somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন পুরুষের জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য আবিস্কার- আর ভালোবাসার সাথে তার সম্পর্ক

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সমাজ, সংস্কার বা ট্রেডিশনাল জ্ঞান যাই বলি না কেন, আমরা এটাই শিখেছি যে নারী সবসময় একজন পুরুষ মানুষের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি দখল করতে চেয়েছে। এর সাথে শতকরা ১০০ জন লোকই একমত হবেন কোন সন্দেহ নেই। অথচ প্রায়ই দেখা যায় যে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে এমন কোন ছেলেকে ভালো না বেসে বরং অন্য আরেকটি ছেলেকেই একটি মেয়ে ভালোবাসছে যে তাকে তেমনটা পাত্তাও দেয় না। কেন হয় এমন? কখনো কি ভেবে দেখেছি আমরা? একবারও কি এর অন্তর্নিহিত কোন অর্থ খুঁজতে চেয়েছি?

না, বরং প্রচলিত জ্ঞানের বাইরে কিছু হলেই আমরা পুরুষেরা দোষ দিয়েছি নারীকে আর নারী বলেছে যে সব পুরুষ এক। এটা মূলত নিজস্ব সত্যকে চ্যালেঞ্জ করবার ভয় হতে তৈরি ইগো ডিফেন্স মেকানিসম এর একটি উদাহরণ। মানুষ যখনই কোন একটা বিষয় সমাধান না করতে পেরে বাহ্যিক কোন ব্যপারকে দোষারোপ করা আরম্ভ করে তখনই বুঝতে হবে যে তার কাছে থাকা সমাধাণটি সে দেখতে চাইছে না। সাইকোলজি তে একে বলা হয় Denial.

যাই হোক, নারী পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে লেখা আজকের পর্বে আমি মূলত একজন পুরুষের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি হওয়া উচিৎ সেটা নিয়েই অনুসন্ধান করবার চেষ্টা করেছি।

নারী সবসময় চেয়েছে একজন পুরুষের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ স্থানটি দখল করতে, অন্তত আমরা তাই জানি। অথচ প্রায় প্রতিটা ছেলের জীবনেই হয়ত এমন সময় অন্তত একবার এসেছে যে সে তার নিজের প্রায় সবটা কোন একটা মেয়ের জন্য বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিল কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, মেয়েটি চলে গেছে অন্য কারোর সাথে, হয়ত এমন কারোর সাথে যে মেয়েটিকে কখনোই অতটুকু প্রাধান্য দেয়নি যতটুকু এই ছেলেটি দিয়েছিল। কেন এমনটা হয়? শতকরা ৯৯ ভাগ পুরুষ সচেতন অথবা অবচেতনভাবে নারীকেই দোষারোপ করবে। আর নাহ, আমিও সেই ১ ভাগের মধ্যে পড়িনা বরং আমিও একসময় প্রায় পুরোটা দোষই সার্বিকভাবে নারীকেই দিয়েছি। তবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি এ কারণে যে, নিজস্ব বিশ্বাসগুলোকে এক পর্যায়ে আমি চ্যালেঞ্জ করতে শিখি। আর তার পরেই নিজের ভুলগুলো দেখতে শুরু করি আমি।

