somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচার দাবি করছি....

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





২৩ জানুয়ারি সোমবার। রাত সাড়ে ৮টার দিকে দেশ টিভির চট্‌গ্রাম অফিস থেকে ফোন করলেন সাংবাদিক সৈয়দ আলমগীর সবুজ। তিনি বললেন, 'কাপ্তাইয়ের বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে (বিএসপিআই) ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ হয়েছে। আমি শুনেছি পুলিশের গুলিতে একজন ছাত্র মারা গেছে। আপনি একটু খবর নিয়ে দেখুন। আমার সঠিক তথ্য দরকার।'
বিএসপিআইতে আমি পাঁচ বছর শিক্ষকতা করেছি। ওখানকার নাড়ি-নক্ষত্র আমার চেনা। শিক্ষার্থীদের আচরণগত প্রবণতার সাথেও আমি মোটামুটি পরিচিত। লেখাপড়ার মান বিবেচনায় দেশসেরা পলিটেকনিক হিসেবে এটির পরিচিতি রয়েছে। তবু মাঝেমাঝে সেখানে নানাবিধ সমস্যা হয়। ২০০৯ সালে একবার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাথা ফেটে গিয়েছিল। কিন্তু তবু গোলাগুলির মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর ছাত্র নিহত হওয়া? বিএসপিআই-এর ৩৯ বছরের ইতিহাসে কখনো এমন ভয়ানক কাণ্ড সংঘটিত হয়নি। আলমগীর সবুজের ফোন পেয়ে আমার মনে হলো- অভূতপূর্ব কোনো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে বিএসপিআইতে। বিএসপিআইতে কর্মরত কয়েকজন শিক্ষককে ফোন করলাম। তাঁরা বললেন, মারাত্মক আহত একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনা যা জানা গেল তা এরকম- বিএসপিআই-এর এক শিক্ষার্থীর বন্ধু বেড়াতে এসেছে কাপ্তাইয়ে। সে অন্য এক শিক্ষার্থীকে পেছনে বসিয়ে মোটর সাইকেল চালাচ্ছিল বেপরোয়া গতিতে। কারো মাথায় হেলমেট ছিল না। পার্শ্ববর্তী নতুনবাজারে অবস্থানরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক তাদের পাকড়াও করে ভ্রাম্যমান আদালত বসালেন। জেল-জরিমানা করলেন। কান ধরে উঠ-বসের নির্দেশ দিলেন। খবর পৌঁছে গেল মাত্র ২শ গজ দূরের বিএসপিআইতে। ছাত্ররা এসে ভ্রাম্যমান আদালতকে ঘেরাও করে রাখল। পুলিশ গুলি চালালো। লাগল এক ছাত্রের মাথায়। তার নাম সৈয়দ কায়সার রায়হান। নির্মাণ কৌশল বিভাগের তৃতীয় পর্বের ছাত্র।
একজন শিক্ষক বললেন, ‘গুলি লেগে ছেলেটার মগজ বেরিয়ে গিয়েছিল। রক্তে ভিজে গিয়েছিল রাজপথ।’ তারই বিভাগের অতিথি শিক্ষক রাকিব চৌধুরী কাঁদছিলেন। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন, ‘আজই ১১টায় ওদের ক্লাস নিয়েছি। কায়সার প্রতিদিন সময়মতো ক্লাসে আসে। কিন্তু আজ দেরীতে এসেছিল। এতক্ষণে বোধহয় কায়সার আর নেই।’ রাকিব আর কিছু বলতে পারলেন না। রাত পৌনে নয়টায় আলমগীর সবুজই ফোন করে জানিয়ে দিলেন কায়সার মারা গেছে।
প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল কায়সারের। তার পরিবারও একই স্বপ্ন দেখেছিল। সীতাকুণ্ডের কুমিরা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ পাঁচ পেয়ে এসএসসি পাস করার পর স্বপ্নপূরণে ভর্তি হলো বিএসপিআইতে। কোনো শিক্ষক নেই জেনেও ভর্তি হলো নির্মাণ কৌশলে। লক্ষ্য তার এতটাই অটুট ছিল। পরদিন ২৪ জানুয়ারি হাটহাজারি উপজেলার কুয়াইশ বুড়িশ্চর ইউনিয়নের বথুয়ায় গ্রামের বাড়িতে কায়সারের জানাজা হলো। দাফন হলো। সহপাঠী, শিক্ষক, স্বজন, এলাকাবাসীর কান্নায় ভারী হয়ে গিয়েছিল পরিবেশ। কায়সারের বাবা আবদুল মান্নান সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন ভাগ্যাহত হয়ে। তিনি বুক চাপড়ে বলছিলেন, ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। আর আজ আমার স্বপ্নের দাফন হলো। কায়সারের মা মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন বারবার।
কী দোষ ছিল কায়সারের? এই প্রশ্ন বড়ভাই সায়েম সাইদের। বিএসপিআই-এর প্রাক্তন ছাত্র জয়দীপ রুদ্রের প্রশ্ন- বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানোর শাস্তি কি মৃত্যু?
এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?
ছাত্ররা আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু সে আইন প্রয়োগের কৌশল সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের আরও সচেতন ও দূরদর্শী হওয়া প্রয়োজন। কলেজের পাশে কলেজছাত্রকে জেল-জরিমানা করাই যায়। কিন্তু কান ধরে উঠ-বস? এসব শাস্তির প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে- না ভেবেই রায় দিয়ে দিলেন নির্বাহী কর্মকর্তা? এতটা অদূরদর্শী তিনি? তাছাড়া কান ধরিয়ে ছাত্রদের আত্মসম্মানবোধে আঘাত করা- এটা কোন অপরাধের শাস্তি? কোন আইনে আছে এটা?
ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিবেচনা করে বলা যায়- এটা তুচ্ছ ঘটনার ভয়ঙ্কর পরিণতি। একটু সচেতন হলে এই মৃত্যু এড়ানো যেত। কিন্ত এড়ানো যায়নি।
আমরা তাই কায়সারকে হারালাম।
তোমার আত্মার শান্তি কামনা করছি কায়সার।
আমরা কায়সার হত্যার বিচার দাবি করছি। শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি


বি:দ্র:ফেবু থেকে নেয়া..
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×