পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্তিকরণ সম্পর্কিত সুপারিশমালার কপি পর্যালোচনায় জানা যায়, নবম দশম শ্রেণীর ২০০৮ সালের পৌরনীতি বইয়ের ১১৬নং পৃষ্ঠার ১২নং লাইনে ‘সার্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক' বিষয়ে জিয়াউর রহমানের পরিবর্তে এরশাদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে। বাদ দেয়া বাক্যটিতে ছিল “১৯৮৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের উদ্যোগে ঢাকায় সার্কের আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়।” নতুন বইয়ে লেখা হয়েছে “১৯৮৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের উদ্যোগে ঢাকায় সার্কের জন্ম হয়।” এভাবে মাধ্যমিক স্তরের সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান, পৌরনীতি ও ইতিহাস বইয়ের ১০৪ স্খানে অনাকাáিক্ষতভাবে সংশোধন ও পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব বইয়ের বিভিন্ন স্খান থেকে জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দেয়া হয়েছে আবার কোথাও কোথাও জিয়ার নাম বহাল থাকলেও সেখানে তার সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সংযোজন করা হয়েছে।
কিছু বিতর্কিত নতুন তথ্য সংযোজন ও বাদ দেয়ার মধ্যে রয়েছে ৮ম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের ৩য় পৃষ্ঠার ১১ নম্বর লাইনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়ার নাম বাদ দেয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে ড. সাঈদ উর রহমানের লেখা ‘স্বাধীনতার পথে স্মরণীয় যারা' প্রব বাদ দিয়ে ‘শেখ মুজিবুর রহমান' শীর্ষক একটি প্রব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূত্র মতে, শেখ মুজিবের পাশাপাশি শহীদ জিয়া সম্পর্কে একটি প্রব থাকার কথা থাকলেও তা রাখা হয়নি। এ বিষয়ে সুপারিশমালায় ‘জিয়াউর রহমান রচনাটি সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেই কেন?' মর্মে মন্তব্য করা হলেও তা কাজে আসেনি। ৯ম ও ১০ শ্রেণীর সমাজ বিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ পরিচ্ছেদে ‘গভীর রাতে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার এবং ২৬ মার্চ স্যাবেলায় মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার' প্রসঙ্গটি বাদ দেয়া হয়েছে। ৮ম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের পদ্যাংশে ফররুখ আহমদের ‘ধানের দেশ' নামের কবিতার পরিবর্তে হাসান হাফিজুর রহমানের ‘অবাক সূর্যোদয়' নামক কবিতা প্রতিস্খাপিত হয়েছে। এভাবে নতুন বইয়ের বিভিন্ন স্খানে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বেশি প্রশংসা এবং প্রসঙ্গ ছাড়াই বিএনপির সমালোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মাধ্যমিক স্তরের সংশোধিত এসব বই দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ১৪ জানুয়ারি থেকে বাজারে ছাড়বে এনসিটিবি। গত ২ জানুয়ারি ১ম কিস্তির বই বাজারজাত করা হয় এবং ১৭ জানুয়ারি সর্বশেষ বইগুলো বাজারে ছাড়া হবে।
এদিকে পাঠ্যপুস্তকে নতুন ইতিহাস সংযোজনের উদ্যোগ এবং সংযোজিত ও সংশোধিত তথ্য নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক প্রসঙ্গে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. মছির উদ্দিন বলেন, ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির দৃষ্টিভঙ্গির প্রেক্ষিতে এই কাজ শুরু হয়। তিনি বলেন, নতুন বইয়ে শব্দগত কিছু ত্রুটি হয়েছে। বই এখনো বাজারে আসেনি। সব বই বের হলে বোঝা যাবে কী ভুল ত্রুটি আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির সাথে বসা হবে, ভুল ত্রুটি সংশোধন করা হবে। তবে এবার যেহেতু বই ছাপা হয়ে গেছে তাই সংশোধনের কোন সুযোগ নেই। আগামী বছর সংশোধন করা হবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক ড. হাসনা হেনা বেগম সরাসরি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।