somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গঃ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাফর-ইকবাল স্যারের দুই বছরের আগের একটা লেখা

০২ রা জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইচ এস সি পরীক্ষা শেষের দিকে । সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে ।
মনে পড়ে ২০০৮ সালের এরকম সময়ের কথা । ভর্তি পরীক্ষা দিতে কত জায়গায় গিয়েছি । অনেক মজা হয়েছে । অস্বীকার করব না । কিন্তু এই ঘুরে ঘুরে পরীক্ষার দেওয়ার ফলে কি ক্ষতি যে হয়েছিল তা বুঝতে পারি প্রত্যেকটা ভর্তি পরীক্ষার পরপরই । ভর্তি পরীক্ষা গুলো সব ভার্সিটি একসাথে হলে এই ক্ষতি হত না কখনো । আমাদের সময় চলে গেছে । এখন নতুনদের সময় । কষ্টের বিষয় তাদের পরীক্ষা ব্যাবস্থাও একই রকম আছে । আবেদন করার পদ্ধতি অনেকটা সোজা হয়েছে, কিন্তু আমরা তাদের জন্য ভর্তি পরীক্ষা এখনো সোজা করতে পারিনি । এখনো তারা বাসে ট্রেনে গাঁদা হয়ে মজা করতে করতে আর গান গাইতে গাইতে পরীক্ষা দিতে যায় ...।। অর্থের অভাবে অনেকে হয়তো পরীক্ষাই দিতে পারে না । তাই প্রতিবছর পাবলিক গুলোতে অনেক মেধাবী ছাত্রও সুযোগ পায় না ।

দুই বছর আগে জাফর-ইকবাল স্যারের একটা কলাম পড়েছিলাম । আজ আবার পড়লাম । সত্যিই অবাক লাগল কি এমন দেশে বাস করছি আমরা । যেখানে আমাদের নিজেদের অধিকারেরই কোন মূল্য নেই ।

লেখাটা শেয়ার করছিঃ

আজকের লেখাটিতে আমি পাঠকদের সঙ্গে আমার একটা দুঃখ খানিকটা ভাগাভাগি করে নিতে চাই। এ দেশে সবাই নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কথা জানে। যেসব ছেলেমেয়ে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, তারা ব্যাপারটাকে অন্যভাবে জানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার লজ্জায় মাটির ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করে, যখন আমি এই বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে আর তাদের অভিভাবকদের কষ্টটুকু দেখি। আমার মনে হয়, সারা পৃথিবীতে শুধু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই এত নিষ্ঠুর এবং এত অবলীলায় এ দেশের ছেলেমেয়েগুলোকে এত কষ্ট দেন। এ দেশে যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং তারা যতগুলো ইউনিটে পরীক্ষা নেয়, সেগুলো নেওয়ার জন্য সারা বছরেও ততগুলো শুক্র-শনিবার নেই। কাজেই একই দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয় এবং ছাত্রছাত্রীদের নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে আগেই তাদের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলতে হয়। এবার আমাদের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ছিল একই দিনে। বিষয়টা জানাজানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য পরীক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ করতে থাকে। আমি আমার গন্ডারের চামড়া নিয়ে তাদের অভিযোগগুলো শুনে যাচ্ছিলাম। একদিন একজন অভিভাবক ফোন করে যখন একটু মাত্রা অতিক্রম করলেন, তখন খোঁচাটা আমার গন্ডারের চামড়াটা ভেদ করে আমাকে স্পর্শ করল। আমি তখন তাঁকে বললাম, ‘আপনি আমাকে ফোন না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে ফোন করেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের মিটিংয়ে সব ভাইস চ্যান্সেলরের উপস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষার তারিখগুলো ভাগাভাগি হয়, যেন সবাই আলাদা আলাদা দিনে পরীক্ষা নিতে পারে। তবে এসব তুচ্ছ মিটিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ থাকেন না, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে তারিখটি দেওয়া হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই দিন তাদের একটা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাজেই আমাদের বাধ্য হয়ে অন্য একদিন পরীক্ষা সরিয়ে নিতে হয়েছে এবং সেটি গিয়ে পড়েছে বুয়েটের সঙ্গে।’ ভদ্রলোক আমার কথা বুঝলেন কি না, জানি না। কিন্তু আমি এটুকু জানি যে আমরা ও কুয়েট একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। অথচ ছেলেমেয়েরা ভাবল আমরা হূদয়হীন, অবিবেচক ও নিষ্ঠুর! তারা জানতেও পারল না, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় যেন ঠিকভাবে তাদের ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে, সে জন্য আমাদের ‘তুচ্ছ’, ‘নগণ্য’ ও ‘মফস্বলের’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একজন আরেকজনের সঙ্গে কামড়া কামড়ি করছি।
আমাদের যেদিন ভর্তি পরীক্ষা ছিল, সেদিন সন্ধ্যাবেলা বেশ কয়েকজন অভিভাবক আমাদের ঘিরে ধরলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন প্রায় অপ্রকৃতিস্থ। তিনি সরাসরি আমাকে দায়ী করে বললেন, ‘আপনারা কেমন করে আমাদের এত কষ্ট দেন? আমি আমার মেয়েকে চুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় গিয়েছি পরদিন ঢাকা ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। ঢাকা ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা দিয়ে পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে এসেছি পরের দিন আপনাদের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। পর পর তিন রাত আমি আর আমার মেয়ে রাস্তায়। আমরা খাইনি, ঘুমাইনি, বিশ্রাম নেইনি! এভাবে কি চলতে পারে?’
আমি মাথা নিচু করে সেই প্রায় অপ্রকৃতিস্থ অশ্রুরুদ্ধ অভিভাবকের অভিযোগগুলো শুনেছি, উত্তরে একটা কথাও বলতে পারিনি। যখন কিছু একটা বলতে গিয়েছি, তখন নিজের কাছেই নিজের কথাগুলো শোনাচ্ছে ফাঁকা বুলির মতো। এবারে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিল প্রায় ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী, সঙ্গে তাদের অনেকের অভিভাবক। সিলেটের মতো শহরে এত মানুষের থাকা-খাওয়ার জায়গা নেই। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়ে আছে, যাদের আসলে হোটেলে থাকার ক্ষমতাও নেই। কাজেই ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন আমরা আবিষ্কার করলাম, অসংখ্য ছাত্রছাত্রী ফুটপাতে বসে রাত কাটিয়ে দিচ্ছে। গভীর রাত থেকে বড় বড় বাস আসতে শুরু করেছে। সেই বাসে ছাত্রছাত্রী বোঝাই। তারা সারা রাত বাসে বসে রাত কাটিয়েছে। আমার সাহস হয়নি কাউকে জিজ্ঞেস করি, তারা রাতে কী খেয়েছে, কোথায় বাথরুম করেছে। গাড়ি দুর্ঘটনায় একটা ছেলে মারা গেল। কীভাবে কীভাবে জানি মনে প্রশ্ন জাগে, তার মৃত্যুর জন্য কি আমরা কোনোভাবে দায়ী?
এই অসংখ্য ছেলেমেয়েকে আমরা প্রতিবছর ভয়ংকর একটি নির্যাতনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাই। আমি নিশ্চিতভাবে জানি, আসলে আমাদের ছেলেমেয়েদের এই নিষ্ঠুরতার ভেতর দিয়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশের সব মেডিকেল কলেজের যে একটিমাত্র ভর্তি পরীক্ষা হয়, ঠিক সেই রকম সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে খুব সহজেই একটি ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারে। (তবে, মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমার একটি অভিযোগ আছে—এই পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নেওয়া হয়। একটু অন্যভাবে প্রশ্ন করে তাদের সৃজনশীল মেধার পরীক্ষা নেওয়া কি এতই কঠিন?) এ বছর ভর্তি পরীক্ষার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ রকম একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বিষয়টি নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের নিয়ে সেই মিটিংয়ে আমারও উপস্থিত থাকার দুর্ভাগ্য হয়েছিল। (সাধারণত এ ধরনের বড় বড় মানুষের উপস্থিতিতে হাজির থাকাটাকে ‘সৌভাগ্য’ হিসেবে উপস্থাপন করা ভদ্রতা। আমি দুর্ভাগ্য হিসেবে কেন উপস্থাপন করছি এক্ষুনি সেটা ব্যাখ্যা করছি!) আমাদের ভাইস চ্যান্সেলর সব বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি ভর্তি পরীক্ষার জন্য খাটাখাটুনি করেছিলেন বলেই কি না জানি না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে সেখানে একটা বক্তব্য দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। একজন মানুষ যখন বক্তব্য দেন, তখনই তিনি বুঝতে পারেন, শ্রোতারা তাঁর বক্তব্য শুনছেন কি না। যাঁরা বুদ্ধিমান বক্তা, তাঁরা যদি টের পান যে শ্রোতাদের তাঁর বক্তব্যে কোনো আগ্রহ নেই, তাঁরা বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে দ্রুত স্টেজ থেকে বিদায় নেন। আমিও বক্তব্য শুরু করে টের পেলাম, শ্রোতাদের আমার বক্তব্যে কোনো আগ্রহ নেই। আমার ধারণা, ভাইস চ্যান্সেলরদের একটা মিটিংয়ে একজন অ-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে আমার সবাইকে জ্ঞান দান করার সেই প্রচেষ্টা একটা বড় ধরনের বেকুবি ছিল। আমি যেহেতু ভিডিও প্রজেক্টরের জন্য স্লাইড তৈরি করে নিয়েছিলাম, তাই দ্রুত বক্তব্য শেষ করার উপায় ছিল না। সব স্লাইড শেষ করে আমার থামতে হয়েছিল। সেই সভায় আমি যে বক্তব্য দিয়েছিলাম, তার সারাংশ এ রকম:
