somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রণয়িনীরা... পর্ব-১

২১ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার প্রথম বুক ভাঙ্গার আওয়াজ শোনা যায় যখন আমি ক্লাস টুতে পড়ি। ছলনাময়ীর বাড়ি ছিল ফরিদপুর। সেই সুদূর ফরিদপুর থেকে হাসি আন্টি আমাকে একটি কাঠবিড়ালীর বাচ্চা এনে দেয়। আহা আজও সেই সব মধুর স্মৃতি মনের মধ্যে ফালাফালি করে। দুহাতে ধানের শীষ ধরে যখন মনোযোগ দিয়ে খেতো কি মুগ্ধ প্রেমময় নয়নে আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। সারাদিন তাকে শার্টের বুক পকেটে করে নিয়ে ঘুরতাম। একদম হৃদয়ের কাছাকাছি। কিন্তু নাড়ীর মন বোঝা বড় দায়। ছলানাময়ী এভাবে আমাকে নিঃশ্ব করে ছ্যাকাদিয়ে চলে যাবে কে জানতো তা। তার জন্য দুধের ছানা যোগার করতে আমাকে জান বাজি রেখে কত যে দুঃসাহসী অভিযান করতে হয়েছে, ছলনাময়ী তা বুঝলো না। যৌবনে পা দিয়েই সে আমাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে সেই যে পেঁপে গাছে পালিয়ে গেল আর ফিরলো না। মনের দুঃখে আমি পেঁপে খাওয়া ছেড়ে দিলাম।

দ্বিতীয় প্রেমে পড়লাম তিনটি চঞ্চলা গ্রাম্য কিশরীর। তিনটি টিয়া পাখি। আমাদের গ্রামের এক বর্বর খাচায় পুরে যখন তাদের বিক্রি করার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন সেই তিনটি ভীত কিশরীর চোখের অকুল চাহনীতে আমার বুকের মধ্যে প্রেমের বিণা বেজে উঠলো। মনের হলো কোন আরব্য সুন্দরী দাসিকে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমার প্রেমিক মন বিদ্রোহ করে উঠলো। নিজের গচ্ছিত কিছু মুদ্রার বিনিময়ে আমি তাদের উদ্ধার করলাম। কিন্তু তারা তখনো উড়তে শিখেনি, তাই নিজের কাছেই কিছু দিন রাখবো বলে মনঃস্থির করলাম। কিন্তু হায়! আমার কপালে এত সুখ সইবে কেনো। তাদের একটি বড় ঝুড়ির মধ্যে রেখে আমি যখন খাচার ব্যাবস্থা করতে গিয়েছি, এসে দেখি ঝুড়ির মধ্যে কুকুর মুখ দিয়েছে। দৌড়ে এসে দেখি তিন কিশোরীর নিথর দেহ পড়ে আছে। স্বজন হারানোর ব্যথায় মনের মধ্যে ক্রধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এর প্রতিশোধ আমাকে নিতেই হবে। ডেকে পাঠালাম আমার পিচ্চি লাঠিয়াল বাহিনীকে। ৮/১০ জনের লাঠিয়ার বাহিনীকে নিয়ে আমি বেড়িয়ে পড়লাম সেই ঘাতকের সন্ধানে। চর মারফাত খবর পেলাম কিছু দূরে তাকে দেখা গেছে। তখনি শুরু হলো ধাওয়া। সেই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা গ্রাম ধাওয়া খাবার পর সন্ধ্যায় ঘাতক একটি ড্রেনর মধ্যে নেমে আর্ত সমর্পন করলো তখন আমার রক্ত টকবক করে ফুটছে। ইচ্ছা মত কতগুলো উৎতম মাধ্যম তাকে দেয়া হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে প্রান ভিক্ষা দিলাম। এরপর থেকে ঐ কুকুর আমাকে রাস্তাদিয়ে হেঁটে যাওয়া দেখলে মির্জা সাহেব মনে করে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে নিচে ধানের জমির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমি চলে গেলে তারপর রাস্তায় উঠতো।

আমার তৃতীয় প্রনয়িণীরা হইলো তিনি সাদা ইদুর। অনেক কুকর্মের সাথী হিসাবে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এগুলো উপহার পেলাম আমার ফুপাতো ভাইয়ের কাছে থেকে। এগুলোও সুদূর ঈশ্বরদী হতে আগত। আহা কি তাদের রং আর রূপ। এক একটা যেন পশ্চিমের স্বেতাঙ্গিনী। তাহমহল তাদের জন্য বানাতে পারিনি ঠিক কিন্তু জুতার বাক্স দিয়ে আমি তাদের জন্য প্রাসাদ তৈরী করে দিলাম। মাতার ঘোর আপত্তি থাকা সত্বেও আমার বাসায় তাদের স্থাল হলো কিন্তু পাশের বাড়ীর বিড়ালের গোঁফের নিচ দিরে হাসি দেখে অনেক চিন্তায় পরে গেলাম। পাড়লে আমি তাদের সৌদি বোরকা পড়িয়ে রাখি কিন্তু নারী স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে আমি তা করতে পারলাম না। ইহাই ছিল আমার জীবনের একটি বড় ভুল। পাঠক এরপর আমি আর কিছু বর্ণনা করতে পারছি না সেই নিদারুন ইতিহাসের। আমার হাত কাঁপছে আমার চোখের অশ্রুর বন্যা।

মনের শোক কাটিয়ে ওঠার পর আমার প্রেমিক মন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। এবার সরাসরি চলে গেলাম কাঁটাবন। দেখে শুনে বাংলা ছিঃনেমার নায়িকার মত স্বাস্থবতী দুইটা খরগোশ কিনলাম। তাদের রূপের আর নাইবা বর্ণনা করলাম। একটু ভুল করলাম, তাদের একটি ছেলে ছিল। বক্স অফিস হিট জুটিকে দুটিকে দুইটি ব্রাউন পেপার প্যাকেট ভরে আমার হাতে দিলো। আমি মহা আনন্দে তাদের দুই হাতে দুটিকে নিয়ে একটি রিকসা নিলাম। ধানমন্ডি আট নাম্বারের কাছে যখন আসলাম তখন পায়ে অনুভব করলাম গরম পানির স্রোত। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি সুন্দরী প্যাকেটের মধ্যে এক নাম্বার প্রকৃতিক ডাকের সারা দিয়ে কাগজের প্যাকেটি ছিড়ে ফেলেছে। তারপর দুচোখ বন্ধ করে ভোঁ-দৌড়। ট্টফিক জ্যামে আটকেপড়া পাবলিক এতক্ষনে বুঝে ফেলেছি একটি সু্ন্দরী পালায়নপর। সবাই যানবাহন থেকে নেমে সুন্দরীর পিছনে দৌড়। বেশীদূর পালিয়ে বাঁচতে পারেনি। জান বাঁচাতে পাশের দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানের লোকজন পাকড়াও করে একটি নতুন কার্টুনে তাকে তুলে দেয়। কিন্তু পরিবার পরিল্পনার উহাদের ব্যাপক অনিহা থাকায় মাতাজী ঘোষনা করলো হয় তুই বাড়িতে থাকবি না হলে তোর খরগোশ। দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে রেখে তাদের বনবাস দিয়ে আসলাম।

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০০৮ সকাল ৯:০২
৬৬টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×