ভুল - জীবনে ব্যক্তিগত মিশনের চাইতেও নারীকে অধিক গুরুত্ব দেয়া।

আপাত দৃষ্টিতে এমনটাই মনে হয় যে জীবনে নারীকে সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ স্থানটি দিলেই না সে সবচাইতে খুশি হবে এবং আমাকে সম্মান করবে এবং ভালোবাসবে। অথচ এরকম হলে অবচেতনে মেয়েরা এটাই ধরে নেয় যে, এই পুরুষটির জীবনের সুখ পুরোটাই তার ওপর নির্ভরশীল এবং পুরুষটির জীবনে নিজেকে আধ্যাত্মিক পূর্নতা দেবার প্রাধান্য তার থেকে কম, যেটা একজন পুরুষ মানুষের নারীর কাছে আকর্ষনীয়তার অন্যতম বড় একটা কারণ। অবচেতনে প্রতিটি মেয়েই চায় এমন পুরুষ যে নিজের জীবনের উদ্দেশ্যকে সফল করবার জন্যই বেঁচে থাকে, যার জীবনে ব্যক্তিগত মিশনই সবথেকে বড়, জীবনকে অর্থপূর্ণ করবার পথে যে গভীরভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছে, সেই না পারবে একটি মেয়েকে শর্তহীন ভাবে ভালোবাসতে। আর সম্পর্কের Irony টাই এখানে যে, মেয়েরা বেশিরভাগ সময় এই সত্যটা স্বীকার করবে না যে একজন পুরুষের সর্বোচ্চ ঊদ্দেশ্য যখন তার জীবনের যে কোন সম্পর্কের উর্ধে অবস্থান করে তখন তার আকর্ষণিয়তা স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়। আর প্রথম প্রেম এ কারনেই হয়ত অধিকাংশ সময় সফল হবার নয়।

“Every man knows that his highest purpose in life cannot be reduced to any particular relationship. If a man prioritizes his relationship over his highest purpose, he weakens himself, disserves the universe, and cheats his woman of an authentic man who can offer his full, undivided presence.”

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া একজন যোদ্ধার কথাই ধরুন- যুদ্ধ চলছে, তাকে এখন দেশ মাতৃকার সেবায় না গেলেই নয়। সে তার স্ত্রীকে শেষবারের মত বিদায় জানায়, স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে তাকে না যাওয়ার অনুরোধ করে। স্ত্রীর চোখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে সে জানায় যে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তুমি জানো যে আমাকে যেতেই হবে,” স্ত্রী মাথা নাড়ায় আর মুক্তিযোদ্ধাটি পিছন ফিরে চলতে শুরু করে।
তার স্ত্রী তার দিকে তাকিয়ে থাকে তাকে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায়, একইসাথে কষ্ট, অভিমান আর অহংকারের এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে।

উপরোক্ত দৃশ্যপট নাটকীয়তায় ভরা হলেও এর থেকে কিন্তু মৌলিক একটি তত্ত্ব বের হয়ে আসে। যদিও নারী চায় একজন পুরুষের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি দখল করতে কিন্তু সে মূলত তখনই তার জীবনের পুরুষকে অধিক বিশ্বাস এবং ভালোবাসতে পারে যখন তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান পায় পুরুষটির জীবন-দর্শন এবং তার সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য।

একজন পুরুষের জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যই হওয়া উচিৎ তার সবথেকে বড় প্রাধান্য, তার ভালবাসা নয়। আর নারী এটা জানে, তার অবচেতনের গভীরে সে এটা অনুভব করে এবং এমনটাই আশা করে তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে। উপরের দৃশ্যপটের মুক্তিযোদ্ধার কথাই চিন্তা করুন, স্ত্রীর আকুল আবেদনের পর হটাত করে যদি সে বলতো যে সে আর যুদ্ধে যাবে না বলে ঠিক করেছে, তার কাছে মানবতার স্বাধীনতার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ তার স্ত্রী। সাথে সাথে মেয়েটির মনের একটা অংশ খুশি হলেও তার আরো গভীর একটা অংশ এতে এক ধরণের শুন্যতা অনভব করতো, তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে তার অহংকার আঘাতপ্রাপ্ত হতো, আর অবচেতনে তার স্বামীর প্রতি তার সম্মান কমে যেত।