(ক) দেশের ২৯টি সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দুই দিন করে পরীক্ষা নিলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার মতো সারা বছরে যথেষ্ট শুক্র-শনিবার নেই। এ ছাড়া দেশের সব ছাত্রছাত্রীর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার আছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ছাত্রছাত্রীদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দেওয়ার সামর্থ্যও নেই। সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীর অনেক জায়গায়ই এ রকম সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদাহরণ আছে, তাহলে আমরা কেন পারব না?
(খ) সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটা ভর্তি পরীক্ষা নিলে ছাত্রছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতো। কারণ তারা একটা পরীক্ষা দিয়েই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত। এই পদ্ধতি চালু হলে নিজ কেন্দ্রের কাছাকাছি কোথাও পরীক্ষা দিতে পারবে বলে সারা দেশের দূর-দূরান্তে ছোটাছুটি করতে হবে না, এক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে না। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরপরই যদি এই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটি নেওয়া হয়, তাহলে ছাত্রছাত্রীদেরও কোচিং নামক যন্ত্রণাটার ভেতর দিয়ে যেতে হবে না।
(গ) সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও বেশ কিছু সুবিধা হয়। সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভাগাভাগি করে নিলে আসন ফাঁকা থাকার আশঙ্কা কমে যায়। অনেক কম সময় আর কম জনবল দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায়। ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের একটা পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেস থাকে বলে ভবিষ্যতে এক শ রকম কাজে সেটা ব্যবহার করা যায়। শুধু তাই নয়, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষাটি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগ অনেক কমিয়ে দেওয়া যায়।
বক্তব্যের এই পর্যায়ে কীভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব, সে ব্যাপারে আমি একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা মোবাইল টেলিফোন ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশনের একটা পদ্ধতি বের করেছিলাম। সেটা ব্যবহার করে গত বছর শুধু আমরা এবং এ বছর প্রায় ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো না কোনোভাবে রেজিস্ট্রেশন করেছে। পুরো পদ্ধতিটির বিভিন্ন ধাপ যেহেতু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা হয়েছে সমন্বিত ভর্তি-প্রক্রিয়ায়, সেটা কীভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে, আমি সেভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করেছিলাম।
আমার বক্তব্যের পর বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঘোষণা করল যে তাদের পক্ষে সমন্বিত ভর্তি-প্রক্রিয়ায় যাওয়া সম্ভব নয়। কেন নয়, সেটা তাদের হয়ে পাঠকদের বোঝাতে আমি আগ্রহ বোধ করছি না। যদি প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে তারাই এ দেশের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে সেটা ব্যাখ্যা করতে পারবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর একজন পর্যবেক্ষক ছিলেন, তাই অন্য কোনো ভাইস চ্যান্সেলর এই সমন্বিত ভর্তি-প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেন না।
বাইরে সাংবাদিকেরা ছিলেন, তাঁরা জানলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিচ্ছে না এবং তাঁরা স্বাভাবিকভাবে ধরে নিলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিশ্চয়ই তাহলে অংশ নিচ্ছে। কাজেই পরদিন খবরের কাগজে বড় বড় করে ছাপা হলো, ‘বাইশটি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা!’ সারা দেশের ছেলেমেয়েদের ভেতরে আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। শুধু আমি একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, কেউ সেই দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেল না!
