জীবনে কখনও কুইজ করি নাই। ছোটবেলায় উপজেলাতে একবার প্রথম হয়েছিলাম জাতীয় শিশু সপ্তাহ সাধারন জ্ঞান না কি জানি একটা কম্পিটিশনে। অভিজ্ঞতা বলতে এটুকুই। হঠাৎ সেদিন(১৯ নভেম্বর) ১৯ ব্যাচের আসিফ ভাইয়ের ফেবু পোস্টে জানলাম ঢাবির আইবিএতে একটা আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কুইজ আছে। জানালাম যে আমি আগ্রহী। ছোটবেলা থেকেই যেকোনো বই পড়ার অভ্যাস এবং নিয়মিত পেপার পড়ার জন্য হয়ত সাধারন জ্ঞান একটু ভালো। কিন্তু পরে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছিলাম না কারন প্রায় ১ বছর হল আমি আপডেটেড না। বললাম কুইজ করব না। আন্তারা আপুর জোরাজোরিতে শেষ পর্যন্ত যেতেই হল। গিয়ে যেসব অভিজ্ঞতা হল তাই শেয়ার করছি।
সতর্কতাঃ মাদক অথবা ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
কুইজ শুরু ৩-৩০ এ। আমাকে টিম লিডার মাজহার ভাই রওয়ানা দিতে বলেছেন সকাল ১০ টার মধ্যে। যাই হোক, আগের রাতে ভাইয়া আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যেন আমি ভূগোল অংশটাও দেখে যাই। আমি ছিলাম একটু “অন্যরকম” অবস্থায়। উৎসাহের চোটে বলে দিলাম সমস্যা নাই ভাই, আমি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ারসও দেখব। হলে এসে আমার টিমমেট সামিকে বললাম ১০ টার মধ্যে আমার হলে আসতে। ও থাকে পাশের ভাসানী হলে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ১০-৩০ টা বাজে। দ্রুত তৈরি হয়ে ফোন দিলাম সামিকে। ফোন ধরে না। মহা জ্বালা। ভাসানী হলের আরেক বন্ধুকে ফোন করে ওর রুমে পাঠালাম। সে তখন নাকি ঘুমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ঝাড়ি দিয়ে তাকে উঠানো হল। ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই সে আমাকে ফোন দিয়ে বলল যে সে বের হয়ে যাচ্ছে, এখন হলের গেটে, আমি যেন হলের সামনে দাঁড়াই। আমি সুন্দর ভাবে ফ্রেশ হয়ে আরও ১০ মিনিট পর নামার আগে কল দিলাম, সে তখন বলল দোস্ত জামাকাপড় পাইতেসি না, একটু ওয়েট কর। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। একটু আগে বললি তুই হল এর গেটে আর এখন বলিস তুই কাপড় পাইতেসিস না... মানে কি ন্যাংটা হয়ে হলের গেটে গেসিলি? ঃ@ আরও ৫ মিনিট পর আসল সামি। ১১ টায় রওয়ানা দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর মনে হল ব্রেন খোলা দরকার। একটু “পবিত্র ঘাস” গ্রহন করলাম। সামি আবার ভালো ছেলে। সে কিছুই খায় না, এমনকি সিগারেট ও না। কি আর করা।
ঢাবি যেতে যেতে ২ টা বাজলো। গিয়ে দেখি আমাদের এক সিনিয়র ভাই যিনি সেকেন্ড টাইম ঢাবি আইবিএ তে চান্স পেয়ে এখন ওখানেই পড়ছেন দাঁড়িয়ে আছেন। আমার অন্য টিম মেম্বার সবাই আসল। দুপুরে আইবিএ ক্যান্টিনে খেয়ে ভাইকে বললাম, আমার কাছে আরও কিছু “পবিত্র ঘাস” আছে। উনিও গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কিনা। উনার সাথে গেলাম আইবিএরই এক জায়গায়, সঙ্গত কারণে নাম বলছি না। গিয়ে “দুষ্ট সিগারেট” বানাচ্ছি, একটু ওপাশে আরও সাত আটজন ভাই বসে আছে যাদের কাউকেই চিনি না। কিছুক্ষণ পর একজন এসে বলল,
-এক্সকিউজ মি, আপনারা কি এখানকার?
-জী, আমি এখানে আইবিএ তে আছি।
-আপনারা কি “বাঁশি” টানতে পারেন?
-জী...
-ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমাদের কাছে বাঁশি আছে। ইউ ক্যান জয়েন আস।
(পুরাই বেকুব হয়ে গেলাম, চিনি না, জানি না, বাঁশি খাওয়ার অফার দিয়া বসল!!!)
- (এসময় আমি কথা বললাম) ভাই আমার একটা কুইজ আছে তো, আমি আসলে...
