somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চার মাযহাব সৃষ্টি হল কিভাবে

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারসীতে একটি প্রবাদ আছে ‘মান তোরা হাজী গো ইয়াম তু মোরা হাজী বোগো’ অর্থাৎ একজন লোক আর একজনকে বলছে, ভাই! যদিও তুমি হাজী নও তথাপি আমি তোমাকে হাজী সাহেব বলছি এবং যদিও আমি হাজী নই তুমি আমাকে হাজী সাহেব বলো। এভাবে একে অপরকেহাজী সাহেব বলে ডাকার ফলে আমরা দু-জনেই হাজী সাহেব হয়ে যাবো। এভাবেই আবু হানীফার অনুসারীদের অথবা তাঁর ফতোয়া মান্যে ওয়ালাদের অন্যেরা হানাফী একইভাবে ইমাম মালেকের ফতোয়া মাননে ওয়ালাদের মালেকী বলে ডাকাডাকির ফলে মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে। আজ যা বিরাট আকার ধারন করেছে। আবু হানীফা (রহ) বা তাঁর শিষ্যরা কখনো বলেননি আমাদের ফতোয়া যারা মানবা তারা নিজেদের পরিচয় হানাফী বলে দিবা। অথবা ইমাম মালেক বা শাফেয়ীও বলে যাননি যে আমার অনুসারীরা নিজেকে মালেকী বা শাফেয়ী বলে পরিচয় দিবা। ইমামরা তো বটেই এমনকি ইমামদের শাগরেদরা কিংবা তাঁর শাগরেদদের শাগরেদরাও মাযহাব সৃষ্টি করতে বলেননি। যখন আমাদের মহামতি ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি এবং করতেও বলেননি তখন উনাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার অধিকার কেন দিল?

হাদীস বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে ইমামদের রায়

মাযহাবীদের মধ্যে কিছু লোক দেখা যায় যারা ইমামদের তাক্কলীদ করে অর্থাৎ অন্ধ অনুসরন করে। তারা ইমামদের বক্তব্যকে আসমানী ওহীর মতো মানে। কোরআন-হাদিস বিরোধী কোনো রায় হলেও তাতে আমল করে। তাই সেই সব লোকদের জন্য হাদীস অনুসরনের ব্যাপারে ইমামদের মতামত এবং তাদের হাদীস বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে তাদের কয়েকটি উক্তি দেওয়া হল। ইনশাল্লাহ্‌! মাযহাবী ভাইয়েরা এ থেকে অনেক উপকারিত হবেন।

আবু হানীফা (রহ)

১) যখন হাদীস সহীহ হবে, তখন সেটাই আমার মাযহাব অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (ইবনুল আবেদীন ১/৬৩; রাসমুল মুফতী ১/৪; ঈক্কামুল মুফতী ৬২ পৃষ্ঠা)

২) কারো জন্য আমাদের কথা মেনে নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে, আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি। (হাশিয়া ইবনুল আবেদীন ২/২৯৩ রাসমুল মুফতী ২৯, ৩২ পৃষ্ঠা, শা’ রানীর মীথান ১/৫৫; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩০৯)

৩) যে ব্যাক্তি আমার দলিল জানে না, তার জন্য আমার উক্তি দ্বারা ফতোয়া দেওয়া হারাম। (আন-নাফিউল কাবীর ১৩৫ পৃষ্ঠা)

৪) আমরা তো মানুষ। আজ এক কথা বলি, আবার কাল তা প্রত্যাহার করে নিই। – (ঐ)

৫) যদি আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহর কিবাব ও রাসুলের (সা) হাদীসের পরিপন্থি, তাহলে আমার কথাকে বর্জন করো। (দেওয়ালে ছুড়ে মারো)। (ঈক্কাবুল হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা)

ইমাম মালেক (রহ)

১) আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কথা ভুল হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব ও সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব ও সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো। (জানেউ বায়ানিল ইলম ২/৩২, উসুলুল আহকাম ৬/১৪৯)

২) রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার কথা ও কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা) ই সমালোচনার উর্ধে। (ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়া – আসসাবকী, ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫ – ১৭৯ পৃষ্ঠা)।