যথাসময় আবার ভাইস চ্যান্সেলররা বসলেন এবং বড় বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছোট ছোট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলররাও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরুদ্ধে চলে গেলেন। আমার মনে আছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত একেবারে শেষ পর্যন্ত সবাইকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ দেশের ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কেউ কেউ বিষয়টা আবার যাচাই করার জন্য বসে ছিলেন, আলোচনা করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। আমার মনে আছে, আমি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় হাতজোড় করে বলেছিলাম যে আমরা প্রয়োজনে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে হলেও একটি ভর্তি পরীক্ষা নিই, যেটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। পরেরবার আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে পরীক্ষা নেবে এবং ধীরে ধীরে সব বিশ্ববিদ্যালয় এ উদ্যোগে অংশ নেবে। কেউ আমার কাতর আবেদনে কান দেয়নি।
সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে অনেকের ভেতরেই একটা বিভ্রান্তি আছে। অনেকেই মনে করেন, দেশে নানা ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে—কোনোটা কৃষি, কোনোটা প্রযুক্তি, কোনোটা বিজ্ঞান, কোনোটা সবকিছু মিলিয়ে। এই ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরীক্ষা কেমন করে নেওয়া সম্ভব? আসলে ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রটি ভবিষ্যতে কী পড়বে, সে বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয় না। উচ্চমাধ্যমিকে যে বিষয়গুলো পড়ে এসেছে, সে বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এক অর্থে এটি আরেকটি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মতো—প্রশ্নগুলো অন্য রকম, পরীক্ষাটি নেয় বিশ্ববিদ্যালয়। একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো তাদের প্রয়োজনমাফিক একেকটা বিষয়ের ওপর জোর বেশি বা কম দিতে পারে, এর বেশি কিছু নয়। যদি সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি হয়, তাহলে যে আক্ষরিক অর্থে একটি মাত্র পরীক্ষা হতে হবে তা-ও নয়। বিজ্ঞান, মানবিক বা কমার্সের জন্য আলাদা দিনে আলাদা পরীক্ষা হতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা খুব আনন্দের সঙ্গে এই পরীক্ষা দেবে। যদি সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা হতে হবে এমসিকিউ বা বহু নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিতে বৃত্ত ভরাট করে। অনেকেই মনে করতে পারেন, এই পদ্ধতিতে একজন ছাত্রছাত্রীর মেধা যাচাই করা সম্ভব নয়। যদি এই পরীক্ষাটি হতো ছাত্রছাত্রীটিকে মূল্যায়ন করে একটি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য, তাহলে কেউই এর জন্য এমসিকিউ পরীক্ষা মেনে নিত না। কিন্তু যেহেতু এটি একটি বাছাই পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষা দিয়ে শুধু কিছু ছাত্রছাত্রীকে ছেকে বের করা হচ্ছে, সে জন্য সবকিছু মিলিয়ে এটি খুব চমৎকার একটা পদ্ধতি। আসলে এটি যে আমরা বের করেছি তা নয়, সারা পৃথিবীতেই SAT ও GRE অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা এবং সেই পরীক্ষা কিন্তু এমসিকিউ ধরনের। সবচেয়ে বড় কথা, যাঁরা প্রশ্ন করছেন, তাঁরা যদি তাঁদের মেধা পুরোপুরি ব্যবহার করে অত্যন্ত সুন্দর করে প্রশ্ন করেন, তাহলে এমসিকিউ পদ্ধতিতেই মেধা যাচাই করা সম্ভব। কেউ যদি আমার কথা বিশ্বাস না করেন, তাহলে তাঁরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন যাচাই করে দেখতে পারেন। তাঁরা ভালো ও মন্দ দুই প্রশ্নের উদাহরণই পেয়ে যাবেন।
