somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীরা উপজাতি নাকি আদিবাসী ?(আদিবাসী বিতর্ক-১)

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুতেই আমরা দেখে নেই, আইএলও আদিবাসী আর উপজাতির কি সংজ্ঞা দেয় ?

আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী - "তারাই উপজাতি হিসেবে বিবেচিত হবে যারা নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রথাগত জীবন যাপন করে। যাদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রা মূল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা এবং যাদের নিজস্ব সামাজিক প্রতিষ্ঠান, প্রথা ও আইন আছে।"

আর আদিবাসীদের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও আরো একটি বাড়তি বৈশিষ্ট্য যোগ করে বলা হয়েছে - "কোনো এলাকা অন্য কারো দ্বারা দখলকৃত হওয়ার আগে বা ওই এলাকায় অন্য কারো আগমনের আগ পর্যন্ত (প্রাক-ঔপনিবেশিক) যাদের ঐ এলাকায় বসবাসের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা আছে" তারাই ওই এলাকার আদিবাসী। বস্তুত এই অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যটিই আইএলও কনভেনশনে উপজাতি এবং আদিবাসীদের আলাদা করেছে।

এ প্রেক্ষিতে আদিবাসী সংজ্ঞাটি মূলত কোনো জনগোষ্ঠীর নিজ মূল আবাসভূমিতেই প্রযোজ্য হবে যেখানে উক্ত গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে বসবাস করে আসছে।

আমরা এবার আসি পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের মূল সন্ধানে। প্রাক-ঔপনিবেশিক আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বিরান ভূমি হিসেবে পড়ে ছিলো মূলত বসবাসের অনুপোযোগীতার কারনে। মূলত ব্রিটিশ আমল ( ঔপনিবেশিক আমল) থেকেই এঅঞ্চলে দু-একটি ছোটখাট যাযাবর জাতীয় জনগোষ্ঠি সহজ শিকারএর উদ্দেশ্যে অস্থায়ীভাবে এখানে অবস্থান করা শুরু করে। তখন থেকেই ব্রিটিশ সরকারের স্থানীয় ফোর্সের সাথে এই উপজাতি গোষ্ঠির খুটখাট সংঘর্ষ ঘটা শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার এই উপজাতীয় গোষ্ঠিগুলিকে নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে নেপালীজ গুর্খাদেরকে এখানে নিয়ে আসে, কালক্রমে এই গুর্খারাও এখানে রয়ে যায়। ব্রিটিশ সরকারেরই নীতির (মূলত আর্থিক) কারনে হিমালয় অঞ্চল থেকে গুর্খারা, ভারতের পার্বত্য ত্রিপুরা থেকে ত্রিপুরারা, বার্মার আরাকান থেকে চাকমারা, ভারতের লুসাই পাহাড় অঞ্চল থেকে লুসাইরা এবং আরও ছোটছোট ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি এখানে এসে বসতি স্থাপন করে।

অন্যদিকে ইতিহাস এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ চাকমাদের লোকগাথা অনুযায়ী তাদের মূল নিবাস ছিলো ঐতিহাসিক চম্পকনগরে। এখন প্রশ্ন আসে এই চম্পকনগরের অবস্থান কোথায় ? সেই ইতিহাসই আবার উত্তর দেয় বর্তমান মায়ানমারের আরাকান অঞ্চলের ইরাবতী নদীর তীরেই ছিলো এই চম্পকনগরের অবস্থান। তারমানে ঔপনিবেশিক আমলে সৃষ্ট উপজাতিয় গোষ্ঠির মূল আবাসস্থল পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিলো না। নৃতাত্বিক দিক থেকে পার্বত্য উপজাতিরা মঙ্গোলীয়ড রক্তের এবং সিনো-টিবেটিয়ান ভাষা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সরকার চট্টগ্রামের সুপারিন্টেন্ডেন্ট এর অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা ডিস্ট্রিক্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আর ১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম এক্ট জারি করে মূলত পাহাড়ী উপজাতি জনগোষ্ঠি থেকে সুষ্ঠভাবে ট্যাক্স আদায় করার্থে। সেখানকার বর্তমান প্রশাসনিক নিয়মকানুনএর (রাজা/সার্কেল চীফ/হেডম্যান/কারবারী) প্রায় সবগুলিই ব্রিটিশদের তৈরী করা।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এই উপজাতীয় জনগোষ্ঠির বৃটিশ সরকার কর্তৃক সৃষ্ট নেতাস্থানীয়রা ইন্ডিয়ার সাথে মার্জ করারই পক্ষপাতী ছিলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত্য সেটা আর হয়ে উঠেনি। পার্বত্য সমস্যার শুরুও সেখান থেকেই। পাকিস্থান আমলে কাপ্তাই লেক তৈরী করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনএর সময় অনেক সেটেলার পাহাড়ী জনগোষ্ঠির পুনরায় ভারতে টেম্পরারী সেটেলার হওয়া দিয়েই যার বিস্তৃতি। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নতুন সংবিধান আমাদের জাতিগত পরিচয় ঠিক করে "বাঙ্গালী"। আর সেবাস্তবতায় পাহাড়ী ছোট-ছোট নৃ-গোষ্ঠির প্রতি বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহবান ছিলো - "তোমরা বাঙ্গালী হয়ে যাও"। কিন্তু উপজাতিয় নেতারা তাতে সাড়া দেন নি বা দেয়াটা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এর কিছুদিন পরেই মানবেন্দ্র লারমারা ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করে যেটাকে খুনোখুনির পরিস্থিতিতে নিয়ে যায় বৈদেশিক সহায়তায়। এই জনসংহতি সমিতিরই সামরিক উইং ছিলো "শান্তি বাহিনী"। সে আরেক ইতিহাস।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১১:২০
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×