যে কোন পুরুষের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু যদি হয়ে থাকে কোন নারী, তাহলে ধরে নিতে হবে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। অথচ মানবজাতিকে তার একটি উপহার দেবার আছে, নিজস্ব একটি উদ্দেশ্যকে পূর্নতা দেবার আছে। হৃদয়ের গভীরে প্রবাহিত একটি পালস যা আপনাকে পুরো জীবন পথ দেখিয়েছে, অবচেতনের এই স্পন্দনটিকে যখন আপনি আর অনুভব করতে পারবেন না, তখনই নিজের ব্যপারে আপনার মাঝে অস্পষটতা দেখা দেবে। জীবনে আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন ঠিকই, কিন্তু সেটা আপনার সর্বোচ্চ কোন উদ্দেশ্যকে পূর্নতা দেবার জন্য নয়, বরং শুধু সিদ্ধান্ত নেবার জন্যই। আপনার সুন্দরতম দর্শনগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসবে আপনার ব্যক্তিত্ব থেকে। হয়ত জীবনের নারীটিকে খুশি করাটাই তখন হয়ে উঠবে আপনার সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য, কিন্তু এর ফলাফল হবে সবার জন্যই খারাপ।
একটি সুখী এবং সাধারণ জীবনের প্রলোভন আমাদের সেই ছেলেবেলা থেকে শেখানো হয়েছে, আর এজন্য এই অদৃশ্য শিকল ভেঙ্গে মানবজাতির জন্য নিজের ভেতরের উপহারটা বের করে আনতে পারা সবসময়ই কঠিন। নিজস্ব সত্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে বন্ধুবান্ধব, ভালোবাসা, জাঁকজমক এবং বিলাসিতার জীবনেও তাই অনেকেই পূর্নতা খুজে পায় না, সে জানেও না যে সে কি খুজে বেড়াচ্ছে।

যখনই আমরা আমাদের জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য থেকে সরে যাই, আমাদের চারপাশের মানুষেরা সেটা বুঝতে পারে। এসময় সন্তানেরা তার পিতার কতৃত্বকে প্রশ্ন করে, কর্মক্ষেত্রে কলিগেরা জোড়পুর্বক সুবিধা আদায় করে, বন্ধুদের আচরণ বদলে যায় অথবা প্রেমিকা সম্পূর্ণভাবে ভালোবাসতে এবং সম্মান করতে অক্ষম হয়।

আপাতদৃষ্টিতে সে জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হতে চাইলেও একটা মেয়ের চাওয়া আসলে ভিন্ন, সে বরং চায় যে আপনি আমি আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দুটির ব্যপারে জানি, নিজেদের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য আবিস্কার করি, তখনই সে একটি পুরুষকে সম্মান করতে পারবে। এমনকি তাকে ছেড়ে যেতে হলেও সে একজন পুরুষকে ভালোবাসবে আর সম্মান করবে, যদি পুরুষটির মিশন এবং উদ্দেশ্য সত্যিকারের থাকে।

এ কারনেই জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য আবিস্কার করাটাই হওয়া উচিৎ একজন পুরুষের জীবনের প্রাধান্য, কারণ শুধুমাত্র তখনই তার প্রতিটি পদক্ষেপ সে তার মিশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিতে সফল হয় আর ফলাফল হিসাবে তার ব্যক্তিত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা হয় সন্দেহাতীত। এমনকি তার নেয়া প্রতিটি সিদ্ধান্তের সাথে একমত না হলেও তখন তার জীবনের নারী তাকে সম্মান করবে এবং বীরত্বের সাথে নিজস্ব সত্যের দিকে তার এগিয়ে যাওয়াকে ভালোবাসতে বাধ্য হবে। সে জানে যে আপনার জীবনের মূল উদ্দেশ্য কোন কিছুর বিনিময়েই আপোষ করা সম্ভব নয়, আপনার নির্ভীক চিত্তের কতৃত্বের ওপর তাই তার ভরসা এখন অসীম।

আমার অন্যতম প্রিয় লেখক ডেভিড ডেইডার আরেকটি কথা দিয়েই আজকে শেষ করছি-

“If you don’t know your purpose, discover it, now. The core of your life is your purpose. Everything in your life, from your diet to your career, must be aligned with your purpose if you are to act with coherence and integrity in the world. If you know your purpose, your deepest desire, then the secret of success is to discipline your life so that you support your deepest purpose and minimize distractions and detours.”[/si

https://www.facebook.com/DoctorXBD
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:৩৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×