somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজকান্দির বনের সৌন্দর্য্য পেরিয়ে হামহাম ঝর্ণার উদ্দেশ্যে (পর্ব-১)

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রেজা, আমি কাল ভোরে হামহাম ঝর্ণাটি দেখতে যাব, আপনি আমার সাথে যাবেন ? অনেক দুর্গম পথ কিন্তু ! যাওয়া এবং আসার পথে কয়েক মাইল পথ হাঁটতে হবে !

হ্যাঁ, ভাই আপনি যেদিকেই যাবেন, আমি আপনার সাথে আছি !

তার কথায় কিছুটা আশ্বস্ত হলাম, যাক অন্তত একা যেতে হবে না। রাত দুটার সময় ঘুমাতে গিয়ে ভোর ৬টায় সে উঠবে কিনা সেই সন্দেহের বশে তাকে হুমকি দিয়ে বললাম, আপনি যান বা না যান, আমি কিন্তু অবশ্যই যাব। গাইড একজন তো লাগবেই, দরকার হয় আরেকজন অতিরিক্ত গাইড নিয়ে ৩ জনের দল বানিয়ে ফেলব ! তাকে আরও বললাম, আর কাউকে বলবেন না, সংখ্যা বেশী হয়ে গেলে যাবার অনুমতি পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। এখন ঘুমাতে যান, ঠিক ৬ টায় আমি জাগিয়ে দিবো। দুবার নক করবো, না উঠলে কিন্তু আপনাকে ছাড়াই যেতে হবে। একথা বলে নিজের রুমে ঢুকে লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুম।

ঠিক ৬টায় বেরসিক এলার্ম বেজে উঠলো। লাফ দিয়ে উঠে সোজা গিয়ে ২ নং রুমে নক করলাম। আমাদের টিম লিডার ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুললেন। সরাসরি তাকে বল্লাম, স্যার হামহাম ঝরনা দেখতে রেজাকে সাথে নিয়ে এখনই বেরিয়ে পড়তে চাই। আজ দিনের কোন প্রোগ্রামে আমি থাকতে পারবো না, সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো। উনি কৃতজ্ঞতাবসত বিনা বাক্যে রাজি হয়ে গেলেন, কারন ঢাকা থেকে ৫০ জনের টিম আমার নেতৃত্বেই পিকনিকের উদ্দেশ্যে এসে মৌলভিবাজারের শ্রীমঙ্গল হয়ে কমলগঞ্জের হীড বাংলাদেশের রেষ্টহাউজে এখন ঘুমাচ্ছে। উনি পরে এসে আমাদের সাথে জয়েন করেছেন।

এরপর সোজা কিচেনে চলে গেলাম। সেকান্দার ভাই, যিনি আমাদের খাবার পরিবেশনের মূল দায়িত্বে আছেন তাকে বললাম এখান থেকে কলাবন যাবার ব্যাবস্থা করে দিতে পারেন ? আমরা দুজন হামহাম ঝর্না দেখতে যাব। একজন গাইড জোগাড় করে দেয়া যাবে ? উনি বললেন, গাইড কলাবন থেকেই নিতে পারবেন। তবে মোটর সাইকেল এর সাহায্যে আপনাদেরকে কলাবন পর্যন্ত্য পৌঁছে দেবার ব্যাবস্থা করে দিতে পারবো। বললাম, মোটর সাইকেল কতক্ষণ এর মাঝে আসবে ? উত্তরে উনি জানালেন, আপনারা সকালের নাস্তা খেতে খেতেই মোটর সাইকেল চলে আসবে।

সব ঠিক করে এসে রেজাকে জাগালাম। তাকে ২০ মিনিটের মাঝে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতে তাগাদা দিয়ে নিজের রুমে এসে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম প্রাতক্রিয়াদি সম্পন্ন করার তাগিদে।

ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে চলে আসলাম ২০ মিনিটের মাঝেই। এরমাঝে রেজাও সেখানে চলে এসেছে। যদিও আমাদের টিমের ব্রেকফাস্ট এর পূর্ব নির্ধারিত সময় ছিলো সকাল ৯টায়, তারপরও সকাল ৭টার আগেই সেকান্দর ভাইয়ের বদান্যতায় আমাদের সামনে গরম গরম খিচুড়ি, সাথে ডিমভাজা, বেগুন ভাজা ও আচার। সাথে এককাপ অসাধারন চা।

খাওয়া চলা অবস্থায়ই আমাদের মোটর সাইকেল চালক এসে উপস্থিত। এত ভোরে দ্রুত তার উপস্থিতিতে মোটেই অবাক হইনি, কেননা গ্রামে ভোর হয় সুর্যোদয়ের সাথে সাথেই। যে দেরীতে ঘুম থেকে উঠে সেও সুর্যোদয়ের পর বিছানায় থাকে না। যদিও শীতকাল এবং প্রচন্ড কুয়াশার চাদরে সবদিক ঢেকে থাকার কারনে সুর্যিমামা এখনও হাসেনি, এখানকার জীবনযাত্রায়ও তাই বলে কোন হেরফের হয়নি। সকাল প্রতিদিনের মত সুর্যোদয়ের সময় ধরেই শুরু হয়েছে।