সমন্বিত ভর্তি-প্রক্রিয়া নিলে প্রশ্নের গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্ব কে নেবে, ঠিকভাবে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে কি না, সেই গ্যারান্টি কে দেবে। প্রশ্নগুলো কারা কীভাবে করবে, প্রশ্নপত্র কোথায় ছাপানো হবে, রেজাল্ট কোথায় প্রস্তুত করা হবে, আর্কিটেকচার বিভাগের ড্রয়িং পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বণ্টন কীভাবে হবে—এ ধরনের শত শত প্রশ্ন রয়ে গেছে, যার উত্তর এই মুহূর্তে স্পষ্ট করে জানা নেই। এর অর্থ এই নয় যে এই প্রশ্নের উত্তর কেউ জানে না। প্রয়োজন হয়নি বলে কেউ বসে বসে এখনো উত্তরগুলো বের করেনি। যদি কখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে, তাহলে সবাই মিলে এসব ছোটখাটো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা শুধু সময়ের ব্যাপার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি এখনো বলা হয়নি। এর কারণ, সেটি বলতে আমি সংকোচ বোধ করছি। প্রতিবছর ভর্তি-প্রক্রিয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তির রেজিস্ট্রেশন করিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে, অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করেও ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত পায় না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কতজনের পরীক্ষা নেবে, আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে। সেই কোটি কোটি টাকার বড় অংশ শিক্ষকেরা ভাগাভাগি করে নেন। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে তাঁদের অর্থ উপার্জনের বাৎসরিক এই পথটি বন্ধ হয়ে যাবে বলে অনেকের ধারণা। টাকা-পয়সার হিসাবে আমি খুব দক্ষ নই, কিন্তু আমার ধারণা, একটিমাত্র পরীক্ষা হলে যে পরিমাণ অর্থবল ও জনবলের সাশ্রয় হবে, তাতে বেশি হয়তো দেওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু শিক্ষকদের পরিশ্রমের যথার্থ সম্মানী ঠিকই দেওয়া সম্ভব হবে।
আমি গত এক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করতে পারি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের ছেলেমেয়েদের নিপীড়ন থেকে মুক্তি দিতে এখনো প্রস্তুত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত, কাজেই তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ শুনতেও রাজি বা বাধ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টগুলো আমাদের পার্লামেন্টে পাস করা হয়েছে, কাজেই পার্লামেন্টে যদি বিষয়টা আলোচনা করে নতুন একটা আইন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাধ্য করা যায়, শুধু তাহলেই হয়তো এ দেশের ছেলেমেয়েরা এই নিষ্ঠুরতা থেকে মুক্তি পাবে।
আরও একটি উপায়ে চেষ্টা করা যেতে পারে। মাঝেমধ্যেই দেখি, হাইকোর্ট রায় দিয়ে একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করে দিয়েছেন। মহামান্য আদালত যদি ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করতে পারেন, তাহলে তাঁরা নিশ্চয়ই পরীক্ষা নিতে বাধ্যও করতে পারেন। কোনো ছাত্রছাত্রী যদি হাইকোর্টে আবেদন করে বলে, ‘আমি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ দিয়ে এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে। কাজেই যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে লেখাপড়া করার অধিকার আমার আছে। কিন্তু যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, সেই পদ্ধতিতে আমি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারছি না। কাজেই মহামান্য আদালত, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দিন, তারা যেন মেডিকেলের মতো একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দেয়।’
আমি আইনকানুন খুব ভালো জানি না, শুধু একটা বিষয় জানি, আমাদের দেশের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট অনেক যুগান্তকারী রায় দিয়ে দেশের গতিধারাকে ঠিক রাস্তায় তুলে দিয়েছেন। তাঁরা দেশের ছেলেমেয়েদের ভোগান্তির কথা ভেবে একটা রাস্তা বের করে দিতেও তো পারেন।
কাক নাকি কাকের গোশত খায় না—আমি খেলাম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কথা বললাম। অনেক দুঃখে কাজটি করেছি। আমাদের ছেলেমেয়ে এবং তাদের অভিভাবকদের জানা উচিত, সত্যি সত্যি তাদের ওপর অকারণ নিষ্ঠুরতা করা হয়েছে কি না।
লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীকে অকারণে অভুক্ত অবস্থায় ঘুমোতে না দিয়ে সারা দেশে ছুটিয়ে বেড়িয়েছি, সে কথাটি আমি হয়তো কদিন পরে ভুলে যাব। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা দিতে এসে যে ছেলেটি ট্রাকচাপায় মারা গেল, তার কথা তো আমি ভুলতে পারব না। সেই ছেলের মা-বাবা, আপনজন কি আমাদের কখনো ক্ষমা করবেন?
এই দুঃখটা কি আমি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারি?

মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এখান থেকে নেওয়া হয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৩
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×