somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রাগকুমারী এবং একটি বৃষ্টিস্নাত সকাল

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ খুলেই বিছানার পাশে থাকা কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই স্বর্গানুভুতি।। হুম সকাল হয়ে গেছে... বৃষ্টি বোধহয় আজ না থামার জন্য নেমেছে। স্বর্গানুভুতি,কারন হৈমর বৃষ্টি ভালো লাগে। হাজার হাজার পানির ফোঁটার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার মজা আছে। আজও হারিয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেতেই পাশে রাখা টেবিল ক্লক এর দিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া। ৬ টা বাজতে চলেছে। গত কয়েকদিন ধরে ফিসিক্স ক্লাসটা ধরতে পারেনি। আজ যদি মিস হয়ে যায় তাহলে সংকটে পরে যাবে হৈম। তড়িঘড়ি করে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিতে নিতেই মনে পড়ল প্রতিদিনের মতো কাল রাতেও আবার অর্ক কে বকাবকি করেছে দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার জন্য। স্বৈরাচারী প্রেমিকার কাছে বরাবরের মতই হার মেনে অর্ক বলেছে "তুমি যখন উঠবে তখন ফোন কোরো, আমি উঠে যাবো, আর তোমাকে কিছু কথা বলার আছে"। শুনতে চাইলে অর্ক তখনই বলতে বাধ্য ছিল কিন্তু হৈম আর জোরাজুরি করেনি।

বাইরে তখনো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। রেইনকোট টা পরে নিয়ে হাতে একটা ছাতা নিয়েই হৈম ছুটলো। ফোন নিয়েই অর্কর নাম্বার ডায়াল...ফোন বেজেই চলেছে ,ওপাশ থেকে সেই প্রিয় কণ্ঠ কিছুই বলছে না।একবার,দুবার...তিনবার এর বেলায় "দুঃখিত এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না"।অর্ক ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। রাগের এক সুক্ষানুভুতি হৈমর স্পাইনাল কর্ড দিয়ে নেমে গেলো। অনেকটা রগচটে হৈম।অর্ক তাই আদর করে হৈমকে 'রাগকুমারী' বলে ডাকে। 'রাগকুমারী' শুনলে হৈমর রাগ আরও বেড়ে যায়। তবে শান্ত হলে বরাবরের মতই হেসে দেয়।নিজেকে সামলে নিয়ে হাঁটা চালিয়ে যায় হৈম।পুরো রাস্তা ফাঁকা।মাঝে মাঝেই আকাশে বিদ্যুৎ এর ঝলকানি চোখে পরছে। আজ সব কিছুই কেমন যেন নিরব।ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে তবুও। হৈমর মনে পড়ে এরকমই বৃষ্টির দিনে অর্কর হাত ধরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কথা।পরক্ষনেই অদ্ভুত অভিমানে মন বিষিয়ে ওঠে।আবার অজানা ভয়ও জেগে ওঠে।কেন অর্ক মোবাইল বন্ধ করে দিলো।

অর্ক বরাবরই অগোছালো। বয়ঃসন্ধি থেকেই সিগারেটের নেশায় প্রচণ্ড ভাবে মত্ত বাউন্ডুলে এক ছেলে। ৪ বছর প্রেম এর প্রায় পুরো সময়টাই হৈমর কেটেছে তাকে গুছিয়ে নিতে। তার ছেলে মানুষী গুলোকে শুধরে নিতে গিয়ে। কখনো লম্বা অগোছালো চুল গুলো কাটতে বলে,কখনো ধূমপান ত্যাগ করতে বলে। এসবের জন্য অর্ক খুব অভিমান করতো,রাগ করতো কিন্তু সেটা কেবল ভান ছিলো। সুবোধ বালকের মত হৈমের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো। কখনও বা ভুলে যেত, তখনই কেবল যুদ্ধ বাঁধতো!

প্রথম দিকে তার নোংরা বিছানার চাদর,এলোমেলো বই, না গুছিয়ে রাখা কাঁথা,ঘরময় সিগারেটের উটকো গন্ধ,এখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা ছাই সব মিলিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসতো হৈমর। এখন সব কিছুই মানিয়ে গেছে। হয়তো অর্কর এই ছেলেমানুষীই বাধ্য করেছে ভালবাসা আরও গভীর করতে। অর্কর বিদঘুটে মেসে নাক চেপেই যায় হৈম। ক্লাস পালিয়ে খিচুড়ী রেঁধে দিয়ে আসে। অর্ক খিচুড়ী খুব পছন্দ করে।অর্ক মনে হয় ইচ্ছা করেই হৈমর কথার উল্টো চলে, ভালোবাসা পাবার লোভও হতে পারে। হৈম ব্যাপারটা বুঝে। কখনও কপোট রাগ কখনও সত্যি সত্যি রাগ করে। দৈনন্দিন ঝগড়ার বেশীরভাগ অংশতেই থাকে অর্কের সিগারেট খাওয়া অভ্যাস।

