somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ধর্মে কি একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে?

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম ধর্মে কি একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে?

আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস যে মুসলিমদের মাঝে অনেক জাতি রয়েছে। যদি তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় এসব জাতিদের পরিচয় সম্পর্কে। তখন তারা বলেন, কেউ শিয়া, কেউ সালাফী, কেউ ওহাবী, কেউ হানাফী, কেউ শাফেয়ী, কেউ মালেকী, কেউ বেরোলভী আরও বিভিন্ন প্রকারের। যদি তাদের প্রশ্ন করা হয়, এই বিভিন্ন জাতিগুলো কি কুরআনকেই একমাত্র ধর্ম গ্রন্থ হিসেবে বিশ্বাস করে? তাদের সকলেই বলেন, হ্যাঁ। তাহলে এখন বড় একটি প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন। আর তা হলো, যদি সকলের ধর্ম গ্রন্থ একই হয়, তাহলে এত জাতি হল কিভাবে? সকলের নাবী তো মুহাম্মাদ (দ.)। তাহলে সকলের কিতাব এক, রসূলও এক কিন্তু জাতি বিভিন্ন!

আশ্চর্য! এ তো গেল সাধারণ মানুষের কথা। যদি আলিমদের জিজ্ঞাসা করা হয় মুসলিমদের মাঝে কি বিভিন্ন জাতি রয়েছে? তখন তারা বলেন, ঠিক জাতি নয় বরং বিভিন্ন মাযহাবের অনুসারী রয়েছে।

আমরা প্রথমেই জেনে নিয়েছি যে, আমাদের মাযহাব ইসলাম। তাহলে কি মুসলিমদের মাঝে বিভিন্ন ইসলাম রয়েছে? তাদের এসব কথা থেকে আমরা দুটি বিষয় জানতে পারলাম, যথা-

১। ইসলাম কয়েক ভাগে বিভক্ত।

২। কুরআন মানুষকে বিভিন্ন জাতিতে ভাগ করে দেয় (যেহেতু সকলের দাবী তারা কুরআন মানছেন)।

অথচ কুরআন এবং হাদিস পড়লে সাধারণ মানুষ এবং অধিকাংশ আলিমের বিরুদ্ধে কথা পাওয়া যায়। যেমন- আল্লাহ বলেন-

“তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (অর্থাৎ কুরআন এবং হাদিস) সকলে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং তোমরা দলে দলে ভাগ হইও না...” -সূরা আলি-ইমরান (৩), ১০৩।

এই আয়াতটি স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করল যে, মুসলিমদের দলে দলে ভাগ হওয়া নিষেধ। এখন যারা বলছেন যে, ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন জাতি বা মাযহাব রয়েছে তাদের দাবী কি কুরআনের কথা অনুযায়ী হয়েছে, না কুরআনের বিরুদ্ধে হয়েছে? অবশ্যই কুরআনের বিরুদ্ধে হয়েছে।

আল্লাহ আমাদের কিছু মানুষকে মেনে চলতে বলেছেন। যদি আমরা তাদের মেনে চলি তাহলে আমাদের প্রতি আল্লাহ খুশি হবেন বলে জানিয়েছেন এবং আমাদের জান্নাত দেয়ার আশাও দিয়েছেন। সেই মানুষগুলোর কথা কুরআনে এভাবে এসেছে-

“মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম সাঁরির এবং যারা খাঁটিভাবে তাঁদের অনুসরণ করবে তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং তারাও তাঁর (আল্লাহর) প্রতি সন্তুষ্ট হবে। তাদের জন্য তিনি প্রস্তুত রেখেছেন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই হল মহা সফলতা।” -সূরা তাওবা (৯), ১০০।

হে মুসলিমগণ, ভাল করে লক্ষ্য করুন, মহান আল্লাহ দুটি শর্তের বিনিময়ে আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং জান্নাত দিবেন বলে জানিয়েছেন। শর্র্ত দুটি হল ঃ

(১) প্রথম মুহাজিরদের খাঁটিভাবে অনুসরণ। অর্থাৎ মাক্কাহ্ থেকে মাদীনায় যারা প্রথমদিকে হিজরত করেছেন তাঁদের খাঁটিভাবে অনুসরণ।

(২) প্রথম আনসারদের খাঁটিভাবে অনুসরণ। অর্থাৎ যারা মাদীনায় প্রথমদিকের মুহাজিরদের সর্বপ্রথম আশ্রয় দিয়েছিলেন।

এই দল দুটিকে মহান আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত মুসলিমদের জন্য মডেল বানিয়েছেন। এখন কথা হল, এই দুটি দলের মানুষেরা কি বিভিন্ন জাতিতে ভাগ হয়েছিলেন বা বিভিন্ন মাযহাব এর অনুসারী ছিলেন? যদি বলা হয়, আবু বকর (রা.), ওমার (রা.), উসমান (রা.), আলী (রা.) তারা কে কোন মাযহাবের অনুসরণ করেছেন? তারা কি হানাফী ছিলেন, শাফেয়ী ছিলেন, মালেকী ছিলেন, হাম্বলী ছিলেন, শিয়া ছিলেন, সালাফী ছিলেন, নাকী আহলে হাদিস ছিলেন? তাদের সকলের মাযহাব ছিল ইসলাম। তারা যদি বিভিন্ন মাযহাবে ভাগ না হয়ে থাকেন তাহলে আমাদেরও বিভিন্ন মাযহাবে ভাগ হওয়া যাবে না। যদি আমরা বিভিন্ন মাযহাবে ভাগ হয়ে যাই তাহলে তো তাঁদের খাঁটিভাবে অনুসরণ করা হল না। যদি তাঁদের খাঁটিভাবে অনুসরণ করা না হয় তাহলে আমাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন না এবং আমরা জান্নাতও পাব না।

