somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণপিটুনি : আইন যা বলে

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চোর-ডাকাত, পকেটমার কিংবা ছিনতাইকারী হাতেনাতে ধরা পড়েছে অথচ পুলিশের হাতে দেয়ার আগে তাকে পিটুনি বা গণপিটুনি দেয়া হয়নি এরকম ঘটনা খুব কমই ঘটে থাকে। হাতেনাতে ধরা পড়ার পর এ ধরনের অপরাধীকে গণপিটুনি দেয়াটা মোটামুটি বিধানে পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত আইন ভঙ্গকারী এদেশের জনগোষ্ঠী এ বিধান পালনে যথেষ্ট তৎপর। অন্তত বাস্তব অবস্থাদৃষ্টে এবং পত্রিকার খবর অনুযায়ী এমনটিই মনে হয়। কেননা ‘গণপিটুনিতে ডাকাতের মৃত্যু’ কিংবা ‘গণপিটুনিতে ছিনতাইকারীর জীবনাবসান’ এ ধরনের শিরোনাম দেখে আমরা এখন আর আঁতকে ওঠি না। অনেক অদ্ভুত বাস্তবতার দেশে এটা এখন নির্মম বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আপনার যেমন অধিকার ভোগ করার আইনানুগ বিধান আছে, তেমনি রাষ্ট্রের যে কোনো নাগরিকেরই এ অধিকার ভোগ করা আইনসম্মত। বাংলাদেশের সংবিধানে তৃতীয়ভাগে রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। সংবিধানের ৩১, ৩৩ ও ৩৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের আশ্রয় লাভ, আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ, বিচার লাভ, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ লাভ, অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার।
যদিও বাংলাদেশের প্রচলিত পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনিহা থেকেই গণপিটুনির মতো অবৈধ এবং আইন বিরোধী কাজটি করা হয় বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার মতো অপরাধ আইন দ্বারা তো নিষিদ্ধই বরং বিবেক দ্বারাও অসমর্থিত।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, চোর ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। আর এর ব্যতিক্রম করলে দন্ডবিধি ১৮৭ ধারা অনুযায়ী আপনাকে অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদ- বা অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে।
অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা পুলিশের আইনগত দায়িত্ব। আর এ দায়িত্বে বাধা দেয়ার মতো কোনো অধিকার আপনার নেই। বরং চোর, ডাকাত, ছিনাতইকারী কিংবা পকেটামারকে আপনি যদি আটকে রাখেন এবং পুলিশের দায়িত্ব পালনে বাধা দেন, তবে আপনাকে দ-বিধির ১৮৬ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদ- বা অনূর্ধ্ব ৫০ টাকা জরিমানা বা উভয়বিধ দ-ে দ-িত হতে পারেন।
আটক রাখার পর যদি আপনি সখের বশে কিংবা নিজের শক্তিকে জাহির করার জন্য অথবা আকস্মিক উত্তেজনা বশত হয়ে অপরাধীকে পিটুনি বা ধোলাই দেন তবে কারাদ-ের আগে মেয়াদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে অনূর্ধ্ব তিন বছর এক মাসে। সঙ্গে অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানা তো থাকছেই।
৩৩৪ ধারা দ-বিধি পিটুনি বা ধোলাই দিতে গিয়ে যদি গুরুতর আঘাত দিয়ে ফেলেন তবে আগের কারাদ- মেয়াদের সঙ্গে যোগ হবে আরো এক বছর। আর অর্থদ- হবে অনূর্ধ্ব ২ হাজার টাকা। অবশ্য এ ক্ষেত্রেও কারাদ- ও অর্থদ- উভয় দ-েও দ-িত হতে পারেন। (দ-বিধি, ৩৩৫ ধারা)
যে অপরাধীর ওপর আপনি নিজের ক্ষোভ মেটাচ্ছেন বা ধোলাই দিচ্ছেন তাকে আঘাতদানের সময় মেরে ফেলবেন এমন কোনো চিন্তাভাবনা বা আশঙ্কা আপনার মনে কাজ করেনি কিন্তু আকস্মিক উত্তেজনার একপর্যায়ে পিটুনির ফলে অপরাধীর মৃত্যু ঘটলো, সেক্ষেত্রে দ-বিধির ৩০৪ ধারার বিধান অনুযায়ী আপনার দশ বছর কারাদ- বা জরিমানা বা উভয়বিধ শাস্তি হবে। আর যদি অপরাধীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মেরে ফেলার বিষয়টি প্রমাণিত হয় তবে এ মেরে ফেলার কাজটি হবে ঈঁষঢ়ধনষব যড়সরপরফব যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- বা অনূর্ধ্ব দশ বছর মেয়াদের যে কোনো কারাদ-। তার সঙ্গে যে কোনো পরিমাণ জরিমানা তো থাকছেই। (৩০৪ ধারা দ-বিধি, প্রথম অংশ)
গণপিটুনিতে যদি অপরাধীর মৃত্যু ঘটে তবে তার দায় বর্তাবে অপরাধ সংঘটনকারী সব ব্যক্তির ওপর। কেননা আইনে ঔড়রহঃ ষরধনরষরঃু বা যৌথ দায়িত্বশীলতা বলে একটি নীতি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই অভিপ্রায় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করলে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে দায়ী হবেন যেন তিনি নিজেই অপরাধটি করেছেন। তাই গণপিটুনিতে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে, সবাইকে সমভাবে এজন্য দায়ী করা যাবে। [৩৪ ধারা দ-বিধি]
আশ্চর্যের বিষয় হলেও সত্যি যে, গণপিটুনিতে অংশ নেয়ার অপরাধে বাংলাদেশে কারো সাজা হয়েছে বলে কোনো রেকর্ড নেই। অথচ এ জাতীয় অপরাধের অসংখ্য খবর আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই। অনেকে বলেন, প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় অপরাধী সাজা পায় না বলেই এ আয়োজন। কিন্তু অপরাধীকে সাজা দিতে গিয়ে নিজে আরেকটি দ-নীয় অপরাধ করে ফেলা কোন যুক্তিতে মেনে নেয়া যায়? রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং আস্থা রাখা আপনার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পুরোপুরি পালন না করে বরং আরেকটি অপরাধ করার মতো আইনগত বা নৈতিক ভিত্তি আপনার নেই। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে আপনি নিজে নতুন পদ্ধতিতে বিচার প্রক্রিয়া বা আইন হাতে তুলে নেয়ার কাজটি করতে পারেন না। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অযথা নতুন অপরাধের জন্ম দিয়ে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থাকে আপনি বিতর্কিত করে তুলতে পারেন না। বরং বিচার পদ্ধতির সংস্কার বা সংশোধন কিংবা আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করাটাই একজন সুনাগরিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব।
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×