার আশেপাশে সবসময়ই একদল মানুষ ঘুর ঘুর করে (কি আছে মনে কে জানে)! ;)
২-তার রয়েছে একটি সুঢৌল কোমর এবং আকর্ষণীয় নিতম্ব!
৩-তার বুকে থাকে সবসময় পুস্টিসমৃদ্ব তরল(কৃত্তিম খনিজসমৃদ্ব খাবার পানির ট্যাংক)।
৪-একবার যদি সে ক্ষেপে(বিগড়ে) যায় তাহলে জাহাজীদের ঘুম হারাম হয়ে যায়।
৫-সে প্রায় সময়ই ইভ টিজিং এর শিকার হয়(সোমালিয়ান জলদস্যু দ্বারা)! :P
৬-তার ঠোট রাঙ্গাতে বা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে অত্যন্ত ব্যয়বহুল পেইন্ট ব্যবহার করতে হয়।
৭-তার অনিয়মিত মাসিক(তেল সাগরে ছড়িয়ে পরলে) হলে শুধু যে পরিবেশ দূষিত হয় তাই না;জেল,জরিমানা সবই হতে পারে!!
তার স্যানিটারি ন্যাপকিন (coalescing filter for 15ppm oily water separator) নির্দিষ্ট সময় পরপরই বদলে দিতে হয়!!! :(
৮-তাকে নিয়ন্ত্রন করা খুব স্পর্শকাতর কাজ।একটু এদিক সেদিক হলেই জীবন যৌবন দুইটাই হুমকির মুখে পরবে!!!
৯-সে বন্দরে ভিড়লে সবসময় কোন না কোন বয়-এর সাথে থাকে বেধে রাখতে হয়!!
(বয়-buoy-জাহাজ বাধার বিশেষ ভাসমান বস্তু)



দুর্নীতি আর কারে কয়...
আমার কেন জানি মনে হয় দুর্নীতির আতুর ঘর এই জাহাজ সংশ্লিস্ট পেশা।(প্রথম পর্ব পড়া থাকলে সহজে বুঝবেন আশা করি)
একটা জাহাজকে বন্দরে ভিড়াতে সাহায্য করেন সংশ্লিষ্ট বন্দরের পাইলট(বন্দর কতৃক নিয়োগকৃত জাহাজী যার কাজ হল জাহাজকে বহিঃনোঙর থেকে বন্দরে নিয়ে আসতে কাপ্তান কে সাহায্য করা।একই সাথে সে ঐ দেশের প্রতিনিধি)।জাহাজে কোন যান্ত্রিক গোলযোগ থাকলে সে ঐ জাহাজকে বিভিন্ন ভাবে জরিমানা করতে পারে।(নাইজেরিয়া বন্দরের আয়ের অন্যতম উৎস এই জরিমানার টাকা)
কিন্তু প্রায় সময়ই এই টাকা পাইলটরা নিজেদের পকেটে পুরে।
বিশেষ করে ইন্ডিয়ান বেজন্মাগুলা.........
কাপ্তান আর পাইলটের কথোপকথনঃ-
কাপ্তানঃ ইঞ্জিনে একটু সমস্যা আছে।
পাইলটঃনা।এই জাহাজ বন্দরে ঢুকবে না। ISM code না মানায় একে আমি জরিমানা করব।
কাপ্তানঃএই নেন ৫০০ ডলার।
পাইলটঃ ওকে নো প্রব্লেম। :(
কাপ্তানঃ-আর একটু কথা আছে।এস্টার্ন কিক নেয় না।(জাহাজ শুধু সামনে যাবে ,পিছনে যাবে না)।
পাইলটঃ -তাহলে আরও ৫০০ দাও।
কাপ্তানঃ-কথা এখনো শেষ হয় নাই।
পাইলটঃ কি?
কাপ্তানঃ যখনি ইঞ্জিন চাইবেন তখনি ইঞ্জিন পাবেন না।একবার স্টপ হলে টার্নিং গিয়ার এঙ্গেজ করে দুই নাম্বার ইউনিট টিডিচিতে নিয়ে তারপর কিক দিতে হপে!!!
পাইলটঃ তাহলে দাও আরও ৫০০ডলার।সাথে এক কার্টন সিগারেট আর কোকাকোলা বিস্কুট চক্লেট তো দিতেই হপে!!!!!!!!!!!
শিপিং কোম্পানিগুলা ব্যবসায়িক চিন্তা ছাড়া আর কোন কিছু বুঝে না।পরিবেশ পরিবেশ করে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো না থাকলে সাগরে পানির চেয়ে তেল বেশি হয়ে যেত।