আরও একটি বিষয় এখানে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। তা হচ্ছে, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকেও এই দুটি দলের (প্রথম মুহাজির ও আনসার) অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক ছিল। এখন কি মনে প্রশ্ন জাগে না এই দুটি দলের যে মাযহাব ছিল সেই মাযহাবের ইমামের নাম কি? সে উত্তরটি আমাদের সকলের জানা। তিনি হচ্ছেন মুহাম্মাদ (দ.)।

তাই এই দুটি দলের অনুসরণ অনুযায়ী আমাদের মাযহাবের ইমাম মুহাম্মাদ (দ.)। অন্য কেউ নয়। যে ব্যক্তি এই কথার সাথে একমত নন অবশ্যই তিনি মুহাম্মাদ (দ.) কে যথোপযুক্ত সম্মান দেননি। এ সম্পর্কে নাবী (দ.) বলেন-


“যে আমাদের দ্বীনের মাঝে এমন বিষয় উদ্ভাবন করল যা তাতে (শারীআতে) নেই তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।” -বুখারী, অধ্যায় ঃ ৫৩, বিবাদ-মিমাংসা, অনুচ্ছেদ ঃ ৫, অন্যের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে তা বাতিল, হাদিস # ২৬৯৭, মুসলিম, অধ্যায় ঃ ৩০, বিচার-ফায়সালা, অনুচ্ছেদ ঃ ৮, বাতিল সিদ্ধান্ত খণ্ডন ও বিদ’আতী কার্যকলাপ পরিত্যাগ, হাদিস # ১৭,১৮/১৭১৮ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)।

যেহেতু রসূল (দ.) এবং তাঁর স্বহাবীগণ বিভিন্ন দলে দলে ভাগ হননি বরং নিষেধ করেছেন, সেখানে বিভিন্ন মাযহাব তৈরি করা দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কার ছাড়া আর কি? তাই ইসলামকে বিভিন্ন মাযহাবে ভাগ করা হারাম। সাধারণত এক দল আরেক দলকে সহ্য করতে পারে না। কারণ প্রত্যেক দলের অনুসারীর কাছে তার দলের ইমাম অন্যদের থেকে শ্রেষ্ঠ। যেমন- হানাফী মাযহাবের লোকেরা বলে থাকে ইমাম আবু হানীফা অন্য তিন মাযহাবের ইমাম থেকে বেশি জ্ঞানী। আর হাম্বলীরা বলে থাকে তাদের ইমাম বেশী জ্ঞানী। এই ভাবে মুসলিমদের মাঝে মাযহাব সৃষ্টি করে অনৈক্যের বিশাল পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। যদি সকলের মাযহাব এক হতো তাহলে এই ভেদাভেদ আর থাকতো না। একজন আরেকজনের সাথে মাযহাব নিয়ে ঝগড়া লাগার সম্ভাবনা থাকতো না।

হে মুসলিমগণ, আপনাদের সচেতনতা ফিরিয়ে আনার জন্য একটি ইতিহাস পেশ করছি। স্বহাবীদের যুগে আব্দুল্লাহ বিন সাবা নামক এক ইয়াহুদী মুসলিম বেশে সর্বপ্রথম মুসলিমদের মাঝে নতুন দল বানিয়েছিল। আর সেই দলটি ইতিহাসে খারেজী নামে পরিচিত। দেখুন, ইবনে কাছির রচিত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া। মুসলিমদের বিভিন্ন দলে দলে ভাগ করার কাজ ইয়াহুদীদের। কারণ তারা দেখছিল মুসলিমরা যদি এক হয়ে থাকে তাহলে তাদের সাথে পারা যাবে না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ আমাদের বলেন-

“আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর। পরস্পর ঝাগড়া বিবাদ করো না। তা করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে। তোমাদের শক্তি-মতা বিলুপ্ত হবে।” -সূরা আনফাল (৮), ৪৬।

শিক্ষাঃ
(১) আমাদের মাযহাবের ইমাম মুহাম্মাদ (দ.)।
(২) কোন আলিমকে মাযহাবের ইমাম বলে আখ্যায়িত করলে রসূল (দ.) কে ছোট করা হয়।
(৩) নাজাত প্রাপ্তির একমাত্র উপায় প্রথম সারির মুহাজির ও আনসারদের খাঁটিভাবে অনুসরণ।
(৪) দ্বীনকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হারাম।
(৫) প্রচলিত মাযহাবের ইমামগণের জন্যেও বাধ্যতামূলক ছিল প্রথম সারির মুহাজির ও আনসারদের খাঁটিভাবে অনুসরণ করা।
(৬) ইয়াহুদীরা সর্বপ্রথম মুসলিমদের বিভক্ত করেছিল।
(৭) দ্বীনকে বিভক্ত করলে মুসলিমদের শক্তি নষ্ট হয়ে যায়।


=========================================
বইয়ের নাম: আমাদের মাযহাব কি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত?
লেখক ও গবেষক: মুহাম্মাদ ইকবাল বিন ফাখরুল ইসলাম
ডাউনলোড করতে ভিজিট করুন : http://downloadquransoftware.com/


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×