৩) ইবনু ওহাব বলেছেন, আমি ইমাম মালেককের উয়ব মধ্যে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার বিষএ এক প্রশ্ন করতে শুনেছি। তিনি বলেন লোকদের জন্য এটার প্রয়োজন নীই। ইবনু ওহাব বলেন, আমি মানুষ কমে গেলে তাঁকে নিরিবিলে পেয়ে বলি ‘তাতো আমাদের জন্য সুন্নাহ। ইমাম মালেক বলেন, সেটা কি? আমি বললাম, আমরা লাইস বিন সাদ, ইবনু লোহাইআ, আমর বিন হারেস, ইয়াবিদ বিন আমার আল-মা আফেরী, আবু আবদুর রহমান আল হাবালী এবং আল মোস্তাওরাদ বিন শাদ্দাদ আল কোরাশী এই সুত্র পরম্পরা থেকে জানতে পেরেছি যে, শাদ্দাদ আল কোরাশী বলেন, আমি রাসুল (সা) কে কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করতে দেখেছি। ইমাম মালেক বলেন, এটা তো সুন্দর হাদীস। আমি এখন ছাড়া আর কখনো এই হাদীসটি শুনিনি। তারপর যখনই তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই তাঁকে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার আদেশ দিতে আমি শুনেছি। (মোকাদ্দামা আল জারাহ ওয়াত তা দীল- ইবনু হাতেমঃ ৩১- ৩২ পৃষ্ঠা)

ইমাম শাফেরীঃ-

১) হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (মাজমু ১/৬৩; শা’রানী ১/৫৭)

২) আমি যে কথাই বলি না কেন অথবা যে নীতিই প্রনয়ন করি না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট থেকে বর্ণিত (হাদীসের) খিলাপ হয়, তাহলে সে কথাই মান্য, যা রাসুল (সা) বলেছেন। আর সেটাই আমার কথা। (তারীখু দিমাশ্‌ক; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬৬,৩৬৪)

৩) নিজ ছাত্র ইমাম আহমাদকে সম্বোধন করে বলেন) হাদীস ও রিজাল সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো। অতএব হাদীস সহীহ হলে আমাকে জানাও, সে যাই হোক না কেন; কুকী, বাসরী অথবা শামী। তা সহীহ হলে সেটাই আমি আমার মাযহাব (পন্থা) বানিয়া নেবো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠা; হিলয়াহ ৯/১০৬)

৪) আমার পুস্তকে যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহের খেলাপ কে কথা পাও, তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর কথাকেই মেনে নিও এবং আমি যা বলেছি তা বর্জন করো। (নাওয়াবীর মা’জমু ১/৬৩; ইলামূল মুওয়াক্কিঈন ২/৩৬১)

৫) যে কথাই আমি বলি না কেন, তা যদি সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থি হয়, তাহলে নবী (সা) এর হাদীসই অধিক মান্য। সুতরাং তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না। (হাদীস ও সুন্নাহর মুল্যমান ৫৪ পৃষ্ঠা)

৬) নবী (সা) থেকে যে হাদীসই বর্ণিত হয়, সেটাই আমার কথা; যদিও তা আমার নিকট থেকে না শুনে থাকো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৩-৯৪)

ইমাম আহমাদ

১) তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেরীর আর না আওয়ারী ও ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে তোমরা গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন ২/৩০২)

২) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করে, সে ব্যক্তি ধ্বংসোন্মুখ। (ইবনুল জাওযী ১৮২ পৃষ্ঠা)

৩) আওযাঈ; ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানীফার রায় তাদের নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ। আমার কাছে এসবই সমান। তবে দলিল হল আসার অর্থাৎ সাহাবী ও তাবেঈগনের কথা। (ইবনু আবদিল বার-আল-জামে, ২ খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা) ইমামদের এই সকল বক্তব্য জানার পর আমরা বলতে পারি প্রকৃতই যারা ইমামদের ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, মান্য করেন তারা ইমামদের কথা অনুযায়ী চলবেন এবং সহীহ হাদীসকেই নিজের মাযহাব বানাবেন। তাক্কলীদ করবেন না। সরাসরী সেখান থেকে গ্রহন করবেন যেখান থেকে ইমামরা করেছেন অর্থাৎ সরাসরী হাদীস কোরয়ান থেকে। ইমামরা কোনো বিষয়ে ভুল ফতোয়া (সহীহ হাদীস তাঁদের কাছে না পৌছানোর কারনে) দিয়ে থাকলে তা প্রত্যাখ্যান করা এবং সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার ও গ্রহীহ হাদীসের উপর আমল করার তৌফিক দিন। আমীন!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×