কথা হারিয়ে গেল উনার কথায়। উনি উড়িয়ে দিয়ে বললেন, “আরে কুইজ আরও ভালো হবে” তাহলে কি আর করা, দাওয়াত তো আর মিস করা যায় না। গেলাম উনাদের সাথে। ঢাবির ভাইয়ারা এত্ত ভদ্র... আমার খুবই ভালো লাগল। আমার পালা আসলে বললাম আমি টানতে পারি না। আরেকজন খাইয়ে দেয়। আরেকজন বললেন, “আগে বলবা না?” উনি নিজে ধরলেন। এর মধ্যে সবার সাথে পরিচিত হলাম, যাই হোক তারা মাস্টার্সের বড়ভাই। পুরোপুরি “হাই” হয়ে গেলাম অডিটোরিয়ামে। একটু বসার পর বাছাই পর্ব হল। ওখানে ১১ টা দল ছিল ৯ টা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা। ৬ টা টিম ( ঢাকা আইবিএ, বুয়েট, ঢাবি অর্থনীতি, ঢাকা মেডিকেল, বিইউপি আর আমরা আইবিএ-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।) ফাইনালে উঠলো। বাদ পড়লো এমআইএসটি, ডিএমসি’র আরেকটা টিম, আইইউটি, ইউআইইউ, ঢাবি ফিন্যান্স।
এবার ফাইনাল,
আমি কিন্তু তখনো এইজগতে নাই। ওই অবস্থায় একটার পর একটা রাউনড হচ্ছে। টিমে ৫ জন আছে। পার্টিসিপেট করবে ৩ জন। ভাইয়ারা আমার পারফর্মেন্স ভালো দেখে আমাকে রেখে বাকি ২ জনের মধ্যে পরিবর্তন করছেন এক এক রাউনড পর পর। ৩ টা ফেজের পর আমরা সেকেন্ড, ডিএমসি ফার্স্ট। ৪র্থ ফেজে গিয়ে আমরা লিড নিলাম। ল্যাডার রাউন্ডে গিয়ে আমি ভাবলাম আমি হয়ত এখন পরিবর্তন হব। কারন নয়টা রাউন্ডের মধ্যে ৭ টা শেষ। এখন হবে ৮ নাম্বার টা। তখন ঢাবি অর্থনীতি আমাদের সাথে ফাইট করছে। ডিএমসি তখন থার্ড। ভাইয়া বললেন, সামি বস, **** তো বসবাই, আর আন্তারা বস। মনে মনে খুশি হলেও প্রকাশ করলাম না, আসলে আমার তখন কুইজ করতে ইচ্ছা হচ্ছিল। ওই রাউন্ডে আমাদের টিমের ৬ টা শুদ্ধ উত্তরের মধ্যে ৪ টা আমার দেয়া। সবাই ব্যাপক আনন্দিত, আমরা চ্যাম্প হচ্ছি। কিন্তু কুইক কুইজে অর্থনীতি এগিয়ে গেল। পয়েন্ট সমান, ২ দলের ই ১৮০। আমার তখন টেনশনে মাথা খারাপ। টাইব্রেকার হবে। ২০ টা লোগো ১০ সেকেন্ড দেখিয়ে বলা হল ১ মিনিটে ওগুলোর নাম লিখতে। ওরা ৬ টা লিখল আর আমরা ৯ টা। এই টাইব্রেকারে জেতার পুরো কৃতিত্ব সামি আর আন্তারা আপুর। আর কী? TEAM SPECTRUM from IBA-JU is the CHAMP!!!!
ফেরদৌস বাপ্পী ভাই খুব প্রশংসা করলেন, একটু পর ফেবুতে শেয়ার করার পর থেকে অভিনন্দনের জোয়ার শুরু হল। এইরকম উপলক্ষ জীবনে আসছিল আর মাত্র ২ বার। এসএসসি রেজাল্টের পর আর আইবিএ-জেইউ তে চান্স পাওয়ার পর। জীবনে প্রথম কুইজেই এরকম সাফল্যে আমি হতবাক। মাজহার ভাই, তুনান ভাই, আন্তারা আপু, সামি তো আছেই আসিফ ভাই(১৯), সৃজন ভাই এনাদের ইন্সপিরেশন টাও খুব খুব খুব ই কাজে দিসে। কুইজ মাস্টার ছিলেন আব্দুন নুর তুষার ভাই, ফেরদৌস বাপ্পী ভাই সহ কুইজের জগতের সব তারকারা। আয়োজকরা খুব ই সুন্দর ভাবে প্রোগ্রাম রান করেছেন।
কিন্তু সব শেষে কেন যেন মনে হচ্ছে “পবিত্র ঘাস” আর ওই নাম না জানা ভাই টার আশীর্বাদ কাজে লেগে গেল নাকি??
কুইজ শেষ হতে হতে বাজলো রাত সোয়া ১১। গেলাম শাহবাগ। ৮ নাম্বার বাসে গাবতলি যাওয়ার পথে দেখলাম একটা সুপার বাস শ্যামলীতে দাঁড়ানো। কল্যাণপুর নেমে ওই বাসে উঠে যখন ভার্সিটিতে নামলাম রাত তখন পৌনে ১ টা। হল থেকে বন্ধুদের আসতে বলে দিয়েছিলাম এত রাত হয়ে গেছে বলে। ওদের সাথে সবাই মিলে হলে ফিরে ফ্রেশ হতে হতে রাত ২ টা বাজলো। এর মধ্যে কিছুখন আড্ডাও আছে। সারা শরীরে অবসাদ কিন্তু অদ্ভুত একটা তৃপ্তি। এরকম কখনও হয় নি।
বিঃ দ্রঃ মাদক ও ধূমপান স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। এটা হুদাই লেখা একটা ব্লগ। কেউ মাইন্ড খাইয়েন না দয়া করে। আমি কোন কিছু লুকাই নাই। সব ই ফ্রি ভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:২১