চারিপাশে উঁচা দেওয়ালের মতো শক্ত বাঁধ দেওয়া হইয়াছে। বলিয়া দিয়াছে উহার অভ্যন্তরেই অন্তরীণ থাকিতে হইবে। বারণ করিলো বটে কারণ খোলাসা করিলোনা। আমরা আম-জনতা আকাশ দেখিতে পাই কিন্তু জমি দেখিতে পাইনা। কেমন করিয়া দেখিব? উন্মুক্ত আকাশ কেউতো সামিয়ানা দিয়া ঘিরিয়া রাখে নায়, আর ঐ দিকে চারিপাশ ঘিরিয়া রহিয়াছে কত্তো নিয়ম অনিয়মের অজস্র প্রাচীর। আমরাইবা জগতের প্রাণীকূলের শ্রেষ্ঠ হইয়া জন্তু-জানোয়ারের মতো খাঁচায় আবদ্ধ থাকিব? ইহা নেহায়েত অন্যায় বৈকি? আমরা ওইপার দেখিতে চাই। কী আছে সেথায়? যেথায় যেতে বারণ, খুজিতে হইবে তার কারণ। কারণ খুজিবার লাগি সকলে মিলিয়া হৈচৈ ফেলিয়া দিলো। নানা জনে নানা মত প্রদান করিতে লাগিলো। ইতোমধ্যে কতোজন বুদ্ধিজীবী বনিয়া গেলো। তাহারা আম-জনতাকে বুঝাইতে লাগিলো ঐ পারে স্বর্গ হইতে স্বপ্ন সুখের বর্ণীল জোয়ার আসিয়াছে, যেখানে স্বয়ং স্বর্গদূত রূপকথার রাজ্যের ধন-রত্নরাজি ভর্তি ময়ূরপঙ্খী নাও এর বহর লইয়া অপেক্ষা করিতেছে। কিন্তু গোঁড়ামীতে খোঁড়া সেকেলে রীতিনীতির প্রবর্তক অগ্রজ রাজাধীরাজেরা যে বাঁধ দিয়া গিয়াছেন, তাহাদেরই ধারক-বাহক কুসংস্কারাচ্ছন্ন নায়েবে আজমগন সেই স্বর্গদূতদের ঢুকিতে না দিয়া আম-জনতার অধীকার হরণ করিয়াছেন। অতএব, স্বীয় অধিকার আদায়ে আম-জনতাকেই জাগ্রত হইতে হইবে। বুদ্ধিজীবীদের কেহই প্রকৃত কারণ খোলাসা করিবার না পারিলেও হুজুগে জনতার বৃহৎ অংশকে ক্ষেপাইয়া তুলিতে সক্ষম হইলো। স্বঘোষিত নির্বোধ বুদ্ধিজীবীদের মন্ত্রনার যন্ত্রনা সহনীয় হবে কিনা তাহা ভাবিবার ফুরসৎ পাইলোনা হুজুগে জনতা। "বীর নওজোয়ান, হও আগুয়ান" স্লোগান তুলিয়া মহাসমারোহে ভাগ্যোন্নয়নের দেবতাকে স্বাগত জানাইতে বাঁধ ভাঙার জন্য অগ্রসর হইতে লাগিলো। অবশেষে বিপ্লবী জনতার জয় হইলো। হাজার বছর ধরে সুরক্ষিত পূর্ব-পুরুষের দেওয়া বাঁধ ভাঁঙিতে সক্ষম হইলো। বাঁধ ভাঁঙার বিকট আওয়াজে বাঁকি জনতা ছুটোছুটি করিতে লাগিলো। ততোক্ষোণে শোঁ শোঁ আওয়াজে প্রবল বেগে জোয়ার ঢুকিতে লাগিলো। অপ্রতিরোধ্য বাঁধ ভাঁঙার জোয়ারে সমগ্র রাজ্য ডুবিয়া যায়তে লাগিলো। বেহুঁশ জনতা জোয়ারের জলে হাবুডুবু খাইতে লাগিলো। বাহির হইতে আগত অতি লোনাজল মিশিয়া সুপেয় জলকেও লোনা করিয়া দিলো। এখন পিপাসা মিটানোর জলের জন্য বৃষ্টির প্রতিক্ষা করিতে হইবে। লোনাজলে গলা ডুবাইয়া বীর জনতা স্থির করিতে পারিলোনা পরত্রানের উপায়। বুদ্ধি খাটাইয়া বাঁচিবার কোন কুল কিনারা খুজে পাইনা, কি করে বুঝিবে বাঁধ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা? আর এইদিকে বুদ্ধিজীবীরা কিন্তু বুদ্ধি খাটাইয়া রঙ বেরঙের পাল তোলা পানশি নৌকা ভাসাইয়া আয়েশ করিয়া নৌ-ভোজনে মহা ব্যাস্ত। হাঁদারাম জনতার হাবুডুবু খাওয়াও কিন্তু বিশেষ উপভোগ্য। আর বুদ্ধিজীবীরাইবা কেন সেই সৌন্দর্য উপভোগ থেকে স্বীয় চিত্তকে বঞ্চিত করিবেন?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪২