গরুঃ ভারত-বাংলাদেশ- কার লাভ
কার ক্ষতি?
কিভাবে পরিচালিত হয় এই লক্ষ
কোটি টাকার ব্যাবসা?
================================
খবরঃ "বাংলাদেশের মানুষ যাতে
ভারতীয় গরুর গোশত খেতে না পারে
সেজন্য ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রাজনাথ সিং বিএসএফকে নজরদারি
বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন।"
এই নিয়ে বাংলাদেশের ম্যাস
মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিকস ও স্যোসাল
মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতৃকিয়া দেখা
যাচ্ছে। সংক্ষেপে দেখে নেই।
ভারত থেকে দুইভাবে বাংলাদেশে
গরু আসেঃ
১) বৈধ ভাবে (আমদানী নীতি অনুসরণ
করে)
২) অবৈধ ভাবে (চোরাচালানির
মাধ্যমে)
আসলে ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু
শুধু বাংলাদেশে আসে না। চায়না,
মায়ানমার ও ভুটানেও যায়।
চায়নাতে বিপুর পরিমানে ভারতীয়
গরু যায় যা চায়না আধুনিক স্লটার
হাউস ও প্রোসেসিং সেন্টারের
মাধ্যমে রপ্তানি করে বিপুল পরিমান
হার্ড কারেন্সি আয় করে।
বাংলাদেশের বেঙ্গল মিট সহ বেশ
কয়েকটি আধুনিক প্রোসেসিং
হাউসের মাধ্যমে 'হালাল গোমাংস'
মধ্যপ্রাচ্য সহ ইউরোপের বিভিন্য
দেশে রপ্তানি করে হার্ড কারেন্সি
দেশে আনছে। ধীরে ধীরে এর
জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।
ভারত থেকে বাংলাদেশে
বৈধভাবে আমদানী হয় ২% আর বাকি
৯৮% আসে অবৈধভাবে। মুলতঃ
কোরবানীর আগে বৈধভাবে
আমদানি হয় আর সারা বছরই যা গরু
আসে তা অবৈধভাবে। অবৈধভাবে
দুই ধরনের গরু আসেঃ ১) পরিনত বা খাওয়ার যোগ্য (৬০%) ২) অপরিনত বা বাছুর (৬-৮ মাস বয়সী) ৪০%।
বড় গরুগুলো চলে যায় মেট্রোপলিটন শহর সহ
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আর বাছুরগুলো
যায় বিভিন্য খামার ও গৃহস্তের
বাড়িতে।
কিভাবে আসে এই অবৈধ গরু?
সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া
দেওয়ার আগে বিএসএফ ও
বিডিয়ারকে ফাঁকি দিয়েই
অধিকাংশ গরু আসতো। কাঁটা তারের
বেড়া দেওয়ার পর বিএসএফ ও
বিডিয়ার এর যৌথ সহযোগিতায়
বাংলাদেশে গরু আসে। আসলে ভারত
ও বাংলাদেশের উভয় সরকারের মৌন
সম্মতি চলে এই গরু চোরাচালান। আর
এই সুজুগে বিএসএফ ও বিডিয়ার ভালো
অঙ্কের টাকা আয় করে নেয়। গরু প্রতি
বিএসএফ ৫০০ রুপি ও বিডিয়ার ৫০০
টাকায় এই কারবার চলে (৪ বছর আগের
হিসাব)। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট
থানাও এর হিস্যা পায়।
ভারত থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে
বেশী গরু আসে বুড়িমারী(বাং)/
চেংড়াবান্দা (ইন্ড) স্থল বন্দরের দুই
পাশের দশ কিলোমিটারের
সীমানার মধ্যে। এই চোরাচালানীর
কাজটা হয় অত্যান্ত আন্তরিক ও
সৌহার্দ পরিবেশের মধ্যে।
কাঁটাতারের নিচে দিয়ে একটা
ট্যানেল তৈরী করা হয় ৮X২X১.৫
মিটার সাইজের। কাজ শেষে বাঁশের
বেড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এই
ট্যানেল। বেড়ার উপর খড় ও গাছের
পাতা দিয়ে ঢেকে ক্যামোফ্লাজ
করা হয় যাতে দিনের বেলায় কিছু
বুঝা না যায়। ভারতের সিন্ডিকেট
রাতের ২টা থেকে ৩টার মধ্যে
নিদিষ্ট পয়েন্টে গরু জড়ো করে।
একেক সিন্ডিকেটের একেক ট্যাগ
দেওয়া থাকে গরুর গলায় বা বিশেষ
চিহ্ন দেওয়া থাকে গরুর গায়ে যাতে
রাতের আঁধারে সহজে বাংলাদেশ
সাইডে তাদের কাউন্টার পার্ট সহজে
চালান বুঝে নিতে পারে। কৌতহল
বসত এই পুরো প্রক্রিয়াটা দেখার সুজুগ
হয়েছিলো আমার পরিচিত এক
বিডিয়ার অফিসারের মাধ্যমে।
মজার ব্যাপার কি, জানেন?
লালমনির হাটের পাটগ্রামে একটা
কাস্টম অফিস আছে শুধু এই গরুর কাস্টমস
ক্লিরেন্স এর জন্য। এই কাস্টম হাউজে
যে কেউ গরু এনে একটা নিদিষ্ট হারে
চালান জমা দিলে গরুর গায়ে
কাস্টমসের একটা সিল ও ক্লিয়ারেন্স
পেপার দিয়ে দেওয়া হয়। যা দিয়ে
সিন্ডিকেট গরুগুলো ট্রাকে ভরে
পাঠিয়ে দেয় সারা দেশে। গরুগুলো
কিভাবে বাংলাদেশে আসছে ষে
ব্যাপারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ থেকে
কোন প্রশ্ন করা হয় না!!!!