কাতারের মিসাইদ বন্দরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা......
মুসিলম ভ্রাতৃত্ব বলে কিছু নেই।সব ই ব্যবসায়িক ধান্দা আর স্বার্থ।
আমার চোখের সামনে দিয়া একটা আমেরিকান ক্রুজ ভেসেল থেকে স্বল্পবসনা ললনারা কোমর দোলাইয়া হেটে হেটে বন্দর অতিক্রম করছে।
আর আমি জাহাজে বইসা বইসা লোল ফালাইতাসি। মুসলমান হইয়াও আমি শহরে ঢুকবার পাস পাই নাই।
এজেন্ট কয় আমরা বাঙ্গালিরা নাকি জঙ্গী।প্যান্টের জিপার খুইলা নাকি আমরা পিস্তল/ছোরা বাইর করি! X(
যা তাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।আম্রিকানগুলা যে এইডস দিয়া ভইরা ফালাইতাসে হেইদিকে কোন খেয়াল নাই।X((
একজন শ্রমিকরে দেইখা বাঙ্গালী মনে হইল।বাঙ্গলায় ডাক দিলাম।সে কাছে আসল।বাড়ি নরসিংদি।
আমিতো খুশিতে বাকবাকুম।ভাবলাম যাই নিচে গিয়া দুইডা সুখ দুঃখের কথা কই।
দুই মিনিট পরেই দেখি দুই পাগড়িসেনা বন্দুক উচাইয়া আইতাছে।আয়া আমারে জিগায় পাস নাই তারপরও কেন নিচে নামলাম?
পারলে আমারে গুলি কইরা দেয়।মনে মনে বললাম-শালারা আমগো দেশে যাইস তোগোরে মুলি বাশ যদি না দিছি! রাগে দুঃখে দাত কিরমিড় করে চলে আসলাম।
যে সব দেশে ভিসা লাগে (যেমন সিঙ্গাপুর, সে সব দেশে ভিসা না থাকলে, দেশে ঢুকতে না দিলেও জাহাজ থেকে বন্দরে নামতে দেয়।কিন্তু এই কাতার,দুবাই,সৌদি আরব,ওমানের মত দেশগুলার মত এরকম জাওরাতুল হাফেজ আর কোথাও আমি দেখি নি।


“হকস বে” এবং পাকিস্তান

পাকিস্তানে গিয়াছিলাম ।শালারা এমন অমায়িক ব্যবহার করল।
পারলাম না একাত্তরের প্রতিশোধ নিতে।খুব ইচ্ছা ছিল নিজের ভার্জিনিটি বিসর্জন দিয়া কামডা কইরা ফালাই।শালার বিবেকের সাথে যুদ্ব কইরা পারলাম না।তাই বলে ভুলি নাই কিছুই।
পরের বার বিবেক বিসর্জন দিয়া হইলেও প্রতিশোধ নিমু!!!(বিকল্প একটা প্রতিশোধ নিসি কিন্তু সেইডা ব্লগে বলা সম্ভব না!!!)
প্রধান প্রকৌশলীর পাঁচবছর বয়সী মেয়ের প্রচন্ডজ্বর।দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হল।বাঙ্গালী শুনে কর্তব্যরত ডাক্তার(বেলুচিস্তানী) অত্যন্ত যত্নের সাথে সব ব্যবস্তা করলেন।জোড়াজোড়ি করলেও কোন ফি নিলেন না।
চলে আসার সময় সে নিজে থেকেই কথা তুলল একাত্তর সম্পর্কে।সে দুই হাত জোর করে ক্ষমা চাইল।
বাংলাদেশের কাছে বিনাশর্তে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে সে বলল।সেনাবাহিনীর সাথে সাধারন জনগনের ব্যাপক বিরোধের অনেক অভ্যন্তরীন কথাই সে বলল।বাংলাদেশে রাজাকারের দল কিভাবে মন্ত্রী হচ্ছে- এ কথার জবাবে কিছু বলতে পারি নাই।
এটা যে একটা ব্যতিক্রম ঘটনা তাতে সন্দেহ নেই।(শিবির এবং পাকিপ্রেমীরা এই ঘটনায় খুশির লোল ফালানুর চেস্টা করলে গদাম দেওয়া হইবে।)
‘হকস বে’ নামক সি-বিচে যাওয়ার পর একটু পরপরই দূরে কোথায় যেন শেল ফাটার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম।সারি সারি রমনীয় পাহাড়,পাশে সি বিচ বেশ চমৎকার আবহাওয়া।
এজেন্টকে জিজ্ঞাসা করলাম -
এইরকম ভুম ভুম শব্দ কিসের?সে বলল এই বিচের পরপরই বেলুচিস্তান এলাকা শুরু।বেলুচ যোদ্ধা আর পাইক্কা সেনাদের মধ্যে যুদ্ধ চলতাসে।
এতক্ষনে বুঝলাম বিচটা কেন এত জনশুন্য।/:)
উঠের উপর থাইক্কা লাফাইয়া নিচে পরলাম।জান হাতে নিয়া কইষ্যা দৌড় লাগালাম।রাস্তায় উঠেই ড্রাইভারকে বললাম তাড়াতাড়ি গাড়ী চালাও মিয়া।
মনে মনে সূরা মনে করার এত চেস্টা করলাম শালার একটা সূরা মনে আসে না।খালি কবিতার লাইন মুখ দিয়া বাইর হইতাসে-‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে .........!!!’:((
বিকালে জাহাজে ফেরার পর শুনলাম হকস বে তে নাকি আত্মঘাতী বোমা হামলায় তিনজন নিহত হয়েছে।চলে আসার এক ঘন্টা পরেই বোমাহামলা হয়েছিল(এজেন্ট টিভি দেখে বলল)।:-*
বাকি যে কয় দিন ছিলাম একদিনও আর ঘুরতে বের হইনি।
২৯টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×