মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি (ক) ও চেতনা যারা ঘোষণা দিয়ে ধারন করেন (খ) সেই অমি রহমান পিয়াল, কৌশিক, হাসান মোরশেদ আর সুমন চৌধুরীরা ঠিক করলেন একজন অন্যজনকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাবেন৷ যেইভাবা সেই কাজ৷ ঠিক হলো প্রতিদিন কাজ শেষে তিনজন ঘটা করে একে অন্যের বৈঠকখানায় মিলিত হবে (গ)৷
খুব জোশের সাথে প্রথম তিনদিন একে অন্যকে গল্প শুনায়, একজন আরেকজনের পিঠে সাবাশ দেয়৷ তুখোড় তুখোড়৷ কখনো টেবিল ভেঙ্গে ফেলতে যায় থাপ্পর মেরে (ঘ)৷ শুরুর উততেজনা থিতিয়ে আসে চতুর্থ দিনে৷
হঠাত্ চারজনে বুঝতে শুরু করলেন যে গল্প, যে ঘটনাই তারা বলেন, বাকিরা সেইটা জানে৷ প্রথম প্রথম 'ইতোমধ্যেই জানা' এই মনোভাব কৌশলে লুকিয়ে খুব আগ্রহ ধরে রাখা মুখে শুনে যেত বাকি দুইজন৷ কিন্তু একসময়ে সেটা আর হয়ে ওঠে না৷ সপ্তম দিনে তাদের হঠাত্ গল্প ফুরিয়ে যায়৷ চারজনের বগলে বয়ে আনা মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভ থেকে যে গল্পটা টেনে বলতে যায় , বাকি তিনজন এমন একটা নিরাসক্ত ভাব করেন, যাতে গল্প বলিয়ের বুঝতে বাকি থাকে না, এ গল্প তিনজনেরই জানা৷
সেই বৈঠকখানায় চারজনের এখনো যাতায়াত হয় কি না জানি না৷ যদি হয়ও, এটা বুঝি ইদানিং তারা চায়ে ডুবিয়ে শুকনো টোস্ট সহযোগে, সোফায় বসে ভারতের ক্রিকেট খেলা দেখে থাকেন৷ আগ্রহী ও যুতসই শ্রোতার অভাবে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা তারা থামিয়ে দিয়েছেন৷
দুই। গল্প শোনা যার বেশি জরুরী।।
উপরের গল্পের পেছনের মজমাটা এইবার বলি৷ এর আগেও অনেকভাবে বলার চেষ্টা করছি৷ পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট চেষ্টা ছিলো প্রতিবার৷ এইবারও দূর্বল প্রচেষ্টা৷ তবু আরেকবার চেষ্টা করা আর কি৷
আমার পয়েন্ট এই:
এই ব্লগে যারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার ডেফিসিয়েন্সি রোগে আক্রান্ত এবং একই সাথে ধর্ম রাজনীতি বায়াসে আক্রান্ত, তারাই সবচে বেশি মুক্তিযুদ্ধের পোস্টের যুতসই পাঠক৷ তাদেরকে "ফুট্" বইলা খ্যাদানোটা তাই সমর্থন করি না৷
কারন তাদের ভিতরেই মুক্তিযুদ্ধের আসল চিত্র তুলে ধরাই বেশি জরুরী৷ নাইলে বাইতুল মোকাররম থেকে তারা বগলে করে গো. আজম আর নিজামী বাড়ি নিয়ে পড়তেই থাকবে, পড়তেই থাকবে আর পড়তেই থাকবে। তাদের অপকর্ম আর দ্বিমুখো সুবিধাবাদী চরিত্র আর জানা হবে না। অমি রহমান পিয়াল, আড্ডাবাজ, হাসান মোরশেদ, হযবরল, আরিফ জেবতিকের ব্লগে তাদের বিচরনটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।
তিন। পোলারাইজেশন।।
এক্সট্রিমিজম নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের পর্যবেক্ষন হইলো, যেকোন বিতর্ক ও তর্কে যারা অন্যমতের, এমনকি ভুল মতের অধিকারী তাদের ভিন্ন মতের প্লাটফর্মে অংশগ্রহন ও ইন্টিগ্রেশন করাটাই - ভুল মত ও পথ থেকে সঠিক পথে ফিরায়ে নিয়ে আসার সবচেয়ে কার্যকর পন্থা৷ এর উল্টাটা: "থাকলে এমনেই থাকতে হবে, নইলে ফুট্" - আপাতত পলিটিক্যালি কারেক্ট মনে হইলেও সেইটা আরো ডীপ ও এক্সিট্রিম কোন ফোরামে তাদের জড়ো হইতে উসকানী দেয়৷ ফলাফল হয় আরো বায়াসনেস, আরো এক্সট্রিম পোলারাইজেশন।
চার। তাহলে ব্লগে গো. আজম, নিজামী লিটারেচার, ছবির প্রতিকার কি??