এবার বুঝলেন
কিভাবে সরকারের সহযোগিতায় এই
চোরা কারবার পরিচালিত হয়???
আমার এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে
হলে আপনি রাতের চারটায়
বুড়িমারি বাজারে দাড়াবেন।
দেখবেন শত শত ভ্যানে করে গরুর
বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছে ও ১০/১২টা বড়
গরুর পাল একেক জন নিয়ে যাচ্ছে
বিনা বাধায়।
এবার আসি লাভ ক্ষতির হিসাবঃ
ভারত যদি বাংলাদেশে গরু ঢুকতে
না দেয় তা হলে বাংলাদেশ ৫-৬
বছরের জন্য সাময়িক অসুবিধায় পড়বে।
এই সমস্যায় পড়লে দেখবেন
বাংলাদেশে শত শত গরুর ফার্ম গড়ে
উঠছে। অল্প কয়েক বছরের মধ্যে
বাংলাদেশ গো মাংসে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
একসময় একজন রিকশা চালক বা দিন মজুর
মুরগির মাংস খাওয়ার কথা চিন্তাও
করতে পারতো না কিন্তু এখন আমাদের
দেশের দিন মজুরের খাবারের
মেনুতে মুরগির মাংস স্থান পায়। এটা
সম্ভব হয়েছে পোল্ট্রি শিল্পে
অভাবানিয় সাফল্যের মাধ্যমে। ঠিক
একিভাবে গবাদি পশু শিল্পেও
বাংলাদেশ বৈপ্লবিক পরিবর্তন
আনতে পারবে। ভারতীয় গরুর অবৈধ
প্রবেশের কারনে এই গবাদি শিল্প
দাঁড়াতে পারেনি। ভারত যদি ২
থেকে ৩ বছর বাংলাদেশে গরু
রপ্তানি/চোরাচালের মাধ্যম বন্ধ
করে বাংলাদেশ সাময়িক অসুবিধায়
পড়লেও গবাদি পশু শিল্পে
বাংলাদেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তন
আসবে ।
লাভ ক্ষতির হিসাবঃ ভারত
ধর্মীয় কারনে ভারতে গোমাংস
খাওয়া হয় না বললেই চলে। কিন্ত
ভারতে প্রায় পরিবারেই গরু পালন
করা হয়। ভারতের অল্প কিছু জায়গায়
মুসুলমানরা অত্যান্ত গোপনীয়তা
অবলম্বন করে গরু জবাই করে যা অতি
নগন্য, উল্লেখ করার মত কিছু না।
ভারত যদি বাংলাদেশে বা চায়নায়
গরু রপ্তানি/অবৈধ পাচার বন্ধ করে
দেয় তাইলে ভারতের কি ক্ষতি?
ইন্ডিয়ান টাইমস হিসাব দিয়েছে
বাংলাদেশে গরু না আসতে দিলে
বছরে ৩১ হাজার কোটি রুপি ভারতের
ক্ষতি হবে। আসলে এই হিসাব হচ্ছে
বৈধভাবে বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত
টাকার হিসাবে। আমি আগে উল্লেখ
করেছি বাংলাদেশে মোট গরুর ২%
গরু বৈধভাবে আসে। এই ৩১ হাজার
কোটি রুপি সেই ২% এর সরকারী
হিসাব মতে ইন্ডিয়ার পত্রিকায়
প্রকাশ করেছে।
ভারত যদি বাংলাদেশে ৩ বছরের
জন্যও গরু প্রবেশ করতে না দেয় তাইলে
ভারতে সামাজিক ও পরিবেশগত
বিপর্যয় মারাত্মক আকার ধারন করবে।
এমনিতেই ভারতের অনেক রাজ্যে গরুর
অবাধ চলাচলের কারনে
রাস্তাঘাটে যানজট তৈরী হয়, কাচা বাজারে গরুর পাল ঢুকে লন্ডভন্ড করে
দেয়। যত্রতত্র গো মল ও গো চানা
ত্যাগের কারনে এমনিতেই
পরিবেশগত সমস্যা তৈরী হয়ে আছে।
আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি,
ভারত যদি তাদের গরু বাংলাদেশে
আসতে না দেয় তা তাদের
সামাজিক ও পরিবেশে মারাত্মক
বিপর্যয় ডেকে আনবে কারন গরুর
স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত তাদের
অপেক্ষা করতে হবে। আর এই সময়ের
মধ্যে ভারতে গরুর সংখ্যা তাদের
মোট জনসংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছে
যাবে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হিসাব
করার জন্য আমি উপযুক্ত ব্যাক্তি না।
পরিশেষে একটি কথা বলবো। ধর্মীয়
ব্যাপার নিয়ে রাজনীতি করা
ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে বীজ বপন
করে গেছে আর আজ সেই গাছ মহিরুপে
আমাদের সামনে এসে দাড়িয়েছে।
ভারতের মন্ত্রী এই বক্তব্য একটা
পলিটিক্যাল স্টানবাজী ছাড়া আর
কিছুই নয়।
[ সংগৃহীত ও সম্পাদিত ]