আমাদেরকে মোট কমলগন্জ এর রেষ্টহাউজ থেকে ১৫+১০+৭ তারমানে ৩২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।

আমাদের ড্রাইভার লোকমান দুজনকে পিছনে নিয়ে মোটর সাইকেল স্ট্যার্ট দিলো। ৩২ কিলোমিটার পথ এই প্রচন্ড কুয়াশার ভিতর দিয়ে কনকনে ঠান্ডার মাঝ দিয়ে যেতে হবে। মোটর সাইকেল কমলগঞ্জ পৌরসভার মোড় হয়ে আদমপুর রোড দিয়ে কলাবনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা ২০ ফিটের বেশী নয় । পথে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের দুটি মন্দির পেলাম। দিনটি ২৫ই ডিসেম্বর হওয়ায় খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের একটা বড়দিনের প্রোগ্রামও চোখে পড়ল। সম্ভবত সেটা গীর্জা হতে পারে।

মোটর সাইকেল আরোহী আমাদের দুজনকে ও আমাদের ড্রাইভারকে পথে লোকজন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দেখছে। অনেক দিন পর ভোরবেলার গ্রামীন জীবন দেখে ভাল লাগছিলো। পথে কয়েকবারই ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা খুলতে হয়েছিলো। কুয়াশায় চারদিক এমনভাবে ঢেকে আছে যে আমার মাথা ও চোখের উপর ভ্রুতেও শিশির জমে বরফের মত সাদা হয়ে গেছে। মোটরসাইকেলের রিয়ার ভিউ মিররে নিজেকে দেখে নিজেরই মজা লাগছিলো।

পথে কুরমা চা বাগান পড়ল। ১৫ কিলোমিটার পার হবার পর পিচঢালা পথ শেষ। এখানেই কুরমা বাজার । গ্রামীন ছোট বাজার। কয়েকটা দোকানই মাত্র। এখান থেকেই প্রয়োজনীয় পানি-বিস্কুট নেবার জন্য ও পথ চেনার জন্য থামলাম। এখানেই পরিচয় বকুল ভাই নামে মাই ডিয়ার একজন এর সাথে। তিনিই একজন গাইড ঠিক করে দিলেন, নাম হল আতাউর রহমান ওরফে আতা মিয়া। আমাদেরকে পথ দেখিয়ে কলাবন হয়ে হামহাম পর্যন্ত্য নিয়ে যাবেন ও ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। তিনি আমাদেরকে বললেন, আপনারা মোটরসাইকেল নিয়ে সামনে এগিয়ে যান, আমি সাইকেল নিয়ে আপনাদের সাথে আসছি। সেখান থেকে একসাথে যাবো হামহামের উদ্দেশ্যে।

আবার মোটর সাইকেল স্ট্যার্ট দিয়ে এগুলাম। তিনিও আমাদের সাথে বাইসাইকেল নিয়ে এগুলেন। প্রচন্ড এবড়ো-থেবড়ো রাস্তার কারনে ইন্জিনচালিত ও মানবচালিত দুটি সাইকেলের গতির কোন পার্থক্য ছিলো না। কয়েকবারই ভাবছিলাম নেমে হেঁটে যাই। পরের প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ হাঁটার কথা চিন্তা করে নামার আগ্রহকে গলাটিপে ধরলাম।

এরপর ১০ কিলোমিটার মাটির রাস্তা দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে যেতে হবে। সে পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এবার ন্যাশনাল টি কোম্পানীর শতবর্ষের পুরোনো চাম্পারার চা বাগান পড়ল।

অবশেষে আমরা কলাবন গ্রামে এসে উপস্থিত হলাম। এটা চা-শ্রমিকদের ছোট গ্রাম। আর সাইকেল বা মোটরসাইকেল যাবে না । এবার এগারো নাম্বার বাস এ করে যেতে হবে, তারমানে দুই পা-ই এখন একমাত্র ভরসা।

কয়েটি ছোট শিশু কয়েক ফিট লম্বা কাঁচা চিকন বাঁশ নিয়ে আমাদের কেনার জন্য অনুরোধ করছিলো। আমাদের গাইড আতা মিয়ার পরামর্শে আমরা দু অভিযাত্রী ও আতামিয়ার জন্য ১৫ টাকা দিয়ে ৩ টি শক্ত দেখে বাঁশ কিনে নিলাম।

আমাদের মোটরসাইকেল ড্রাইভারকে এখানেই আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত্য অপেক্ষা করতে বলে রাজকান্দির বনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।



(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:১০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×