সভ্য প্রতিকারের সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হবে আরো বেশি করে তাদের মুখোশ উন্মোচন৷ যাদের পপুলার ভোটে নব্য রাজাকার ডাকা হয়, তাদের নতুন শত্রু হিসাবে না দেখে পটেনশিয়াল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারনকারী দেখাটা একটা কার্যকর বিকল্প পন্থা৷ কারন বেশিরভাগের ব্রেইনওয়াশই খুব মার্জিনাল৷
আসল ইতিহাস, সঠিকভাবে তুলে ধরলে এদের সিংহভাগের ভিতরেই বায়াসনেস কাটানো সম্ভব মনে করি৷
এর জন্য চ বগীয় গালাগালি আর নারী পুরুষ নির্বিশেষে নব্য রাজাকারদের ধর্ষনের অবদমিত ইচ্ছার বমিকরন (পোস্টে পোস্ট) কোন রকম সমাধান হইতে পারে না৷ তাতে ব্লগটার সামগ্রিক পরিবেশটাই বারোটা বাজছে৷
.................................
টীকা
ক) এইটাও এখন পলিটিক্যাল টার্ম, কি যন্ত্রনা!
খ) ঘোষনার কথা বলতে হইলো কারন দেশটা যদি অদ্ভুত উটের পিঠে না চলা দেশ হইতো তাইলে প্রত্যেকেরই জন্মযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করার কথা ছিলো৷
গ) এখানে মিলন শব্দটি সঙ্গম অর্থে নয়, আলাপ আলোচনার নিমির্তে একত্র হ্ওয়া বুঝাইতে৷ এই ক্লারিফিকেশনের কারন আর কিছু না, ব্লগে অনেকে বেশ বুঝেন তাই৷ যেমন ভাসমান শব্দটায় কেউ কেউ পতিতা বুঝেন৷
ঘ) কথাটা নজরুলের থেকে ধার করা৷
..............................................
ডিসক্লেইমার: এই পোস্টরে গো. আজম, জামাতী বা নিজামী গ্রুপের ডিফেন্ডার পোস্ট হিসাবে না দেখে, দেখার দৃষ্টিটা আরেকটু প্রসারিত করতে পারেন৷ টানেল ভিশন একটা বাস্তাবিক চক্ষু রোগ হইলেও, যেখানে রোগী খুব অল্প টানেলের মতো ফোকাসে দেখতে পায়, দেখার বিস্তার অনেক কমে যায়; সেই 'টানেল ভিশন' রূপক অর্থে একটা দৃষ্টিভঙ্গি সম্পকিত সমস্যাও বটে৷ প্রার্থনা করি আপনার চিন্তা ও ভাবনার সম্ভাবনাটা টানেল ভিশনে আক্রান্ত না হয়।
- মাইক্রোফ্র্যাব্রিকেশন ল্যাব,
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিংগাপুর, সিংহপুর।