-আজ সিগারেট কয়টা খেয়েছো?
-গুনিনি।
-কেন খেয়েছো?
-জানিনা।
-তোমাকে না খেতে মানা করেছি!
-হুম করেছো।
-তবুও খেয়েছো?যা তুই জাহান্নামে যেয়ে মর ,আমার কি? আমি কে?সিগারেট জীবনের চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছে তাই না?যত্তসব! হৈমর রাগ ঊর্ধ্বমুখী। চুপ মেরে থাকে সে। হঠাৎ হো হো করে হেসে ওঠে অর্ক। হাত টা টেনে ধরে বলে "এই রাগকুমারী এই,আজ ৫ টা খেয়েছি, কালকের চেয়ে দুটো কম। কমিয়ে দিচ্ছি বলছি না তোমাকে"। বাউন্ডুলে প্রেমিকের নির্লজ্জ স্বীকারোক্তিতে হেসে দেয় হৈম।

গত ৪ বছরে বহুবার ছাড়াছাড়ি হয়েছে,একবার রাগারাগি করে প্রান ও দিতে বসেছিলো অর্ক। হৈম বুঝেনি অর্কের মত এরকম ভাবেলশহীন একটা ছেলে তার জন্য আত্নহত্যা করতে পারে। সেদিন বোধহয় হৈম ভালোবাসার আরও গভীরে চলে গিয়েছিলো। তাই শেষ পর্যন্ত কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারেনি।কিন্তু আজ অর্ক সত্যিই মৃত্যু পথযাত্রী। কিমো চলছে ১ বছর ধরে ফুসফুস এর ক্যানসার এর জন্য।সম্ভাব্য সবকিছুই হতে পারে।একটু কি সিগারেটটা না খেলে হতোনা।স্বৈরাচারী প্রেমিকার এই ইচ্ছেটি মেনে নিলে কিই বা ক্ষতি হতো।অজান্তেই গাল বেয়ে নেমে বৃষ্টির ফোঁটার সাথে মিশে যায় হৈমর চোখের জল। মাঝে মাঝে হৈমর ভীষন রাগ উঠে, ভাবে যদি অর্কের সিগারেট শুরু করার সময়ে তার সাথে পরিচয় থাকতো তবে থাপ্পড় দিয়ে সিগারেট খাওয়া ছুটিয়ে দিতো।সে যে অর্ক কে বড্ড বেশি ভালোবাসে। তাকে হারানোর এক অজানা ভয় যেন ভিতরটা শূন্যতায় ভরিয়ে দেয়।

নাহ আজ আবারও ক্লাস মিস। হেঁটে পৌঁছানো সম্ভব না। হৈম বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ভাবে। অর্কর উপর রাগ হয়। ফোনটা বন্ধ না করলেই কি হতো না। হঠাৎ পিছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করে।হ্যাঁ অর্ক। বৃষ্টি তে ভিজে কাক হয়ে হাতে সদ্য ফুটন্ত লাল গোলাপ নিয়ে। হৈম অবাক হয় এবং ভীষন খুশী হয়। কিন্তু তাকে এই মুহুর্তে রাগ দেখাতে হবে, ফোন বন্ধ করে রাখার রাগ। কিন্তু হৈম কিছু বলার আগেই ,অর্ক তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, হৈম তোর মনে আছে?? কাল রাতে বলেছিলাম তোকে কিছু বলবো...ডাক্তার বলেছে আমি সেরে গেছি । খুব অদ্ভুত! অর্ক অনেক আবেগের সময় হৈমকে তুই তোকারি করে,কতই না মানুষের আবেগের ভাষা। অর্ক আবার শুরু করে “হৈম...সেরে গেছি পুরো জীবনের জন্য, তোর কাছে থাকার জন্য। হৈম চুপ করে থাকে কিছুই বলে না! ভাষাহীন মানুষ বলতে পারে না,কাঁদতে পারে। বৃষ্টির জল মিশে যাচ্ছে চোখের জলে, অর্ক কি আলাদা করতে পারছে দুটো জল?
অর্ক খুশিতে চিৎকার করে লাফাতে থাকে! হৈম হেসে দেয়। বৃষ্টির পানি জমে পা ভিজে গেছে। সকাল টা বৃষ্টিতে ভিজেই গেলো শেষ পর্যন্ত।হাত ধরে ছলাৎ ছলাৎ শব্দে দুজন চলে যায় উদ্দেশ্যহীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮
১৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×