দ্বিতীয় প্রেমে পড়লাম তিনটি চঞ্চলা গ্রাম্য কিশরীর। তিনটি টিয়া পাখি। আমাদের গ্রামের এক বর্বর খাচায় পুরে যখন তাদের বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন সেই তিনটি ভীত কিশরীর চোখের অকুল চাহনীতে আমার বুকের মধ্যে প্রেমের বিণা বেজে উঠলো। মনের হলো কোন আরব্য সুন্দরী দাসিকে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার প্রেমিক মন বিদ্রোহ করে উঠলো। নিজের গচ্ছিত কিছু মুদ্রার বিনিময়ে আমি তাদের উদ্ধার করলাম। কিন্তু তারা তখনো উড়তে শিখেনি, তাই নিজের কাছেই কিছু দিন রাখবো বলে মনঃস্থির করলাম। কিন্তু হায়! আমার কপালে এত সুখ সইবে কেনো। তাদের একটি বড় ঝুড়ির মধ্যে রেখে আমি যখন খাচার ব্যাবস্থা করতে গিয়েছি, এসে দেখি ঝুড়ির মধ্যে কুকুর মুখ দিয়েছে। দৌড়ে এসে দেখি তিন কিশোরীর নিথর দেহ পড়ে আছে। স্বজন হারানোর ব্যথায় মনের মধ্যে ক্রধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এর প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে। ডেকে পাঠালাম আমার পিচ্চি লাঠিয়াল বাহিনীকে। ৮/১০ জনের লাঠিয়ার বাহিনীকে নিয়ে আমি বেড়িয়ে পড়লাম সেই ঘাতকের সন্ধানে। চর মারফাত খবর পেলাম কিছু দূরে তাকে দেখা গেছে। তখনি শুরু হলো ধাওয়া। সেই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা গ্রাম ধাওয়া খাবার পর সন্ধ্যায় ঘাতক একটি ড্রেনর মধ্যে নেমে আর্ত সমর্পন করলো তখন আমার রক্ত টকবক করে ফুটছে। ইচ্ছা মত কতগুলো উৎতম মাধ্যম তাকে দেয়া হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে প্রান ভিক্ষা দিলাম। এরপর থেকে ঐ কুকুর আমাকে রাস্তাদিয়ে হেঁটে যাওয়া দেখলে মির্জা সাহেব মনে করে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে নিচে ধানের জমির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি চলে গেলে তারপর রাস্তায় উঠতো।
আমার তৃতীয় প্রনয়িণীরা হইলো তিনি সাদা ইদুর। অনেক কুকর্মের সাথী হিসাবে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এগুলো উপহার পেলাম আমার ফুপাতো ভাইয়ের কাছে থেকে। এগুলোও সুদূর ঈশ্বরদী হতে আগত। আহা কি তাদের রং আর রূপ। এক একটা যেন পশ্চিমের স্বেতাঙ্গিনী। তাহমহল তাদের জন্য বানাতে পারিনি ঠিক কিন্তু জুতার বাক্স দিয়ে আমি তাদের জন্য প্রাসাদ তৈরী করে দিলাম। মাতার ঘোর আপত্তি থাকা সত্বেও আমার বাসায় তাদের স্থাল হলো কিন্তু পাশের বাড়ীর বিড়ালের গোঁফের নিচ দিরে হাসি দেখে অনেক চিন্তায় পরে গেলাম। পাড়লে আমি তাদের সৌদি বোরকা পড়িয়ে রাখি কিন্তু নারী স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে আমি তা করতে পারলাম না। ইহাই ছিল আমার জীবনের একটি বড় ভুল। পাঠক এরপর আমি আর কিছু বর্ণনা করতে পারছি না সেই নিদারুন ইতিহাসের। আমার হাত কাঁপছে আমার চোখের অশ্রুর বন্যা।
মনের শোক কাটিয়ে ওঠার পর আমার প্রেমিক মন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। এবার সরাসরি চলে গেলাম কাঁটাবন। দেখে শুনে বাংলা ছিঃনেমার নায়িকার মত স্বাস্থবতী দুইটা খরগোশ কিনলাম। তাদের রূপের আর নাইবা বর্ণনা করলাম। একটু ভুল করলাম, তাদের একটি ছেলে ছিল। বক্স অফিস হিট জুটিকে দুটিকে দুইটি ব্রাউন পেপার প্যাকেট ভরে আমার হাতে দিলো। আমি মহা আনন্দে তাদের দুই হাতে দুটিকে নিয়ে একটি রিকসা নিলাম। ধানমন্ডি আট নাম্বারের কাছে যখন আসলাম তখন পায়ে অনুভব করলাম গরম পানির স্রোত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি সুন্দরী প্যাকেটের মধ্যে এক নাম্বার প্রকৃতিক ডাকের সারা দিয়ে কাগজের প্যাকেটি ছিড়ে ফেলেছে। তারপর দুচোখ বন্ধ করে ভোঁ-দৌড়। ট্টফিক জ্যামে আটকেপড়া পাবলিক এতক্ষনে বুঝে ফেলেছি একটি সু্ন্দরী পালায়নপর। সবাই যানবাহন থেকে নেমে সুন্দরীর পিছনে দৌড়। বেশীদূর পালিয়ে বাঁচতে পারেনি। জান বাঁচাতে পাশের দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানের লোকজন পাকড়াও করে একটি নতুন কার্টুনে তাকে তুলে দেয়। কিন্তু পরিবার পরিল্পনার উহাদের ব্যাপক অনিহা থাকায় মাতাজী ঘোষনা করলো হয় তুই বাড়িতে থাকবি না হলে তোর খরগোশ। দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে রেখে তাদের বনবাস দিয়ে আসলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:০২